Sampa Maji

Horror Children

3  

Sampa Maji

Horror Children

ভুতু কাকু

ভুতু কাকু

21 mins
956



আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি।আষাঢ় অথবা শ্রাবন মাসের এক সন্ধ্যায় ইংরেজী স্যারের টিউশান গিয়ে দেখি আমার বন্ধুরা কেউ আসেনি। পড়তে আসবো কিনা সেটা স্কুলেই ঠিক হয়ে যায় অথবা ফোনে করে বলে দেয় হয় । আসলে স্যারের বাড়িটা অনেক দূরে প্রায় রাস্তা আর মাঝে প্রায় ১ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা নির্জন সেখানে কোনো বাড়ি বা দোকান কিছুই নেই। জায়গায়টা গাছপালায় ঘেরা ঘন অন্ধকার এবং রাস্তার পাশেই একটা শশ্মান আছে। রাত ৯টার পর ওই রাস্তায় খুব একটা লোক যাতায়াত করে না। স্যারকে বলেছিলাম সকালে পড়াতে কিন্তু স্যারের সময় হবেনা, তাই বাধ্য হয়ে আমাদের সন্ধ্যায় আসতে হয়। আমি ছোটবেলা থেকেই একটু বেশি ভিতু তাই ভুতের গল্প ভালোবাসি না, মা বলে আমার নাকি রাস হালকা তাই এতো ভয়। আমি কোনো দিন একা রাত্রিতে কোথাও যাই না। বন্ধুরা কেউ পড়তে না গেলে  সেই দিন আমিও যাই না বন্ধ করে দেই । কিন্তু সেই দিন হয়েছে কি সুজন আর সোহম দুজনেই স্কুলে যায় নি , ভেবে ছিলাম নিশ্চয়ই পড়তে যাবে কিন্তু ওরা কেউ পড়তেও আসেনি আর ফোন করে বলে নি। আর অর্ঘ্য তার তো তিনদিন ধরে জ্বর, ওতো আসতেই পারবে না। এখন কি করে একা বাড়ি ফিরব আর ওই জঙ্গলে ঘেরা শ্মশানের রাস্তাটা বা কি করে পেরবো ভেবে ভয়ে গায়ে কাটা দিতে লাগল । এতো দিন আসছি, কোনো দিনই রাতে একা বাড়ি যাইনি, সব দিন কেউ না কেউ সাথে থাকে আর আজ কেউ নেই। আসার সময় সবদিন ভাবি ওই শ্মশানের দিকে তাকাবো না, কিন্তু চোখ দুটো ওখানেই আটকে যায় । আবার আসার  সময় শ্মশানে টাটকা কয়লা দেখে এসেছি, তখনও কুই থেকে ধোঁয়া বেরছিল মনে হয় দুপুরেই মরা পুরানো হয়েছে । স্যার কে যে একটু তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে বলব তার ও উপায় নেই। স্যার এসব ভূত -টূত বিশ্বাস করে না, ওল্টে আমাকেই সবার সামনে বলবে ক্লাস x এর ছেলে হয়ে ভুতের ভয় করিস তোর লজ্জা করে না, তোর থেকে ছোট ছেলেরা কত সাহসী হয় । আমার তখন সুজন আর সোহমের ওপর খুব রাগ হচ্ছিল ওরা একবার ফোন করে জানিয়ে দিতে পারলো না যে আজ পড়তে আসবে না। আর আমি বা কেন ফোনটা করলাম না জানি না। ভেবে আর লাভ নেই এসেছি যখন পড়া মন দিয়ে করে নেই।


 স্যার ছুটি দেয় পৌনে দশটার সময়, কেউ তেমন আসেনি তবুও এতো দেরি করে ছাড়লেন তখন স্যারের ওপর খুব বিরক্ত লাগছিল। স্যারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে মনে মনে গান করতে করতে জোরে জোরে সাইকেল চালাতে লাগলাম। মনে মনে ভাবলাম যদি রাস্তায় কারো সাথে দেখা হয় তাহলে ভালোই হবে আর ভয় লাগবে না। ঠিক জঙ্গল ভরা অন্ধকার শশ্মানের কাছাকাছি এসেছি এমন সময় দেখলাম দূরে কেউ সাইকেল থামানোর জন্য হাত দেখাছে। কথায় আছে 'যেখানেই বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়'। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো। কত বার ভেবেছি অন্য মনষ্ক হয়ে এই জায়গাটা পার হয়ে যাবো। কিন্তু না সম্ভব নয় লোকটা এখন রাস্তা ঘেরে দাড়িয়ে আছে, এড়িয়ে যাওয়া যাবে না । জানি এখন ভয় পেলে চলবে না, তবুও ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুকরে যাচ্ছি কিন্তু বাইরে প্রকাশ করতে পারছি না। এই জঙ্গলে এত রাত্রিতে কেউ সাহায্য করতে আসবে না, এখন আমাকে সাহস দেখাতেই হবে।সাইকেল থামিয়ে নামলাম, দেখলাম লোকটা আমার আরও কাছে এগিয়ে এল, লোকটাকে দেখে আমার চেনা চেনা মনে হল, উফ! মনে বল পেলাম।


--- এই তুমি সুজনের বন্ধু না।

-- হ্যাঁ আমি সুজনের বন্ধু।

-- আমাকে চিনতে পারছো, আমি সুজনের পাশের বাড়ির অমল কাকু।

--আপনাকে চেনা মনে হচ্ছে, সুজনদের বাড়িতে একবার দেখেছিলাম।

-- আমাকে একটু নিয়ে যাবে, আমার না পায়ে খুব ব্যাথা হাঁটতে পারছিনা, সন্ধ্যে থেকে বসে আছি চেনা কাউকে পেলাম না, আর যেতেও পারছি না।

-- আপনার পায়ে কি হয়েছে।

-- আচকা বাজ পরার শব্দ শুনে ছুটতে গিয়ে পায়ে মোচর লেগেছে।

-- ঠিক আছে সাইকেল বসুন, পৌঁছে দেবো।।

-- তুমি যে আমার সাহায্য করবে, এতে আমি খুব খুশি।


আমার আর কোনো ভয় নেই সাথে সুজনের কাকু আছে, ভাবলাম আজ খুব বাঁচান বেঁচে গেলাম। সাইকেলে আসতে আসতে সুজনের কাকু আমার সাথে গল্প করতে লাগলো। বলল আমাকে আপনি বলতে হবে না , তুমি বলবি আর এখন থেকে আমাকে অমল কাকু বলে ডাকবি। তারপর আমার বাড়িতে কে কে আছে, পড়াশোনা কেমন হচ্ছে, ভবিষ্যতে কি নিয়ে পড়তে চাই এই সব নানান কথা। কথা বলতে বলতে হঠাৎ বলে,

-- আমাকে এখানে নামিয়ে দেও, আমি চলে যেতে পারব আর তোর সাথে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।

আমি কিছু বলার আগেই সাইকেল থেকে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে, আমি আর না দাড়িয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

বাড়িতে এসে ব্যাগ রাখতে রাখতে মাকে বিরক্ত হয়ে বলি,

-- জানো মা আজকে আমাদের এই দিকের কেউ পড়তে যাইনি, আজ আমাকে একা বাড়ি আসতে হয়েছে।

-- আজ সকালে সুজনের পাশের বাড়ির কাকু মারা গেছে, সেই জন্যই হয়তো ওদের পাড়ার কেউ পড়তে যাই নি। 

-- তুমি কি করে জানলে সুজনের কাকু মারা গেছে।

-- তোর বাবা সন্ধ্যা বেলা বাজার থেকে শুনে এসেছে, সুজনের ওই কাকুটা পড়াশোনার খুব বুদ্ধি ছিল। সবাই বলে ছোট বিজ্ঞানী ছিল।।

-- কি করে মারা গেল।

-- অনেক দিন পর গ্রাম এসেছে তাই খুব সকালে মাঠের হাওয়া খেতে গিয়ে ছিল ,কিন্তু আচমকা বাজ্র পাত পরে আর সেখানেই মারা যায়।।

মায়ের কথা শুনে আমি হতবাক, তাহলে আমি কাকে সাইকেল চাপিয়ে আনলাম। তবেকি সারা রাস্তা ভূতের সাথে কথা বললাম। সেই জন্যই কি সাইকেল এতো হালকা লাগছিল মনে হচ্ছিল না কাউকে চাপিয়ে আনছি। এসব কথা মাকে বলা ঠিক হবে, ভেবে পেলাম না। শুধু শুধু মা চিন্তা করবে তার থেকে একদিন যাক যদি মনে হয় তখন না হয় বলবো। তাই কাউকে কিছু না বলে খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে আসি, সেদিন আর পড়তে বসলাম না শুয়ে পড়লাম।


সবে মাত্র ঘুমটা এসেছে এমন সময়, যেন মনে হল কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে। তাড়াতাড়ি লাইট জ্বালিয়ে ওঠে দেখলাম, না কোথাও কিছু নেই, ডাকটাও শুনতে পেলাম না ভাবলাম মনের ভুল, লাইট অফ করে আবার শুয়ে পরলাম। একটু পরে আবার শুনতে পেলাম কেউ আমার নাম ধরে ডাকছে এবার পষ্ট আওয়াজ আসছে । খুব ভয় পেয়ে গেলাম, ভয়ে ভয়ে বললাম,

--- কাঁপা কাঁপা গলায় কে -কে!।

--আমি সুজনের কাকু, অমল। তখন তুই আমাকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে এলি, মনে পরেছে।

-- হ্যাঁ ,কেন এসেছো আমার কাছে, আমিতো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।

-- ভয় পাসনা আমি ভীতিকর ভূত না, আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না।

-- তবে কেন আমার পিছু নিয়েছো।।

-- আমার কিছু কাজ আছে সেই জন্য তোকেই দরকার।

-- তুমি এখন ভূত, আমি ভূতকে কি করে সাহায্য করবো।

--- তোকে আমার কিছু কাজ করে দিতে হবে। 

-- তুমি কত কিছু জানো তোমার কত বুদ্ধি আর আমি সবে মাত্র স্কুলে পড়ি।।

-- তোকে কিছু জানতে হবে না আমি সব বলে দেবো, তুই শুধু আমার কথা মতো করবি। আসলে আজ সকালে হঠাৎ বজ্রপাত পরে আবার মৃত্যু হয়, কিন্তু চিত্রগুপ্তের খাতায় আমার নাম ছিল না অথচ হঠাৎ আচমকা বাজ পরে আমার মৃত্যুর হয়েছে যেহেতু আমার মৃত্যুর কোনো কথা ছিল না তাই যমরাজ আমার আত্মাকে ১৪ দিন পৃথিবীতে থাকার সময় দিয়েছে আর যদি সম্ভব হয় পৃথিবীতে যা কাজ বাকি আছে করে নিতে বলেছে, এর জন্য জমরাজ কোন সাহায্য করবে না। তাই আমি ঠিক করেছি এই সময়টা কাজে লাগিয়ে আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ টা সম্পূর্ণ করে যাবো। সেই জন্য মৃত্যুর পর সাহায্যের জন্য চেনা জানা সবার কাছে গিয়েছি কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পেলনা বা আমার কথা শুনতে পেল না। শেষে শ্মশানে এসে কিছু সময় বসে ছিলাম তারপর ভাবলাম রাস্তার লোককে দাঁড়ানোর জন্য হাত দেখাই যদি আমায় দেখতে পায়। যানিস সেই সন্ধ্যে থেকে হাত দেখাছি কেউ দেখতে পেলনা শুধু তুই আমাকে দেখতে পেয়েছিস। তাই তুই আমার কাজ করে দিতে পারবি।

-- আমি কেনই বা তোমার কাজ করে দেব।

-- তুই ছাড়া যে আর কেউ আমায় দেখতে পায় না।

-- তোমায় সাহায্য করলে আমি কি পাবো।

-- আমার কাছে দেওয়ার মতো পার্থিব কিছুই নেই, তবুও তুই বল তোর কি চাই।

-- আমাকে একটু ভাবতে সময় দাও।

-- ঠিক আছে সময় দিলাম।

যেই আমি এতদিন ভূতকে ভয় পেতাম সেই আমিই আজ ভূতের সাথে ডিল করছি, জানি না এত সাহস কোথা থেকে পেলাম। ভাবতে লাগলাম কি বলা যায়। মন পরল মা বলেছিল অমল কাকুর অঙ্কে খুব বুদ্ধি আর সুজনের কাছে শুনেছিলাম ফুটবল খুব ভালো খেলতে।

-- কিরে কিছু ভাবলি।

-- হ্যাঁ ভাবা হয়ে গেছে।

-- তাহলে বল, কিন্তু অবাস্তব কিছু বলবি না।

-- আমাকে অঙ্ক শিখিয়ে দিতে হবে আর ফুটবল খেলার ট্রেনিং দিতে হবে।

-- ঠিক আছে আমার কাছে ১৪ দিন আছে এই সময়ে মধ্যে যতটা পারি শিখিয়ে দেব।

-- তুমি আমার বা আমার পরিবার আত্মীয় দের কোনো ক্ষতি করবে না তো।

-- নারে তুই নিশ্চিত থাক, আমি কোনো দিন কারও ক্ষতি করি নি এখনও করবো না। শুধু মাত্র কাজটা সম্পুর্ণ করেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো।

-- তাহলে তুমি এখন যাও, আমি ঘুমবো সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে অনেক পড়া করতে হবে। আর হ্যাঁ আমি তোমাকে ভূতু কাকু বলে ডাকবে? তোমার কোনো অসুবিধা নেই তো।

-- না , তোর যা মনে হয় তাই বলে ডাকবি ।আচ্ছা আমি এখন চলে যাচ্ছি, তবে তুই যখনই আমার নাম ধরে তিন বার ডাকবি আমি চলে আসব, দিনের আলোতে তুই আমাকে দেখতে পাবি।

-- হুম ঠিক আছে।


দেখলাম ভূতু কাকু চলে গেল, আমার হুস ফিরল আমি বুঝতে পারিনি আমি এতক্ষণ অন্ধকারে কথা বলছিলাম। কেন জানি না মন থেকে ভয় ভাব দূর হয়ে গেছে, আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল আমি ঘুমিয়ে পরলাম।


পরে দিন সকালে নিজের মধ্যে পরিবর্তন বুঝতে পারলাম, সকালে ৭টার আগে ঘুম থেকে উঠতাম না আর মা বই নিয়ে পড়তে বসার কথা বলে বলে বিরক্ত হয়ে যেত তবুও পড়তে বসতাম না। কিন্তু সেই আমি ৬টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসে যাই। রাতের কথা মনে পরতেই ভাবলাম একবার চেষ্টা করি। ঘরের জানালা কপাট বন্ধ করে তিন বার ভূতু কাকু বলতেই, দেখি ভূতু কাকু আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গেলাম, আমার সামনে ভূত দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ভৌতিক মুখ না ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

-- কিরে ভয় পাচ্ছিস নাকি।

-- হ্যাঁ , না। তা একটু ভয় পেয়েছি।

- ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এবার বল আমায় কেন ডেকেছিস।

-- আমাকে অঙ্ক শিখিয়ে দেবে বলেছিলে।

- হ্যাঁ বলেছি যখন কথা রাখবো,এবার বল তোর কথায় অসুবিধা।।


টানা ২ঘন্টা ধরে অংঙ্ক করলাম, সত্যি খুব মজা হচ্ছিল। অঙ্কের মধ্যে ও যে আনন্দ আছে তা আজ বুঝলাম। সবদিন ভয় করতাম, তাই করতে ইচ্ছে করতো না খুব কঠিন মনে হয়। ভূতু কাকুর বোঝানোর মধ্যে একটা অন্য জাদু আছে।।


স্কুল ছুটির পর বন্ধুরা বাড়ি চলে গেছে আমি ফুটবল নিয়ে প্র্যাকটিস করতে লাগলাম। ভূতু কাকু যেমন বলছে আমি শুনছি আর খেলছি। আমি যখন ভূতু কাকুর কথার উত্তর দিচ্ছি তখন আমাকে একা কথা বলতে দেখে বাংলার স্যার বলেন, 

-- এই আদি,কার সাথে কথা বলছি, এমন অলৌকিক কার্য কলাপ কেন করছিস, তখন থেকে দেখছি একা একা বকবক করছি। 

-- না স্যার কারো সাথে না, ওই গান করতে করতে প্র্যাকটিস করছি।

-- হ্যাঁ হ্যাঁ মন দিয়ে প্র্যাকটিস কর, কিছু দিন পরেই তো তোদের ম্যাচ আছে।

-- ঠিক আছে স্যার।


আরও কিছু টা সময় ভূতু কাকুর সাথে প্র্যাকটিস করে বাড়ি ফিরলাম।

 অমল কাকুর কথা কাউকে বললাম না।এই ভাবে পড়াশোনা ওর ফুটবল প্র্যাকটিস মন দিয়ে করতে লাগলাম। আমি পড়া শোনা মন দিয়ে করছি দেখে আমার মা খুব খুশি হয়, সেটা মায়ের ব্যবহারে বুঝলাম। মা ভাবছে বাবা কয়েক দিন আগে পড়ার জন্য খুব বকেছিল, সেই জন্য হয়তো আমার সুমতি হয়েছে। কিন্তু আসল ব্যাপারটা কি সেটা বলেও বিশ্বাস করবে না।


ঠিক চার দিনের দিন আমি ঘুমিয়ে পেরেছি, এমন সময়

-- আদি এই আদি ঘুমিয়ে পরেছিস।

-- না, এখনও ঘুমই নি।

-- জানিস আজ আমি খুব খুশি, আমি যা চেয়ে ছিলাম তার খুব কাছে এসে গিয়েছি, আজ আমার রেজাল্ট এসেছে।

-- কি সব বলছ আমি কিছুই জানিনা। কিসের রেজাল্ট!।

-- ওহো তোকে তো জানানোই হয়নি, আমি কি করতে চলেছি। আমি অঙ্কের ফর্মুলা নিয়ে রিসার্চ করেছিলাম। আমার তথ্য সঠিক কিনা জানার জন্য গবেষণা সংস্থাকে পাঠিয়ে ছিলাম। সেই সংস্থা খবর পাঠিয়েছে তারা আমার ফর্মূলা গুলো দেখতে চায় এবং যদি সব ঠিক থাকে তাহলে বিশ্বের কাছে তুলে ধরবে।

-- Congratulation. 

--Thank you. তবে একটা বড় সমস্যা হয়েছে।

-- কি সমস্যা।

-- এতো দিন ভেবে ছিলাম, সংস্থা থেকে খবর আসলে, রিসার্চ পেপার আমার বন্ধু তপনকে দিয়ে ওই সংস্থার হাতে তুলে দেবো। কিন্তু আজ বন্ধুর আসল চেহারা দেখতে পেলাম এতো দিন পর ওকে চিনতে পারলাম।

-- কি করছে তপন বাবু।

-- আজ সকালে আমার নামে চিঠি আসে, চিঠি পরে আমার বাড়ির লোকজন চিঠির মাথা মুন্ডু বুঝতে না পেরে তপনকে ডেকে পাঠায়। সন্ধ্যা বেলা তপন এসে চিঠিটা পড়ে, চিঠির মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারে। তখনই ওকে ঠিক করে চিনতে পারলাম। আমি এখন আত্মা,লোকের মনের কথা সহজেই শুনতে পারি। তপনতো সেটা জানে না। আমি শুনলাম তপন চিঠি পড়ার পর মনে মনে বলছে,

-- অমন এতদিন ধরে এই সব করছিল, সেই জন্য বাড়ি আসতে চাইতো না। ও এতো চাপা ছেলে এসব বিষয়ে আমাদের কাউকে কিছু বলেনি, ভালোই করেছে না বলে, কেউ জানবেও না। এখন আর অমল বেঁচে নেই, আমি ওর সব রিসার্চ পেপার সংস্থা কে তুলে দিয়ে বলব, এসব আমার, অমল আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল।

তপন মনে মনে হাসছে, অথচ আমার মা জিজ্ঞাসা করতে বলল,

অমল একটা সংস্থা থেকে টাকা ধার নিয়ে ছিল, সেই টাকা ফেরত পেতে, তারা চিঠি পাঠিয়েছে।

মা-- কত টাকা ধার নিয়েছে, অমল তো কোনো দিন এই নিয়ে কিছু বলেনি।

-- ৫০হাজার টাকার মতো।

-- অতো টাকা আমাদের কাছে এখন নেই।

-- আমি এখন দিয়ে দিচ্ছি, আমাকে আসতে আসতে দিয়ে দেবে।। 

আমি ভাবতে পারছি না তপন এতো স্বার্থপর, মিথ্যেবাদী ছেলে। আমার মা ওকে সব দিন ছেলের মতো ভালো বাসে, আর আজ সেই মাকেই মিথ্যে কথা বলল।

-- এখন কি হবে, তপন বাবু সব তথ্য চুরি করে নেবে।

-- তপন কিছু করতে পারবে না। আমার মূল রিসার্চ পেপার আমার অফিসের লোকারে আছে। যার চাবি আর পাসওয়ার্ড আমি ছাড়া কেউ জানে না।

-- এখন কি করবে।

-- এখন একজনই ভরসা, আমার গার্লফ্রেন্ড রমা।

-- তাহলে তাকে গিয়ে সব খুলে বল।।

-- আমি না তুই বলবি। আমি যে এখন শুধুই আত্মা আমি কিছু করতে পারবো না। আমি এখন দেখতে পাই আর শুনতে পাই আর তুইছাড়া আমাকে কেউ দেখতে বা শুনতে পায় না।

-- আমি তো তোমার গার্লফ্রেন্ড কে চিনি না, তাছাড়া সে কেনই বা আমার কথা বিশ্বাস করবে।

-- তোকে এই নিয়ে ভাবতে হবেনা। আমার কথা মতো কাজ করলেই হবে।। আছা তুই কম্পিউটার জানিস।

-- হ্যাঁ, একটু আধটু জানি, স্কুলে শিখিয়ে ছিল।।

-- ওতেই হবে। কাল তথ্যমিত্র কেন্দ্রে গিয়ে তোকে আমার একাউন্ট থেকে ইমেইল পাঠাতে হবে। আমি সব বলে দেবো। সাথে রমা কে একটা চিঠি ও পাঠাতে হবে, যদি ইমেইল না দেখে, চিঠিতো নিশ্চয়ই দেখবে। আর এসব কালকের মধ্যে করতে হবে আমার হাতে বেশি সময় নেই।

--তাহলে এখনই বলো চিঠিতে কি লিখতে হবে। সকালে আমি পড়তে যাবো আমার টাইম হবে না।

-- ঠিক আছে তাহলে এখনই লিখ আর আমি যেভাবে বলছি তুই সেভাবে লিখে যা।


ভূতু কাকু যা যা বলে যায় আমি হুবহু লিখে যাই। লেখা হয়েগেলে,

-- কালকে স্কুলে যাওয়ার সময় পোস্ট করে দিবি। আর বিকেলে ইমেইল টা করতে হবে ।

-- এখন তবে যাও, কাল স্কুল যাওয়ার সময় দেখা হবে।

-- আচ্ছা চলে যাচ্ছি, তবে এই চিঠির ব্যাপারে কাউকে বলবি না বা দেখাবি না।

-- কাউকে বলবো না।



পরের দিন স্কুলে যাওয়ার সময় ভূতু কাকুর কথা মতো চিঠিটা স্পিড পোস্ট করে দেই।তার পর স্কুলে চলে যাই। আমি এখন স্কুলে যাওয়ার সময় বন্ধুদের জন্য দাঁড়াই না আর স্কুল ছুটির পর ওদের সাথে বাড়ি ফিরি না, তাই বন্ধুরা আমাকে উল্টো পাল্টা কথা বলে রাগাতে থাকে । ওরা ভেবেছে আমি প্রেম টেম করছি, তাই জন্য ওদের কে এড়িয়ে চলছি। আসলে আমিতো ওদের কে সত্যি কথা বলতে পারবো না, তাই ওদের কথার কোনো উত্তর দেই না।

 ছুটির পর ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে দেখি ভূতু কাকু আমার জন্য অপেক্ষা করছে,

-- আজকে আর ফুটবল প্র্যাকটিস করতে হবে না, ইমেইল টা করতে সাইবার ক্যাফে চল।

আমি বন্ধুদের বাড়ি চলে যেতে বলে ভূতু কাকুর সাথে সাইবার ক্যাফে গেলাম। সেখানে আধ ঘণ্টার জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতে নিলাম। আমি এখানে কোনো দিন আগে আসি নি, এইটা ভূতু কাকুর খুব পরিচিত, কাকু এখানে প্রায়ই আসতো। যাই হোক কাকুর কথা মতো আমি কাজ করতে লাগলাম। কাকুর মেল আইডি থেকে দুটো মেল করলাম একটা রমা আন্টিকে আর অন্যটা গবেষণা সংস্থাকে। কাকু বলে যাচ্ছিল আর আমি করে যাচ্ছিলাম। করা হয়ে গেলে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসি। 

-- রমাকে চিঠি ও মেল দুটোই করা হয়েগেছে, এখন শুধু উত্তরের অপেক্ষা।

-- তুমি যা চেয়েছিলে তাই হয়েছে।

-- হুম! আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করছি দেখা যাক শেষ মেষ কি হয়।


পরের দিন সকাল থেকে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন ফোন আসবে, রমা আন্টির চিঠিতে আমাদের বাড়ির ফোন নাম্বারটা দিয়ে ছিলাম আমাকে ফোন করার জন্য। ফোনটা এল ঠিক নটার সময় আর সৈভাগ্যবসত আমিই ফোনটা ধরলাম, মা কার ফোন জিজ্ঞাসা করতে বলা আমার বন্ধুর ফোনটা নিয়ে রুমে চলে এলাম। ভূতু কাকুকে স্মরণ করবো ভাবছি কিন্তু রুমে এসে দেখে মনে হল সে আমার জন্যই অপেক্ষা করছে। এরপর রমা আন্টিকে ফোনে ভূতু কাকুর শেখানো কথাগুলো বলে গেলাম।ফোনটা রাখার পর,

--তুমি কি করে জানলে এখন ফোন করবে।।

 - - সকালে পোস্ট মাস্টার চিঠি দিয়ে গেলে, রমা চিঠি পরে প্রথমে খুশি হল কিন্তু পরক্ষনে আমার মৃত্যুর কথা ভেবে দূঃখে চোখের জল ফেলতে লাগল। চিঠি অর্থ জানার জন্য ফোনে নাম্বার ডায়েল করল। তখনই আমি তোর কাছে চলে এলাম, বুঝলি।।



রুমা আন্টিকে ৫টার সময় স্কুল মাঠে আসতে বলা হল। দুদিন পরে ক্লাস ১০ v 12 ফুটবল ম্যাচ। বাকিরা প্রাকটিস করে আগেই বাড়ি চলে গেছে আমি এখন ও প্রাকটিস করছি আসলে এত খন সবার সামনে ভূতু কাকুর সাথে কথা বলত পারছিলাম না।এখন কথা বলতে পারছি কিন্তু কিছুতেই খেলায় মন লাগাতে পারলাম না শুধু মাঠের বাইরে দেখতে থাকলাম রুমা আন্টি কখন আসবে। যদিও আমি তাকে চিনি না। ভূতু কাকু আমাকে একটা মেয়ে কে দেখিয়ে বলল ওটা রমা সেন। আমার খুব নার্ভাস লাগছিল জানি না কিভাবে সব কিছু ঠিকঠাক বলল আর সব শুনে রুমা আন্টি আমার কথা বিশ্বাস করবে কিনা। আমিই এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দিলাম। এরপর সমস্ত কিছু খুলে বললাম, কিন্তু সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সে একজন বিজ্ঞানের স্টুডেন্ট এসব ভুত টুত মানে না তাছাড়া মৃত্যুর পরেও আত্মা কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য পৃথিবীতে থেকে যেতে পারে এটা অবিশ্বাস্য। আমি তাকে আর ও বলাম যে অমল কাকু এখন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এবং আমাদের কথা শুনছে। সে বলল এটা কখনই সম্ভব নয়। আমি বললাম প্রমান করার জন্য কিছু প্রশ্ন করুন যদি সঠিক উত্তর দেই তাহলে তো বিশ্বাস করবেন। এরপর রমা আন্টি নানান প্রশ্ন করতে লাগল, আমি কাকুর কাছ থেকে যেনে সব সঠিক উত্তর দিলাম, কিছু গোপন কথাও যা অমল কাকু আর রমা আন্টি ছাড়া কেউ জানে না। প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলার পর কিছুটা বিশ্বাস করলো, তবে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারছে না। যাই হোক এতেই হবে, আমিও কিছুটা নিশ্চিত হলাম। সেই দিন রমা আন্টি চলে গেলে,

রাস্তায় আসতে আসতে ভূতু কাকু বলে ,

-- আদি ,তোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তোর জন্যই আমার কাজ যোগ্য স্থান পেতে চলেছে।

-- রমা আন্টি তো এখনও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতো পারছে না।

-- যতোটা বিশ্বাস করেছে এতেই হবে। যখন আমার লোকার খুলে রিসার্চ পেপার দেখবে তখন আর অবিশ্বাস করতে পারবে না।

-- কিন্তু আমি সঙ্গে যেতে পারবো না, আমার একদিন পরে ম্যাচ আছে তাছাড়া বাড়িতে কি বলবো।

-- তোকে সঙ্গে যেতে হবে না, আমি যা যা বলব, সেগুলো রমাকে বললেই হবে।

-- কিন্তু রমা আন্টি কি বিশ্বাস করবে।

-- হ্যাঁ দেখবি সত্য যাচাই করার জন্য আজকেই তোকে ফোন করবে।

আমিতো রমাকে চিনি ও কিছুতেই এসব শুনার পর বাড়িতে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারবে না।

-- তাহলে খুব ভালোই হবে।

-- তাই হবে এখন বাড়ি যা।


সেই দিন সন্ধ্যায় টিউশান ছিল না, বাড়িতেই ছিলাম। ঠিক ৮টার সময় মা বলল, তোর স্কুলের একটা ম্যাডাম ফোন করছে। আমাকে ফোনটা দিয়ে গেল, ভাবলাম আমাকে আবার কোন ম্যাডাম ফোন করবে। কথা বলে বুঝালাম, কোনো ম্যাডাম না রমা আন্টি ফোন করেছে। পরের দিন স্কুল ছুটির পর দেখা করতে চায়। আগের দিনের মতো টাইম এবং জায়গা বলে দিলাম। সত্যি ভূতু কাকু যা বলে ছিল তাই হল। সেই দিনই ফোন করল।


পরের দিন ঠিক সময়ে ভূতু কাকু আর আমি রমা আন্টির সাথে দেখা করি। রমা আন্টির সমস্ত কিছু জেনে নিল, আমি সত্যি বলছি না মিথ্যে সেটা সঠিক প্রমাণ করতে চায়। আমাকে সঙ্গে যেতে বলেছিল, কিন্তু আমার যাওয়া সম্ভব নয়, বাড়িতে আমি কি বলবো তাই সব কিছু ভূতু কাকুর কথা মতো বলে দিলাম। আমি সঙ্গে যেতে পারবো না সেই জন্য একটু চিন্তায় পরে যায়, যদি সব ঠিকানা ঠিক না হয় তখন সমস্যা হবে তাই আমাকে স্কুলে যেতে মানা করল। কিন্তু আমার কালকে ম্যাচ, তাই বললাম একদিন পরে যেতে তাহলে কোনো অসুবিধা হবে না। এতে রমা আন্টি রাজি হয়ে যায়।আসলে যদি কোনো অসুবিধা হয় তাহলে আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারবে তাই কোনো রিস্ক নিতে চাইল না।আর বলল অমল কাকুর বাড়ি থেকে লোকারের চাবি জোগাড় করতে।এই কাজটায় একটু রিস্ক আছে তবে খুব সুবিধা হবে । তাই আর ও এক দিন পরেই যাবে ঠিক করল । সমস্ত কিছু সঙ্গে নিয়েই যেতে চায়। আর বলল আমি যেন ফোনের কাছা থাকি যদি ফোন করে আমি যেন রিসিভ করি।


আজ আমার স্কুলে ফুটবল ম্যাচ , আগে দুটো ম্যাচ আমরা হেরেছি , তাই সবাই ভাবছে এই ম্যাচ টাও আমরাই হারে যাবো ।আমরা চাই ঘুরে দাঁড়াতে তাই আমরা খুব প্রাকটিস করছি।

টিফিনের পর ম্যাচ শুরু হয় , প্রথম সেশনে আমরা কোনো গেল দিতে পারলাম না, ওরা আমাদের কে একটা গোল দেয়। আমি ভূতু কাকুকে স্মরণ করলাম , না হলে আমরা হেরে যাবো। ভূতু কাকু আমার ভূল টা ধরিয়ে দিল আর কি ভাবে ওদের কাছ থেকে বল ছিনিয়ে ওদের কেই গোল দিতে হয় দেখিয়ে দিল। আমি এই ভাবে একা একা বকছি দেখে আমাদের টিমের রতন বলল , মন খারাপ করিস না। আমি ওর কথার উত্তর না দিয়ে খেলতে লাগলাম। পর পর দুটো গোল দিলাম। সবাই আমার খেলা দেখতে লাগলাম আমি এতো সুন্দর সট কি করে মারলাম। এর পর আর ও দুটো গোল হেড মেরে করলাম।আমরা মোট ৫টা গোল দিলাম তার মধ্যে আমি একাই ৪টা । আমারা ৫-১ ম্যাচ জিতে নিলাম। সবাই আমাকে চ্যাং দোলা করে নাচতে লাগলো। স্কুলের স্যার ও আমাকে জিজ্ঞেস করল কোথা থেকে এই রকম চতুর সট শিখেছিস। আমি বললাম আমার এক মামা শিখিয়েছে, আমি কিছুতেই ভূতু কাকুর কথা বলতে পারলাম না,আর বলাও সম্ভব নয় , তাই বেশি কিছু বললাম না।




পরের দিন স্কুলে গেলাম না, সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকলাম যদিও পড়ায় মন নেই তবুও মাকে দেখাতে যে আমি বাড়িতে পড়ব তাই স্কুলে গেলাম না।আর সময় দেখার জন্য ফোনটা কাছে রাখলাম। আজ একবার ও ভূতু কাকু আসেনি হয়তো রমা আন্টির সাথে আছে। ১২টার সময় রমা আন্টির ফোন আসে,

- হ্যালো আদি , তোমার কথা ঠিক ,আমি অমলের লোকার থেকে রিসার্চ পেপার গুলো দেখলাম,সব মিলে যাচ্ছে। সত্যি বলছি আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।

- খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়নি তো।

- একটু সমস্যা হয়ে ছিল, প্রথমে ওরা আমাকে লোকার খুলতে দিচ্ছিল না, আসলে আমার আগে ও একজন এসেছিল লোকার খোলার জন্য ডুপ্লিকেট চাবির খোঁজ করছিলেন। আমার মনে হয় তপন বাবুই হবেন। শুধু বলেছিল অমলের খুব কাছের বন্ধু। কিন্তু ওরা যা জিজ্ঞাসা করেছিল তার সঠিক উত্তর ও দিতে পারেনি আর তার কাছে কোনো প্রমান ও ছিল না । আমার ভাগ্য‌ ভালো আমার কাছে লোকারের চাবি  এবং কিছু প্রমাণ ছিল। আমি আমার পরিচয় এবং প্রমান দেখাতেই আমাকে লোকার খুলতে দিয়েছে। এই সব তোমার জন্য হয়েছে, তুমি যদি এগুলো না এনে দিতে তাহলে হয়তো আমাকে ও লোকার খুলতে দিত না।

- সবই অমল কাকুর কথা মতো করেছি ।তবে বাড়ি থেকে চাবিটা আনা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। করতে পেরেছি এতেই আমি খুশি। আচ্ছা আন্টি পরে কথা বলবো আমার মা এখন আমাকে খেতে ডাকছে,

 ঠিক আছে পরে কথা হবে।

- আচ্ছা কালকে দেখা করো।

- স্কুল ছুটির পর।

- আচ্ছা তাই আর আমি এদিকে সব ব্যবস্থা করছি।


অমল কাকুর বাড়ি থেকে লোকারের চাবি আর আইডেন্টি প্রভ জোগাড় করাটা খুব রিস্কি ছিল। তবে সুজন আমাকে সাহায্য করেছে কিন্তু ও এই বিষয়ে কিছুই জানে না। বুদ্ধি টা আমি খাঁটিয়ে ছিলাম বাকিটা অমল কাকু সাহায্য করেছে। রবিবার দিন বিকালে আমি সুজনদের বাড়ি গেলাম,ওকে বললাম,অমল কাকুর সাথে একমাস আগে দেখা হয়েছিল ,সে আমাকে আসতে বলেছে আর আমাকে দুটো বই দেবে বলেছিল, আরও বলেছিল যদি সে না বাড়িতে থাকে তবে যেন তার মায়ের কাছে থেকে নিয়ে আসি । আমার কথা শুনে সুজন বলল, তোর কবে কাকুর সাথে দেখা হয়েছিল, তুইতো আমাকে আগে বলিস নি। আমি অনর্গল মিথ্যা কথা বলে গেলাম বললাম, আসলে আমি ভূলে গিয়েছিল ।আজ মা বলতে মনে পরে গেল। এখনতো আর কাকু বেঁচে নেই তাই বই গুলো পাবো কি করে সেটাই ভাবছি। সুজন সঙ্গে সঙ্গে বলে কোনো চিন্তা করিস না আমার ছোট ঠাকুমা খুব ভালো কাকু যদি সত্যিই তোকে বই দেবে বলছিল তবে তুই পেয়ে যাবি। ছোট ঠাকুমাকে গিয়ে বললে কাকুর ইচ্ছে নিশ্চয়ই পূরন করবে ,তার জন্য আমি গিয়ে ছোট ঠাকুমাকে বলবো,চল এখনই আমার সাথে চল। 

আমি সুজনের পিছু পিছু অমল কাকুর বাড়ি গেলাম, গিয়ে আমাকে কিছুই বলতে হল না সুজনই সব বলল‌। দেখলাম কাকুর মা তেমন কিছু বলল না শুধু বলল,অমল যখন দেবে বলেছে ,তখন ওকে ঘরে নিয়ে যায় আর দেখিয়ে দে কোথায় বই - পত্র আছে।যার এই সব সে তো আর বেঁচে নেই একেই বা পড়বে ,তার থেকে যদি তোদের কাজে লাগে তোরা নিয়ে যা । তবে একটা কথা নষ্ট করবি না, আমার অমলটা বই পত্র খুব যত্ন করে রাখতে, বলেই কাঁদতে লাগলো। আমি কাকুর ঘরে গিয়ে চোখ চারাতে লাগলাম,তখন কাকু আমার সাথেই আছে ,তার মাকে এই ভাবে কাঁদতে দেখে সেও খুব দুঃখ পেয়েছে। বই খুজতে খুজতে আমি সুজনকে বললাম একটু জল আনা আনার জন্য আমার খুব তেষ্টা পেয়েছে। সুজন রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি লোকারের চাবি এবং কিছু প্রমান আমার পকেটে ভরে নিলাম। আমি খুব সহজেই সব পেয়ে গিয়েছি কারণ কাকু তো আমার সাথেই ছিল। এর পর দুটো বই নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি , আমার দেখা দেখি সুজন ও একটা বই নিয়ে নিল। আসলে কাকুর বাড়িতে অনেক বই আছে , কাকু সবাইকে পড়তে দিত ,তাই আমার ও কোনো অসুবিধা হল না। খুব সহজেই চাবিটা পেয়ে গেলাম। 


বিকেলে থেকে খুব বৃষ্টি পরছে তাই টিউশান যায় নি। মা খুব বকেছে তাই তাড়াতাড়ি পড়তে বসে যাই। অঙ্কটা বুঝতে পারছি না বলে ভূতু কাকুকে স্মরন করতেই ,কাকু হাসি মুখে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

- সত্যি আদি তোর জন্যই আমি আমার স্বপ্ন পূরনের খুব কাছে এসে গিয়েছি।

- এতোক্ষণ কোথায় ছিলে।

- আজ সারাদিন আমি রমার সাথেই ছিলাম। রমা আমাকে দেখতে পায়না, কিন্তু আমি তো ওকে দেখে পাই।তাই যদি কোন অসুবিধায় পরে তখন তোর মারফত ওকে সাহায্য করবো , এই ভেবে ওর সাথে ছিলাম।

- তুমি আর কত দিন থাকবে।

- আর মাত্র ৪ দিন।

- এর মধ্যেই তোমার সাফল্য দেখে যেতে পারবে।

- না তা হয়তো পারবো না, তবে আমি সাফল্য যে নিশ্চিত তা দেখে যেতে পারবো।

- আমার কি হবে।

- কি আর হবে এই তো তুই এই কয়েক দিনে ভালোই করছিস। তাছাড়া আমি যতো দিন আছি তোকে আর ও ভালো করে শিখিয়ে দেব।

- তাই যেন হয়।

- এখন বল কেন ডেকেছিস।

- এই অঙ্কটা বুঝতে পারছি না।

- নে শুরু কর আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।



শেষ কটা দিন আমি মনদিয়ে আর ও ভালো করে শিখে নিলাম । এদিকে রমা আন্টিও ভূতু কাকুর আবিস্কৃত অঙ্কের ফর্মূলার সমস্ত পেপার রিসার্চ সেন্টার হাতে তুলে দিয়েছে, তারা পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখেছে ,সব ঠিক আছে।তবে আরও কিছু দিন লাগবে এই ফর্মূলা ঠিক প্রমান করতে, অনেক বিশেষজ্ঞ এই নিয়ে পরিক্ষা নিরিক্ষা করছে। কিন্তু ভূতু কাকুর নিজের আবিষ্কার নিজের চোখে দেখে যেতে পারবে না।


আজ সেই বিশেষ দিন,আজ ভূতু কাকুর পৃথিবী‌ ছেড়ে চলে যাওয়ার পালা। তাই রমা আন্টি আসছে , অমল কাকুকে শেষ বিদায় জানাতে। বিকেলে পাঁচ টার সময় মাঠে এক প্রান্তে রমা আন্টি আমার জন্য অপেক্ষা করে । আমি ও বন্ধুদের দিকে বাড়ি চলে যেতে বলে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হই । দেখি রমা আন্টির মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিন আমার ও মন খারাপ, ভূতু কাকু চলে যাবে আর আসবে না আর কোনো দিন তাকে দেখতে পাবো না। ভূতু কাকু, আমি আর রমা আন্টি প্রায় ১এক ঘন্টা কথা বললাম। আমাদের মতো তার ও মন খারাপ। শরীর ত্যাগের পরেও পৃথিবীতে থাকতে পেরেছিল।মা বাবা আত্মীয় স্বজন সবাইকে দেখতে পাচ্ছিল । কিন্তু আর কাল থেকে দেখতে পাবে না আজ তার পৃথিবীতে শেষ দিন। কোনো ভাবেই আর সবাইকে দেখা সম্ভব হবে না,তবে তার জীবনের শেষ স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে খুব খুশী হয়েছে।এটা ভেবে পৃথিবী থেকে যেতে পারবে যে আমার আবিষ্কার বিফলে যাই নি। আমি সাহায্য করার জন্য আমাকে একটা উপহার দিয়েছিল ।

ভূতু কাকু আমাকে যাওয়ার আগে একটা শক্তি দিয়ে ছিলে, সেটা হল আমি অন্যের মনের কথা বুঝতে পারবো।এই ভাবে, যদি কেউ আমার সামনে মিথ্যা কথা বলে তাহলে আমার কানের কাছে একটা শব্দ হবে তখন আমাকে বুঝে নিতে হবে সামনে জন আমাকে মিথ্যা বলছে। 


 ভূতু কাকু বলল, আমাকে এবার যেতে হবে আমার যাওয়া সময় হয়ে এসেছে। শুনে রমা আন্টি খুব কাঁদতে লাগলো, তার দেখে দেখি আমি ও শুরু করলাম।ভূতু কাকু আমাদের বোঝাতে লাগলো কাঁদলে তার আরও বেশি কষ্ট হবে। যেহেতু তাকে যেতেই হবে তাই আমার যেন তাকে হাসি মুখে বিদায় জানাই। সব শেষে বলল আমাকে বলল,

- আমার শেষ ইচ্ছে পূরনের জন্য তুই যা করেছিস ,তা ধন্যবাদ দিয়ে তোকে ছোট করবো না । শুধু এটুকুই বলবো আদি তুই জীবনের আরও বড় হবি , অনেক নাম করবি। আমি যেটা করতে পারলাম না তুই সেটাই করবি।

আর রমা আন্টি কে বলল,

-- রমা তুমি আমার জন্য অনেক করেছো , আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। এবার আমাকে ভুলে গেছি জীবনে এগিয়ে যেতে শুরু করো।

আমি ও বললাম, 

- ভূতু কাকু,এই যা ভূতু বলে ফেললাম।

-- আমি তোর কাছে ভূতু কাকু হয়েই থাকতে চাই।

-- ভূতু কাকু তুমি আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছো , তোমার জন্য আজ আমি ভালো ফুটবল খেলতে পারি। সাথে অঙ্ক ও ভালোবাসতে শিখলাম, তুমি না আসলে জানতাম না অঙ্ক টা এতো মজার বিষয়।

 রমা আন্টি কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই দেখলাম দুজন লোক কাকুকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো, কাকু আমাদের কে টাটা করছে , আমিও টাটা করলাম । আমাকে টাটা করতে দেখে রমা আন্টি ও হাত নাড়তে থাকল।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভূতু কাকু কোথায় মিলে গেল। মনটা আমার খুব ভার হয়ে গেল আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো।এখন রমা আন্টি আমাকে সান্তনা দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলল, সেও বাড়ির দিকে চলতে শুরু করল।



এই ঘটনার পর ১০ বছর কেটে গেছে, এখন ও আমি ভূতু কাকুর কথা ভুলতে পারি না। সেই ১৪দিন ছিল আমার জীবনে বিশেষ দিন ,সেই সময় থেকেই আমার জীবনে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বর্তমানে আমি একটা গবেষণায় সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। পাশাপাশি একটা আশ্রম আছে সেখানে গবির ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা খরচা চালাই । আমি আর রমা আন্টি মিলে এই আশ্রমের দেখা শোনা করি। রমা আন্টি কলেজ অধ্যাপক,তবে এখন ও বিয়ে করেন নি। ভূতু কাকুর স্মৃতি নিয়েই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন।অমল কাকুর নামে এই আশ্রম। আমার জীবনে ভূতু কাকুর অবদান কম নয় তাই যত দিন বাঁচবে ভূতু কাকুকে মনে রাখবো।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror