Manab Mondal

Abstract Classics

4  

Manab Mondal

Abstract Classics

ভুতের সাথে ঘন্টাখানেক

ভুতের সাথে ঘন্টাখানেক

4 mins
323


তারাপিঠ গিয়েছিলাম , বাপি মামার সাথে, নেশায় ঢুলতে ঢুলতে শশ্মান থেকে বেরিয়ে , এসে টোটো ধরে আটলা গ্রাম , বাবা ক্ষ্যাপার জন্ম ভিটা পেরিয়ে গিয়ে ক্ষ্যাপি মায়ের থানের কাছে গিয়ে গাড়ি থামলো। সেখানে কাকতাড়ুয়া মতো রোগা এক তান্ত্রিক সাধু দাঁড়িয়ে। কুমড়োর ফালির মতো তার চওড়া হাসি। আমাকে দেখে বললো " এ তোমার লেখক ভাগ্নে বাপি। নুন ছাড়া ডিম সিদ্ধ , দাড়ি ছাড়া লেখক কিন্তু মানায় না।"

রসিকতা ঠিক ভালো লাগলেও হজম করে নিলাম। কারণ উনি নাকি তার পাঁচ টা ভুত ধরে রেখেছে। তবে ভয়ে কোন কারণ নেই, ওদের মুলোর মতো দাঁত, কাস্তের মতো নখ গুলো কেটে দিয়েছে আগেই। এই ভুতো গুলো বিভিন্ন জমিদার বাড়ি থেকে ধরা‌ । আমার কাজ ওদের ইন্টারভিউ ছলে ভাব জমিয়ে জমিদার বাড়িতে কোথাও গুপ্তধন লোকানো থাকলে তা জেনে বার করা।

প্রথম বোতলটা খুলতেই ।প্রফুল্লতা সাথে তুলোর মতো সাদা বাতাস বেরিয়ে এলো।এসেই খুব মিষ্টি ভাষায় " ঠ্যাঙ কিউ "বললো কেউ একজন । গলা শুনে বুঝতে পারলাম একটা স্ত্রী ভুত। মেয়েদের সাথে আমি এমনিতেই কথা বলতে ভয় পাই, তারপর আবার এ মহিলা ভুত। কোষ্ঠকাঠিন্য ভোগা লোকের মতো বললো " আপনি যদি সামনে প্রকট হন ভালো হতো, কারণ আপনার সাথে কথা বলতে সুবিধা হতো "

উনি বললেন " ইস্ আমি বললাম আমাকে একটু ছাড়ে দিতে ,ওরা ছাড়লো না, বিউটি পার্লার না গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়া যায় নাকি। একে আমাকে দেখেতে রানু মন্ডলের চেয়েও খারাপ হয়ে গেছে। আমার ভুঁত লোকের বর বলে এক মাত্র চোখটা ই এক আছে। "

আমি বললাম " আমি তো প্রিন্ট মিডিয়ার লোক। ছবি না হয় পরে পাঠিয়ে দেবেন সামনাসামনি কথা বলতে একটু সুবিধা হবে। আপনি মহিলা বলে লজ্জা পেলে অন্য কথা.."

মহিলা ভুত টা বললো-" রাতের পৃথিবীটার মালিক শয়নকক্ষ সুন্দরী মহিলা, তা রাতের বেলায় আমি ভুত হয়ে ভয় পাবো কেন, তাছাড়া আমি শাকচুন্নি মানে বিবাহিত, তাই কিছু উল্টো পাল্টা করলে তোকে মেরে পাটলাস করে দেবে তুই কি ভেবেছিস তোরা আমাকে ধরেছিস না আমি , আসলে একটু পাবলিসিটি চাই তাই ধরা দিয়েছি!"

আমি বললাম ' ইন্টারেস্টিং পাবলিসিটি কেন?"

শাকচুন্নিটা বললো " মানে তোরা ফেসবুক , টুইটার, ইস্টাগ্রাম করে পাবলিসিটি করিস আমরা করলে দোষ। Google সার্চ করে দেখবি রামজি ফিল্ম সিটিতে রাতের বেলায় ভুতের উপদ্রব হয়। কারণ ওরা ফ্লিমে অভিনয় করতে চায়, ভুত বলে কি। সাধ আলাদা নেই।"

আমি বললাম " তা ঠিক..."

উনি বেশ উৎসাহ পেয়ে বললো " কোলকাতায় national লাইব্রেরি তে ভুত আছে , কারণ ভুতেরা বই পরতে ভালো বাসে। কিন্তু কোন হাসপাতালে ভুত পাবে না শরীর নেই তাই শরীর খারাপ হয়না। রেড রোডে ট্যাক্সি দাঁড়করানো ভুতের গল্প শুনবে কারণ আমরা ও ভুতেরা ও লং ড্রাইভে যেতে ভালোবাসি।রাজ কিরন হোটেলের নাম শুনেছেন। সুন্দর এই হোটেলটিকে ভারতের সব থেকে বড় ভৌতিক হোটেল হিসেবে অনেকেই দাবি করেন। হোটেলের রিশেসনের কর্নারে থাকা একটা ঘরকে ভূতুড়ে ঘর হিসেবে দাবি করে থাকেন সবাই । মানে কি দাঁড়ালো ভুতরা ঘুরতে যেতে ভালোবাসে।"

আমি বললাম " হুঁ"

উনি বললেন " আচ্ছা আমি তো বলে যাচ্ছি আপনিতো কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না.."

আমি হেসে বললাম "আসলে মহিলাদের সাথে আমি কথা বলতে বিব্রত বোধ করি, আমার স্ত্রী আমার শক্তি কিন্তু বাকি সব মহিলারা আমার দুর্বলতা."

কথা শুনেই দেখি উনি আমার সমানে হাজির হলো। হেসে বললো " পেত্নী আর পত্নী দুটোই সমার্থক শব্দ জানেনতো, ঘাড়ে চাপলে নামবো না সহজে।"

আমি বললাম " না না আমি এখনো সিঙ্গেল, "

পেত্নী বললেন " এ বাবা বয়সতো অনেক হলো বিয়ে করলেন না কেন?"

আমি বললাম " সে দুঃখের কাহিনী নাইবা শুনলেন।"

উনি বললেন " দুঃখ এর কথা ভাগ করলে ব্যাথা কমে , বলে ফেলুন না.."

বললাম " বিয়ে করার ইচ্ছা তে ছিলো তা নয়। চাকুরীর পেতে দেরি হয়ে গেলো। যাইহোক প্রথম দেখাতেই পাত্রী পছন্দ হয়ে গেলো। মিষ্টি মুখ করাতে পাত্রীর মা এসে যখন আবার এলেন , তখন বলেই ফেললাম আপনাকে কিন্তু খুব চেনা চেনা লাগছে। উনি বললেন ,' থাক সে কথা পরে হবে ।' কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা, অনেক পেরাপেরি করতে রেগে গিয়ে বললেন ' দুই বছর পিঁপড়া মতো পিছু পিছু ঘুরে সরস্বতি পূজার দিন love letter দেলে তাকে তুমি ভুলে গেলে, তাহলে, আমার মেয়ের জন্মদিন বিয়ে বার্ষিকী দিন কিভাবে মনে রাখবে তুমি রোজ তো ঝগড়া তোমাদের।বিয়ে ভেঙে গেলো, আর পাত্রি দেখতে যেতে সাহস পাইনি "

গল্পটা শুনে উনি গাড়ি ইনঞ্জিন স্টার্টের মতো একটা হাসি হাসলেন।

মনে মনে কষ্ট হলো তাই প্রসঙ্গ ঘড়াতে জিজ্ঞেস করলাম " আপনি কি করে ভুত হলেন। "

উনি বললেন " আমার স্বামী কপালের দোষে"

আমি বললাম " সে কি কথা স্বামীকে না দোষ দিয়ে তার কপালকে দোষ দিচ্ছেন যে!"

উনি বললেন " আমার স্বামীর সাথে সেদিন আমার খুব ঝগড়া হয়েছিলো। মুড অফ নিয়ে কাজ এ গিয়ে চাকরিটা হারালো। মনের দুঃখে ঘরের বসে ক্লোডড্রিংস ঢেলে খাতে যাচ্ছিল, আমি দেখে ওটা খেয়ে ফেললাম। কিন্তু ওর কপাল খারাপ, ও বিষ তিতো হয় বলে ওতে ক্লোডড্রিংস মিশিয়ে ছিলো, তাই আমার গল্পটা ওখানেই end হয়ে গেলো। "

আমি একটু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দেখলাম পূর্ব আকাশটা লাল হবে হবে করছে। তাই আমাদের আড্ডাটা আজ এখানে ই শেষ করতে হলো।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract