Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sonali Basu

Crime Tragedy

3.3  

Sonali Basu

Crime Tragedy

ভুলের মাশুল

ভুলের মাশুল

5 mins
3.6K


দরজার চাবি খুলল শ্রুতি। তালার ওপর বেশ ধুলোর আস্তরণ পড়েছিলো যা হাতে লেগে গেলো। হাত দুটো দেখে প্যান্টের পাশে মুছে নিলো ও তারপর দরজায় ঠেলা দিলো। দরজা খুলে যেতে বন্ধ ঘরের এক অদ্ভুত গন্ধ এসে নাকে ধাক্কা দিলো ওর। ও চুপচাপ ঘরে ঢুকলো। ঘরটা যেমন রেখে গিয়েছিলো ও তেমনই রয়েছে। জানলাগুলো এক এক করে খুলল। জানলাগুলো খুলে যেতেই দিনের আলোয় ভরে উঠলো ঘরটা। আসবাবপত্রের ওপর চাদর ঢাকা ছিল সেগুলো এক এক করে সরালো। তারপর ঝাঁটা খুঁজে ঘর পরিষ্কার করা শুরু করলো। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে শেষ হল পরিষ্কার পর্ব। তারপর স্নান সেরে ও এলো ঠাকুরঘরে। ঠাকুর প্রণাম সেরে ও এলো শোয়ার ঘরে। খাটের ওপর উপুড় করা একটা ছবি ছিল। সেটা হাতে নিলো ও। এক সুপুরুষের ছবি সেটা। বয়েস পঁচিশের কাছাকাছি হবে। দক্ষিণের দেওয়ালে সেটা ঝোলালো ও তারপর অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। এক ফিকে হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে। ফিসফিস করলো – কেমন আছো?... হাসছ যে? ভালোই আছো তাহলে? আর দেখো আমি কেমন আছি? তোমার বিরহে এক কাতর প্রেমিকা! জিবন্মৃত এক শরীর শুধু। তোমাকে ভালোবেসে কি ভুল করেছিলাম? কাউকে ভালোবাসা কি ভুল? তোমার কি মনে হয়? ... তোমার আর কি মনে হবে? ভুলই তো ভেবেছিলে... বলেও ছিলে তোমাকে ভালোবাসা আমার ভুল। কারণ? তুমি আমাকে নয় আমার যমজ প্রতিবিম্ব স্মৃতিকে ভালোবাসো। কিন্তু কেন? আমাকে নয় কেন? স্মৃতি আর আমার মধ্যে তফাৎ কোথায়? আগাগোড়া এক। তবে? এই তবেটাই বুঝতে পারলাম না আমি। প্রশ্ন করেছিলাম বলে দূরে সরে গেলে... এতটাই দূরে যে নাগাল পাওয়া কষ্টকর হয়ে উঠলো। আমি কি এতটাই খারাপ ছিলাম?

খানিক চুপ করে থাকার পর খিলখিল করে হেসে উঠলো শ্রুতি। তারপর বলল – বেশ হয়েছে তুমি তারও হতে পারনি যে আমাদের মাঝে এসেছিলো! এখন তুমি শুধু আমার শুধুই আমার, আর কেউ কেড়ে নেবে না! আজ আমি তোমার প্রিয় গানটা বাজাবো তুমি শুনবে আনন্দ পাবে

ছবির পুরুষটি হাসল কি না বোঝা গেলো না। পাশের ঘরে চলে গেলো শ্রুতি। খানিক পর ফিরে এলো একটা গীটার হাতে। বেশ গুছিয়ে বিছানায় বসে ও বাজাতে শুরু করলো রবীন্দ্রনাথের গান বাজানো।

স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষা দেওয়ার পর শ্রুতি আর স্মৃতি দুজনেই বাড়িতে বসে থেকে থেকে বিরক্ত হচ্ছিলো। স্মৃতির বহুদিনের শখ গান শেখার। ছোটবেলায় শিখতো কিন্তু উঁচু ক্লাসে ওঠার পর পড়াশোনার চাপে আর চালিয়ে যেতে পারেনি। মা বলেছিল স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়ার পর আবার শিখতে পারবে ও। কিন্তু সেই সুবর্ণ সময়টুকু আসার আগেই মা চলে গেলো পরপারে। মা চলে যাওয়ার পর সংসারের ব্যাপারে বাবার আর কোন কথা বলার ইচ্ছেই রইলো না। পাড়ার এক কাকিমাকে ধরতে তিনি গন্ধর্বর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। সে রাজি হলো সপ্তাহে একদিন করে গীটার শেখাতে। স্মৃতির শেখা দেখে শ্রুতিও ধরে বসলো ও শিখবে। দুজনকেই মন দিয়ে শেখাতো গন্ধর্ব, কিন্তু শেখার থেকেও শ্রুতির মন পড়ে থাকতো কবে ও ওর ভালোবাসার মানুষকে মনের কথা বলবে।

বাজানোতে বেশ মন বসে গিয়েছিলো শ্রুতির যে ও খেয়াল করলো না চারদিকের পরিষ্কার আকাশটাকে হঠাৎ করেই ঘন কালো মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। জানলা পর্দা উড়তে শুরু করলো। খানিকক্ষণ বাজানোর পর বাজনা থামতেই কেউ হাততালি দিয়ে উঠলো। খানিক চমকেই মুখটা তুলল ও কারণ ঘরে ও ছাড়া তো আর কারো থাকার কথা নয়। বিছানার সামনের চেয়ারে গন্ধর্ব বসে। “দারুণ বাজালে, খুশি হলাম, তোমাকে শিখিয়ে আমি সার্থক”

“কখন এলে তুমি? বুঝতেই পারিনি”

“তোমার বাজনাই আমাকে টেনে আনলো”

“খুশি হয়েছ তুমি, জেনে ভালো লাগলো”

“কিন্তু তুমি ভালোভাবে শিখলেও আরেকজনকে নিয়ে আমি একেবারেই খুশি হতে পারিনি। তোমার বোন স্মৃতি”

“তাই কি? তুমি তো ওর প্রতি একটু বেশিই মন দিতে তা কি আর আমি বুঝিনি! তখন তোমার আরেক ছাত্রী শিখল কি বা কত দূর এগোল তা কি জানতে চাইতে? তার দিকে কতটুকু বা মন দিতে”

“তাই বুঝি ওকে সরিয়ে দিলে?”

“আমি সরাতে যাবো কেন? ও নিজেই সরে গেছে। তোমাকে তো আলাদা করে চিঠি দিয়ে সব জানিয়ে গেছে। সে চিঠি তো তুমি আমাকে দেখিয়েছ”

“কিন্তু সে চিঠি নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে”

ব্যঙ্গের হাসি ফুটে উঠলো শ্রুতির মুখে “সন্দেহ? কাকে সন্দেহ, আমাকে? এত দিন পর প্রমাণও তো কিছু আর করতে পারবে না”

“আমার প্রমাণ করতে বয়ে গেছে। যা করার তুমিই করবে”

“আমি আবার কি করবো এখন? আমি তো এসব কিছুই করতে চাইনি। তুমি বাধ্য করলে। আমি ভালবাসলাম তোমায় আর তুমি প্রেমে পড়লে বোনের। চোখের সামনে তোমাকে একটু একটু করে হারাতে দেখলাম আর ক্ষতবিক্ষত হলাম। প্রেমের আগুনে স্মৃতি গলে গলে পড়লো আর আমি পলতের পোড়া পুড়লাম। শেষে আর সহ্য হল না যখন তুমি জানালে এবার তুমি বাবার কাছে স্মৃতি হাত চেয়ে নেবে”

“তাই ওকে সরিয়ে দিলে?” দ্বিতীয়বার প্রশ্নটা করলো গন্ধর্ব।

“বেশি কিছু করিনি তো। গরমের ছুটিতে বাবা দিঘা বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলো ও সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে ডুবে মরেছে”

“তুমি ওকে জলের তলায় চেপে ধরে রেখেছিলে যতক্ষণ না ওর প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যায়”

“ও জেনে ফেলেছ তুমি! হ্যাঁ , করেছি! স্বীকার করছি! বেশ করেছি! আমার কোন দুঃখ নেই তাতে। এবার তো তুমি আমার হবে ... শুধুই আমার ...... কিন্তু তুমি এতসব জানলে কি করে”

“তোমার কি মনে হয় কে বলেছে আমাকে?”

“কে আর বলবে আন্দাজ করেছো হয়তো! বাদ দাও পুরনো সব কথা। এসো আমায় আলিঙ্গন করো, যেভাবে তুমি স্মৃতিকে করতে”

“সম্ভব নয়”

“কেন নয় ও আর আমি তো একই তাহলে অসুবিধে কোথায়?”

“তোমরা মোটেও এক নও তুমি এক আলাদা মনের মানুষ ও আলাদা মনের মানুষ”

“আলাদা আবার কি? বুকের মধ্যে টেনে নাও মনের মানুষ হয়ে উঠতে কতক্ষণ লাগবে ...... আচ্ছা আমিই যাচ্ছি তোমার কাছে তোমার বাহুবন্ধনে ধরা দিতে” বলে শ্রুতি এগিয়ে গেলো গন্ধর্বের দিকে। কিন্তু ওর আলিঙ্গনের মধ্যে ধরা পড়লো না ও। হঠাৎই মনে হল ওর যে গন্ধর্ব ওর সামনে দাঁড়িয়ে তার কোন কায়া নেই শুধুই ছায়া। একই সাথে অবাক আর ভয়ার্ত চোখে ও তাকাল গন্ধর্বের দিকে। হেসে উঠলো গন্ধর্ব “কি ভয় পেলে নাকি? হ্যাঁ ঠিক বুঝেছ! আমি এখন ছায়ায় পরিণত হয়েছি। তোমার কুবুদ্ধির ফলে যে ক্ষতি আমার হয়েছিলো তা আমি মেনে নিতে পারিনি তাই আমিও আমার ভালোবাসার কাছে চলে যাওয়ার পথ ধরেছি। তবে চলে যাওয়ার আগে আমি জানতে চেয়েছিলাম কে আমার এই সর্বনাশ করলো তাই তোমার কাছেই একবার এলাম ভাবলাম তুমিও স্মৃতির মৃত্যুটাকে দুর্ঘটনা ভাব নাকি খুন। কিন্তু এখানে এসে জানলাম তুমিই এর হোতা। ছিঃ তোমার কাছে এটা আশা করিনি”

“দাঁড়াও গন্ধর্ব, আমি এটাকে ভুল মনে করিনা। ভালবেসেছি তোমাকে, তোমাকে পেতে যা করতে হবে মনে হয়েছে করেছি। তাও তুমি অধরা! এবার আমিও তোমার পথের পঠিক হব। জীবনের এপারে না হোক পরপারে নিশ্চই আমাদের মিলন হবে”

“না শ্রুতি তুমি আমার পথে হাঁটতে পারবে না। সে সুযোগ তোমাকে আর আমি দেবো না। তুমি বেঁচে থাকবে এই পৃথিবীতে আর প্রতি মুহূর্তে পরিতাপ করবে! অনুতাপের আঁচে যদি তোমার মন শুদ্ধি হয়! ... এসো স্মৃতি”

শ্রুতি চমকে দেখল স্মৃতিও কখন এসে উপস্থিত হয়েছে ঘরের মধ্যে। বোনের চোখে কোন আদর ছিল না শুধুই ঘৃণা। ওর চোখের সামনে দুজন একটু একটু করে ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে গেলো। কান্নায় ভেঙে পড়লো ও।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sonali Basu

Similar bengali story from Crime