Rinki Banik Mondal

Abstract

3  

Rinki Banik Mondal

Abstract

ভ্রমণ যখন কামাক্ষায়(বি-পর্যটন

ভ্রমণ যখন কামাক্ষায়(বি-পর্যটন

3 mins
974


জীবনে পর্যটন বা ভ্রমণের দরকার খুবই। ভ্রমণে গেলে প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের কাজগুলো থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে থাকা যায় যা মনের দুঃশ্চিন্তার ভারটাকে একটু লাঘব করে। আসামের গুয়াহাটি শহরের কামাক্ষা মায়ের মন্দির হল একটি পর্যটন কেন্দ্রের উদাহরণ, যেখানে দর্শনার্থীদের ভীড় তো আছেই সাথে রয়েছে নীলাচল পাহাড়ের অপরূপ শোভা।

বৃতান্ত-

অসমের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাঞ্চলে নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত বিখ্যাত কামাক্ষা মন্দির। তীর্থস্থান হলেও এটি অসমের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের একটি।তাই পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি এখানে পর্যটকদেরও ভিড় থাকে সবসময়।গাড়ি নিয়েই যাওয়া যায় নীলাচল পাহাড়ের উঁচুতে। পাহাড় থেকে শহর দেখার হাতছানিতে ছুটে যান পর্যটকেরা। পাহাড় থেকে আড়াই-তিন হাজার ফুট উঁচুতে কামাখ্যা মন্দিরের স্থান।মন্দিরে প্রবেশের আগে সারি সারি দোকান, হোটেল, গেস্ট হাউস। যেখানে কিনা কোথাও মানুষ থাকার জন্য আসে ,আবার কেউ পূজার ডালা কেনার জন্য ভিড় জমায়।বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়।প্রায় সব দিনই মন্দির চত্বরে ভিড় থাকে। তবে অমাবস্যা, পূর্ণিমা প্রভৃতি বিশেষ দিনগুলিতে মন্দির চত্বরে প্রচুর মানুষের ঢল নামে।মধ্য ভারতীয় মন্দিরের ভাস্কর্য্যের আদলে এই কামাখ্যা মন্দিরেও বিভিন্ন দেবদেবীর খোদাই চিত্র রয়েছে।কামাখ্যা মায়ের মন্দির ছাড়াও এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এরা হলেন ভুবনেশ্বরী, বগলামুখী, ত্রিপুরা সুন্দরী ,মাতঙ্গী, ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা,তারা, কালি, ভৈরবী, কমলা। ত্রিপুরা সুন্দরী, কমলা, মাতঙ্গী মূল মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেব-দেবীর জন্য পৃথক মন্দির রয়েছে। মন্দিরের চূড়াগুলো দেখতে উল্টো মৌচাকের মতো। এই মন্দিরটি ভারতের একান্ন পীঠের মধ্যে অন্যতম। তবে আর পাঁচটা সাধারণ হিন্দু মন্দিরের মতোই। এখানেও প্রচুর পান্ডা আছে। তবে পাণ্ডাদের বাড়াবাড়ি টা খুব বেশি নেই। মন্দিরে প্রবেশ করার দুই ধরনের লাইন আছে। একটি ফ্রি আরেকটি ৫০১টাকার লাইন।ফ্রী লাইনটিতে বেশ ভিড় হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম সেখানে। তবে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই এখানে করা আছে। লাইট, পাখা, বসার জায়গা থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থাও খুব সুন্দর করে করা আছে। মন্দির চত্বরে ছাগল ,হনুমান ,পায়রা সহ বিভিন্ন প্রাণীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এই মন্দিরে পাঁঠা আর পায়রা বলির প্রচলন আছে।কামাখ্যা মন্দিরের সন্নিকটে অবস্থিত রয়েছে সৌভাগ্য কুণ্ড। এর পাশেই রয়েছে গণেশ বিগ্রহ ।শোনা যায় এই সৌভাগ্য কুন্ডু দর্শন করলে এবং অন্যকে দর্শন করালে মানুষ তার হারিয়ে যাওয়া সৌভাগ্য ফিরে পায়।মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে গেলে ফোন ,ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। আর তা লঙ্ঘন করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও রয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহের প্রবেশের আগেই সিংহাসনে রয়েছেন কামেশ্বর কামেশ্বরী।মন্দিরের ভেতরেও দেয়ালের গায়ে রয়েছে প্রচুর দেবদেবীর খোদাই চিত্র।মন্দিরের গর্ভগৃহ টি হল ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। অন্ধকারচ্ছন্ন সরু খাড়া পাথরের সিঁড়ি পেরিয়ে এখানে পৌঁছাতে হয়। গর্ভগৃহে কোন মূর্তি নেই শুধু যোনি আকৃতিবিশিষ্ট পাথর ও ভূগর্ভস্থ একটি প্রস্রবণ আছে। অম্বাবচী মেলার সময় এই মন্দিরে মানুষের ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। সেই সময় পূজিত ভূগর্ভস্থ এলাকা লাল হয়ে যায়। এই সময় দেবী ঋতুমতী হন। মন্দিরের মূল কক্ষে প্রবেশের অনুমতি থাকে না তখন। তবে মন্দির এর মূল কক্ষ বন্ধ থাকলেও আশেপাশে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করা যায় ।সেই সময় পাহাড়ে দর্শনার্থীদের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ বন্ধ থাকে। পায়ে হেঁটেই যেতে হয় মায়ের মন্দিরে। পুরো পাহাড় জুড়ে মানুষের ঢল থাকে। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মানুষও লাঠি নিয়ে পাহাড়ে ওঠে।কত সাধু সন্ন্যাসীদের ভিড়,তারা মন্দির চত্বরে যজ্ঞ করেন, মায়ের গান করেন, পূজা করেন, আরাধনা করেন। আর যারা মন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে পারেন না তারা পাহাড়ের কোন এক জায়গায় বসে দেবীকে স্মরণ করে। লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ এই সময় তীর্থ করতে আসেন। কত মানুষ পাহাড়ের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কীর্তন করে,আর চারিদিকে স্লোগান উচ্ছ্বসিত হয়-'বল কামাক্ষ্য মাঈকী ,,, 'জয়'।এই সব পুণ্যার্থীদের জন্য কত ত্রাণ শিবিরও থাকে ।সেখানে থাকে থাকার ব্যবস্থা, টিফিন আর পানীয় জলের ব্যবস্থা, কেউ কেউ তো এই সময় একজোট হয়ে পুরো পাহাড়িয়া রাস্তা পরিস্কার করতে ব্যস্ত থাকে। আর তার সাথে এখানকার প্রশাসনিক ব্যবস্থাও খুব ভালো। অম্বাবচীর সময় এখানে চারিদিকে পুলিশ আর কমান্ডো থাকে দর্শনার্থীদের আরো ভালো পরিষেবা যোগানের জন্য।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract