Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

ভোরের সূর্য্য

ভোরের সূর্য্য

4 mins
265


পর্ব পনের


' র ' এর অত্যাচার এবং এন আই এর প্রশ্নবাণে জর্জরিত গাজী সাহেব অস্ফুটে একটা নাম উচ্চারণ করে ফেলল । অমনি ' র ' এর এক কর্তা লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিডের একটি ফোঁটা গাজীর ক্ষতস্থানে ঢেলে দিলেন ।

জ্বালায় ছটফট করতে লাগল গাজী । কথা জড়িয়ে এল । বলল - সা-লা-উ-দ্-দি-ন ।

এন আই এ কর্তা বললেন - সালাউদ্দিন এখন কোথায় ?

' র ' কর্তা গাজীর আইফোন নাড়াচাড়া করে সালাউদ্দিনের ফোন নং বের করে ফেললেন। 

নং ডায়াল করে গাজীর হাতে তুলে দিয়ে কথা বলতে নির্দেশ করলেন । গাজী তখন কথা বলা অবস্থায় নেই। এন আই এর এক কর্তা গাজীর হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে লাইন কেটে দিলেন । বললেন - সরি টু ডিস্টার্ব । এই সময় ওকে দিয়ে কথা বলানো যাবে না । তাহলে সালাউদ্দিন জেনে যাবে গাজী ধরা পড়ে গেছে। আর আমাদের সব প্রচেষ্টা বিফলে যাবে ।

'র ' এর জনৈক উর্দু ভাষা জানা ব্যক্তি ফোন নিয়ে চলে গেলেন ল্যাবরেটরিতে ।

পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন জায়গার টাওয়ার ধরছে । 

তখনকার মত গাজীর খাতির যত্ন শেষ হল ।

হক সাহেব বিপাশা এবং ডাক্তারবাবুকে নিয়ে পাটনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । লক্ষ্য একজন জাঁদরেল উকিল ধরে হাইকোর্টে শশাঙ্ককে প্রদত্ত জেলা জজের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া ।

বার এসোশিয়েশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সামওয়ান সর্ব্বেশ্বর পাণ্ডে মহাশয় এই ধরণের কেসগুলি লড়াই করে প্রভূত নাম কামিয়েছেন । তাঁর ঠিকানা এবং ফোন নং নিয়ে তাঁরা পাটনার রাজেন্দ্রনগরে উপস্থিত হলেন । 

বেশী খোঁজাখুঁজি করতে হল না । মেন রোডের উপর প্রায় বিঘাখানেক জায়গার উপর পাণ্ডেজীর বিশাল ভবন ।

দু'খানা মেন গেট । একটা তিনি এবং পরিবারের লোকজন ব্যবহার করেন । বাকি সময় তা' তালাবন্ধই থাকে । অন্যটিতে দু'জন রক্ষী বন্দুক হাতে পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে ।

হক সাহেব নিজের পরিচয় দিয়ে ভেতরে যাবার বন্দোবস্ত করে নিলেন । তবে একজনই এলাউড । সুতরাং ভেতরে হক সাহেবই যেতে পারলেন । 

বিপাশা এবং ডাক্তার বাবু গেটের ভেতরে একটা রুমে গিয়ে বসলেন । ঠিক রুম নয়; ছাদবিশিষ্ট একটি দামী টালির ঘর । দেখতে ভারী সুন্দর । বাড়ির সামনে থেকে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ মুখে হাসি নিয়ে মৃদু বাতাসের সঙ্গে খুনসুটি করছে । প্রশস্ত লন । দু'পাশে বিদেশী রডোডেনড্রেণ , ক্যামেলিয়া, ম্যাগনোলিয়া শোভাবর্ধন করছে । 

তাদের ছায়ায় প্রায় হাফ ডজন গাড়ি বিশ্রাম নিচ্ছে । ডাক্তার বাবুর চোখে সেই সৌন্দর্য্য খেলে যাচ্ছে। বিপাশা একমনে ইষ্ট জপ করছে যেন উকিল সাহেব কেসটা হাতে নেন ।

হক সাহেব মেন গেট পেরিয়ে মূল ভবনের দরজায় গিয়ে বেল বাজালেন । ভেবেছিলেন ঝি চাকর এসে দরজা খুলবে । আবার কৈফিয়ত দিতে হবে । তারপর সে বলবে নামধাম বলুন, সাহেবকে জিজ্ঞেস করে আসি বা পরিচয়পত্র দিন - সাহেব যদি মনে করেন তো সাক্ষাৎ হতে পারে ।

কিন্তু আশ্চর্য্য হলেন যখন মিঃ সর্বেশ্বর পাণ্ডে নিজে দরজা খুলে বললেন - আইয়ে আইয়ে হকসাব । মুঝে খবর মিল গয়া কি আপলোগ আ রহে হ্যায় । আপ অকেলে কিউ? উনলোগোকো ভী সাথ লানা চাহিয়ে থা ।

হক সাহেব বললেন - তাহলে ওদের নিয়ে আসি ।

- হাঁ হাঁ যাইয়ে, লেকে আইয়ে, ম্যায় তবতক ইয়াহা খড়ে হোকর ওয়েট করতা হুঁ ।

হক সাহেব ফোন করে ডাক্তার বাবু এবং বিপাশাকে আসতে বললেন । 

ভেতরে ওঁদের তিনজনকে নিয়ে বসলেন মিঃ পাণ্ডে । 

- পহলে কেস হিস্ট্রি দিখাইয়ে । পড়নে কে বাদ বতাউঙ্গা মামলা কিস পজিশন পর হ্যায় ।

হক সাহেব সব ডকুমেন্ট ওঁর হাতে দিয়ে বললেন - আই অ্যাম দ্য কালপ্রিট । স্যার ম্যায় হি কলিহানপুর ইনসিডেন্ট কা তহকিকত করকে আদালতমে রিপোর্ট কিয়া । শোচা নেহি থা ইয়ে কাম কোই আম গুনেগার কা কাম নেহি বল্কি এক বহুত বড়া যোগসাজিস থা জিসমে এক বেচারা কো ফাঁসি মে লটকানা যা রহা থা ।

মিঃ পাণ্ডে সব দেখে এবং শেষে সরকারি প্রসিকিউটরের সামনে নেওয়া সেই অডিও ভিডিও স্ক্রিপ্ট দেখে নিলেন ।

- শুনা হ্যায় জঙ্গ লড়নেবালা উস গাজীকো আপ হি নে গিরফতার কিয়া ?

- হাঁ সাব । লেকিন ও অব হমারে পাশ নেহি রহা ।

- কিউ ? মর গয়া কেয়া ?

- নেহি সাব । উসকো এন আই এ কে হাতো মে সপ দিয়া গয়া ।

- কোই বাত নেহি । আপলোগো কা কাম হো জায়েগা । লেকিন মেরা ফিস কৌন ভরেগা ? আপ? 

ডাক্তার বাবু এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন । এক্ষণে বললেন - ম্যায় ভরুঙ্গা সাব !

পাণ্ডেজী আপাদমস্তক ডাক্তার বাবুকে নিরীক্ষণ করলেন । মনে করতে পারলেন না চেনা চেনা মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি !

প্রশ্ন করলেন - আপ ?

- মেরা নাম ডক্টর জেমস অক্টারলোনী সাব । সাইকিয়াট্রিস্ট অফ রাঁচি মেন্টাল হসপিটাল ।

তথাপি পাণ্ডেজীর মনে পড়ল না । 

- কাঁহাকে রহনেবালা হ্যায় আপ ?

- কলকত্তা । দ্য সিটি অব জয় ।

- আপকো পহলে কহি দেখা হ্যায় ? ইয়াদ আয়া , ইয়াদ আয়া । তো আপ ওহি স্পেশ্যালিস্ট ডক্টর হ্যায় যো মেরে নানীকো ট্রিটমেন্ট দিয়া থা কাউন্সেলিং কে বাদ ?

- জী , মুঝে তো পতা নেহি !

- আরে, ইয়াদ কিজিয়ে সাব , নভেম্বর দো হাজার দোকে বাত । এক পাগলী বুঢ্ঢিকো লেকর আপ হি কে পাস গয়ে থে রাঁচি মে । আপনে শক থেরাপি দূকে নানীকো ঠিক কর দিয়া থা ?

ডক্টর সাহেব বললেন - কেয়া নাম থা উনকি ? রোহিনী যাদব?

- হাঁ হাঁ । রোহিনী যাদব । ইয়াদ আয়া ভেরি গুড । উস সময় আপ মেরে সে কোই ফিস নেহি লিয়া থা । আজ আয়া ও দিন ; লৌটানে কা । আপলোগ বেফিকির যাইয়ে। কাম হো যায়েগা ।

- লেকিন আপকা ফিস ? 

- জিরো । কোই ফিস নেহি লুঙ্গা । আপ এক মহান কাম পর আয়ে হ্যায় । ফিস ক্যায়সে লুঙ্গা ?

- ফির ---

- ঠিক হ্যায়, অগর আপ দেনা হি চাহতে হ্যায় তো কাম খতম হোনে কে বাদ যো মর্জি দে সকতে হ্যায় । লেকিন এক শৌ এক রুপিয়া সে এক পৈসা কম নেহি লুঙ্গা ।

বাড়িময় হাসির রোল উঠল । কৃতজ্ঞচিত্তে ওঁরা তিনজন ফিরে গেলেন ।

( চলবে )

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime