ভোরের সূর্য্য
ভোরের সূর্য্য
পর্ব পনের
' র ' এর অত্যাচার এবং এন আই এর প্রশ্নবাণে জর্জরিত গাজী সাহেব অস্ফুটে একটা নাম উচ্চারণ করে ফেলল । অমনি ' র ' এর এক কর্তা লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিডের একটি ফোঁটা গাজীর ক্ষতস্থানে ঢেলে দিলেন ।
জ্বালায় ছটফট করতে লাগল গাজী । কথা জড়িয়ে এল । বলল - সা-লা-উ-দ্-দি-ন ।
এন আই এ কর্তা বললেন - সালাউদ্দিন এখন কোথায় ?
' র ' কর্তা গাজীর আইফোন নাড়াচাড়া করে সালাউদ্দিনের ফোন নং বের করে ফেললেন।
নং ডায়াল করে গাজীর হাতে তুলে দিয়ে কথা বলতে নির্দেশ করলেন । গাজী তখন কথা বলা অবস্থায় নেই। এন আই এর এক কর্তা গাজীর হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে লাইন কেটে দিলেন । বললেন - সরি টু ডিস্টার্ব । এই সময় ওকে দিয়ে কথা বলানো যাবে না । তাহলে সালাউদ্দিন জেনে যাবে গাজী ধরা পড়ে গেছে। আর আমাদের সব প্রচেষ্টা বিফলে যাবে ।
'র ' এর জনৈক উর্দু ভাষা জানা ব্যক্তি ফোন নিয়ে চলে গেলেন ল্যাবরেটরিতে ।
পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন জায়গার টাওয়ার ধরছে ।
তখনকার মত গাজীর খাতির যত্ন শেষ হল ।
হক সাহেব বিপাশা এবং ডাক্তারবাবুকে নিয়ে পাটনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন । লক্ষ্য একজন জাঁদরেল উকিল ধরে হাইকোর্টে শশাঙ্ককে প্রদত্ত জেলা জজের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চাওয়া ।
বার এসোশিয়েশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সামওয়ান সর্ব্বেশ্বর পাণ্ডে মহাশয় এই ধরণের কেসগুলি লড়াই করে প্রভূত নাম কামিয়েছেন । তাঁর ঠিকানা এবং ফোন নং নিয়ে তাঁরা পাটনার রাজেন্দ্রনগরে উপস্থিত হলেন ।
বেশী খোঁজাখুঁজি করতে হল না । মেন রোডের উপর প্রায় বিঘাখানেক জায়গার উপর পাণ্ডেজীর বিশাল ভবন ।
দু'খানা মেন গেট । একটা তিনি এবং পরিবারের লোকজন ব্যবহার করেন । বাকি সময় তা' তালাবন্ধই থাকে । অন্যটিতে দু'জন রক্ষী বন্দুক হাতে পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে ।
হক সাহেব নিজের পরিচয় দিয়ে ভেতরে যাবার বন্দোবস্ত করে নিলেন । তবে একজনই এলাউড । সুতরাং ভেতরে হক সাহেবই যেতে পারলেন ।
বিপাশা এবং ডাক্তার বাবু গেটের ভেতরে একটা রুমে গিয়ে বসলেন । ঠিক রুম নয়; ছাদবিশিষ্ট একটি দামী টালির ঘর । দেখতে ভারী সুন্দর । বাড়ির সামনে থেকে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ মুখে হাসি নিয়ে মৃদু বাতাসের সঙ্গে খুনসুটি করছে । প্রশস্ত লন । দু'পাশে বিদেশী রডোডেনড্রেণ , ক্যামেলিয়া, ম্যাগনোলিয়া শোভাবর্ধন করছে ।
তাদের ছায়ায় প্রায় হাফ ডজন গাড়ি বিশ্রাম নিচ্ছে । ডাক্তার বাবুর চোখে সেই সৌন্দর্য্য খেলে যাচ্ছে। বিপাশা একমনে ইষ্ট জপ করছে যেন উকিল সাহেব কেসটা হাতে নেন ।
হক সাহেব মেন গেট পেরিয়ে মূল ভবনের দরজায় গিয়ে বেল বাজালেন । ভেবেছিলেন ঝি চাকর এসে দরজা খুলবে । আবার কৈফিয়ত দিতে হবে । তারপর সে বলবে নামধাম বলুন, সাহেবকে জিজ্ঞেস করে আসি বা পরিচয়পত্র দিন - সাহেব যদি মনে করেন তো সাক্ষাৎ হতে পারে ।
কিন্তু আশ্চর্য্য হলেন যখন মিঃ সর্বেশ্বর পাণ্ডে নিজে দরজা খুলে বললেন - আইয়ে আইয়ে হকসাব । মুঝে খবর মিল গয়া কি আপলোগ আ রহে হ্যায় । আপ অকেলে কিউ? উনলোগোকো ভী সাথ লানা চাহিয়ে থা ।
হক সাহেব বললেন - তাহলে ওদের নিয়ে আসি ।
- হাঁ হাঁ যাইয়ে, লেকে আইয়ে, ম্যায় তবতক ইয়াহা খড়ে হোকর ওয়েট করতা হুঁ ।
হক সাহেব ফোন করে ডাক্তার বাবু এবং বিপাশাকে আসতে বললেন ।
ভেতরে ওঁদের তিনজনকে নিয়ে বসলেন মিঃ পাণ্ডে ।
- পহলে কেস হিস্ট্রি দিখাইয়ে । পড়নে কে বাদ বতাউঙ্গা মামলা কিস পজিশন পর হ্যায় ।
হক সাহেব সব ডকুমেন্ট ওঁর হাতে দিয়ে বললেন - আই অ্যাম দ্য কালপ্রিট । স্যার ম্যায় হি কলিহানপুর ইনসিডেন্ট কা তহকিকত করকে আদালতমে রিপোর্ট কিয়া । শোচা নেহি থা ইয়ে কাম কোই আম গুনেগার কা কাম নেহি বল্কি এক বহুত বড়া যোগসাজিস থা জিসমে এক বেচারা কো ফাঁসি মে লটকানা যা রহা থা ।
মিঃ পাণ্ডে সব দেখে এবং শেষে সরকারি প্রসিকিউটরের সামনে নেওয়া সেই অডিও ভিডিও স্ক্রিপ্ট দেখে নিলেন ।
- শুনা হ্যায় জঙ্গ লড়নেবালা উস গাজীকো আপ হি নে গিরফতার কিয়া ?
- হাঁ সাব । লেকিন ও অব হমারে পাশ নেহি রহা ।
- কিউ ? মর গয়া কেয়া ?
- নেহি সাব । উসকো এন আই এ কে হাতো মে সপ দিয়া গয়া ।
- কোই বাত নেহি । আপলোগো কা কাম হো জায়েগা । লেকিন মেরা ফিস কৌন ভরেগা ? আপ?
ডাক্তার বাবু এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন । এক্ষণে বললেন - ম্যায় ভরুঙ্গা সাব !
পাণ্ডেজী আপাদমস্তক ডাক্তার বাবুকে নিরীক্ষণ করলেন । মনে করতে পারলেন না চেনা চেনা মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি !
প্রশ্ন করলেন - আপ ?
- মেরা নাম ডক্টর জেমস অক্টারলোনী সাব । সাইকিয়াট্রিস্ট অফ রাঁচি মেন্টাল হসপিটাল ।
তথাপি পাণ্ডেজীর মনে পড়ল না ।
- কাঁহাকে রহনেবালা হ্যায় আপ ?
- কলকত্তা । দ্য সিটি অব জয় ।
- আপকো পহলে কহি দেখা হ্যায় ? ইয়াদ আয়া , ইয়াদ আয়া । তো আপ ওহি স্পেশ্যালিস্ট ডক্টর হ্যায় যো মেরে নানীকো ট্রিটমেন্ট দিয়া থা কাউন্সেলিং কে বাদ ?
- জী , মুঝে তো পতা নেহি !
- আরে, ইয়াদ কিজিয়ে সাব , নভেম্বর দো হাজার দোকে বাত । এক পাগলী বুঢ্ঢিকো লেকর আপ হি কে পাস গয়ে থে রাঁচি মে । আপনে শক থেরাপি দূকে নানীকো ঠিক কর দিয়া থা ?
ডক্টর সাহেব বললেন - কেয়া নাম থা উনকি ? রোহিনী যাদব?
- হাঁ হাঁ । রোহিনী যাদব । ইয়াদ আয়া ভেরি গুড । উস সময় আপ মেরে সে কোই ফিস নেহি লিয়া থা । আজ আয়া ও দিন ; লৌটানে কা । আপলোগ বেফিকির যাইয়ে। কাম হো যায়েগা ।
- লেকিন আপকা ফিস ?
- জিরো । কোই ফিস নেহি লুঙ্গা । আপ এক মহান কাম পর আয়ে হ্যায় । ফিস ক্যায়সে লুঙ্গা ?
- ফির ---
- ঠিক হ্যায়, অগর আপ দেনা হি চাহতে হ্যায় তো কাম খতম হোনে কে বাদ যো মর্জি দে সকতে হ্যায় । লেকিন এক শৌ এক রুপিয়া সে এক পৈসা কম নেহি লুঙ্গা ।
বাড়িময় হাসির রোল উঠল । কৃতজ্ঞচিত্তে ওঁরা তিনজন ফিরে গেলেন ।
( চলবে )