Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

4.0  

Manab Mondal

Abstract Fantasy Inspirational

বেতাইচণ্ডী

বেতাইচণ্ডী

2 mins
479


আজ থেকে প্রায় ৪০০-৫০০ বছর আগে সরস্বতী এবং গঙ্গার নদীর মিলিত মোহনায় গড়ে ওঠে জনপদটি বেতবনে ঘেরা ছিল বলে সংস্কৃত শব্দ অনুযায়ী নাম হয়েছিল 'বেত্ৰধারা'। পরবর্তীতে লোকমুখে অপভ্রংশ হয়ে " বেতড় " নামটি এসেছে।


ঐ সময় বাংলা ব্যবসা বাণিজ্য বেশ সমৃদ্ধ ছিলো। হুগলীর সপ্তগ্রামের মতো ,বেতড়ে বন্দরঘাঁটি তৈরি হয়। তবে বছর সপ্তগ্রামের পরে বাংলার দ্বিতীয় বন্দরঘাঁটি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হাওড়ার বেতড়ে। তাছাড়া সপ্তগ্রামে বাণিজ্য যাত্রাপথে বেতড়ই হয়ে উঠে ছিলো বণিকদের প্রধান বিশ্রামস্থল। বাণিজ্যস্থলের পাশাপাশি বেতড় ধর্মস্থলও হিসেবেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেতাইচণ্ডী বেতড়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী । সেই অতীত কাল থেকে প্রায় ৪৫০ বছরের বেশি সময় ধরে হাওড়ার বেতড়ে আজও রয়েছে বেতাইচণ্ডীর মন্দির। শিবপুরের দক্ষিণদিকে শালিমারের নিকট জি.টি. রোড এবং আন্দুল রোডের সংযোগস্থলে এই মন্দির অবস্থিত। লোককথা অনুযায়ী সপ্তগ্রাম থেকে সাগরসঙ্গমে বাণিজ্য যাত্রাপথে চাঁদসদাগর বেতড়ে নেমে বেতাইচণ্ডীর পুজো করেছিলেন। ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে বিপ্রদাস পিপলাই রচিত 'মনসা বিজয়' কাব্যে এর বর্ণনা আছে-


      'ডাহিনে কোতরং কামারহাটি বামে।

     পূবেতে আড়িয়াদহ ঘুসুরি পশ্চিমে।।

      .    .     .     .     .     .     .     .

     তাহার পূর্বকূল বাহি এড়ায় কলিকাতা।

      বেতড়ে চাপায় ডিঙ্গা চাঁদ মহারথা।'


এর পরে ষোল শতকের মাঝামাঝি কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী লিখলেন 'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যে-


      'ত্বরায় বাহিয়া তরী তিলেক না রয়।

      চিৎপুর শালিখা সে এড়াইয়া যায়।।

      কলিকাতা এড়াইল বেনিয়ার বালা।

      বেতড়েতে উত্তরিল অবসান বেলা।।

      বেতড়ে চণ্ডীপূজা কৈল সাবধানে।

      সমস্ত গ্রামখানা সাধু এড়াইল বামে।।'


বেতাইচণ্ডীর প্রতিষ্ঠার সঠিক কোনো ইতিহাস জানা যায় না। কথিত আছে, তবে লোক কথা অনুযায়ী ৪৫০ বছর আগে শেওড়াফুলির রাজা জঙ্গলের মধ্যে দেবীকে পেয়েছিলেন। এবং তিনি সেখানে দেবীকে প্ৰতিষ্ঠা করেন এবং শিবপুরের ক্ষেত্র ব্যানার্জী লেনের হালদারদের পূজারী হিসাবে নিয়োগ করেন। আবার কিছু মানুষের মতে, শিবপুরের জমিদার রায়চৌধুরী পরিবারের হাত ধরেই বেতাইচণ্ডীর বিগ্রহ স্থাপিত হয়ছিলো। তাঁরাই প্রথম দেবীর মুখমন্ডল বেতবনে কুড়িয়ে পান। সেইজন্য আজও রায়চৌধুরী বাড়ির দূর্গা প্রতিমা বিসর্জনের আগে প্রতিমার মাথা থেকে রাংতার মুকুট খুলে বেতাইচণ্ডীর মাথায় পড়িয়ে দেওয়া হয়। 


দেবীর পশ্চিমমুখী পাকা মন্দির। পূর্বে মন্দিরটি মাটির এবং ওপরে খড়ের ছাউনি ছিল। বর্তমান মন্দিরটি ১৯০২ সালে নির্মাণ করা হয়েছে। গর্ভগৃহে পাথরের দেবী বিগ্রহ মুখমন্ডলটি ছাড়া বাকি অংশ কাপড়ে ঢাকা। মুখমন্ডলের চোখ, মুখ, নাক, টিপ, নথ, টিকলি এবং মুকুট সোনার। দেবীর তিনবার নিত্যপুজো হয়। সকালে, দুপুরে এবং রাত্রে। সকালে দেবীকে দেওয়া হয় চালের নৈবেদ্য, ফল এবং মিষ্টান্ন। দুপরে অন্নভোগ, ভাজা, তরকারি, মাছ চাটনী এবং খিচুড়ি। রাত্রে শীতলভোগ দিয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়। বেতাইচণ্ডীর বাৎসরিক পুজো হয় শারদীয়া দুর্গাপুজোর চারদিন। চারদিন ধরেই চলে পাঁঠা বলি। এছাড়া, বিপত্তারিনী ব্রত, জগদ্ধাত্রী পুজো, চড়ক সংক্রান্তি এবং পয়লা বৈশাখে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। বর্তমানে দেবীর নিত্যসেবার জন্য বেতাইতলা বাজারটি হাওড়া কর্পোরেশনকে লিজ দেওয়া আছে।


সতেরো শতকের মাঝামাঝি সরস্বতী নদী থেকে রুপনারায়ণ এবং আদিগঙ্গার মুখ আলাদা হয়ে যাওয়াতে বেতড় বন্দরের বিলুপ্তি ঘটে। এরপর বাংলায় ব্রিটিশদের আগমন ঘটে। ঊনিশ শতকে হুগলী জেলার দক্ষিণাংশ ভেঙে ব্রিটিশরা তৈরি করে নতুন হাওড়া জেলা। ধীরে ধীরে জলা-জঙ্গল, খানা-খন্দ ভরাট করে পত্তন হয় হাওড়া নগরীর। তৈরি হয় হাওড়া কর্পোরেশন। কিন্তু যতই বেতবন কংক্রিটের রাস্তায় পরিণত বা একটা গন্ডগ্রাম মস্ত এক শহরে রূপান্তরিত হোক না কেন, সেই অতীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত একই স্থানে স্বমহিমায় বিরাজ করছেন দেবী বেতাইচণ্ডী। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract