বৌএর বন্ধু পেত্নী
বৌএর বন্ধু পেত্নী
বউয়ের জালায় অস্থির হয়ে পাড়ার চায়ের দোকানে বসে বিড়িতে সুখ টান দিচ্ছি। পাশের বাড়ির হালায় পো বউরে ফোন দিয়ে বলছে আমি নাকি বসে বসে বিড়ি টানছি আর আড্ডা মারছি। বউ ফোন করে বললো "ঢং করে বাহিরের লোককে দেখাছো যে বউয়ের জ্বালায় বাহিরে বসে সিগারেট খাছো ।"
আমার আর শান্তি তে বিড়ি খাওয়া হলো না।
চলে গেলাম ওয়ালেস পার্কে।জীবন তেজপাতা মতো জীবনটা নিয়ে নাজেহাল। একা আনমনে বিড়ি টানছি আর ভাবছি বিয়ে করে কি ভুল করলাম । বউয়ের কল এলো এমন সময়।রিসিভ করতেই বউ খেঁকিয়ে উঠলো " পার্কে কার সঙ্গে ইটিস পিটিস করতে গেছো। ওহ তাইতো বলি আমাকে কেনো সহ্য করতে পারোনা আজ কাল।"
বাড়িতে চলে আসলাম ।
ফোন টিপছি এক মনে চেয়ারেব সে । পাশ থেকে বউ বলে ঠেস মেরে বলে উঠলো "ফোনেই যদি হাজার মেয়ে পাওয়া যায়, বাহিরে যাবার কি দরকার। "
ফোনটা রেখে দিয়ে দোতালার ছাদে উঠলাম।পুর্নীমার রাত দেখছি। আর গুন গুন করে গান করছি, কিছু সময় পর পিছনে বউ এসে এসে হাজির । কলার ধরে বলতে লাগলো" বুড়ো ভাম হয়ে এখনো ছুক ছুক। এই জন্যতো বলি এতো ঘনঘন ছাদে আসো কেন?ওই মেয়ের কারনে এতো কিছু। "
কান্ড দেখে পাশের ছাদের মেয়ে টা হো হো করে হেসে উঠলো। অথচো ওর জন্য আমি গালি খেলাম।
মেয়েটাকে মনে মনে আমি কয়েকটা গালি দিলাম।
বউয়ের দিকে চেয়ে দেখি বউ ঝেটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। দিলাম দৌড় বাচার জন্য। কিন্তু বাচার উপায় কোথায় পা হরকে পড়ে গেলাম।
চোখ খুলে নিজেকে দেখি হাসপাতালের বিছানায় । আমার স্যালাইনটা ঠিক করে দিয়ে গেলো একজন নার্স এসে। বউ কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো "আগে বাড়ি চলো সুন্দরী নার্সের দিকে তাকানো বের করছি।"
যাইহোক পেত্নীর মতো ঘাড়ে বসে আছে নামাই কিরে! হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবো না ঠিক করলাম।অনেক চিন্তা করে শেষ ভাবলাম গৃহত্যাগী হবো। সন্ন্যাস তো নিতে পারবো না। সেখানে গিয়ে ঝামেলা করবে। বলবে সন্নাসীনিদের নিয়ে ফুর্তি করতে এসেছি। তাই একটা মেশ দেখে নিয়ে পালালাম।
অন্তত সপ্তাহে একটা দিন, রবিবার ছুটির দিনটা অন্তত ভালো করে ঘুমাবো । নয়তো সকাল সকাল বাজার পাঠাবে। ভুল বাজারে করে আনলে ঘন্টা তিনেক ঝগড়া করে নেবে। আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দেবে।
মেশে আসার আগে একটা পাশবালিশ কিনে আনালাম। বিয়ের পর দিন থেকে ই ওটা ওর দখলে। নতুন জামাই হয়ে গিয়ে যখন, আদর আপ্যায়ন পেলাম তখন , ২৬ ইনঞ্চি বুকটা ৫৬ ইনঞ্চি হয়ে গেলো সাহস করে নালিশ জানালাম,
" আপনার মেয়ে আমাকে পাশ বালিশ ও দেয় না"
কারা যেনো হেসে বললো " বিয়ের পরে আবার পাশ বালিশ এর কি প্রয়োজন?"
নালিশ করে বালিশ তো পেলাম না উলটো সাতদিন বিছানা ও জুটলো না কপালে।
এ মেশের চার তলার ঘর গুলোতে কেউ যায় না। আমি ওটাই নিলাম গা ঢাকা দেবার জন্য best.. আর পূজা কটাদিন ভালো করে ঘুমবো, পুরো মেশ তো ফাঁক হয়ে যাবে। প্রথম দিনটা বেশ ভালো ই ঘুমিয়ে কাটালো। কিন্তু পরে দিন রাতের বেলায় একটা ভয়ঙ্কর কান্ড ঘটে গেলো।
হঠাৎ রাতের বেলায় ঠক ঠক শব্দ দরজা তে। বিছানা ছেড়ে উঠে ইচ্ছে করছে না, তাই মনকে শান্ত না দিলাম, ভুল শুনছি ভেবে। কিন্তু আবার ও ঠক ঠক আওয়াজ। ঘুমাতে দেবেনা বোধহয় , দরজা না খুললে।
বিপদ দেখে কষ্ট করে দরজা খুলে , চমকে উঠলাম। আমার বৌ এসে হাজির। চোখ মুছে ভালো করে দেখলাম , না না বৌ না। তবে আরো ভয়ঙ্কর ব্যাপার একটা পেত্নী এসে হাজির। একটু মনকে শান্ত দিলাম , পেত্নী তো বৌ অপেক্ষায় অনেক ভালো। সারা জীবন ধরে অত্যাচার সহ্য অপেক্ষায় একবার ঘাড় মটকে দিলে হলো।
পেত্নী টা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকে নাক সিটকানো শুরু করলো , ঘর দোর গুছিয়েনি কেন তা দেখে ? সেই নিয়ে , আমার বৌএর মতো, দুই চারটে কথা ও গুছিয়ে , শুনিয়ে দিলো আমায়।
আমি ফিসফিস করে বললাম " পেত্নী আবার তার, ভাবখানা দেখো, যেনো সে ফাইভ স্টার হোটেলের বাসিন্দা '
কথা কানে যেতেই খ্যাকিয়ে উঠলো বললো " বুড়ো ভাম, বাচ্চাদের কমন সেন্সটাও নেই, আমাকে তুই পেত্নী দেখলি, আমি সুন্দরী না !! আর বিবাহিত ও। আমি শাকচুন্নি।"
সত্যি ভুতের ব্যেপারে একদম সাধারণ জ্ঞান আমার নেই। সত্যি কথা এর আগে তো আর ভুত দেখি নি। আর তাছাড়া যার ভুতে দেখে তাদের তো জ্ঞান ও থাকে না শুনেছি।
অনেক চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলাম কি জন্য সে এখানে হাজির হয়েছে?
ও বললো " তোর বৌ আমার বন্ধু তাই না এসে পারলাম না"
আমি মুখ ফোসকে বলেই ফেললাম" জানি ওর বন্ধু ভুত - পেত্নীই হবে। তবে ভুত প্রেত নয় ওর বন্ধু হওয়া উচিত রাক্ষসী -ডাইনী রা।"
ও বললো " সেটা ঠিক তোর বৌ ঠিক আমার বন্ধু নয়। তবে ওর নুন আমি খেয়েছি। তাই তোকে যেতেই হবে।"
আমি বললাম " সে কিভাবে, তোমাকে বুঝি ও চাকর বাকর মতো খাটায়"
ও বললো " না না তেমন টা নয়। খাবার টেস্ট নিয়ে গে গো করলেই তোর খাবার নিয়ে ফেলে দেয়, সেই খবার খেয়েই বেঁচে বর্তে আছি আমরা। তোকে নিয়ে যেতে এসেছি , তোর বৌটা খুব কান্নাকাটি করছে।"
আমি বললাম " না না আমি যাবো , তোমার কি করতে হয় , করে নাও।"
কোথায় থাকে একটা ভুত এসে হাজির হলো বললো , " না গেলে ক্যালিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো।"
প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও। সাহস করে বললাম" বৌ আত্যাচার সহ্য থেকে ভুতের হাতে কিল চর খাওয়া বেটার।"
ভুতটা আমার সমর্থনে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। তখন অষ্টশত নামের মতোন ওকে অনেক গুলো গালাগালি শুনিয়ে দিলো। বুঝতে পারলাম মরে গিয়েও বৌ নামক জীবাণু থেকে রক্ষা নেই পুরুষদের। ভুতটা ওর কথায় ওঠে বসে। শেষমেষ যা বুঝলাম ভুতটার সমর্থন লাভের চেষ্টা করা বৃথা। কারণ ওর আমার সাথে কথা বলার অধিকার ও নেই। ওর কাজ শুধু আমাকে চ্যাঙদোলা করে নিয়ে যাবে।
ভুতটা উপকারে না আসলেও একটা আরশোলা কাজে এসেছিলো। শাকচুন্নি টা ঐ আরশোলা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। যাইহোক ভুতটা আরশোলা টাকে মারে ফেলো। বৌ অজ্ঞান হয়ে গেছে দেখে কাকুতি মিনতি করলো। আমার আবার ছোঁয়া কাতুকুতু লাগছিলো আমি , ওকে আমাকে ছাড়তে বলছি সবে , তখন শাকচুন্নি লাফিয়ে উঠলো , বললো " সাবাস মেরে শেরু, চলো কাতুকুতু দিয়ে ব্যাটাকে কাবু করবো।"
কাতুকুতু হাত থেকে রক্ষা পেতে চেষ্টা করেছি তখন কে যেনো আমার গায়ে জল ঢেলে দিলো , চোখ খুলে দেখি গিন্নি দুই তিন টে খালি বালতি নিয়ে হাজির বললো," রাস্তা কল থেকে জল নিয়ে এসো, বুড়ো বয়সে আলিয়া ভাট এর স্বপ্ন দেখতে হবে না আর ঘুমিয়ে।"
