Apurba Kr Chakrabarty

Classics

4.3  

Apurba Kr Chakrabarty

Classics

দুষ্ট আত্মার সম্ভোগ

দুষ্ট আত্মার সম্ভোগ

15 mins
1.1K


নতুন বাড়িতে ভাড়া আসার পর থেকেই অনিতার শরীর ভালো যাচ্ছিল না। মাথা ধরা,আধ কপালি নানা সমস্যা তার ছিল, এক একটা রাত তাকে না ঘুমিয়ে শুধুমাত্র এক পাশ ও পাশ করে কাটাতে হয়।কখন যে ভোরের আলো ফুটে যায়,পাখিদের কিচিমিচি ডাকে সকাল হলেও ,ঘুম আসে না।

এই নতুন বাড়িতে তার আর এক উপসর্গ, এক একটা রাত নয়, প্রতিটি রাতে তার ঘুম ভাঙ্গলেই একটা তীব্র ভীতি আতঙ্ক তাকে যেন গ্রাস করে।

স্বামীর ঘুম বড্ড গাড়, না ঠেলে ওঠালে গভীর রাতে ঘুম থেকে তোলা যায় না।আর তার দেড় বছরের মেয়েটা আবার ঠিক মাঝরাতে উঠবেই। মায়ের দুধ খাবার জন্য এমন বুক হাতড়াবে,অনিতার ঘুমটাই ভেঙ্গে যায়।মেয়েটা তো ঘুমের ঘোরে তাকে জাগিয়ে দুধ খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

অনিতার আর ঘুম ধরে না। সঙ্গে একটা যেন ভয় আতঙ্ক, কিছু যেন ঘরে আছে! কোন অশরীরী বা কোন কিছু অলৌকিক ।সে অনুভব করে কারোর কেমন জোরে নিশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ যেন হাঁপাচ্ছে! তার নিজের বা স্বামীর বা কচি মেয়েটার নয়।যেন বিছানার ভিতর থেকেই শব্দটা হচ্ছে, কিন্তু ঠিক বুঝতে পারে না,এর উৎস কোথায়!

স্বামী অমিতকে এসব কথা দিনের বেলায় বললে হাসে।রাতে স্বামীর ঘুম নষ্ট করে এই শব্দ শোনাতে অনিতার বিবেকে লাগে। সারাদিন তাকে বক বক করে ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার পিছনে পড়ে থাকতে হয়।দিনেরাতে তার পাঁচটা ব্যাচের ছাত্র ছাত্রীদের কোচিং রুমে টিউশন ক্লাস। দেড় দু ঘন্টা মেয়াদের পাঁচটা ক্লাস,তার আট দশ ঘন্টার ক্লান্তি । তারপর, আবার দিনে দুবার বার করে বাড়ী থেকে কোচিং সেন্টার আসা যাওয়ার। ছয় কিমি করে বারো কিমি সাইকেল চালানোর ধকল কম নয়। এরপর আবার বাজার হাট,টুকটাক কাজ থাকে ।

একমাত্র সপ্তাহে বৃহস্পতিবার তার রেস্ট ডে। তাই এদিন বুধবার থাকায় গভীর রাতে অমিত কে ঠেলে ঘুম থেকে তুলেছিল অনিতা।

অমিত অনেক ক্ষণ শব্দের রহস্য ভেদে গভীর রাতে নির্জন পরিবেশে পর্যবেক্ষণ করল, ঘরের আলো জ্বালালো, দরজা খুলল। বাহিরের বারেন্দা নিরক্ষন করে বিছানায় এসে স্ত্রীকে বলল,

"আমার তো কোন শব্দ বা অন্য কিছু ঠাহর হচ্ছে না।কী সমস্যা খুলে বলো।"

অনিতা একটু ক্ষুন্ন হয়ে বলে,"তুমি তো মশা মারতে কামান দাগছ ! কানে কোন শব্দ পাচ্ছ না !তোমার কানেই সমস্যা আছে, ভালো ডাক্তার দেখাও। যত সব কালা ভোম্বল মানুষ নিয়ে জ্বালা!"

অনিতা স্বামীর চেয়ে অনেকটা বয়সে ছোট। অমিত তাকে ভালোবাসার চেয়েও স্নেহ বেশী করে।অনিতা তাকে কারনে অকারণে মেজাজ দেখালেও অমিত গা মাখে না।

অমিত ভালো ছাত্র ছিল, অঙ্কে এম এস সি করে সরকারী চাকরী বা স্কুল শিক্ষকতা পায়নি।অনেক দিন বিয়ে করেনি।প্রাইভেট টিউশন করত।এখন আর বাড়ি বাড়ী গিয়ে টিউশন করে না। শহরের দুটো কোচিং সেন্টারে গেষ্ট টিচার। মোটামুটি একটা ইনকাম ছিল। তাই তার যখন বয়স পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি। সে এক জানাশোনা দুর সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ে অনিতাকে বিয়ে করে।তার তখন বয়স ছিল বাইশ।

কর্তব্যবোধ পরিশ্রম করার ক্ষমতা অনিতার আছে, কিন্ত খুব মুখোরা, রংটা চাপা ,মুখশ্রী শরীর স্বাস্থ্য ভাল কিন্ত বাপের টাকা নেই । আর অনিতার পড়াশোনার মান মাধ্যমিক অবধি, কিন্ত শিক্ষিত অন্তত গ্রাজুয়েট ছাড়া বিয়ে সে করবে না। যৌথ বাড়ীতে বিয়ে করবে না। শুধুমাত্র স্বামীকে নিয়ে ঘর করবে। এত সব শর্ত। অমিতের একটু বয়স হোক, দেখে মনে হয় না। অনিতার তাই কোন আপত্তি ছিল।অমিতের আবার কোন পণের বাহানা ছিল না। একটু সুন্দরী বৌ চাই।

অমিতের সাথে বিয়ে হয়ে অনিতা সুখী ,তবে শহরের ভাড়া বাড়ীতে তার থাকা সমস্যা।এমন তেড়েফুড়ে বাড়ীর মালিক, গিন্নি কর্তার সবার সাথে তুচ্ছ কারনে ঝগড়া করে। কোন ভাড়া বাড়ীতে ছমাস থাকাই যেন অসম্ভব। অমিত এ বিষয়ে নিরীহ। স্ত্রীর জন্য ভাড়া বাড়ী বদল করতে করতেই পাগল।

স্ত্রীকে এসব নিয়ে অমিত কিছুই বলত না,আর বললেও অনিতা শুনবে না। অনিতার মুখ চোখ বেশ ভালো কিন্তু স্বভাবটাই ঝগড়াটে, আর যেমন মুখের ভাষা! তেমনি গলার তীব্রতা।

অজ্   গ্রামের মেয়ে ,তাদের বাড়ীর পাশেই দুলে বাগ্দী পাড়া।সে বামুনের মেয়ে হলেও হাবভাব স্বভাব মুখের বচন ভঙ্গি ,দুলে বাগ্দী ঘরের ঝগড়াটে বৌদের হার মানায়।এমন খিস্তি খেউর তার মানে উদ্ধার করতে বাংলার ডিকসিনারি তে পাওয়া যাবে না।আর তার তীব্র গলা যেমন কানে যেমন বিঁধত। পাশাপাশি দশটা বাড়ীর ভিতর অবধি শব্দ যেত।

শহরের বাড়ীর মালিক মানুষেরা সব চমকে যেত। ভাড়ার টাকার দরকার নেই। শিক্ষিত ভদ্র শহুরে বাড়ীর সব মালিকেরা কড়জোরে অমিত কে বলত "বিদেয় হোন অমিত বাবু, আমাদের ভাড়ার টাকার দরকার নেই। "

অমিত কিছুদিন কাকুতি মিনতি করে সময় নিয়ে ভাড়ার বাড়ীর দালাল ধরে নতুন ঘরের খোঁজ করত।এই তিন বছরের মধ্যে সাতটা বাড়ী পাল্টে দালালদের বলে এতদিনে একটা বাড়ী ভাড়া সে পেয়েছিল।মালিক বাড়ীতে থাকে না। দোতলা একটা মাত্র ঘরে বাড়ীর মালিকের যা কিছু সব আসবাব ভরা থাকত। একতলার সবটাই তারা থাকে। দুটো ঘর বারান্দা রান্নার ঘর,সঙ্গে বাথরুম টয়লেট।ভাড়াও বাজারের তুলনায় বেশ কম ।

এতদিনে অমিতের মনে হয়,এবার সে বেশ কবছর এ ভাড়া বাড়ীতে টিকতে পারবে। কিন্তু অনিতার নতুন সমস্যা ,এসবে অমিত আর আমাল দিতে চায় না।তখন দিন সাতেক এই নতুন ভাড়ার ঘরে এসেছিল। বেলা এগারটায় অমিত এক কোচিং সেন্টারের উদ্দেশ্য সে বের হয়। সাড়ে পাঁচটায় সে ফেরে ।আবার সাতটায় বের হয়ে সেই রাত সাড়ে দশটায় ফেরে।

অনিতার তাই সুবিধা রাতের ঘুম না হলেও পুষিয়ে নিত স্বামী এগারোটায় বের হলেই সে শিশু কন্যাকে নিয়ে বিছানায় শোয়।একটু ঘুমিয়ে দেড়টার সময় ওঠে,তার পর নিজে আর কন্যার স্নান করা, খাওয়া দাওয়া চুকিয়ে,তারপর আবার বিছানায় ।শরীরটা একটু কদিন দুর্বল লাগছে। এসব নিয়ে সে স্বামীকে কিছু বলে না।

বৃহস্পতিবার স্বামীর সাথে একটু বিকালে অনিতা বেরোনোর অভ্যাস ,সেই বিয়ের পর থেকেই। সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে, বিকালে রিকশায় চেপে অমিত আদরের বৌকে নিয়ে শহরের মন্দির ধর্মস্থান,আশ্রম যেমন যেতো ,তেমনি সিনেমা দেখা, বিগ বাজারে কেনাকাটি করত। আর শেষে বাড়ি ফেরার পথে বৃহস্পতিবার বার তাই নিরামিষ খাবার। শহরের নামী ভেজ রেস্টুরেন্ট থেকে ভেজ বিরায়ানি, পনীর এরা নানা পদ,রুমালের রুটি ,পরোটা ঘূগনী যাইহোক খেয়ে রাতে বাড়ী ফিরত।এদিন যেমন অমিতের রেস্ট ডে।অনিতাও রান্না বান্না করত না।দিনের রান্না অমিত করত,দিনেও নিরামিষ হতো। অমিত খুব ধার্মিক,বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মী পুজো নিজে করত।

তাদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখের, ভোড়ের শেষে, বাথরুম থেকে ফিরে বিছানায় এসে তাদের খুশীর শারীরিক মিলন যেন নৈমিত্তিক ঘটনা। তারপর উভয়ে জড়াজড়ি করে শুয়ে অলস অবসন্ন দেহে বহুক্ষন থাকত,তন্দ্রার মত এসে যেত। পরে একে একে উভয়ে বাথরুমে স্নান করে পরীক্ষা পরিচ্ছন্ন হত। ।শীত গ্রীষ্মের কোন তফাত ছিল না কেবল শীতের সময়ে লেপের নিচে তাদের এই সম্ভোগ চলত।এই সব কর্ম কান্ড করতে সকাল সাড়ে সাত আটটা হয়ে যেত।

অমিত চা খেয়ে বাজার যেত আর অনিতা রান্না চাপাত, অমিতের খুব তাড়া ছিল না। সাড়ে দশটায় খেতে বসত আর তার পর এগারটায় কোচিং সেন্টার।একমাত্র সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার তারা এই সব সম্ভোগ বা দৈহিক মিলনে বিরত থাকত। অমিতের মতে এসব অশুচি এঁটো কাজ কর্ম বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবারে করা উচিত নয়।অনিতা এই বিষয়ে ভীষণ উদার। স্বামীকে কখনও বিমুখ করত না। উভয়ে চরম পরিতৃপ্ত হত।

বৃহস্পতিবার অমিত সকালে উঠেই স্নান সেড়ে পূজো করত। তার পর চা করে অনিতা তুলত। অনিতা সেদিন তেমন কিছুই করত না। মন গেলে স্বামীকে রান্নায় সাহায্য করত।

 পূর্বতন ভাড়া বাড়ী গুলোতে অমিত থাকাকালীন কোন সমস্যা হত না। সমস্যা হত অমিতের ভাড়া গৃহে অনুপস্থিত সময়ে। অনিতা যেন পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া শুরু করত। একমাস পার না হতেই।কখনও কমন টয়লেট অপরিছন্ন অপরিস্কার নিয়ে, কখনও ছাদে ভিজে কাপড় মিলতে গিয়ে, কখনও বা সব্জির খোষা অন্য নোংরা বর্জ্য ফেলা নিয়ে,আরও কত তুচ্ছ বিষয়ে।

ভাড়া টাকায় থাকত,তাই মনে করত, সে যা খুশী বলবে। "নাং এর টাকায় থাকি না,ভাতারের টাকায় থাকি খাই। হুমোর মত মুখ নিয়ে বাড়ীর গরব দেখাবি না।রীতিমত ভাড়া দিয়ে থাকি।আমাদেরও গ্রামে এর দশগুন বড় বাড়ী আছে, আমরা তো ভিখারীর মত ভাড়ার টাকা খাই না। মুখ তো নয় যেন পোড়া বেগুন ! তেলে পোকার মত আবার গুড়গুড়িয়ে পালাচ্ছে।আর কত অশ্লীল কথাই যে ,সে রাগে মাথায় বলত, ফোয়ারার গতিতে। কারও কথা শুনতেই পেতো না, এমন একটানা চেঁচাত।বাড়ীর মালিক বা মালকিন বিচলিত হতবাক হত, মেয়ে পুরুষ তফাত করত না।তাই এমন মুখোরা ভাড়াটিয়া রাখত না।

এ বাড়ীতে সে সব সমস্যা ছিল না।অনিতা একা সঙ্গে ,দেড় বছরের তার শিশু কন্যা।এ দিন এগারোটার সময় অমিত তার কাজে বের হল। অনিতা স্বামীর ভাত খাবার জন্য আলু পোস্ত রান্না করেছিল,তাই দিয়ে মুড়ি খেয়ে, মেয়েকে একটু সুজি খাইয়ে।বাহিরের গ্রীলের দরজায় ভিতর থেকে চাবি দিয়ে,বিছানায় শুলো।

নমিতার রাতে প্রায় ঘুম হয়নি।ক্লান্ত দুর্বল লাগছিল, বেশ ঘুমিয়ে গেল। হঠাৎই এক দুর্গন্ধে ঘুম ভেঙ্গে দেখে,মেয়ে কান্ড ঘটিয়ে বসে আছে।তার বাম হাতের উপর অংশ আর বুকের খানিক এতটা মল ত্যাগ করেছে।দুদিন ধরে কন্যার পায়খানা পরিস্কার হচ্ছিল না।

তবু ভালো ওয়েল ক্লথ থাকায় বিছানা চাদর এই নোংরা লাগেনি ,কিন্তু তার বাপের বাড়ির জাগ্রত বাবা ঈশানেশ্বরে পুষ্প তাবিজ মেয়ের পায়খানায় নোংরা অপবিত্র হয়ে আছে। শিশু বোঝে না ,কী করবে। সব কাচাকাচি করে নিজে পরিস্কার হল, মেয়েকে পরিস্কার করে ভাত খেলো,তার পর আবার একটু শুয়েছিল ।কেমন ঘুম ঘুম আসছিল।দুপুর তখন দুটো বাইরের গ্রীলের দরজা নাড়ার শব্দে, তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দেখল অমিত!

তাড়াতাড়ি চাবি খুলে দিল। অমিত ঢুকে হাসি মুখে বলল,"যাক তিন ঘন্টা এখন রেস্ট। "

"কেন গো!"

"টেন ক্লাসের ছেলে মেয়েদের এই সময়টা ক্লাস ছিল, দুদিন পর মাধ্যমিক পরীক্ষা, স্পেশাল কোচিং। কেউ আসেনি। প্রথম দিন বাংলা তাই আজ অঙ্ক প্রাকটিস করে কী হবে।"তারপর স্বভাব মত,অমিতাকে জড়িয়ে একটা চুম খেলো।

অনিতা বলে "বাইরের পোষাক ছাড়ো, তোমার সরবৎ করে আনি।"

সব ঠিক ঠাক চলছিল। কিন্তু আবার বিছানায় অনিতা শুয়েছিল একটু ঘুম ঘুম আসছে।অমিত পোষাক পাল্টে একটা লুঙ্গি পড়ে খোলা গায়ে চেয়ারে বসে পেপার পড়ছিল। হঠাৎই তার পাশে শুয়ে শুয়ে,অমিত তাকে আদর করতে শুরু করল।মেয়েটা ঘুমে অচেতন।


অনিতা খানিকটা কপট বিরক্ত হয়ে বলে "এই অসময়ে কী সব আবার শুরু করলে! সকালে তো করলে!"

"এখন শুধু তোমাকে জড়িয়ে শুয়ে থাকব।"

"আমার ঘুম আসছে কিন্তু!"

"বাড়ি এসে কী ভুল করলাম!"

"আমি কী তাই বলেছি! তুমিও ঘুমোয়।"

অমিতের মুখটা কেমন করুন। "অনেক দিন পর ভাবলাম তোমাকে দুপুরে একটু আদর করব,না হলে তো কোচিং সেন্টারের অফিসেই চেয়ারে বসে ঢুলতে পারতাম। সাইকেলে ঘেমে কষ্টে এত রোদে বাড়ি আসার কি দরকার ছিল!"

অনিতা মুখটিপে অমিতের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে সোহাগ করে বলে, "ওঃ জ্বালাতন বটে কী যে করো ! তোমার আদর তো নয়,আরও কিছু !"

অনিতা এতক্ষণ তার এই দুষ্ঠমীভরা আদর ভালবাসায়  রীতিমত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।অমিতকে জড়িয়ে ধরে,পঁচিশ বছরের যুবতী, তার বয়সে এটা স্বাভাবিক। তারা খুশীর সম্ভোগে লিপ্ত হল।

সাড়ে চারটায় আবার অমিত বের হবে। অনিতা এই অপরিছন্ন ভাবেই ঘুমিয়ে গেছিল। চারটের সময় অমিত আবার বাথরুমে স্নান ঢুকেছে।কড়া নাড়ার শব্দে অনিতা ঘুম ভেঙ্গে দেখে অমিত বিছানায় নেই।

"তুমি কোথায় গেলে,দেখো না কে  কড়া নাড়ছে!"

"আমি বাথরুমে প্লিজ তুমি দেখো।"

"অনিতা কোন অপরিছন্ন অপরিস্কার অনুভব করছিল না,অমিতের সাথে তার সম্ভোগ মনে ছিল না।একটু এলোমেলো তার পোষাক ঠিক করে গ্রীলের ভিতর থেকে দেখে একটা লোক মাঝ বয়সের বলে, "দীপঙ্কর আছে!"

"কে দীপঙ্কর!"

"আপনি দীপঙ্করের স্ত্রী নয় !"

"আমারন ঝাঁটা মার মুখে! নেশা করেছেন বুঝি!"

"না ম্যাডাম আমি জানি এবাড়ীটা তো দীপঙ্করের ।"

"আমি দীপঙ্কর চিনি না,ভাড়া থাকি ,আপনি যান তো হতচ্ছাড়া মাতাল কোথাকার।" 

বলে রাগে গজগজ করতে করতে অনিতা ঘরে ঢুকল।চাবি তালা লাগান ছিল।বাইরে থেকেই লোকটা আবার জোরে বলল ,

"দীপঙ্কর তো এ বাড়ীতে এখন এল দেখেছি !"

অনিতা কোন উত্তর না দিয়ে ঘরে এসে অমিতকে বলল,

"তোমার বাথরুমের কাজ হল! দেখো তো একটা পাগল এসে সমানে দীপঙ্কর দীপঙ্কর করছে। "

 বাথরুম থেকে বের হয়ে অমিত বলে " লোকটা কেমন দেখতে!"

"বেঁটে মোটসোটা মাঝারি রং, চোখে চশমা এক তাড়ি গোঁফ কেমন যেন লমপট লমপট মনে হল।"

"অমিত হেসে বলে মানুষটি এমন দেখতে!"

অনিতা চমকে ওঠে।এই তো সেই লোকটা!

"আমিই দীপঙ্কর, এ বাড়ী আমার। আসল অমিত এখন কোচিং ক্লাসে পড়াচ্ছে।"

অনিতা তীব্র ভয় আতঙ্ক দিশেহারা ,ছুটে রান্নার ঘর থেকে বটি এনে তারদিকে ছুটে যায় ।

দীপঙ্কর হেসে বলে, "ক বার খুন হব! সম্ভোগ কালে এই ঘরেই আমাকে খুন করা হয়।এই গৃহে কোন বিবাহিত নারী এলেই তাকে সম্ভোগের কামনায় পাগল হয়ে পড়ি।তুমি যে নির্জন রাতে বিছানায় জোরে জোরে নিশ্বাস প্রশ্বাস হাঁপানোর শব্দ পাও! সেটা আমার শেষ বারের মত ,আমার স্ত্রীর সাথে সম্ভোগের আনন্দের শব্দ,তার পরেই আমাকে খুন করা হয়। তোমার ঈশ্বরের তাবিজ ছিল তাই স্পর্শ করতে পারিনি।কামনায় জ্বালায় অস্থির ছিলাম। আজ তোমাকে তোমার কন্যাকে উহ্য রেখে তোমায় তাবিজ হীন করেছি।"

অনিতা অবাক তাবিজটা তাই তো ! কোথায় তার খেয়াল হল না। পরিস্কার করে বাথরুমে হাঙ্গারে রেখে নিয়ে আসতে ভুলে গেছিল।এখন আর তার মনেই পড়ছিল না । অমিত রূপী দীপঙ্কর সেটা ছুঁতে পারেনি কিন্তু জলের ধাক্কায় বাথরুমের জল যাবার নালি দিয়ে বের করে দেয় যাতে তার পবিত্রতা আর শক্তি নাশ হয়।আর অনিতা খুঁজে না পায়।অনিতা তাবিজ না পেয়ে আশঙ্কায় কাঁদছিল। 

দীপঙ্কর উচ্চ স্বরে হেসে বলে,

" তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবে না, আমি তোমার শরীরেই ঢুকে বসে আছি।যেটা আমার দেখছ চোখের ভ্রম। তুমি সব ভুলে যাবে। যে কদিন তুমি বেঁচে থাকবে, আমি তোমার সাথেই থাকব।"

তার পর হো হো করে হাসতে আবার সে অমিতের রূপ নিল।

অনিতা কেমন পুতুলের মত দাঁড়িয়ে ছিল। অমিত রূপী দীপঙ্কর এসে অনিতা নাড়িয়ে দিল ,খানিকটা কলের পুতুলে দম দেওয়ার মত। তার পর হেসে বলল

" আমি এবার রওনা হব ঠিক সাড়ে চারটে,কোচিং সেন্টারে আমার ক্লাস আছে। তুমি বাথরুমে পরিস্কার হয়ে এসো। চা টা আমি বসাই"

" কী ভাগ্যি! চা তুমিই করবে!"

"তোমায় কত কষ্ট দিলাম!"

"কী কষ্ট দিলে ! " অনিতার এই দুপুরের সম্ভোগ করার আনন্দ ভুলে গেছিল।তখন সম্ভোগের আনন্দ অনুভব করলেও তার গোপন অঙ্গে নোংরা অপরিছন্ন ছিল না।বাথরুমে তাই স্নান,তার পড়নের পোষাক কাচাকাচি করার প্রয়োজন অনুভব করে না।

অনিতার যে স্মৃতিভ্রম খেলা তার প্রভাবে শুরু হয়েছিল  অমিত রূপী দীপঙ্কর বুঝতে পারে। দশ মিনিট মধ্যেই তার পূর্বের কাজকর্ম সুখ অনুভব ভুলে যাচ্ছিল। কেমন থমথমে চুপচাপ ছিল। 

সেদিন অমিত সাড়ে পাঁচটার সময় বাড়ি ফিরল। দেড় ঘন্টার পর আবার সাতটার সময় দিনকার মত সে কোচিং ক্লাসে চলে গেল। হালকা টিফিন করল। চা খেলো।

রাতে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে দিনকার মত অমিত অনিতা আর তাদের শিশু কন্যা বিছানায় শুয়েছিল।

এদিন রাতে অনিতার কোন ভয় ভীতি লাগে নি।ঘুমও হল ।কিন্তু সমস্যা হল ভোড়ের সময় বাথরুম থেকে ফিরে এসে দিনকার অভ্যাস মত অমিতের আবেদনে সম্ভোগ করতে অনিতা বিরক্ত বলে,"এই তো এখুনি করলে, এত তোমার রস কেন! বয়স তো বাড়ছে চল্লিশে ধাক্কা মারতে যাচ্ছ।"

অমিত স্তম্ভিত এমন কথা তো অনিতা বলে না!

"তোমার কী হয়েছে বলতো। কেমন রাতে চুপচাপ ছিলে। এখন বলছ তোমার সাথে এখুনি সেক্স করেছি! কখন করলাম!"

"এই তো করলে , আমি ঘুমের ঘোরে ছিলাম।"

"দেখ ,এভাবে বদনাম দিও না,তোমার অমতে বা তোমাকে ঘুমের সময় আমি নিজের ইচ্ছা পুরনে মিলিত হব সম্ভোগ করব,তেমন ইতর কামুক আমি নই।আর যদি ভাবো আমি মিথ্যা বলছি নিজেকে চেক করো,তোমার ওখানে হাত দিলেই বুঝবে।"

"অনিতা এবার নিজের গোপন অঙ্গে হাত দিয়ে বুঝতে পারে,অমিত ঠিক বলছে।কিন্তু তার তীব্র ক্লান্তি আর পরিতৃপ্ত ভাব ,আজ আর অমিতের সাথে মিলিত হতে ইচ্ছা হচ্ছিল না।ঘুমের ঘোরের মধ্যে একটু আগেই সে তো ভীষণভাবে পরিতৃপ্ত হচ্ছিল বেশ সে অনুভব করে।

আলো জ্বলিয়ে অনিতার মুখের কাছে মুখ এনে অমিত ব্যাথিত স্বরে বলে "তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ!আমি তোমার সাথে মিথ্যা ছলনা করছি!"

অনিতা কেমন বিভ্রান্ত মনে বলে, "আমার কিছুই মনে থাকছে না,সব ভুলে যাচ্ছি।" চোখ মুখে কেমন আতঙ্ক।

হঠাৎই অমিতের নজর পড়ল অনিতার হাতের তাবিজ টা নেই হতবাক হয়ে বলে "তোমার বাঁ হাতে যে বাবা ঈশানেশ্বরের তাবিজ সেটি কৈ!"

"হ্যাঁ তাই তো কী হল! কোথায় গেল!মনে পড়ছে না কেন!" অনিতা কাঁদতে লাগল।

অমিত কেমন আশঙ্কা ভয় করে বলে "কাল সন্ধের সময় থেকেই দেখছি তুমি কেমন চুপচাপ, আনমনা কী হয়েছে তোমার!"

 ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অনিতা বলে , "কিচ্ছু মনে নেই।সব কিছুই একটু পর ভুলে যাচ্ছি!"

অমিত সকালেই এক ডাক্তারের কাছে অনিতাকে নিয়ে গেলে,ডাক্তার বাবু সব চেক করে জানাল। প্রেসার হার্ট বিট,সব নরম্যাল।একটু উইক ,ক্লান্তি থেকে হতে পারে।

অমিত বলল "কদিন ওর রাতে ঘুম আসছে না।কেমন ঘরের মধ্যেই ও ভয় পাচ্ছে ,আমরা পাশে শুয়ে তবু ওর ভয়।আর কাল থেকে কেমন সব ভুলে যাচ্ছে।"

ডাক্তার বাবু বললেন , "কাউন্সেলিং দরকার, ভালো মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।"

অনিতা কেমন হয়ে গেছে।চুপচাপ অলস, চোখ মুখ কেমন আনমনা , কন্যাকে অবধি যত্ন নিচ্ছে না।এই অবস্থায় ওকে বাড়ীতে একা রেখে কোচিং সেন্টার যাওয়া সম্ভব নয়।

অমিত সিদ্ধান্ত নিল।দশটার মধ্যেই খাওয়া সেড়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে তিনজনেই কোচিং সেন্টার যাবে।তার বিপদ কোচিং সেন্টারের কর্ম কর্তা দেখুক।তারপর কদিন ছুটি চাইবে।চিকিৎসার শেষ দেখে ছাড়বে।

কোচিং সেন্টারের এক কর্মকর্তা অভয় দা মনবিদ বিশেষজ্ঞ অমিত জানত না। সব কথা অমিত আজ খুলে বলে।"মাত্র কদিন এ বাড়ীর আসার, আর তারপর থেকেই ওর এই ভাবে দিন দিন পরিস্থিতি অবনমন। ঘুম না হওয়া, রাতে বিছানার মধ্যেই কিছু শব্দ শোনা, ভয় ত্রাস, আবার কাল থেকে সব ভুলে যাওয়া।শুধুমাত্র ওর সমস্যা আমাদের কিছু নয়।"

অভয় বাবু বললেন "এ ভালো লক্ষ্যন নয়।মানসিক রোগী হয়ে যাবে।কোচিং ক্লাস দরকার নেই,আগে নিজের ঘর বাঁচান। আপনি তো ভাড়া ঘরে আছেন!যে ঘরে থাকেন তার হিস্ট্রি জানুন "

আরও বললেন,"ঐ বাড়িতে একা স্ত্রীকে রাখবেন না। ও ঠিক বুঝতে পারছে না, ওর অবচেতন মনের এটা প্রতিফলন। ঐ ঘরে গেলে আর একা নিঃসঙ্গ থাকলে আরও সমস্যা হবে।"

একটু ভেবে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে, অভয় বাবু আপাতত নিজের বাড়িতেই একটা ঘর তাদের থাকতে দিলেন। আর পরামর্শ দিলেন "একা নয়, ওকে মানুষের সাথে সব সময় রাখুন। দরকারে আপনার অনুপস্থিতিতে একজন সর্বক্ষণের জন্য পরিচালিকা রাখতে হবে।"

অভয় বাবুর এই কোচিং সেন্টারের অর্ধেক মালিকই নন,এ বড় কোচিং সেন্টারের বাড়ী তার। এছাড়া জমি প্রমোটারী করে তিনি অনেক টাকার মালিক, তবে মনটা ছিল বড়,পরোপকারী মানুষ।

অমিত বাড়ির ভাড়ার দালালদের কাছে গেল। সব কথা বলল, তার স্ত্রীর মানসিক পরিস্থিতি,রাতে শব্দ শোনা,ভয় ত্রাস, ভুলে যাওয়া সব শুনে। দালাল বলল,

"নিরিবিলি একক বাড়ী চেয়ে ছিলেন, তাই ঐ বাড়ির কথা বলেছিলাম। বাড়ির রহস্য ঠিক জানি না ,তবে কিছু রহস্য নিশ্চয়ই আছে,এতটুকু বুঝেছি, না হলে বাজার দর থেকে অনেক কম ভাড়া কেন !বর্তমানের মালিক তপন বাবু বাড়ি কেনার পর, উনার স্ত্রী এক মাসের মধ্যেই মারা যায় । আর তারপর এবাড়ী বিক্রির জন্য আমাদের বলে , কিন্তু অনেক খন্দের বাড়ী দেখে দাম শুনে রাজী হলেও কিছু নিশ্চয় রহস্যের কারনে বাড়ীটা বিক্রি হচ্ছে না।"

"এমন খদ্দের দু চারটের  নাম জানাবেন!"

দালালদের সঙ্গে সঙ্গেই দুজনেই নাম ঠিকানা দিল।এক জনের ল্যান্ড ফোন নাম্বার দিল।

এই শহরের মানুষ। অভয়বাবুর মটোর সাইকেল আছে, সব শুনে বললেন "চলুন আজই যাব।আপনার স্ত্রীর বিয়য়ে কোন আপাতত টেনশন দরকার নেই, আমার বাড়িতে যে রান্না করে, সেই আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই থাকবে , যতক্ষণ আপনি বাইরে থাকবেন।"

সেদিন দালালদের নাম দেওয়া ,দুজন ঐ বাড়ি ক্রয় করতে গিয়ে অবশেষে কোন রহস্যে কারনে বাড়ীটা ক্রয় করেনি ! তাদের মধ্যে এক অনিচ্ছুক ক্রেতার দেখা পাওয়া গেল ,তিনি বললেন,

"ঐ বাড়ীটা রহস্যের, ভুত আছে শুনেছি। বর্তমান মালিক,এই বাড়িটা কিনে বসবাস শুরু করার পর তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। কোন রোগ ব্যাধির লক্ষ্যন ছিল না,ক্রমে ক্রমে ক্ষীণ হতে হতে একদিন সে মারা গেল। মুখ চোখ কেমন ফ্যাকাশে, মনমরা চুপচাপ থাকত কিন্তু সে নাকি তেমন ছিল না,খুবই হাসিখুশী ছিল ।স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পর বাড়ি ছেড়ে এই শহর ছেড়েই এখন তপন বাবু কলকাতায়।

 আগের বাড়ীর মালিকের নাম ছিল দীপঙ্কর, তার অপঘাতে মৃত্যু হয়।দীপঙ্করের স্ত্রী এবাড়ীর বর্তমান মালিককে দীপঙ্করের মৃত্যুর পর তপন বাবুকে বেচে দেয়। দীপঙ্কর বাবুর স্ত্রী ছিল চরিত্র হীন। সুন্দরী, স্বামীতে তৃপ্ত হত না। তার এক প্রেমিক ছিল ।এক রাতে ঐ প্রেমিক ঘরের খাটের নিচে লুকিয়ে ছিল।দীপঙ্কর স্ত্রীকে বিশ্বাস করত। সেদিন রাতে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগের সময় ঐ প্রেমিক দীপঙ্করের মাথায় লোহার শবল মেরে হত্যা করে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে নেই।চতুর ঐ প্রেমিক গভীর রাতেই ওর মরদেহ বড় পলিথিন ব্যাগে ভরে,আগে থেকেই তার কবরের জন্য গর্ত করে রাখা দামোদরের গাবায় পুঁতে দেয়।সে আজ দশ বছরের আগের ঘটনা।

আমার সব কিছুই জানা কিন্তু বাবা দিব্যজ্যোতি মহাশয়ের কাছে। বাবাজীর কথা আমাকে ঐ বাড়ির পাশের প্রতিবেশী রমেশ বাবু বলেছিলেন। তার কাছে যখন এ বাড়ীর বাজার তুলনায় দাম এত কম কেন জিজ্ঞেস করি।উনি বললেন উনার খুব বেশি ধারনা নেই, বাড়িটা অভিশপ্ত, ভুত প্রেত আছে শুনেছি।তারপর আমি দিব্যজ্যোতি বাবাজীর সাথে দেখা করেছিলাম।এ বিষয়ে আমি যা যা সব  বললাম উনার কাছেই শোনা।বাবাকে দিয়ে তপন বাবু বাড়ীর দোষ মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। উনি রাজি হোন নি।" 

অমিত দিব্যজ্যোতি মহাশয়ের নিকট গেছিল সঙ্গে অভয় বাবু।তিনি সাধু সন্ন্যাসী তান্ত্রিক বলতে যেমন বোঝায় তেমন নয়।একটা সময় সংসারী ছিলেন। সরকারী দ্বায়িত্বশীল পদে ছিলেন।সংসারের বিরাগ জন্মে তখন বয়স তার ষাট।এক বার প্রায় ছমাস নিখোঁজ ছিলেন। তিনি হরিদ্বারে কোন এক যোগীর সান্নিধ্যে আসেন , এরপর গেরুয়া বসন আর গোঁফ দাড়ি নিয়ে গৃহে ফিরে  দামোদরের পাশে নির্জনে এই ছোট গৃহ তৈরী করে একা একা থাকেন।নিরামিষ আহার তার স্ত্রী তৈরি করে এক ভৃত্য কে দিয়ে দিনে তিন বার পাঠিয়ে দেন,আর সঙ্গে কিছু ফলমুল।

এই নীরবতা নির্জনতা বন ঝোপ ঘেরা ছোট ঘরে গভীর রাতে একা জেগে তিনি তপস্যায় মগ্ন হন। কার তপস্যা করেন, কার ভক্ত কে জানে।পরনে গেরুয়া বসন শুভ্র গোঁফ দাড়ি, একরাশ শুভ্র কেশ ,মুখ চোখে এক পরিতৃপ্তভাব।মানুষের মনের কথা দেখলেই বলে দেন।আর এক অদ্ভুত শক্তিতে তিনি ভৌতিক রহস্য ভেদ করতে পারেন। কিন্তু প্রচার বিমুখ খামখেয়ালী টাকার যেমন মোহ হীন তেমনি সব মানুষের প্রতি প্রসন্ন নয়।যার অন্তর নিকৃষ্ট,তার থেকে শত হাত দুরে থাকতেন।কেবল ভালো সরল মনের মানুষদের সাথে কথা বলতেন। বাকিদের দেখলে নীরব থাকেন। নিজের অলৌকিক ক্ষমতা অস্বীকার করেন।নিজেকে মামুলি সংসার বিরাগী মানুষ বলেন ।

অমিত নিজের পরিচয় দেওয়ার আগেই বাবাজী বলেলেন , "তোমার স্ত্রীকে আনোনি, যাকে দরকার তাকে ছাড়া, আমি কি তোমাদের বক বক শুনব!"

দুঃখ প্রকাশ করে অভয় বলল,"বাবাজী এখনই উনার স্ত্রীকে আনার ব্যবস্থা করছি।"

অমিত কেমন নার্ভাস দেখে ,দিব্যজ্যোতি বললেন। "এতটা নার্ভাস কেন!তোমার স্ত্রীর তেমন কিছু ক্ষতি এখনও হয় হয়নি। যা হয়েছে আর হচ্ছে তাতে কিন্তু দীপঙ্করের দুষ্ট আত্মা বেশী ঘায়েল। বাড়ি থেকে বের করে এনে খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছ।ঐ বাড়ির বাস্তুদোষেই ওর শক্তি ,ঐ ঘরে আর সাত দিন তোমার বৌ থাকলে ওর শরীরে অবস্থান ঐ দুষ্ট আত্মা ওর সব শক্তি শোষন করে ওকে শেষ করে ফেলত। এখন ও ফাঁদে,ঐ গৃহের বাস্তুরদোষ ওকে শক্তি জোগান দেয়। এখন শক্তি শুন্য, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে পালাতে চাইছে, কিন্তু সমর্থ নেই। এত নার্ভাস দরকার নেই, বৌকে এখনই নিয়ে এসো।"

অভয়বাবুর গাড়ি করে অনিতাকে নিয়ে এসে, অনিতা কেমন যেন উদভ্রান্ত ভয়ার্ত্ত আতংকিত দেবজ্যোতি বাবাজীকে দেখে কাঁদতে লাগল।

বাবাজী কোন উত্তর দিলেন না।

অনিতা ব্যাকুল ভাবে বলে "আমি ঘরে যাব।"

"তখন দুষ্ঠমীর আর সম্ভোগ করার সময় মনেছিল না!"

"আমি ভুল করেছি।"

"স্বামীর রূপ ধরে পরস্ত্রীকে সম্ভোগ করে দেবরাজ ইন্দ্র রক্ষা পায়নি।এবার তুই ছুঁচোর মত ঐ বাড়ীর বাইরে বাইরে নোংরায় ঘুরে বেড়াবি।সেই ব্যবস্থাই করছি "

অনিতার মুখ চোখ কেমন কঠোর নিষ্ঠুর হিংস্র হয়ে ওঠে।দিব্যজ্যোতি দিকে সে ক্রোধে তেড়ে যাচ্ছিল।অমিত অভয়বাবুর কেমন উদভ্রান্ত ভয়ার্ত্ত।

দিব্যজ্যোতি কিছু একটা করলেন, অদৃশ্য ভাবেই অমিত অভয়বাবুর দৃষ্টিগোচর হল না।

অনিতা অচেতন হয়ে পড়ে গেল। দিব্যজ্যোতি বললেন "ওকে নিয়ে যাও,ওর শরীর খুব দুর্বল, পারলে সেলাইন অক্সিজেন ব্যবস্থা করবে।ওর শরীর থেকে দুরাত্মা বের হয়ে গেছে ,যে ওকে এ কদিন চালিত করছিল।"

অভয়বাবুর বাড়ীতেই, অনিতার সেলাইন, আর অক্সিজেন দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নিয়মিত ডাক্তারী পর্যবেক্ষণে ছিল।

দুদিন পর অনিতার জ্ঞান ফেরে।খুবই দুর্বল অবসন্ন

বোধ করছিল, কিন্তু সে স্বাভাবিক,ভুলে যাওয়া বা স্মৃতি ভ্রম দুর হয়েছিল, মনমরা ভাব ছিল না। তবে এই কটা দিনের কথা তার কিছুই মনেছিল না।

দিব্যজ্যোতি বাবাজী অমিত অনিতাকে ঐ ভাড়া ঘরে ফিরতে নিষেধ করেন।অভয়বাবু অমিতকে, তার একটা ঘরে থাকতে দিয়েছিলেন। ভাড়া নয় বিনা পয়সায়, তাই অনিতা আর মুখোরা হবার সাহস পায়নি।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics