Sangita Duary

Horror Thriller

4  

Sangita Duary

Horror Thriller

বাঁশবনের মাঝখানে

বাঁশবনের মাঝখানে

7 mins
729



দুপুরে এক পেট ভাত সাবাড় করে বিছানায় একটা মাঝারি সাইজের ভাতঘুম মিটিয়ে বিকেলবেলা মাস্কা মেরে ক্লাবে যাওয়াটা আজকাল রমেনের একটা রুটিনের মধ্যে পড়েছে। 

সদ্য বি এ পরীক্ষা দিয়েছে রমেন। তাদের বংশে সেই একমাত্র প্রথম গ্রাজুয়েট হতে চলেছে, ঠাঁট বাট তো অন্য লেভেলের হবেই।

ক্লাবের ছেলেদের কাছেও কলকাতায় পড়ে বলে ভাও খায়। ক্যারামের প্রথম চাল রমেনের হয়, পল্টুর দোকানের প্রথম চায়ের ভাগিদার সে হয়।

 এরই মধ্যে যখনই রিমিকার টুং করে মিসডকল ঢোকে, রমেন সাইড হয়ে যায়।


আজ সকাল থেকেই আকাশ গুমোট। ক্লাবে কেউই নেই। একা একাই কয়েকটা ঘুঁটি পকেটে ফেলে বোর হচ্ছিল।


রিমিকার কল আসতেই ফোন কানে বেরিয়ে এলো বাইরে।


বেশ মেঘ করে আসছে। জোর বৃষ্টি ঢালবে, রিমিকার সাথে কথা বলতে বলতে ভাবছিল রমেন।


" কী ভাবছো বলতো?"


যাচ্চলে! এটাও ধরে ফেলল মেয়েটা?


 "কই কিছু না তো?" রমেন উত্তর দেয়।


" মিথ্যুক! কতবার বলেছি না, যখন আমার সাথে থাকবে তখন অন্য কিছু ভাববে না! যাও! রাখছি।"


রমেন রিমিকাকে শান্ত করার চেষ্টা করে," আরে না না, প্লিজ কেটো না কলটা! আচ্ছা বেশ। বলো, আর কোনদিকে মন দেবোনা।"


- পাক্কা? আমি কিন্তু ঠিক ধরে ফেলবো!


খিলখিল করে হেসে ওঠে রমেন।


রিমিকা রমেনের লেটেস্ট গার্লফ্রেন্ড। বেশ চাবুক দেখতে। আদুরে গলায় যখন কথা বলে, উফ! নেশা ধরে যায় রমেনের।


কথা বলতে বলতে কিছুদূর পথ এসে থমকে গেল রমেন। এ কোথায় এসে পড়েছে সে!


ইঁট ফেলা পথটার দুইপাশে দুটো পুকুর। 


তারপর, শুরু হয় সেই শেষ না হওয়া বাঁশবন। দিনের কড়া রোদেও যেখানে সূর্যের আলো ঢোকেনা। রাত তো দূর, দিনেরবেলাতেও এই পথ এড়িয়ে চলে সবাই।


ছোটবেলায় শুনেছিল রমেন, ছেলেধরারা নাকি এখানেই বাচ্চা ছেলেমেয়েদের ধরে এনে চোখ, কিডনি উপড়ে লাশ গুম করে দিতো।


অনেকেই সন্ধ্যের মুখে এই জায়গা থেকে বাচ্চার কান্না শুনেছে।


দুপুরবেলা, কারোর হেঁটে চলে বেড়ানোর মচমচ আওয়াজ শুনেছে।


 কোনো এক সময় নাকি এক শোয়ানো বাঁশগাছ ডিঙিয়ে যেতে গিয়েছিল কেউ একজন। সঙ্গে সঙ্গে সেই বাঁশ চড়াং করে সোজা হয়ে গিয়েছিল।


আরো কয়েক শতক বছর আগে নাকি ওই বাঁশবন ডাকাতের ডেরা ছিল, নরবলি হতো।


কত কত যুগের ইতিহাস যে ওই বাঁশবন বহন করছে, কে জানে!


 রমেন এত কিছু জানা সত্বেও এই রাস্তা নিলো কেন?


এইসব ভেবেই আবার একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল রমেন।


ফোনের ওপ্রান্তে রিমিকা,"এই রাখছি, হ্যাঁ? মা আসছে!"


বলেই রিমিকা ফোনটা পটাং করে কেটে দিলো।


রমেনের কপালে ভাঁজ। নিশ্চয়ই রিমিকা আবার তার অন্যমনস্কতা ধরে ফেলেছে, তাই মা আসার অজুহাতে কলটা কেটে দিয়েছে!


আচ্ছা ছেলেমানুষ মেয়ে তো!


তবু রিমিকার এই ধরণের ছেলেমানুষি রমেনকে বেশি আকৃষ্ট করে।


রিমিকা রাগ করে গাল ফুলিয়ে থাকবে আর রমেন গাল টিপে আদর করে জড়িয়ে ধরবে... ভেবেই রমেনের ঠোঁটের কোণে একটা আদুরে হাসি ফুটে উঠলো। পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনটা আনলক করে আবার ডায়াল করলো রিমিকাকে।


... দ্য নম্বর ইউ হ্যাভ ডায়াল্ড ইজ কারেন্টলি সুইচড অফ! 


ধুস! কেন যে অন্যকিছু ভাবতে গেল রমেন! বেশ একটা ঘোরে ছিল, কথা বলতে বলতে দিব্যি এই ভূতুড়ে বাঁশবন পেরিয়ে যেত!


এখন তো আবার ফিরতি পথও নেওয়া যায়না। আকাশের যা অবস্থা! বাঁশবনটা পেরিয়ে গেলেই ঘোষ পাড়া, তারপরেই রমেনদের পুকুর। কোনোক্রমে একবার এই বাঁশবন পেরোতে পারলেই হলো।


রমেন কব্জি উল্টে হাতঘড়ি দেখলো, সন্ধ্যে ছটা বাজতে পাঁচ।


এদিক ওদিক শুনশান।


একটা লোক কেন, একটা বেড়ালও যদি রাস্তা কাটতো তবু মনে একটু বল আসতো।


রমেন মনে মনে যুক্তি সাজায়।


এইসব শোনা ঘটনাগুলো যখনকার, তখন জিও সিম আসেনি, ইন্টারনেটের এত রমরমাও শুরু হয়নি। মানুষ এন্টারটেইনমেন্ট চাইলে, এইসব আষাঢ়ে গল্প তো একেবারে একঘর জিনিস।


আজকের এই ফোর জির যুগে এই সব আত্মার এক্সিস্টেন্স আছে নাকি?


ফটোশপ আর মেকআপে এমন কত স্পিরিট বানানো যায়! ওয়েব সিরিজে হন্টিং থ্রিলার তো পুরো হট কেক।


লোকে পয়সা দিয়ে ভয় কেনে, আর সে কিনা ভয় পেতে ভয় পাচ্ছে!


কী সব যা তা ভাবছে রমেন!


রিমিকা শুনলে নির্ঘাৎ 'ভীতুরাম' বলে খেপাত তাকে।


লাউডস্পিকারে অরিজিৎ সিংয়ের গান চালিয়ে দেওয়া বরং বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভূত বাবাজিও ভয় দেখানো ছেড়ে গানে মজে যাবে!


গুটিগুটি পায়ে রমেনের বুকে সাহস ফিরে আসছে।


ফোনের স্ক্রিন সোয়াইপ করলো।


প্লে লিস্টে এখন," বোঝেনা সে বোঝেনা...!"


রমেনও শিষ দিয়ে সুর ধরলো।


শুকনো বাঁশের পাতার ওপর রমেনের হাঁটার মচমচ শব্দ। শুনশান রাস্তা। বেশ অন্ধকার, মোবাইলের টর্চে যতটুকু দেখা যায় রমেন দেখছে, অস্বাভাবিক কিচ্ছু কোত্থাও নেই।


কোনো বাঁশ মাটিতে শোয়ানো নেই। যত্তসব মানুষের মনগড়া আজগুবি গল্প!


ফুঁহ! বেকার বেকার এতগুলো দিন দ্বিগুণ দূরত্ব হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে! এবার থেকে এই রাস্তাটাই নেবে সে।


হঠাৎ একটা বুদ্ধি মাথায় এলো, ভিডিও করলে কেমন হয়? ক্যাপশন থাকবে...অন্ধকার বাঁশবনে অশরীরী এডভেঞ্চার!

বাহ! বাহ! বেড়ে বুদ্ধি!


কিন্তু তার জন্য তো আলো লাগবে! হ্যাঁ, কাল সঙ্গে করে একটা টর্চ নেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ ছাড়লে যা রিচ বাড়বে না! উফ! ভাবতেই নিজেকে কেমন সেলেব লাগছে।


এতক্ষণ খেয়াল করেনি রমেন, তার পায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও একটা পায়ের শব্দ, ওই শোনা যাচ্ছে। বাঁশের শুকনো পাতার ওপর মচমচ আওয়াজ। দাঁড়িয়ে পড়লো রমেন, সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেল সেই শব্দটিও। 


বুকের ভিতর একটা রিনরিনে ভয়। এপাশ ওপাশ তাকালো রমেন। কেউ কোত্থাও নেই। আবার সাহস আনলো। ওহ, একা অন্ধকারে এসব মনে হয়, ধুর!


কথাটা মনে আসতেই আরও একটা স্মৃতি মনের দরজায় ধাক্কা দিলো।

স্মৃতিরা এরকমই হয়, মোলাকাতের জন্য নিঃসঙ্গতাকেই বেছে নেয়।


সাথীর সাথে রমেনের দেখা হয়েছিল মেছেদা স্টেশনের প্লাটফর্মে। তখন এখনের মত প্লাটফর্ম টিকিট কাটতে হতো না। সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে অনেকক্ষণ প্রেম করেছিল সাথীর সাথে। খেয়াল করেনি, কখন দিশা দিদি তাকে দেখে ফেলেছে। বাড়িতে এসে মাকে জানিয়েও দিয়েছে।


রমেন সবে বাড়ি ঢুকেছে, মা ধরলো," কোথায় গিয়েছিলি?"


- কোথায় আবার? পড়তে!


- আজকাল স্যার বুঝি মেছেদা স্টেশনে পড়ান? দিশা তোকে দেখেছে, একটা মেয়ের সাথে নাকি ঘনিষ্ট হয়ে বসেছিলি?


রমেন জানে, বাবার কানে কথাটা গেলে পড়াশোনা সব বন্ধ করে দেবে। ঘেঁটি ধরে বসিয়ে দেবে চালের কলে।


পারিবারিক ব্যবসা, একেই তো নিজেকে এবাড়ির ছেলে বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করে। সবাই তখন আঙ্গুল তুলে খ্যাঁকখ্যাঁক হাসবে!


দৃশ্যটা ভাবতেই ব্রহ্মতালু তেতে গেল রমেনের।


মাকে বললো," এত অবিশ্বাস যখন, স্যারকে ফোন করে নাও!"


রমেশ জানে, ওই কাজটি মা করবে না। যতই হোক, একজন নিরক্ষর মহিলা কখনোই এক শিক্ষককে ফোন করে কথা বলতে সহজ বোধ করবে না!


মা চলে গিয়েছিল।


তখন ইচ্ছে করছিল দিশা দিদিকে পুরো অ্যাইসি কি ত‍্যাইসি করে দিতে।


মাসখানেক পরের ঘটনা, হঠাৎ একদিন রমেন শুনলো, দিশা হাসপাতালে ভর্তি, নাইনটি পার্সেন্ট বার্ন্ট। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নাকি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।


খবরটা শুনে বেশ প্রমোদ পেয়েছিল রমেন।


যেমন, তার পিছনে লাগা! ঠিক হয়েছে।


পরদিন মারা গিয়েছিল দিশা, রমেনের দিশা'দিদি।


আশ্চর্য! আজ এত বছর পর হঠাৎ ওই ঘটনা মনে পড়লো কেন?


আরও একটা মুখ স্পষ্ট হচ্ছে। খেয়ালী।


নাইনে পড়ার সময় খুব ভালো লাগতো মেয়েটাকে। একবার বলেও ফেলেছিল রমেন।


সারা ক্লাসের সামনে রমেনের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরেছিলো খেয়ালী।


অপমান সহ্য হয়নি রমেনের।


মনে মনে ঠিক করেছিলো, সুযোগ একটা নিশ্চয়ই আসবে, আর তার সদ্ব্যবহারও ঠিক হবে।


সেই সুযোগ আর আসেনি।


মাধ্যমিকের আগে আগেই একদিন খবর এলো, খেয়ালী গলায় দড়ি দিয়েছে।


উচ্চমাধ্যমিকের দীপনকে ভালোবাসতো সে। একদিন সব চিঠি খেয়ালীর মা পড়ে ফেলে, উদমা মেরেছিলো নাকি খেয়ালীকে। সেই রাতেই খেয়ালী...!


খেয়ালীর মুখটা যেন স্পষ্ট ভেসে উঠলো রমেনের চোখে।


আবার একটা মুখ মনে পড়ছে রমেনের।


খুব ছোটবেলায় বাড়ির সামনের মাঠে ক্রিকেট খেলছে কয়েকজন। কার্তিক কিছুতেই আউট হচ্ছে না, পরপর বলে বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছে।


রমেনের ইচ্ছে করছিল, কব্জিটা মোটকে দিতে কার্তিকের।


কার্তিক একটার পর একটা ছক্কা মারছে আর ফ্যাকফ্যাক হাসছে। পিত্তি চিড়বিড়িয়ে উঠছিলো রমেনের।


কার্তিক আজ আর বেঁচে নেই।


নিউমোনিয়ায় ভুগে মরে গেছে সে।


কার্তিকের মুখটাও স্পষ্ট উদ্ভাসে ভেসে উঠছে এখন।


কী আশ্চর্য্য! যে যে মৃত্যুগুলোয় রমেন একটু হলেও খুশি হয়েছিল, সেই সেই মুখগুলোই আজ এত বছর পর এখন স্পষ্ট হয়ে ফিরে আসছে কেন রমেনের চোখে?


প্লে লিস্টের মিউজিক ট্র্যাক হঠাৎ বদলে গেল।


অরিজিতের মিঠে গলা হঠাৎ স্বর বদলে মোটা।


একটা ভয়ের সুর, খুব চেনা, কথাগুলো যেন দূর থেকে রমেনের কাছে এগিয়ে আসছে... ।


বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো রমেনের।


কী করবে এখন সে? পিছু ফিরবার উপায় নেই, কারণ, এখন সে বাঁশবনের মাঝখানে। এগোলে ভয়, পেছলেও ভয়!


রমেনের মনে হলো, নিউমোনিয়া ফুসফুসের রোগ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় নাকি! শ্বাস নিতে কষ্ট হয়! ঠিক কেমন কষ্ট হয়?


রমেনের চোখ গেল, বাঁশবনের একপাশে একটা অগভীর জলাশয়। জলটা নিশ্চয়ই খুব ঠান্ডা! ঐখানে ডুবে গেলে দম বন্ধ হয়ে যাবে নিশ্চয়ই!


রমেন টের পেল, তার গলাটা কেমন যেন বুজে আসছে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, কেন এমন হচ্ছে? মনে হচ্ছে, তাকে জোর করে কেউ জলে ডুবিয়ে দিয়ে চেপে ধরেছে।


সে হাতপা ছুঁড়লেও মুক্তি নেই।


প্রাণরক্ষা করা অসম্ভব, তবু একটা শেষ চেষ্টা। দেহের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে রমেন উঠে দাঁড়ায়।


হ্যাঁ, এইতো, এইতো, সে মুক্ত। চারিদিক আবার স্বাভাবিক। তারমানে ওসব মনের ভুল, কোথাও কিচ্ছু নেই।


রমেন জোর করে মনের বল ফিরিয়ে আনে।


মিউজিক ট্র্যাকে এখন, "মহব্বত বর্ষা দে না তু...!"


রমেন ভয় ভুলতে গুনগুন করতে থাকে।


চোখ নিজে থেকেই আবার চলে যায় জলাশয়ে, ছোটছোট আগুন যেন হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে সেখানে। দিশা'দির মুখটা মনে পড়ে রমেনের।


গায়ে আগুন লাগলে জ্বালা করে? আচ্ছা, সেই জ্বালাটা কেমন? ওই আগুনে হাত রাখলে দিশা'দির যন্ত্রণা টের পাবে সে?


নিশি পাওয়া মানুষের মত সে আগুনের দিকে হাত বাড়াতেই আগুন নিভে যায়।


প্রচন্ড আতঙ্কে ছিটকে আসে রমেন।


কী ছিল ওটা?


হঠাৎ মগজ টোকা দিলো, আলেয়া!


পচা জলে মিথেন, ফসফিন ও ফসফরাস ডাইহাইড্রাইট থাকে, যার ফলে সৃষ্টি হয় আলেয়ার, আলেয়া!! মানুষ ভূত ভেবে ভুল করে।


 


মাথায় কষিয়ে একটা চাটি মারতে ইচ্ছে করছে নিজেরই।


নাহ! এভাবে চললে হার্টফেল করেই মরে যাবে রমেন। তারচেয়ে রিমিকাকে ফোনে ধরা যাক। হ্যাঁ! এতক্ষণে মাথায় আসেনি কথাটা?


রিমিকার মা এতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চয়ই মেয়ের কাছে বসে নেই!


রিমিকার নম্বর ডায়েল করে রমেন।


- হ্যালো! কিগো, ফ্রি হলে?


অপ্রান্তে চুপ।


- হ্যালো রিমিকা...!


একটা মিহি গলা ভেসে আসে ওপ্রান্ত থেকে। গলাটা চেনা। বহুবছর আগে রমেন শুনেছিল," হাও ডেয়ার ইউ? এরপর আমায় এসব বললে, এইচ এম কে বলে দেব!"


খেয়ালী!


খেয়ালীর কণ্ঠে কান্নাঝরা আকুতি," গলায় ফাঁস দিলে কেমন লাগে, রমেন তুই জানতে চাস না? সেদিন যদি তোকে ভালোবাসতাম তুইও ক আমার সাথে...? কিরে, রমেন? রমেন!"


চোখদুটো বুজে আসছে রমেনের। কী অদ্ভুত মাদকতা ওই কণ্ঠস্বরে!


রমেন বসে পড়ে, যেন সে জানে, এইখানে হাতড়ালে ঠিক একটা দড়ি পাবে সে।


পেলও। একটা নারকেল ছোবড়ার পাকানো দড়ি।


এবার গলায় পেঁচিয়ে ধরতে হবে।


রমেনের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল, এবং কিভাবে যেন, কলটা লাউডস্পিকারে চলে গেল। অপ্রান্তে সেই মিহি হিসহিসে কন্ঠ, "রমেন.. একবার ফাঁস দিয়ে দেখ! রমেন...!"


পিছনের বাঁশগাছের সাথে দড়ি বেঁধে ধীরেধীরে ফাঁস টানছে রমেন। তার চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। শুকনো আঠালো জিভ বেরিয়ে ঝুলে পড়েছে একদিকে।


ফোনের স্পিকারে খেয়ালীর রিনরিনে হাসি।


প্লে লিস্টের ট্র্যাকগুলো সাফল করা ছিল। সব গানের স্থায়ীগুলো বাজছে একে একে। সব গানের কণ্ঠগুলো মোটা স্বরের, হঠাৎ করে ভোল্টেজ কমে গেলে যেমন গানের তাল আর স্বর মোটা হয়ে যায়, ঠিক তেমন।


এবার খুব সম্ভব ট্র্যাকের শেষ গানটা বাজছে। পরিষ্কার বাজছে, ফুল ভোল্টেজে বাজছে... বলো হরি, হরি বোল!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror