Drishan Banerjee

Tragedy

3  

Drishan Banerjee

Tragedy

বালি-ঘড়ি(দ্বিতীয় পর্ব)

বালি-ঘড়ি(দ্বিতীয় পর্ব)

4 mins
8.1K


আজকাল কিছু খেতে পারে না শ্রী, গত তিন মাসে দশ কিলো ওজন কমেছে, চোখের নিচে কালি। অল্পেই হাঁফিয়ে ওঠে সে। এসব কি শুভায়ুর চোখে পড়ে না!! নাকি পুরোটাই শ্রী এর মনের ভুল।

বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টিটা শুরু হতেই শ্রী পা চালাল একটা শেডের দিকে। তাড়াহুড়োয় আজ ছাতাটা আনা হয় নি। মেয়েদের কাছে ছাতা আছে নিশ্চয়। আরও আধঘণ্টা পর ছুটি হবে।শ্রী জোরে পা চালাতে পারে না। ভিজে যায় পুরো।

আধঘণ্টা পর বৃষ্টি কমে যেতেই দুই মেয়ের ছুটি হল। আধ-ভেজা শ্রীকে দেখে দুজনেই অবাক। অটোয় করে বাড়ি ফিরতে বেশ শীত করছিল শ্রীর। রাতেই জ্বর এলো। দুই মেয়ে বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিল ছাতা না নিয়ে মা ইচ্ছা করে ভিজেছে। মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছিল শ্রী-র। ঘরে প্যারাসিটামল নেই। মোড়ের দোকানে পাওয়া যাবে। কিন্তু সাহস করে বলে উঠতে পারে নি শ্রী।

দু দিন পর জ্বরটা কমলেও শরীরটা বড্ড দুর্বল। তবুও মেয়েদের নাচের ক্লাসে নিয়ে গেছিল শ্রী। সামনের বাস স্ট্যান্ডটা এসি করে দিয়েছে। ওখানে বসেই ফোনটা বার করলো, জিয়াকে জেতাতেই হবে। তার মতো জীবন-যুদ্ধে হেরে যাবে না তার গল্পের নায়িকা। দামী ফোনটা তিনবছর আগে শুভায়ুই কিনে দিয়েছিল মেয়েদের সুবিধার জন্য। ওদের নোটস ,পড়া সব এতেই আসে। ফেসবুকটা অবশ্য মেখলা খুলে দিয়েছিল আরও আগেই কম্পিউটারে। সময় কাটাতে সাহিত্যের গ্ৰুপ গুলোয় প্রবেশ, আর তার হাত ধরেই বহু পুরানো লেখালেখির অভ্যাসটা আবার জেগে উঠেছিল। ভালোই সাড়া পাচ্ছিল। বেশ কিছু নতুন বন্ধুও তৈরি হয়েছিল । কিন্তু শুভায়ু এটা নিয়েও মেয়েদের সামনেই ব্যঙ্গ করতো।

কয়েকমাস আগে একটা সাহিত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে উচ্ছ্বসিত শ্রী সব ভুলে ছুটে এসেছিল শুভায়ুকে দেখাতে। কিন্তু নির্লিপ্ত শুভায়ুর উত্তর ছিল, এতে তার কি লাভ!! গল্প লিখে টাকা রোজগার হয় না, সময় নষ্ট ছাড়া এ আর কি? মেয়েরা বাংলা পড়ে না। গল্পের বই পড়ে না।

তবুও চুপচাপ চলছিল শ্রী এর সাহিত্য চর্চা। কয়েকমাসেই পাঠকের সংখ্যা লাখের ঘর ছাড়িয়েছিল। এতেই শ্রী আপ্লুত। শুভায়ুর সংসারে অর্থাভাব নেই কখনোই। কিন্তু এভাবে মেখলা, মৌলীর মা আর শুভায়ুর স্ত্রী হয়ে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল শ্রী। তার শ্রীলেখা নামটা আবার পরিচিতি খুঁজে পেয়েছিল এই ভার্চুয়াল জগতে। মনের আনন্দে লেখালেখি নিয়ে মেতে উঠেছিল শ্রী। কিন্তু বাবা ও মেয়েরা এটা মেনে নিতে পারে নি। পদে পদে ভুল ধরা শুরু করেছিল বিভিন্ন কাজে। ঘরের কাজ বরাবর শ্রী নিজেই করতো। মেয়েদের পড়ার প্রতিও খেয়াল থাকতো তার। এরপর যদি নিজের জন্য একটু সময় ব্যয় করতো তাতেও অশান্তি। রাতে বিছানায় ফোন নিয়ে শোয়া বারণ ছিল শুভায়ুর। তাই দুপুরেই একটু লিখত। কম্পিউটারে মেখলা আর মৌলীর কাজ থাকে বেশিরভাগ সময় ।। তাই মোবাইলেই লিখত। কিন্তু আজকাল শুভায়ুর দোষ ধরা বড্ড বেড়ে গেছিল। ফোন হাতে দেখলেই মেয়েদের সামনেই অপমানজনক কথা ছুঁড়ে দেয়। মেয়েরাও বেশ মজা পায়, টুকটাক কথাও শোনায়। শ্রীয়ের প্রতিবাদ করার স্বভাব কখনোই ছিল না। ও শুধু ভাবতো মেয়েরাও কেন এমন করে! তবে কি ও সত্যিই সংসারে সময় দিচ্ছে না? তাই কি মেয়েদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে? অথচ মেয়েদের সাথে বেশি মিশতে গেলেও তারা ওকে দূরেই সরিয়ে দিত। পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে গেলেই শুনতে হতো বাংলা মাধ্যমে পড়েছে বলে সে কিছুই জানে না। আজকালকার পড়া অন্য রকম। জামাকাপড় মেয়েরা বাবার সাথে গিয়েই কিনতো। তাতেও মা হিসাবে সে মন্তব্য করলে শুনতে হতো সে নাকি ব্যাকডেটেড্। মেয়ের বন্ধুরা এলে লুচি বা ডিমের অমলেট দিলেও মেয়েরা বিরক্ত, বলত কোল্ড ড্রিঙ্ক বা পিৎজা অর্ডার করতে। এভাবেই চলছিল।

".........জিয়া আজ একাই নেমে এসেছে বেলাভূমিতে, এখন ভাঁঁটা, সমুদ্র একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে, ঠিক যে ভাবে অনি দূরে সরে গেছে তার থেকে। এক বাড়িতে থেকেও অনিকে মনে হয় কত দূরের মানুষ। গত সাত মাসে বেডরুম ও আলাদা হয়েছে তাদের। অনি এ নিয়ে কোনও কথাই বলে নি। জিয়া ভেবেছিল আলাদা শুলে অনি হয়তো কাছে টানবে। কিন্তু অনি আরও দূরেই সরে গেছিল। ট্যুরের নামে মাসের মধ্যে কুড়ি পঁচিশ দিন বাইরেই থাকে অনি।....... "

-"মা, তোমার ফোনটা রেখে একটু ফল কেটে দেবে ?" মেখলা এসে দাঁড়ায়।

ফোনটা রেখে উঠে যায় শ্রী। ও ঘর থেকে মৌলী বলে -"আমি আজ পাস্তা খাবো বিকেলে। আমার ফল খেতে ইচ্ছা করছে না।"

পাস্তাটা সেদ্ধ বসিয়ে আপেল আর পেয়ারা কাটে শ্রী। রাতের জন্য চিকেন বার করে ডিপ-ফ্রিজ থেকে। ব্যাথাটা আজ বড্ড বেড়েছে। ওদের ক্যারাটে ক্লাসে দিয়ে উল্টোদিকের রাহা ফার্মাসিতে আজ যেতেই হবে। তবে শেষবার ডাক্তার রাহা বলেছিল আর হোমিওপ্যাথির উপর ভরসা না করে এবার একটা ভালো এ্যালোপ্যাথি ডাক্তার দেখাতে আর বায়োপসি করাতে। দুটো ম্যাগাজিন্ পূজার জন্য গল্প চেয়েছিল। সময় প্রায় শেষ, অথচ একটা লেখাও এগোচ্ছে না। দু দিন একটু সময় পেলেই লিখে ফেলতে পারতো শ্রী।মেয়েদের একটা ক্যারাটে টুর্নামেন্ট পড়েছে নেতাজি ইনডোরে। দু দিন ধরে চলবে। এই প্রথম শুভায়ু ওদের নিয়ে যাবে বলেছে। পুরো দুটো দিন হাতে পাবে শ্রী। খুব ভাল লাগছে। লেখা দুটো শেষ করেই ফেলবে এবার।

কিন্তু শনিবার সকালে ননদ ছেলেমেয়ে নিয়ে হাজির। দু দিন থাকবে। লেখালেখি আর হল না।(চলবে)

...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy