Maheshwar Maji

Tragedy

2  

Maheshwar Maji

Tragedy

অটোগ্রাফ

অটোগ্রাফ

3 mins
1.7K



মানুষের কোলাহল,হৈচৈ, আত্বীয়-স্বজনদের একটানা আব্দারপাতি অণুর কিচ্ছু ভাল লাগে না। তাই দিনকয়েক নিজের মত করে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য ভীড় থেকে নির্জনে ঠাঁই নিল।তার এক বান্ধবীই ঠিকানাটা দিয়েছিল।অযোধ্যা হিল্স।ছোটখাটো হোটেল।মাঝারী ব্যবস্থা।রুম সার্ভিস ভালো।ডাকলেই সাড়া পাওয়া যায়।তার বান্ধবী একদম মিথ্যে বলেনি।এখানে একা থাকাতে কোন অসুবিধা নেই।

দক্ষিনের জানলা খুললেই মৃদুমন্দ বাতাস ঢোকে।তা দিয়ে অন্তরের শূণ্যতা কিছুটা হলেও ভরাট হয়।অণু জানে, পুরোটা কখনোই ভরার নয়।দেব যে শূণ্যতা তার বুকের খাঁচায় রচনা করে গেছে,সে আর মরণকাল পর্যন্ত পূরণ হওয়ার নয়।

প্রকৃতি এখন যেন ষোল শৃঙ্গারবতী রমণী।শিমুলে,পলাশে রক্ত আবিরের ছড়াছড়ি!রাধাচূড়োগুলো হলুদ মেখেছে যেন।গাছে-গাছে নতুন পাতারা ন্যাড়া শাখাগুলোকে সবুজ চাদরে ঢাকছে।দূর থেকে ভেসে আসছে কোকিলের মিষ্টি সুর।

আগামীকাল দোল পূর্ণিমা।

আগের দোলের সময় দেব বাড়িতেই ছিল।দুজন মিলে রঙ মেখে সন্ধ্যেবেলায় মুভি দেখে হোটেলে গিয়েছিল ডিনার সারতে।অতীতের সেই স্মৃতিগুলো আজ আবার অণুর দুচোখে উষ্ণধারা বইয়ে দিল।

বর্ডারে যাওয়ার আগে দেব হাত নেড়ে বলে ছিল, "সি ইউ...টেক কেয়ার।"

প্রথম কথাটা রাখতে পারেনি দেব।দ্বিতীয় শব্দটা অণু প্রতিপল শুনতে পায় ।এখনো পাচ্ছে।তাই নিজের দুকান ঢেকে বলে উঠল,

"পারছি না...আমি পারছি না দেব।তুমি আবার আমার জীবনে ফিরে এসো।"


মোট পাঁচটা বুলেট দেবের বুকে গেঁথে ছিল।জ্যাকেটটা তার একটু আগে পাশেই খুলে রেখেছিল।পঞ্চাশ ডিগ্রী তাপে বুকটা জ্বালা করছিল বলে।হামলাটা তখনি হল,একদম সামনে থেকে।দেবের কিছু বোঝার আগেই সব শেষ!

পাঁচ বছর ধরে দেব আর অণুর মধ্যে প্রেম চলেছিল।বিয়ের আগে দেব বারবার অণুকে মানা করেছিল। বলেছিল অন্য কোন ছেলেকে বিয়ে করার জন্য ।অণু শোনেনি।শুনতে চায়নি।দু'কান বন্ধ করে রাখত।

  আজ আর জানলা খুলে অণুর বসে থাকতে ভাল লাগল না। দুদিন পেরিয়ে গেল।অযোধ্যা পাহাড়ের কিছুই দেখা হয়নি।তাই দুজন যাত্রীর সাথে গাইড সহযোগে বেরিয়ে পড়ল।

সারাদিন অনেক ঘুরল।সামনের একটা আদিবাসি গাঁয়ে গেছিল তাদের আঞ্চলিক পরব দেখতে।ফেরার সময় তার একজন সহযাত্রী হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলেন,

---আপনিই কী সেবার ড্যান্স বাংলায় উইনার ছিলেন?

প্রশ্নটা শোনামাত্রই অণু সহযাত্রীর দিকে চকিতে চাইল।মাত্র কয়েক সেকেন্ড।তারপরই চোখজোড়া উল্টোদিকে করে বলে উঠল,

---হ্যাঁ ।

---কখন থেকে ভাবছি জিজ্ঞাসা করি! আপনার চোখ,মুখের অবস্থা দেখে সাহস হচ্ছিল না। তা এখনো কী করেন?

---না।

---ইস! আমি তো আপনার সবকটা পারমেন্স হাঁ করে গিলতাম।আপনার নাচে যে ছন্দ ছিল, তা এক কথায় অনবদ্য।তা ছাড়লেন কেন?আপনার কেরিয়ার ছিল।নিশ্চিত এগিয়ে যেতেন!

অণুর ভাল লাগছিল না। তাই কোন উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেল।

কামরায় বসে অনেকক্ষণ সেই নাচের দিনের স্মৃতিগুলো মেলে বসল।দেব তাকে অডিয়েন্সের চেয়ার থেকে সবসময় সাহস জোগাত।আবার এক চোট কান্নায় ভেজালো গাল।তারপর জানলা খুলে বসল।

 পরদিন অণু ভদ্রলোকের খোঁজ শুরু করল,ক্ষমা চাইতে! অন্তত সরিটুকু বলা তার একান্ত দরকার।যতই হোক তিনি অণুর একজন ফ্যান।তাকে ওভাবে উত্তর না দিয়ে চলে আসাটা তার অন্যায় হয়েছে।

তখনি ম্যানেজারের কাছে জানতে পারল,ভদ্রলোক কিছুক্ষণ আগে চেক আউট করেছেন।কথা প্রসঙ্গে ম্যানেজারই বললেন,ভদ্রলোক একজন অধ্যাপক।বছর তিনেক আগে তার প্রেমিকা ক্যান্সারে মারা গেছেন।তারা প্রতিবছর একসাথে এখানে ঘুরতে আসতেন।আজও সেই নিয়মটা বাঁচিয়ে রেখেছেন।একা,একাই ঘুরে বেড়ান,তার মৃতা প্রেমিকার স্মৃতি বুকে আগলে।

 শুনে অণুর খুব কাঁদতে ইচ্ছে হল।আনমনে হেঁটে চলল ড্যাম্পের রাস্তায়।তারপর এক জায়গায় বসে পড়ল।গভীর জলরাশির দিকে নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইল।

কতক্ষণ মনে নেই!

হুস ফিরল একজনের গলার আওয়াজ পেয়ে!

----আপনিও দেখছি ঢেউ দেখতে ভালবাসেন?

অণু চমকে উঠল।সামনে সেই ভদ্রলোক।

---একি!আপনি?ম্যানেজার বললেন,আপনি বেরিয়ে গেছেন।

---সে তো তার ছত্রছায়া থেকে।তার বাইরে বিশাল প্রকৃতির মালিক তো তিনি নন।

অণু তার উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে বলে উঠল,

----আমি সত্যিই দুঃখিত। গতকালের দুর্ব্যবহারের জন্য !

---একি মুশকিল! অত ছোট ব্যাপারে এভাবে হাতজোড় করলে হয়?

তারপর অণু একগাল হেসে ভদ্রলোকের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

---আসুন।একটু বসে গল্প করা যাক।

---ইস!আমার কী সৌভাগ্য।একটা অটোগ্রাফ কিন্তু চাই।


     ------সমাপ্ত-----


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy