অতীতের সাথে দেখা
অতীতের সাথে দেখা


সেদিন নিজের চেম্বার থেকে বের হতে একটু দেরিই হয়েছিল ঐন্দ্রিলার, মানে স্বনামধন্য শিশুবিশেষজ্ঞ ঐন্দ্রিলা চ্যাটার্জীর। অবশ্য শনিবার গুলিতে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই ভিড় হয়। তারপর আবার এই পার্বত্য এলাকার হঠাৎ বৃষ্টি। যাহোক অতিকষ্টে বাড়ী ফিরে বসার ঘরের সোফাটাতে নিজের ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে এক কাপ ধূমায়িত চায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল ঠিক এই সময় অনাহূত অতিথির মত বেজে উঠল তার ফোন। নিজের প্রফেশন হিসাবে এটা তার কাছে কিছু নতুন নয়, তাই সে ফোনের অপর দিক থেকে আসা মানুষটির অনুরোধে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল একটি অনাথ আশ্রমের ঠিকানায় গিয়ে রুগী দেখার জন্য।
কিন্তু সেখানে পৌঁছে বাচ্চা ছেলেটিকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। সাত্যকীর চেহারার সাথে ছেলেটির কি অভাবনীয় মিল, মিল অবশ্য অনেক স্বভাবেও। মনে পড়ে গেল সাত্যকী ও তার সম্পর্কের ফলে সে কুমারী বয়সে অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তার বাবা, মা তাদের সম্পর্কের মত তাদের সন্তানটিকেও অবৈধ আখ্যায় ভূষিত করেছিল। যদিও সেই সন্তানটিকে জন্ম না দেওয়ার জন্য তাকে রাজী করতে পারেনি। সন্তানটির জন্মের তিনদিন পর যখন তার জ্ঞান ফিরেছিল তখন সে শুনেছিল তার একটি মৃত ছেলে হয়েছে।
তারপর দীর্ঘ ছ‘টি বছর কেটে গেছে। আজ আর তার বাবা, মা কেউই বেঁচে নেই আর সাত্যকী কে তো তার জীবন থেকে তার বাবা, মা অনেক আগেই সরিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ এইসব ভাবতে ভাবতে তার দু‘চোখ দিয়ে নেমে এল জলের ধারা। কেন যেন তার মনে হল হয়ত সেদিন সে মৃত সন্তানের জন্ম দেয়নি, হয়ত এই ছেলেটিই তার গর্ভজাত সন্তান। অনেকদিন পর কেন জানিনা তার নিজেকে আজ হাল্কা মনে হল। ক্ষণিকের মধ্যেই সে সিদ্ধান্ত নিল ছেলেটিকে দত্তক নেবে। এই ভাবতে ভাবতে অনেক রাতে বাড়ী ফিরল। সেদিন রাতে তার ছ‘বছরের অভ্যাস বদলে বিনা ঘুমের ওষুধে নিঃশ্চিন্তে ঘুমালো ঐন্দ্রিলা
।।