নন্দা মুখার্জী

Classics

3  

নন্দা মুখার্জী

Classics

অপবাদ

অপবাদ

2 mins
879


  শীতকালের সকাল।কুয়াশায় চারিপাশ ঢাকা।এতোটাই কুয়াশা যে সামনের মানুষ টাকেও ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। অনিলবাবু চললেন ব্যাগ হাতে বাজার কোরতে।সংসার বলে কথা !এই কুয়াশার মধ্যে ও তাঁকে বেড়োতে হোলো।হঠাৎ পাড়ার একটি ছেলে তাঁকে ডেকে বললো ,"মেশোমশাই ,খবরটা শুনেছেন "?অনিলবাবু জানতে চাইলেন ,"কি খবর "? "নীরাদি কাল সুইসাইড করেছে।" অনিলবাবু হতভম্বের মত বললেন ," নীরা "?অনিলবাবু আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই আনমনাভাবেই বাজারের উদেশ্যে রওনা দিলেন।বাড়িতে এসে স্ত্রী কে সব বললেন।ভাবতে লাগলেন ,নীরা তো খুব ভালো মেয়ে।বয়স ও এখন অনেক। বিয়ে- থা করেনি।সমাজ সেবা করেই তার দিন চলে।বাড়িতে কোনো অভাব নেই।কিছু বাচ্চাকে বিনা পয়সায় পড়ায় ; ঠিক স্কুল এর মত নিয়ম করে।যে যখন বিপদে পড়ে তার বিপদেই সে ছুটে যায়। কি এমন হলো ? হাসি ,খুশি ,প্রানবন্ত মেয়েটার ; যার জন্য তাকে জীবনের এই চরম পথ বেছে নিতে হলো ? সন্ধ্যার দিকে অনিলবাবুর স্ত্রী পাড়ার থেকে শুনে এসে তাঁকে আসল ঘটনাটা জানালেন।


কয়েকদিন ধরেই একটি অল্প বয়সী ছেলে তাকে নানান ভাবে উত্যক্ত করছিল।সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাওয়াতে একদিন রাস্তার মাঝ খানে দাঁড়িয়ে তাকে একটা চড় ও মেরেছিলো।তাতে ছেলেটা আরও বেশী করে ক্ষেপে যায়।দলবল নিয়ে একদিন বাড়িতেও চড়াও হয়। অকথ্য - কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ।নীরা তার শিক্ষা এবং রুচির অবমাননা করে না। সে প্রতিবাদ করে ঠিক ই কিন্তু কু- কথায় নয়।তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করে।পরে না পেরে পুলিশ ডেকে তাদেরকে ধরিয়েও দেয়।


  কিন্তু নেতা - নেত্রীর ছত্র ছায়ায় থাকার ফলে রাতেই তারা ছাড়া পেয়ে যায়। এ অপমান ,এ লজ্জা সে কিছুতেই মানতে পারে না।ভিতরে ভিতরে ক্ষয় হয়ে যেতে থাকে।সারাজীবন মানুষের জন্য সে করেই এসছে ।বিনিময়ে সম্মান টুকু ছাড়া কারও কাছে তার কিছু প্রত্যাশা ছিলো না ।ঘর বন্ধী অবস্থায় দিন কাটাতে কাটাতে হঠাৎ ই তার এই চরম সিদ্ধান্ত।অনিলবাবু সব শুনে শুধু বললেন ," যে মেয়েটা সারা জীবন শুধু অন্যের কথা ভেবে গেলো ,অন্যের সমস্যার সমাধান কোরে গেলো - আর আমরা তার এই বিপদের দিনে কিছুই কোরতে পারলাম না।বড্ড অভিমান নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা।ছি !!আমরা কি মানুষ!নিজেদের আমরা মানুষ বলে জাহির করি !নিজের প্রতি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা কোরছে !এদেশে এখন আর কোন প্রতিবাদ,আন্দোলন হয়না।যদি তা কেউ করে নিজের জীবনকে বাজি রেখেই করতে হবে।অন্যায় দেখেও তাই আমরা আন্দোলনের পথে যেতে সাহস পাই না -মুখ বুজে নিজেকে অন্ধ করে রাখি।'


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics