Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Riya Bhattacharya

Horror

2  

Riya Bhattacharya

Horror

অপাংক্তেয়

অপাংক্তেয়

4 mins
313



ঝড় উঠেছে বেশ কিছুক্ষণ, বাতাসের শনশন শব্দ যেন ছুরি চালাচ্ছে গায়ে। স্টেশন থেকে বাড়ির পথ বেশ কিছুটা, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটছে রুকু। 


রাত এমন বেশিনা, সবে আটটা বাজে। এইসময় রাস্তায় হাজার লোকের ভীড় চোখে পড়ে, কিন্তু আজ..... সব নিঃস্তব্ধ, শুনশান। দোকানপাটের শাটার বন্ধ, বোধহয় ঝড়ের কারণে তাড়াতাড়ি বন্ধ করে ফেলেছে দোকানিরা। দেখা যাচ্ছেনা পাড়ার কুকুরগুলোকেও। 


আকাশে মেঘ ঘন কালো, যে-কোনো মুহূর্তেই ঝমঝমিয়ে নামিয়ে বৃষ্টি। রুকুর পিঠে একটা কিটব্যাগ ছাড়া কিছুই নেই, এই বাঁচোয়া! তবে বৃষ্টি নামলে ভেতরে থাকা দামী ল্যাপটপ ভিজবে, তাহলেই চিত্তির! 


বেশ কিছুক্ষণ ধরে একটা অদ্ভুত গন্ধ এসে লাগছে নাকে। ঠিক যেমন মাংসপোড়া ভ্যাপসা গন্ধের সঙ্গে ওষুধের মিশ্রণ। এতক্ষণ আমল না দিলেও বাড়ির কাছাকাছি আসতেই প্রবলভাবে গন্ধটা ধাক্কা দিল তাকে, সেইসঙ্গে নূপুরের ছমছম শব্দ সচকিত করে তুলল। এই ঝোড়ো হাওয়ার ভেতর কে আসে পেছনে! 


ঘাড় ঘোরাতেই রুকু দেখতে পেলো ইন্দিরাকে। আধভেজা কাপড়টা গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে তড়িঘড়ি হেঁটে আসছে তারই দিকে। প্রায় তিনবছর পরে দেখা, ইন্দিরার বিয়ের পর আর দেখা হয়নি তাদের। রুকুও চাকরিসূত্রে ভীনরাজ্যে পাড়ি দেয়। রুকুর খুব কাছাকাছি এসে থেমে গেল ইন্দিরা, মাথার ঘোমটাটা আরেকটু টেনে নিয়ে জড়ানো গলায় বললো, 


---" কেমন আছিস রু! এতদিনে মনে পড়ল আমার কথা!" গলাটা জড়ানো হলেও কথার মাঝের যন্ত্রণাটুকু যেন হালকা শীতল স্পর্শ করে গেল রুকুকে, সেইসঙ্গে গন্ধর তীব্রতা পেট ঠেলে বের করে নিয়ে আসতে চাইলো বমি। অতিকষ্টে নাক কুঁচকে রুকু বললো,


---" কিসের গন্ধ তোর গায়ে রে! বমি আসছে আমার! আমি তো ঠিকই আছি, তোর খবর কি! বিয়ের পর তো বাড়িই আসিসনা, বরকে পেয়ে সব্বাইকে ভুলে গেলি নাকি!" 


উত্তরে হালকা হাসির শব্দ ভেসে এলো ঘোমটার আড়াল থেকে। রুকু শুনতে পেলো ভাঙা গলায় বলছে ইন্দিরা,


---" ভালোবাসা পেলেই সবাই ভুলে যায় রে। কই আমি তো তা পাইনি! তাই ভুলে যাবো কিকরে! আসলে তোর ওপর অবিচার করে ফেলেছিলাম বড্ড, তাই হয়ত কোথাও শান্তি পাইনি....! আমায় একটু শান্তি দিবি রুকু! বড্ড কষ্ট হচ্ছে রে!" 


নিমেষে গম্ভীর হয়ে গেল রুকু। তার ও ইন্দিরার সম্পর্কটা পাড়ার কারোরই অজানা ছিল না৷ বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে সমর্পণ করবেন না বলেই সরকারি চাকুরীরত পাত্রের হাতে তড়িঘড়ি মেয়েকে তুলে দিয়েছিলেন মেয়ের বাবা, ইন্দিরাও আপত্তি করেনি বিশেষ। তার বিয়ের পরেই ব্যাঙ্গালোরে চাকরি পেয়ে যায় রুকু, আর তাকায়নি পেছন ফিরে৷ ধীরে ধীরে স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে গেছে ইন্দিরা ও তার দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতিগুলি। 


---" দেখ, যা হয়ে গেছে তা নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাইনা। তোর কাছে আমার ভালোবাসার চেয়ে বিয়ে আর বেটার লাইফস্টাইল প্রিয় ছিল, তুই তাইই বেছেছিলি। এতে তোর কোনো দোষ নেই। দোষ আমারো ছিল না, তাই তোর চলে যাওয়ায় ভেঙে না পড়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি নিজেকে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। আগামী মাসে আমার বিয়ে, পাত্রী খুব ভালো। দয়া করে আর এসবে বাগড়া দিসনা, স্বামী - সংসার নিয়ে খুব ভালো থাক। " হাত নেড়ে কথাগুলি বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় রুকু। 


--" একটু দাঁড়া। জানি অনেক অভিযোগ জমা আছে তোর মনে। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি বাধ্য হয়েছিলাম বিয়েতে। আমায় ভুল বুঝিসনা রু, আমি যে মরেও শান্তি পাবোনা!" যন্ত্রণাকাতর কথাগুলো ভেসে এলো ঘোমটার আড়াল থেকে।


--" আমি তোকে ঘেন্না করিনা ইন্দিরা, কিন্তু তোকে ভালোও বাসিনা। প্লিজ এসব নিয়ে আর কথা বাড়াস না। পারলে ঘরে গিয়ে স্নান কর, বড্ড বাজে গন্ধ তোর গায়ে। তাছাড়া ঝড় হচ্ছে, বৃষ্টি এখনো পড়েনি, ভিজলি কিকরে তুই! যা বাড়ি যা!" 


বলেই হনহন করে বাড়ির দিকে হাঁটা লাগায় রুকু, এক অদ্ভুত ভয় ঘিরে ধরে বারবার অবশ করে ফেলতে চায় তাকে। শুধুমাত্র মনের জোরে বাড়ির গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সে। তার বাড়িতে জাগ্রত রাধামাধবের নিত্যপুজো হয়, তাই ঘরে পা রাখতেই বড্ড হালকাবোধ হয় তার, জোরে চেঁচিয়ে ডাক দেয় সে, " মা আ আ আ আ আ!" 


ওদিকে বাড়ির দরজার বাইরে বাতাস যেন হাহাকার করে, রাস্তায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকা ইন্দিরার মাথা থেকে খসে পড়ে ভিজে আঁচল...... শাড়িটা উড়তে থাকে বাতাসে পতপত করে। কাপড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া দৈহিক কাঠামো..... অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে দুই চোখ...... ধীরে ধীরে গুঁড়োমৃত হতে হতে মিলিয়ে যায় বাতাসে...... ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, সোঁদা মাটির মনোরম গন্ধে চাপা পড়ে যায় বিভৎস গন্ধখানা।  


     ছেলের কথা মনযোগ দিয়ে শুনে কপালে দুহাত ঠেকিয়ে রাধামাধবের উদ্দেশ্যে নমস্কার করলেন মনোরমা। এদিকে চিন্তিতমুখে পায়চারি করছেন পিতা বিকাশবাবু। 


---" দেখ বাবা, তুই ভয় পাবি - কষ্ট পাবি বলে আমরা কেউই তোকে ফোনে কিছু জানাইনি। শুধু তোকে বলেছিলাম এসে নিয়ে যা আমাদের। ইন্দিরার আত্মা কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছেনা রে! বিয়ের দুবছরের মাথায় স্বামীটা জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিলো, হাসপাতালে তিনদিন থেকে বড্ড কষ্ট পেয়ে মারা যায় মেয়েটা! ওর পরিবারের লোকজন বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছেন, আমরাই এখনো রয়ে গেছি এখানে। কিন্তু ও আমাদেরও টিকতে দিচ্ছেনা৷ তাই তোর বিয়ের আগেই চলে যেতে চাইছিলাম রে, এখানে থাকতে আর ভালো লাগছেনা। " মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কথাকয়টি বললেন মনোরমা। 


বিকাশবাবু হাত রাখলেন স্ত্রীর পিঠে,

--" আমরা ভেবেছিলাম তুই দিনেদিনে আসবি, কিন্তু রাতে আসছিস শুনে চিন্তা হচ্ছিলো খুবই। যেটা ভেবেছিলাম সেটাই হলো, ও ঠিকই দেখা দিলো তোকে। কাল সকালেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আমরা, রাধামাধবকেও নিয়ে যাবো। উনি থাকতে আমাদের কিচ্ছু ক্ষতি হতে দেবেন না৷ মেয়েটা তোকে চায় রে, ভাগ্যিস কড়া কথা বলে এগিয়ে এসেছিলি! নয়ত তোকে কেউ বাঁচাতে পারতো না! " 


ঠকঠক করে কাঁপছে রুকু। বেঁচে যাওয়ার আনন্দে খুশি হচ্ছে ঠিকই, তবে একটা অদ্ভুত কষ্ট মনে ছেয়ে আছে প্রাক্তন প্রেমিকার জন্য। চেনা স্মৃতিগুলো হাতড়ে বহুদিন পরে চোখ বেয়ে জল নামে তার। বিড়বিড় করে বলে, " বৃষ্টির জলে তুই শান্ত হ ইন্দিরা.....তোর হাসিমুখটা আমি আজীবন মনে রাখবো। প্লিজ এভাবে দেখা দিসনা আর.....আমি সহ্য করতে পারব না! " 


বাইরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে, ঘরের ভেতর কাঁপছে মোমবাতির শিখা.....এক অশরীরী প্রেমিকা হঠাৎই অপাংক্তেয় হয়ে গেছে তার প্রেমিকের কাছে..... জীবিতের কাছে মৃত আর কবেই বা কদর পায়।। 


(


Rate this content
Log in

More bengali story from Riya Bhattacharya

Similar bengali story from Horror