জোকার
জোকার
আজকাল কি যে হয়ে যাচ্ছে বুঝছি না! আমি কি নিজেকে হারিয়ে ফেলছি! কিন্তু কেন! আমার তো এভাবে ভেঙে পড়ার কথা নয়! আমি একজন সুস্থ - রুচিশীল - পেশাদার মানুষ, সমাজে আমার একটা নাম আছে। সেই আমিই যখন আস্ত একটা শয়তান হয়ে উঠি, নিজেকেই যেন চিনতে পারি না৷ আমি কে!
কবে থেকে হচ্ছে এমন!
ঠিক জানিনা৷ ওই যেদিন বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে রাত কাটিয়েছিলাম খ্রিষ্টান কবরস্থানটায়... তবে থেকেই হয়তো! কিন্তু, সেরাতে আমি তো ভয় পাইনি! কি সুন্দর বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম বুড়োটার কবরে। কি যেন নাম ছিলো বুড়োটার! ও হ্যাঁ, ডেভিড রিজম্যান। অদ্ভুত নাম। কবরটা বড্ড পুরানো, কেমন যেন একাসেড়ে। কবরস্থানটার একদম পশ্চিম দিকে একলা শুয়ে আছে বুড়ো, আশেপাশে কেউ নেই। আমার অবশ্য তাতে কিছুই আসে যায় না। কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট... এরজন্য সবকিছু করতে পারি আমি।
উফফ, শরীরটা আবার ভারী হয়ে আসছে! বুড়োটা আবার চলে এলো নাকি! আর কিছুক্ষণ পরেই আমার শো শুরু হবে, এখুনি কি বিরক্ত না করলেই নয়!
ঝিমুনি লাগছে আমার, ভারী হয়ে আসছে চোখের পাতা। জোকারের কস্টিউমটা পড়ে আছে, পরতে ইচ্ছে করছে না৷ আজ ন্যাচারাল লুকে ধরা দেব মানুষের সামনে, যেমন আমি ঠিক তেমন। আচ্ছা আমি কি সেই আমি! নাকি সেই বুড়োটা! কিজানি!
* * *
লোকজনের হাততালিতে সরগরম সার্কাসের ময়দান। দর্শকাসনে উত্তেজনা তুঙ্গে। সার্কাসের সেরা জোকার ভোলানাথ দাসের শো। তার উপস্থিতি মানেই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায় মানুষ। তাই তার জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। বাচ্চারা খুব পছন্দ করে তাকে।
ঘন্টার শব্দ। কিন্তু একি! এটা কে! লম্বা সাদা দাড়ি, জটিল কুদৃষ্টি, হাতে ছুরি... ভোলানাথের এ কেমন পোশাক আজ!
শিশুরা ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে আছে বাবা - মায়ের সঙ্গে, স্টেজে পিনপতনের নীরবতা। একলা স্টেজে হাতের ছুরি নাচিয়ে রক্তজল করা হাসি হাসছে দাড়িওয়ালা ভোলানাথ। জোকার নাকি মূর্তিমান শয়তান, কেজানে!
ভোলানাথের সহকারী হাবুল হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। ওস্তাদের কাজকর্ম কিচ্ছু বুঝছে না সে৷ ধীরে ধীরে হাতের ছুরি নাচাতে নাচাতে তার দিকে এগোয় ভোলানাথ। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আলিঙ্গন করে।
কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঁক শব্দ করে স্টেজে লুটিয়ে পড়ে হাবুল। একের পর এক ছুরির কোপ আছড়ে পড়ে তার বামন শরীরে৷ রক্তলাল ছুরি... সারামুখে রক্তের আলপনা... সাদা দাড়িতে আটকে রক্তলাল তুষারকণা... গোটা সার্কাসকে কাঁপিয়ে ভোলানাথ হাসতে থাকে, হাসতেই থাকে।
* * *
বুড়োটা শেষ করে দিলো আমায়। পুলিশ আমায় ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নিরাপদ দূরত্ব থেকে আমায় ভয়ধরা চোখে দেখছে মানুষ। যারা একদিন আমার শো দেখে হাততালি দিতো, হেসে লুটিয়ে পড়তো... তারাই কেমন ঘৃণার চোখে দেখছে আমায়।
হাবুলটার লাশ সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, রক্তে ভিজে গেছে সেটা৷ আমার কতদিনের সঙ্গী... আমিই কিনা তাকে... ছিঃ!
ওই তো বুড়োটা! ভীড়ের মধ্য থেকে শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার দিকে। চোখে খেলা করছে শীতল পৈশাচিকতা, ঠোঁটে শয়তানের হাসি। ইসস, ছুরিটা যদি আর একবার হাতে পেতাম! কিন্তু প্রেতাত্মাকে কিকরে মারে জানা নেই আমার৷ আচ্ছা, আত্মাদেরও কি মারা যায়! ওরাও মরে!!
(সমাপ্ত)