STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Comedy Classics Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Comedy Classics Others

অদ্ভুত সকাল

অদ্ভুত সকাল

6 mins
254


সকালের সৌন্দর্য আর উপভোগ করা হয়না ঘোষবাবুর কোনদিনও, সকাল সকাল উঠেই দুটো যেমন তেমন করে গলদ্ধকরন করে ভীড়ের মধ‍্যে ট্রাম... অথবা বাসে উঠে নটা বাজার আগেই অফিসে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়! লেট হলেই ফাইন। তাই ঐ... সপ্তাহের একটাদিন রবিবার ঘোষবাবু সারা সপ্তাহের ক্লান্তি মুছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু! আজ সকালটা ঘোষবাবুর অন‍্য দিনের সকাল বেলার মতই হয়ে গেল। কারন ঘোষ গিন্নি আজ সকাল থেকেই কেমন একটা ঝড়ের মুডে রয়েছেন! তাই.... সকাল সকাল ঘোষবাবুকে একপ্রকার জোড় করেই বিছানা ছাড়তে বাধ‍্য করেছেন!


সকাল সকাল এখন কি.... এমন রাজকার্য আছে শুনি! যে..... এমন হুলুশস্থুলুশ লেগে গেছে বাড়িতে! কোথায় ভাবলাম ঘুম থেকে উঠে বেড.. টি.... খেতে খেতে সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করব! কিন্তু তার উপায় নেই! উঠেছি কোন সকালে বেড....টি..... কেন এখনও কোন কিছুই হাতে পেলাম না! ঘোষবাবু এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে চেলেছেন আর বারান্দায় পায়চারি করে চলেছেন।


ঘোষগিন্নি হন্তদন্ত হয়ে ঘোষবাবুর সামনে এসে দাঁড়িয়ে, বাজারের ব‍্যাগটা ঘোষবাবুর হাতে দিয়ে বললেন, যাও.... বাজারটা করে নিয়ে আসো..... তারপর চা.... জল খাবার সব পাবে!


ঘোষ বাবু মুখটা বেজার করে বলে উঠলেন কিইইইইইইই....?


ঘোষ গিন্নি বললেন হ‍্যাঁ.....। আর কথা না..... বাড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে পা... বাড়ালেন।


ঘোষবাবু বুঝতে পাড়লেন সকাল থেকেই হাওয়া গরম কিন্তু কি..... কারনে এত গরম! সেটা বুঝে উঠতে পাড়লেন না, তবে সকাল থেকে বাড়ির ল‍্যান্ড ফোনে একের পর এক ফোন এসেই চলেছে! আর যতবার কথা বলে ফোন রাখছে গিন্নি, ততবার রাগি মুখে একবার করে ঘোষবাবুর দিকে তাকাচ্ছেন! কিন্তু ঘোষবাবু ঠিক করে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না! তবে বেলাও হয়ে এসেছে অনেকটা তাই.... আর কথা না বাড়িয়ে বাজারে বেড়িয়ে পড়লেন।


বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে বসে একটা চা দিতে বললেন। ওমনি সামনে বসে থাকা হারাধন কাকা ঘোষবাবুকে দেখে কেমন একটু যেন রহস‍্যের হাসি দিলেন!


ঘোষবাবু অত গুরুত্ব না..... দিয়ে আয়েস করে মাটির ভাড়ে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।


ঘোষবাবু লক্ষ‍্য করলেন, হারধন কাকা চায়ের দোকানদার এবং ওনার পাশে বসে থাকা সুনীল কাকাকে কানে কানে কি.... যেন বললেন? এবং সাথে সাথে ওনারাও ঘোষবাবুর দিকে তাকিয়ে রহস‍্যের হাসি হাসলেন!


ঘোষ বাবুর এইবার ব‍্যাপারটা একটু খটকা লাগল, তাই ভালো করে নিজের দিকে চেয়ে দেখলেন পোষাক আশাক সব ঠিক ঠাক আছে কিনা! না.... সবকিছু তো... ঠিকই আছে! তাহলে ব‍্যাপারখানা কি? ঘোষবাবু চায়ে চুমুক দিতে দিতে ওনাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। 


তবুও ওনারা মুখ ফুটে কিছু বললেন না...... প্রত‍্যুত্তরে একটু খানি বেশি হসলেন এই যা!


ঘোষবাবু মনে মনে ঠিক করলেন তাড়াতাড়ি চা.... টা শেষ করে বাজারের দিকে যাই!!! দেরী হয়ে গেলে বাড়িতে আবার তুফান বয়ে যাবে, এমনিতেই গিন্নি চটে আছে সকাল থেকে। ঘোষবাবু চায়ের ভাড়ে শেষ চমুক দিয়ে ভাড়টা ফেলে টাকাটা মিটিয়ে যেই..... দোকান থেকে বেরোতে যাবেন ঠিক তখনি হঠাৎ করে ঘাড়ের ওপর একটা চাপট অনুভব করে ঘুরে তাকালেন!পিছন ফিরে দেখলেন সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওনার বন্ধু বিশু। বয়স বাড়লে কি..... হবে বিশুর ফোছকোমো এখনও কমেনি! সেই একই জায়গায় রয়ে গেছে। ঘোষবাবু যতটা সম্ভব বিশুকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন, কারন বিশুর কথাবার্তা ঘোষবাবুর খুব একটা হজম হয় না..একই পাড়ায় বাড়ি, ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে তাই পুরোপুরি কথা বলা বন্ধ করতে পারেননা... তবে দুরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেন।


বিশু এক মুখ হাসি নিয়ে বলল বাবা, তুই তো.... হ‍্যেবি চালাক! তলায় তলায় এত দূর! পড়ার সবাই বলে সুফল সবদিক থেকে সেরা, সেই সুফলের কিনা এত উন্নতি! আমি তো.... খারাপ কারন সব কাজ প্রকাশ‍্যে করি, লুকোচুরির কোন কেস নেই.....! তা.... বাবা তুমি তলায় তলায় যখন এত এগিয়ে তখন ওপরে সাধু সাজো কেন?


ঘোষবাবু ব‍্যাপারটা কিছুই বুঝে উঠতে পাড়লেননা, তাই অবাক হয়ে বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন শুভোর দিকে!


পাশ থেকে সুনীল কাকা বলে উঠলেন তা.... যা.... বলেছ শুভ বাবা, এই বয়সে এসে এখন সব কিছু বার হচ্ছে ঝোলা থেকে!!! আমরা তো.... সবাই ভাবতাম সুফলের মত ভালো মানুষ হয় না!


ঘোষবাবুর সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেননা, যে.... কি এমন হলো? যে..... রাতারাতি সবার মত পরিবর্তন হয়ে গেল।


হারাধন কাকা আর চুপ থাকতে না.... পেরে বলে উঠলেন তা..... সুফল তোমার যে.... মেয়ে আছে সে.... কথাটা তো কোনদিন বলোনি আগে! তা... এটা কোন পক্ষের প্রথম না... দ্বিতীয়?


ঘোষ বাবু এই কথাটা শুনে আকাশ থেকে ধপ করে মাটিতে পড়লেন, এবং মুখ দিয়ে একটা কথাই বেড়িয়ে আসল কিইইই...... ইইইইইইই.....?


ঘোষ বাবুকে এই রকম ভাব করতে দেখে সবাই একসাথে হেসে উঠে বলল, বাবা.....!!! এমন ভাব করছ যেন.... কিছুই জানোনা? থাক বাবা আর নাটক করতে হবে না! আমরা সবাই জানতে পেরেছি! তা..... মেয়ের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করো কিন্তু, কবজি ডুবিয়ে খাব তার সাথে মেয়ে এবং মেয়ের মাকেও দেখে আসব।


শুভ হো.... হো..... করে হেসে উঠে বলল, তা.... যা.... বলেছো কাকা একেবারে আমার মনের কথা!


ঘোষবাবু আর সহ‍্য করতে না..... পেরে বেশ গম্ভীর ভাবে বলে উঠলেন, এই সব কি.... বলছেন কাকা আমার নামে!!! আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি... তাই কিছু বলছিনা!


পাশ থেকে সুনীল কাকা বলে উঠলেন, 'চোরের মায়ের বড় গলা'!


শুভ বলল না....না ওটা... চোরের বাবা.... হবে!


আবার সবাই একসাথে হো.... হো.....করে হাসিতে ফেটে পড়ল! ঘোষবাবু শান্ত প্রকৃতির মানুষ, তাই আর কথা না..... বাড়িয়ে চায়ের দোকান থেকে বেড়িয়ে পড়লেন বাজারের উদ্দেশ্যে!


শুভ পিছন থেকে বলে উঠল, তা..... মেয়ের বিয়ের পাত্র ঠিক হয়ে গেছে আসবে নাকি মেয়ে দেখতে! তাই বাজারে যাওয়ার এত তাড়া!


ঘোষবাবু কোন রকমের উত্তর না... দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে হাঁটতে লাগলেন! আর আপন মনে বকতে লাগলেন, আজ সকাল থেকেই কপালটা খারাপ কি.... জানি কি.... করেছি! সবাই শুধু কথা শোনাচ্ছে ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই!! 


বাজারে গিয়েও ঘোষবাবুকে আবার একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল যে তার মেয়ের কথা এতদিন কেউ কিছু জানতে পারেনি কেন? ঘোষবাবু এখন নিজেও পুরোপুরি কনফিউজড হয়ে গেছেন এই ভেবে যে.... তার মেয়ে আছে, পাড়ার সবাই এমনকি চেনা পরিচিত সবাই জেনে গেল মেয়ের কথা!! শুধুমাত্র নিজে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানতে পারলোনা! কে এই মেয়ে? কোন রকমে বাজার সেরে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলেন, কারন মুডটাই আজ সকাল থেকে চটকে গেছে ঘোষবাবুর!


ঘরে ঢোকার সাথে সাথে শুনতে পেলেন গিন্নি ফোনে চিৎকার করে কাকে যেন বলছে, না বিবাহ যোগ‍্যা কোনো মেয়ে নেই এই বাড়িতে! বলে খটাস করে শব্দ করে ল‍্যান্ড ফোনটা রেখে দিয়ে ঘোষবাবুর হাত থেকে বাজারের থলেটা নিয়ে রান্না ঘরের পথে পাবাড়ালেন।


ঘোষবাবু হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলেন, তারমানে গিন্নিও জেনে গেছে মেয়ের ব‍্যাপারে! তাই সকাল থেকে হাওয়া গরম! কিন্তু কে.... এই মেয়ে?কোথা থেকে এল তাও আবার আমার! আর আমি নিজেই জানিনা!ঘোষবাবুর ভাবনায় ছেদ পড়ল ফোনের আওয়াজে। ঘোষবাবু সাথে সাথে গিয়ে ফোনটা ধরলেন


অপর প্রান্ত থেকে কথা ভেসে আসল, নমস্কার এটা কি সুফল ঘোষের ফোন নাম্বার?


সুফল বাবু নম্র কন্ঠে বললেন, হ‍্যাঁ আমিই সুফল ঘোষ বলছি!


অপর প্রান্ত থেকে কথা আসল ও. নমস্কার.... নমস্কার...., আমি অনিল ঘোষ বলছি পাত্রের বাবা, আপনার পাত্র চাই বিজ্ঞাপনটা দেখে ফোন করলাম, আমার ছেলেও ইঞ্জিনিয়ার আপনার মেয়ের মত।


ঘোষবাবু এতক্ষনে সবকিছু পরিস্কার ভাবে বুঝতে পারলেন!! এবং সাথে সাথে বলে উঠলেন ক্ষমা করবেন, বিজ্ঞাপনে ভুল হয়েছে আমার মেয়ে নেই ছেলে! ওটা পাত্রী চাই হবে!


ফোনের অপর প্রান্তের লোকটা ঘোষবাবুর কথা শুনে হো.... হো..... করে হেসে উঠলেন, তারপর স‍্যরি..... বলে ফোনটা রেখে দিলেন।


ঘোষবাবু গিন্নি..... গিন্নি.... করে চিৎকার করে ডেকে উঠলেন। 


ঘোষ গিন্নি ব‍্যাপারটা বুঝতে পেরে, কাগজ হাতে ঘোষবাবুর সামনে এসে বললেন এই যে..... দেখো! সকাল থেকে শুধু... ফোনের পর ফোন এসেই চলেছে! তার ওপর পাড়ার কাকিমা, মাসিমার ফোন উপরি পাওনা!


ঘোষবাবু কাগজে পাত্র-পাত্রি বিজ্ঞাপনের পেজটা উল্টে দেখলেন বড় বড় করে লেখা আছে পাত্র চাই।


ঘোষবাবু সাথে সাথে বিজ্ঞাপন দেওয়ার দপ্তরে ফোন করে বললেন ভুলের ব‍্যাপারটা!


----------উনারা বললেন আসলে একটা 'হস‍্যি' দিতে ভুল হয়ে গেছে, স্পেলিং মিসটেক!


ঘোষবাবু আচ্ছা করে ঝাড়লেন ওনাদের, এবং সারা সকালের সমস্ত ঝাল মিটিয়ে নিলেন। তারপর ফোনটা রেখে দিয়ে গিন্নির দিকে তাকিয়ে করুন মুখে বললেন, একটা 'হস‍্যির' ভুলে এত কিছু! ঘোষ গিন্নি আর ঘোষবাবু একসাথে হো..... হো....... করে হেসে উঠলেন!






Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy