Apurba Kr Chakrabarty

Classics

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Classics

অচেনা পথেপর্ব - ১৫

অচেনা পথেপর্ব - ১৫

4 mins
389


ময়না কিছুক্ষণ মুখ নামিয়ে ছিল, পূর্ব স্মৃতিমন্থনে তার দুচোখ জলে ভরে উঠেছিল। একটু সংযত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

,

"দাদা আপনাকে খুব বিশ্বাস করি। আমার বাড়ির ঠিকানা ছোট বেলার কথা সব বলব।এসব যেন অন্য কেউ না জানে,তাহলে আমি এখানে আছি জানলে, আমার সৎ মা ডাইনী ঠিক আমাকে আবার কলকাতার বেশ্যা পল্লিতে বেচে দেবে।ওকে বিশ্বাস করি না , মুখের এমন মিষ্টি ভাষা আর দরদ মনে হবে কত ভালো। আপনাকে কথায় বশ করে ছাড়বে।"


"এতটাই সোজা,আমার বাড়ি থেকে তোমাকে নিয়ে পালাবে এমন বুকের পাটা! শেষ করে দেবো, জিভ টেনে এমন বের করে দেবো,নাড়িভূড়ি হৃদপিন্ড সব বেরিয়ে আসবে।"


"কিন্তু দাদা আপনি কী সব সময়ই বাড়িতে থাকবেন!আপনার আড়ালে যদি আমাকে জোর করে নিয়ে যায়!"

"দেখো ময়না, লক্ষ্মণের গণ্ডি সীমা পাড় করে সীতা কিন্তু রাবনের নাগালে এসেছিল তাই তো রাবন সীতাকে হরন করতে পেরেছিল। যতই ছদ্মবেশী ব্রাহ্মণ রূপে আসুক, গন্ডির ভিতর ঢোকার ক্ষমতা ছিল না।"


"এটা কী রামায়ণ দাদা?"


"হ্যাঁ ,তুমি জানো?"


"খুব জানি আমাদের গ্রামে আমি ছোট বেলায় একবার যাত্রা দেখেছিলাম, জনম দুখী সীতা।সীতাহরন তখন দেখেছিলাম ,এত সব জানতাম না।"


"আসলে রামায়ণ মহাভারত নীতিকাব্য ,শুধুমাত্র ধর্ম গ্রন্থ নয়, অনেক সামাজিক সাংসারিক নৈতিক শিক্ষা পাবে।কজন সঠিক রামায়ণ পড়েছে!যাক ওসব কথা।তুমি যদি আমার কথা অমান্য করে আমার অবর্তমানে বাড়ির দরজা খুলে রাখো বা বাইরে বের হও তোমার বিপদ হতেই পারে।ঐ জন্য লক্ষ্মণের গন্ডি আর সীতাকে রাবনের চুরি করে নিয়ে পালানোর গল্প বললাম। তোমার মোবাইল আছে।ঘরে থাকবে,দরজা সব সময়ই বন্ধ রাখবে। কাজের মাসী কীনা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে দরজা খুলে ঢুকলেই দরজায় খিল দিও।দুধওয়ালা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে খুলে দুধ নিয়েই আবার খিল দেবে।আর যেই আসুক কপাট খুলবে না। কেউ যদি মনে হয় সন্দেহজনক দরজা ঠেলাঠেলি করছে,আমাকে ফোন করবে।থানা নিকটে আমি ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ চলে আসবে।থানার ওসি আমার খুব ঘনিষ্ঠ।"


"দাদা আমি যখন একা থাকব, কাজের বৌকে আসতে নিষেধ করব।যা কাজ আমি করে নেব।আর দুধ আপনি যদি একদিন না থাকেন, দুটো প্যাকেট দুধ এনে দেবেন ফ্রীজে ভরে রাখব। সদরের কপাট এক বারের জন্যও খুলব না।আর কোন যদি দরজার সামনে অচেনা অজানা মানুষ কড়া নাড়তে দেখি সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে ফোন করব।"


"এত সাবধানতা! ঠিক আছে একমাস অন্তত এমন চলুক। আসলে আমার খতরনাক কাজের জন্য এক একদিন রাতেও ফিরতে পারি না।ঐ জন্যই তোমার উপর ভরসা করে গোপালের মা করলাম। তবে আমার অফিস ফোন আর বাড়ির ফোন আলাদা। যখন ফোন করবে যতই আমি ব্যস্ত থাকি ফোন ধরব। আগামীকাল আমি দুপুর দিকে কাজে যাব।রাতে হয়ত ফিরব না। তুমি কিন্তু খুব সাবধান, সতর্ক থাকবে।গোপালের সব দ্বায়িত্ব তোমার।"

"দাদা এ প্রাণ থাকতে গোপালের কোন ক্ষতি হবে না।আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।"


বিনয় বলল,"তোমার ছোট বেলার কথা শোনাই হল না।"

"অনেক সময় লাগবে দাদা।রাতে বলব।"


"সেই ভালো তুমি রান্নার কাজ করো।আমি দেখি একটু গোপালের কাছে যাই।"


গোপালের কোন জ্বালা নেই খেলনা গাড়ি নিয়েই সে বেশ থাকে।

দুপুরের ভাত পরিবেশন ময়না সেই এইভাবেই বিনয়কে একা করেছিল, তার আগে গোপালকে সন্তান স্নেহে কোলে বসিয়ে কত আদর করে ভাত মাংসর ঝোল আলু চটকে স্বযত্নে খাওয়ালে গোপাল খুব খুশী মনে ভাত খেল।আগে নিজের মাকে যেন পেয়েছে ভেবে ময়নার মাঝে মাঝে আদর করে গলা জড়িয়ে কখনও ফিস ফিস করে কানে কানে কত আহ্লাদে হাসি হাসি মুখে কথা বলছিল।বিনয়ের মনে হচ্ছিল গোপাল যেন তার সত্যি সত্যিই মাকে ফিরে পেয়েছিল। আনন্দে তার দুচোখ জলে ভরে যাচ্ছিল। নিজের জীবন অতৃপ্ত থাক গোপালের আনন্দেই তার আনন্দ। ময়নাকে তার খুব ভাল লাগছিল।ভাবছিল মেয়েটার কী ভীষণ গুণ এক দিনেই কী ভাবে গোপালকে আপন করে নিয়েছে।মুখে কিছু না বললেও ময়নার প্রতি কৃতজ্ঞ মনে ভাবছিল তার মিশন সফল। গোপালের মা সে সঠিক নির্বাচন করেছে।তার বড় চিন্তা দুর হল।


বিনয় বলল,"জানো ময়না, আমার স্ত্রী শিবানী আর আমি বিয়ের পর যখন থেকে ও এই বাড়িতে আমার সাথে বাস শুরু করল,একসাথেই খেতে বসি। পুরুষ বলে আমাকে যত্ন করে আগে খেতে দিয়ে পরে সে খাবে আমি ভালবাসতাম না।ও একটু প্রথম প্রথম আপত্তি করে,পরে মেনে নেয়।আমার একসাথে খেতে না বসলে খেয়ে ঠিক আনন্দ তপ্তি হয় না।মনে হয় হোটেলে খাচ্ছি নিজের বাড়িতে খুব আপন জনের সাথে খাচ্ছি মনে হয় না।"


ময়না হেসে বলল,"আপনার মনটা খুব বড় দাদা, আর আপনার মত মানুষকে পাব বলেই কতসব যোগাযোগ।"

বিনয় বলল,"আগে তোমার খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে এসো,একসাথে খেতে খেতে গল্প করব।"


ময়না আর বিনয়ের কথা অমান্য করে না।লাজুক হেসে তার খাবার ভাত মাংসঝোল তরকারী নিয়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে বলল,


"দাদা আপনার কিছু লাগলে বলবেন আমি হাত ধুয়ে দেবো।"


বিনয় হাসল, বলল,"ছোট থেকেই বড় অবহেলা আর কষ্টে মানুষ বুঝলে ময়না। একবার যা খাবার পেতাম দুবার চাইলে এমন ব্যবহার পেতাম আর চাইতাম না।সেই অভ্যাস হয়ে গেছে। খাওয়া আমার কাছে কোন ভোজন রসিকের আনন্দ বিলাসিতা নয়,জীবন বেঁচে থাকার রসদ।এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে,ভালোই লাগে। শরীর সুস্থ থাকে।খাবার অপচয় হয় না।শিবানী যেমন আমার খাবার মাপ বুঝত তুমি যেন তেমন মেপে খেতে দিয়েছ।আমার এতে শরীর সুস্থ থাকে।"


             ক্রমশ 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics