ঋতু কুন্ডু

Tragedy Classics Inspirational

3.0  

ঋতু কুন্ডু

Tragedy Classics Inspirational

আত্মহত্যা নাকি হত্যা

আত্মহত্যা নাকি হত্যা

3 mins
289


আজ সকালেই অঙ্কিতা সুইসাইড করেছে,বাকি সবার মনে হচ্ছে যে আজ ও মারা গেল কিন্তু একমাত্র অঙ্কিতাই জানত যে সে মারা অনেকদিন আগেই গেছে শুধু হৃদপিন্ড টাকে আজ ও নিজেই থামিয়ে দিয়েছে।


সে যে নিজের সাথে লড়তে লড়তে শেষ হয়ে গিয়েছিল,ও যে একদম একা পড়ে গিয়েছিল চারপাশের মানুষের ভিড়ে যেটুকু ভালো লাগা ছিল সেটা‌ ওই কলেজেটা কিন্তু লকডাউন এবং করোনার জেরে সেটাও আজ মাস ছয়েক হলো বন্ধ আছে।


ওর বয়স এই সবে কুড়ি কিন্তু বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিলো,ছেলে নাকি প্রাইমারী স্কুলের স্যার পরের গ্ৰামেই বাড়ি তার। ভালো পরিবার,ভালো ছেলে সব কিছুই ভালো ছিলো‌, ভালোটা ছিলো না শুধু অঙ্কিতার সময়।


কারন বিয়েটা এখন সে করতে চাই নি পরিবারের কাছে আরও দুবছর সময় চেয়েছিল কিন্তু বাড়ির লোকের মত বিয়ের পর ছেলের বাড়ি নাকি পড়াবে।তবে অঙ্কিতা সেটা ভালো করেই জানে ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট তাও আবার ম্যাকানিক্যাল যে পড়াটা বিয়ের আগেই নিজের জেদে শুরু করেছে সেটা কি আর পরের বাড়ি করতে দেবে কন্টিনিউ।তাছাড়া এটা করার পর যে ওকে দুবছরের জন্য বাড়ির বাইরে থাকতে হবে আর সেটা ওকে পরিস্থিতি যেতে দেবেনা।


তাই ও সব কিছু ভেবেই বিয়ের জন্য সময় চেয়েছিল কিন্তু বাড়িতে যে ওর থেকে দুবছরের ছোটো বোন আছে অঙ্কিতাকে পরের বাড়ি পাঠিয়ে তাকেও যে পরের বাড়ি পাঠাতে হবে।


অঙ্কিতার তো ওই টুকুই বয়স এতো প্রেসার নিতে পারবে কি করে এক দিকে ওর স্বপ্ন আর অন্যদিকে ওর পরিবার যেকোনো একটাকে যে ওকে ছাড়তেই হবে।তবে মা-বাবা কে ছাড়া ও বাঁচতে পারবে না আর অন্যদিকে ওর স্বপ্ন ছাড়া নিশ্বাস নিতে পারবে না।


আজ একমাস হলো ও মামাবাড়ি পালিয়ে এসেছে বাড়িতে থেকে ও এতো প্রেসার নিতে পারছিলো না কিন্তু এখানে এসেই বা কি হলো,ও আসার দুদিন পরেই ওর বাবা ছেলে দেখে এলো এবং কুষ্ঠি বিচার ও করালো ছেলেটার সাথে অঙ্কিতার বিচারে সব কিছু রাজযোটক।এতো কিছু ওকে ওর বাড়ির লোক জানায়নি দিদা-দাদু গল্প করছিলো তখনই শুনেছে।


ও শোনার পর প্রতিবাদ করলো যে " ওর পরিবার কি করে করতে পারে এটা ওর সাথে,ওর মত ছাড়া কেনো দেখছে ওরা সম্মন্ধ,ও তো করতে চাই না এখন বিয়ে তাহলে কেনো এত সব কিছু " বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলো মেয়েটি কিন্তু ওর চোখের জলের দাম কেউ দেইনি কোনোদিন তাই এইবারের ও দিলো না।


শুধু উত্তরে ওকে শুনতে হলো ওর মা- বাবা নাকি কাঁদছে,ওর এইরকম সিদ্ধান্ত শুনে।ওর দিদা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো "তুই তো আমার ভালো মেয়ে,তাহলে কেনো এমন করছিস রাজি হয়ে যা বিয়ে তে "।

দাদু বললো " কদিন বাঁচবো ঠিক নেই তোর বিয়েটা অন্তত দেখে যেতে পারবো রাজি হয়ে যা "...


অঙ্কিতা চুপচাপ রুমে এসে অনেক কাঁদলো,ভিতর থেকে যে ও একদম একা হয়ে গেছে,ওর চোখের জলের আর কষ্টের কোনো দাম নেই কারো কাছে‌।একটা মেয়ের জীবনে মা- বাবা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারন ছেলেদের মতো সারাজীবন থাকতে পায় না তাদের কাছে,অঙ্কিতার এখন সময়কে দোষ আর কাঁদা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই আর ও এখন সেটাই করছে।


আজ একমাস হতে চললো ওর মা- বাবা কেউ ফোন করেনি,অঙ্কিতা অবশ্যই কল করেছিলো কিন্তু কেউ তুলেনি।ওর এই নিজের স্বপ্নের পথে হাটা আর ওর মা-বাবার মধ্যে মানসিকতার তফাৎের ফলে বিয়ের আগেই মা- বাবার সার্পোট হারালো।


অঙ্কিতা আর নিজের কষ্টের কথা কাউকে বলতে চাই না কারন ও বুঝে গেছে যে এই দুনিয়ায় চোখের জল কেউ মোছায় না বরং সেটা দেখে হাসা-হাসি করে।


কলেজে রেজাল্ট বেরোলো পুরো কলেজের মধ্যে টপার হলো কিন্তু আনন্দ একটুও নেই কারন রেজাল্ট পাওয়ার সাথে সাথেই মা- বাবাকে ফোন করেছিলো, তারা এবারে অবশ্য ফোনটা তুলে ছিলো কিন্তু বদলে ভালো খারাপ কিছু বলেনি বরং ওর বান্ধবীর নাম্বারের প্রশংসা করেছিলো।একবার ঠান্ডা মাথায় ভাবুন তো ঠিক কতটা কষ্ট পেয়েছিলো সে।


ওর কষ্টটা শুধুমাত্র ওই বুঝবে কারন বাকিরা বুঝতে চাই না,বরং উল্টে নিজেদের দুঃখের কথা খুলে বসে।সবার জীবনে কষ্ট থাকে সবাই নিজের নিজের মতো লড়ে চলে।সবার কষ্ট এক না আর সহ্যের ক্ষমতাও এক না।


আমি জানি না অঙ্কিতা ভুল করেছিলো নাকি ঠিক তবে ওর একটা কথায় আমি একমত সেটা হল "এই দুনিয়ায় সবার সাথে লড়ায় করা যায় কিন্তু যারা জন্ম দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে না,কারন তাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তুমি কারোর সাহায্য পাবে না এমনি নিজের মনের ও না" 


মা-বাবা অবশ্যই গুরুজন তবে বাচ্চাদের ও একবার হলে বুঝতে হয় কারন তারাও মাঝে মাঝে ঠিক হয়....


আপনারই বলুন অঙ্কিতা আদেও সুইসাইড করেছিলো নাকি ওর হত্যা হয়েছিলো....?ভাবুন ভেবে জানাতে ভুলবেন না...অপেক্ষায় রইলাম


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy