মিলনতিথি ( পর্ব - ১)
মিলনতিথি ( পর্ব - ১)
গল্পের নায়িকা তিথি রায় একটি নিউস চ্যানেলের অ্যাঙ্কর ,আর গল্পের হিরো মিলন সেনগুপ্ত একজন ক্রিমিনাল রিপোর্টার। দুজনের ফ্যামিলি ব্যাকগ্ৰাউন্ড ভালো।
মিলনের বাবা নারায়নবাবু কলেজে গনিতের প্রফেসর আর মা কাকলিদেবী স্কুলের বাংলার টিচার ,বাড়িতে ভাই আছে নাম অনিক ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ছে প্রথম বর্ষে।
আর অন্যদিকে তিথির বাবা নির্মলবাবু ব্যাঙ্ক অফিসার আর মা ইলাদেবী গৃহীনি ,দাদা রৌনক চাকরী করে, সবার আদরের তিথি ।সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ এবার আমরা দেখবো যে ওদের জীবনের রাস্তা কীভাবে এক হয়।
আজ তিথির অফিসে প্রথম দিন তাই আজ সে শাড়ী পড়েছে হালকা গোলাপী কালারের আর কানে ছোট্ট সোনার কানের দুল,গলায় জন্মদিনে দাদার দেওয়া সোনার চেন সাথে মহাদেবের লকেট( তিথি মহাদেবের অন্ধ ভক্ত ) আরেক হাতে বাবার দেওয়া ঘড়ি ডাইনিং টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে তিথির আসার ।
তিথি :- আমি চলে এসেছি....মা জলদি খাবার দাও...নইলে আজ প্রথম দিনেই লেট হয়ে যাবো,আমাদের প্রফেসনে আবার এই এক সেকেন্ডের দাম ই অনেক।
ইলাদেবী :- নে বোস আমরা সবাই কখন থেকে তোর অপেক্ষায় বসে আছি,
রৌনক :- মা ওকে দিয়ে দাও আমিই নামিয়ে দেবো আজ প্রথম দিনে স্কুটি নিয়ে যেতে হবেনা
তিথি:- ঠিক আছে দা তাই করো
ইলাদেবী তিথিকে খাবার দিয়ে দিলেন ,সবার খাবার খাওয়া হয়ে গেলো রৌনক তিথিকে তিথির অফিসে নামিয়ে দিয়ে নিজের অফিসে চলে গেলো.........
রৌনক তিথিকে তিথির অফিসে নামিয়ে নিজের অফিস চলে যায় ।
তিথি নিজের আইডি দেখিয়ে অফিসে প্রবেশ করে। অফিসে ঢুকে ওর সাথে আলাপ হয় মোনালিসার , মোনালিসাও অ্যাঙ্কার ও সাধারনত হেডলাইন গুলো বলে কিন্তু তিথির দায়িত্ব ইন্টারভিউ নেওয়া আজ প্রথম দিন তাই আজ কোনো ইন্টারভিউ নেই ।মোনালিসা সবার সাথে এক এক করে তিথির আলাপ করিয়ে দেই।
অন্যদিকে মিলন ও এই অফিসেই কাজ করে দুবছর ধরে । ওর নিজস্ব কেবিন ও আছে, অফিসে যথেষ্ট সম্মান করে ওকে সবাই কারন ও এই অল্প সময়ে নিজের একটা নাম বানিয়ে ফেলেছে অফিসে।সাধারন মানুষ ও ওকে এক নামে চেনে এখন । আমাদের নায়িকা মানে তিথির ও ইচ্ছা আছে মিলনের ইন্টারভিউ নেওয়ার কিন্তু মিলনের এই এসির তলে বসে কাজ করা একদম পছন্দ না, ওর মতে রিপোর্টারের কাজ হল জনতার কথা দুনিয়ার সামনে রাখা আর তাছাড়া মিলন তো ক্রাইম রিপোর্টার ওকে তো অফিসের বাইরে থাকতে হবেই।মিলন আজ অফিস আসেনি কারন ও একটা কেসের তদন্তে আছে তাই এইকদিন অফিস আসার কোনো চান্স ও নেই ।
এদিকে তিথি মিলনের নাম শুনেছে অনেক কিন্তু দূর্ভাগ্য বসত মিলনের কোনো ছবি দেখেনি ।
মোনালিসা তিথিকে বলল "তিথি তুমি অফিসটা একবার ঘুরে দেখে নাও আমার হেডলাইনের টাইম হয়ে এসেছে তাই আমাকে রেডি হয়ে স্টুডিও তে যেতে হবে"।
তিথি - "ঠিক আছে কোনো অসুবিধা নেই আমি সব দেখে নিচ্ছি তাছাড়া বস মানে রুবি ম্যাম ও আমায় একবার ডেকেছে দেখি কী বলছে"।
মোনালিসা - Ok bye।
তিথি রুবি মানে রুবিনা সেন -এর রুমে যায়।
তিথি - May I Come In Mam
রুবি- Yes Come in। আরে তিথি বসো বসো প্রথম দিন অফিস কেমন লাগলো ?
তিথি - ভালো লেগেছে ম্যাম। তাছাড়া এই জায়গাটা আমার স্বপ্নের জায়গা ভালো তো লাগতেই হবে।
রুবি -আমাকে ম্যাম বলোনা প্লিজ এখানে আমরা ছোটো বড়ো না সবাই সমান। সো নো ম্যাম ওনলি রুবি ওকে
তিথি - ওকে ম্যাম! সরি সরি রুবি ( দাঁত দিয়ে জিভ কেটে )
রুবি - গুড । যেটার জন্য তোমাকে ডাকা তোমাকে আগামী ১৫ই সেপ্টম্বর মি: মিলন সেনগুপ্তের সাথে মি:রানা রায়চৌধুরীর স্ত্রী খুনের ব্যাপারে রানা রায়চৌধুরির ইন্টারভিউ নিতে হবে। অন্যান্য চ্যানেল এই কেসটার ব্যাপারে কোনো খবর সবার সামনে আনতে পারেনি পুলিশ অবশ্য ই তদন্ত করছে কিন্তু সেরকম কোনো খবর পাওয়া যায়নি । অবশ্য পাবলিকের মত খুন রানায় করিয়েছে ।
তিথি - মিলন মানে মিলন সেনগুপ্ত মানে ক্রাইম রিপোর্টার ( এক্সাইটেড হয়ে )
রুবি - হ্যাঁ মিলন । তো কি হল তুমি হঠাৎ এতো এক্সাইটেড হয়েগেলে কোনো অসুবিধা?
তিথি - না..না মানে কিছু না
রুবি - ঠিক আছে তাহলে তোমার ডেস্কে আমি এই কেসে -এর ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি একবার দেখে রেখো।
তিথি - ওকে
তিথি নিজের ডেস্কে এসে ভালো করে ডেস্ক রেডি করে বিভিন্ন ধরনের স্টিকার ও ওয়ালপেপার দিয়ে সুন্দরভাবে সাজিয়ে ফেলে যেগুলো ও জয়েন লেটার পাওয়ার পরেই কিনে নিয়েছিল নিউমার্কেট থেকে...
সারাদিনের টুকটাক কাজের পর বাড়িতে চলে আসে তিথি,রৌনকের অফিসে কিছু কাজ থাকায় তিথি ক্যাব বুক করে নিজেই চলে আসে।
বাড়ি আসার পর ফ্রেস হয়ে শুয়ে শুয়ে মিলনের কথা ভাবতে থাকে যে সে কি রকম দেখতে,তার ব্যবহার কিরকম,কাজের ধরন কিরকম যদিও তিথি -এর আগে সেরকম প্রেমে পড়েনি এই ২২বছরে,তবে মিলনের -এত নামডাক শুনে ওর কাজেরধরনের প্রেমে পড়ে গেছে।না দেখে ও যে কারো প্রেমে পড়া যায় সেটি তিথির থেকে ই বোঝা যায় ।
মিলনের সব সোশ্যাল সাইট গুলোতে Follow করেও রেখেছে কিন্তু মিলন কোনো জায়গায়তেই নিজস্ব ছবি পোষ্ট করা একদম পছন্দ করে না।তাই মিলনকে দেখার সুযোগ তিথির হয়নি।
এইসব উল্টোপাল্টা ভাবতে ভাবতে তিথি ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে একবার ইলাদেবী এসে তিথিকে দেখে যায় সেই ছোটোবেলা থেকেই এটা ওনার অভ্যাস যেহেতু নির্মলবাবু ওনাদের সাথে থাকেননা ওনার অফিস শিলিগুড়িতে ওখানে আগে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন এখন অবশ্য বাড়ি করে নিয়েছেন তাই ছোটোবেলা থেকেই তিথি ও রৌনককে একাই বড়ো করেছেন ইলাদেবী।
তিথি ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে যায় আজ অবশ্য শাড়ী পরেনি, আজ অফিস লুকেই আছে । যেকোনো ধরনের ড্রেস ই তিথিকে খুব ভালো মানায় তাই আজকেও খুব সুন্দর লাগছে ওকে....
আজ তিথি নিজের স্কুটি মানে ঝিমলির সাথে যাচ্ছে (আসলে তিথির স্কুটিটির নাম ঝিমলি, কলেজ থেকে সঙ্গী এটি ওর আর কেউ এটাকে স্কুটি বলুক সেটা একদম পছন্দ করেনা তিথি, তাই সামনে স্টিকারে ঝিমলি বলে লিখেও রেখেছে)।
এদিকে মিলন নিজের গাড়িতে করে অনেকদিন পর অফিস যাচ্ছে কারন ওর হাতে কিছু এভিডেন্স এসেছে যেগুলোর ভিত্তিতে রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। মিলন একটু চুপচাপ থাকায় পছন্দ করে এক কথায় কাজকর্ম অন্তপ্রান।ওর একটিই বন্ধু রফিক ও মুসলমান,ওর কাছে "মানুষের কোনো জাত হয় না আমারায় এই ধর্ম বানিয়েছি"।আর রফিক ছাড়া ওর দিন ও চলে না , রফিক ওর সেক্রেটারি হিসেবেই কাজ করে বর্তমানে।
তিথি একটি কুকুর বাঁচাতে গিয়ে মিলনের গাড়ি ঠুকে দেয়। ওর দ্বারা যে কারো গাড়ীর ক্ষতি হয়েগেছে সেদিকে তিথির কোনো খেয়াল নেই ও একমনে কুকুরটির সেবাতে লেগে পড়েছে,তিথি কুকুর খুব ভালোবাসে কিন্তু ইলাদেবীর ভয়ে বাড়িতে আনতে পারে না আর অন্য দিকে মিলন একদম কুকুর পছন্দ করে না কারন ছোটোবেলাতে ওকে একবার কুকুরে কামড়ে দিয়েছিল বলে ও তারপর থেকে খুব ভয় পায় কুকুরকে।
রফিক - এই যে ম্যাডাম শুনছেন
তিথি - (কুকুরটাকে উদ্দেশ্য করে )তোমার কোথাও লেগেছে সোনা ,আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি সোনা তুমি কোথা থেকে চলে এলে তাই তো লেগে গেলো...
রফিক - এই যে ম্যাডাম আপনাকে বলছি শুনতে পাচ্ছেন,আপনাকে বলছি এই যে.... ( রফিক তিথির উদ্দ্যেশ্যে বলতে থাকে )
মিলন - কি হলো রে রফি শুনতে পায় না নাকি আজব মেয়ে তো কোনো খেয়াল ই নেই একমনে বকেই যাচ্ছে,গাড়ীটাও ঠুকে দিলো তার জন্য সরি পর্যন্ত বলেনি । আর তুই এতো ডাকছিস তাতেও কোনো সাড়া দেই না।
রফিক - তাইতো দেখছি রে,দাঁড়া আমি সামনে গিয়ে দেখি। এই যে শুনছেন কানে কি কম শুনেন
তিথি - কি বলছেন আমি কানে কম শুনি দেখুন ফালতু বকবেন না আমি কানে ঠিক শুনি।
মিলন - তো এতক্ষন ধরে যে আমরা ডাকছি তা আপনি তো কোনো কথাই শুনতে পাননি।
তিথি - দেখুন ফালতু বলবেন না আমি আমার সোনাটাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম তাই খেয়াল করিনি( কুকুরটির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে)
মিলন - আপনার এই স্কুটিটা রাস্তা থেকে সরান আমার অফিস যেতে লেট হচ্ছে,আর সাথে এই কুকুরটাকেও
তিথি - কী আপনি কী বললেন কুকুর,স্কুটি
মিলন - হ্যাঁ কুকুর আর স্কুটি
তিথি - দেখুন এটা স্কুটি না এটা আমার ঝিমলি
মিলন - স্কুটির নাম ঝিমলি... ( বেশ অবাক হয়ে )
তিথি - আবার স্কুটি! বললাম না ওটা ঝিমলি ( বেশ মেজাজ দেখিয়ে মিলনের দিকে এগিয়ে যায়, কুকুরটিকে কোলেই রেখেছে তিথি এখনও )
মিলন - হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝলাম কুকুরটাকে কোথায় গায়ের দিকে নিয়ে চলে আসছেন সরান ওটা আমার কাছ থেকে... ( ভয় পেয়ে হাত দেখিয়ে সরাতে বলে )
তিথি - ওর নাম সোনা আর এত বড়ো মানুষ হয়ে আপনি এটাকে ভয় পাচ্ছেন
মিলন - দেখুন আমি কোনো কিছুকে ভয় পায় না ( হালকা ভয় পেয়ে )
তিথি - সে তো দেখতেই পাচ্ছি ( হালকা মুচকি হেসে )
মিলন - দেখুন অনেকক্ষন ধরে ফালতু বকছেন ,আমার অফিস যেতে অনেট লেট হয়ে যাচ্ছে আর তাছাড়া আপনি অনেক বেয়াদব ও আমার গাড়ী ঠুকে দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসচ্ছেন
তিথি - ও সরি সরি আমি ইচ্ছি করে ঠুকিনি এই সোনাটাকে বাঁচাতে গিয়ে ঠুকে গেছে সরি,এই নিন টাকা এটা দিয়ে গাড়িটাকে ঠিক করে নেবেন ( ব্যাগ থেকে টাকা বের করে মিলনের উদ্দ্যেশ্যে বাড়ায় )
মিলন - আপনার টাকা আপনার কাছে রাখুন আমাকে টাকা দেখাতে আসবেন না একদম ( মিলন বেশ রেগে যায় তিথির কাজকর্ম দেখে )
রফিক - তুই যা গাড়ীতে গিয়ে বোস আমি দেখছি
মিলন - হমমমম
রফিক - এই যে ম্যাডাম আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না। প্লিজ আপনি দয়া করে আপনার ঝিমলি কে সরান আমাদের অফিস যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে।
তিথি - ইটস ওকে। আমার ও তো অফিস যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে । সোনা তুমি চলে যাও আমি অফিস যায়( কুকুরটির মাথায় হাতবোলাতে বোলাতে
রফিক গড়িতে ওঠে অফিসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো,আর তিথি অফিস চলে গেলো।।
এরপর অফিসে গিয়ে এরা সামনাসামনি হলে যে কী হবে কে জানে..?এদের এই অল্পক্ষনের আলাপে এতো কিছু হয়ে গেলো,পরে যে আরো কত কিছু অপেক্ষা করছে আমার আর আপনাদের জন্য সে শুধু ভগবানই জানেন।

