মিলনতিথি ( পর্ব -২ )
মিলনতিথি ( পর্ব -২ )
মিলন ও রফিক অফিস পৌঁছে নিজের কেবিনে চলে যায়। এদিকে তিথি ও সবাইকে গুডমনিং উইস করে নিজের ডেস্কে চলে আসে.... কিছুক্ষন পর রমেশ এসে তিথিকে বলে যে ওকে রুবিনা ম্যাম ডাকছে(রমেশ অফিসের ই একজন স্টাফ)।
তিথি রুবির কেবিনে যাওয়ার পথে মিলনের সাথে ওর ধাক্কা লেগে যায় কারন ওর হাতে রানা রায়চৌধুরি -এর স্ত্রী হত্যা কান্ডের ফাইলগুলো ছিলো আর ওর ওই এক্সিডেন্টে একটু হাতটা ও কেটে গেছে,যারফলে ওর ফাইল গুলো হাতে ধরে রাখতে অসুবিধা হচ্ছিলো যার কারনে ও ফাইলগুলোতে বেশি মনোযোগি হয়ে যায়।
মিলন - দেখে চলতে পারেন না....( রাগি ভাব নিয়ে )
তিথি - সরি আসলে হাতে.... ( মিলনের রাগি গলা শুনে ও ভয় পেয়ে যায় )
মিলন - এক সেকেন্ড আপনি এখানে কী করছেন ? এটা একটা মিডিয়া হাউস…..এখানে সাধারন মানুষের প্রবেশ নিষেধ...এই সাধারন বিষয়টা জানেন না আপনি...যান বাইরে যান...
তিথি - এই যে শুনুন আমি একজন অ্যাঙ্কর এই অফিসের,আপনি এখানে কী করছেন ( অবাক হয়ে ওকেই প্রশ্ন করে )
মিলন - আমি ও এই অফিসেই কাজ করি...আর তাছাড়া আমি কী করছি না করছি সেই কইফিওত আপনাকে দেবো কেনো...
রফিক - কইরে মিলন আয় কাজ আছে তো
মিলন - হমম যাচ্ছি ( রফিকের ডাক শুনে ও চলে যায় তিথিকে কিছু না বলেই )
তিথি - আজব মানুষ তো কেউ পড়ে গেলে জিজ্ঞাসা করে লেগেছে কী না আর এনাকে দেখুন শুধু দোষ খুঁজে বেড়ায় মানুষের.....আর সাথে এতো গুলোও কথাও শুনিয়ে দিয়ে গেলো....আমার তো আবার রুবির কাছে যেতে হবে.....এই লোকটার সাথে আমার যখনই দেখা হচ্ছে তখনই আমার কাজে লেট হয়ে যাচ্ছে ফালতু লোক একটা... ( তিথির মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়ে যায় )
মিলন - আসবো রুবি ( দরজা থেকেই )
রুবি - হ্যাঁ অবশ্যই। বসো,কেসটা কত দূর এগোলো..
মিলন - আমি মোটামুটি ডকুমেন্টস গুলো কালেক্ট করে নিতে পেরেছি কিন্তু এটাতে ও বেল পেয়ে যাবে মনে হচ্ছে কারন রানাচৌধুরি এবারে ভোটে দাঁড়িয়েছে তাই ওর হাতে ই এখন লোকাল থানা তাই কোনো ডকুমেন্টস আমি থানাতে জমা দিতে পারবো না তাতে হিতে বিপরীত হবে....
রুবি :- হমম এটা একদম ঠিক বলেছো...
মিলন :- তাছাড়া আমার পিসেমশায় কমিশনার মি. লালমোহন সিনহা, তাই আমি এই কেসটার ব্যপারে তার সাথে আলোচনা করে রেখেছি, আমরা যদি একবার পাবলিকের সামনে সত্যিটা আনতে পারিনা তবে আমাদের চ্যানেল এক নাম্বারে চলে আসবে কেউ আটকাতে পারবে না আর অন্যদিকে রানাচৌধুরীর মতো গুন্ডা জেলে ঢুকবে। ( আনন্দের সাথে )
রুবি - বাঃ কেসটার ব্যপারে অনেক কিছুই ভেবে রেখেছো, তবে তোমাকে আমার ডাকার মূল উদ্দেশ্য হলো একজনের সাথে তোমার আলাপ করানো ।
মিলন - কার সাথে??
তিথি - আমি কী আসতে পারি? ( দরজাটা হালকা ভিতরের দিকে ঠেলে )
রুবি - আরে তিথি এসো এসো,তোমার কথায় হচ্ছিলো।
তিথি - এনি কী করছেন ( অবাক হয়ে মিলনের দিকে উদ্দেশ্য করে )
মিলন - আপনি কি করছেন এখানে,আপনি কী আমার পিছু নিয়েছেন? সত্যি করে বলুনতো আপনার মতলবটা কি..? একসেকেন্ড এক সেকেন্ড আপনাকে কি আমার মা পাঠিয়েছে?? ( আসলে এই কদিন ধরে মিলনকে বাড়ির থেকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে বেশ,আগে একটা মেয়েকে তো হঠাৎ করে ওর গাড়িতে চাপিয়ে দিয়েছিলো লিফট দেওয়ার বাহানাতে তাই তিথির সাথে বার বার দেখা হওয়াটাকে ও ভাবে যে ওর মা পাঠিয়েছে তিথিকে )
তিথি - আপনার মা আমাকে পাঠাতে যাবেন কেনো ,আর আপনি কোন মহান ব্যাক্তি যে আমি আপনার পিছু নিতে যাবো। কতবার বলবো এটা আমার অফিস ( জোর গলায় )
রুবি - থামো তোমরা প্লিজ , মিলন এ হল তিথি মানে তিথি রায় আমাদের অফিসের নিউ অ্যাঙ্কর এই কেসটা তিথি ই অ্যাঙ্কারিং করবে । আর তিথি এনি হলেন মিলন মানে মিলন সেনগুপ্ত চিফ ক্রাইম রিপোর্টার কেসটার দায়িত্বে মিলন ই আছে আর ও হল ওর সেক্রেটারি রফিক শেখ ।
তিথি - এনি মিলন সেনগুপ্ত....?( প্রথমে অবাক হয় নামটা শুনে তবে পরে ওর বলা সব কথাগুলো মনে পড়ে আর কান্না কান্না ভাব চলে আসে গলায় )সরি স্যার আমি না জেনেবুঝে অনেক ভুল করে ফেলেছি ,অনেক খারাপ কথা বলেছি সরি স্যার( নাকি সুরে কান্না করতে করতে)প্লিজ ক্ষমা করে দিবেন।
মিলন - ঠিক আছে ,ঠিক আছে কান্না করতে হবে না ( তিথির কান্না দেখে ওর ও খারাপ লাগে )
তিথি - আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাহলে.... অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার...আমি কী আপনার সাথে একটা সেলফি নিতে পারি, না মানে আপনি যদি হ্যাঁ বলেন
মিলন - ওকে নিন
তিথি তাড়াতাড়ি কয়েকটা সেলফি নিয়ে নেই বিভিন্ন আকার ইঙ্গিত করে।
রুবি - এই তোমাদের হলো আমরা এবার কাজের কথায় আসতে পারি ,তাছাড়া মিলন তুমি ওকে চেনো নাকি....
তিথি - আমি বলি....
মিলন - না আপনি কিছু বলবেন না,রুবি আমি পরে সময় হলে বলবো। এখন যে কাজে এসেছি সেটা করি
তিথি - হমম ( মুখ বাঁকিয়ে )
রুবি Confused হয়ে চোখ চারদিকে ঘোরায়,রফিক গালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে যে এখানে হচ্ছেটা কি...
মিলন - ওকে রুবি তুমি কিছু বলবে আর
রুবি - হ্যাঁ বলবো তো , মিলন তুমি বললে যে তোমার কাছে যে ডকুমেন্টস গুলো আছে সেগুলো যথার্থ নয় রানাকে জেলে ঢুকাতে সো তোমার কাছে কি কিছু প্ল্যান আছে?
মিলন - হ্যাঁ আছে ,আমি যতটা বুঝতে পারলাম কেসটা খুব পেচাঁলো মানে রানার বিরুদ্ধে যাওয়ার কারো কোনো সাহস নেই , আর রানার স্ত্রী মানে সোনালির বাড়ির লোক ও কোনো অভিযোগ জমা করেনি। যদি সেদিন ওই মিছিলটা না থাকতো তবে ওরা লাশটাও গায়েব করে দিতো আর আমরা কোনো খবর ই পেতাম না.....
তিথি - হ্যাঁ স্যার একদম ঠিক বলেছেন আমি ও ফাইল টা ভালো করে দেখলাম যে ওরা সেদিন ভয়ে বাধ্য হয়ে লাশটা ফেলে গেছে তাই এই কেসটা একটু জটিল কারন ওরা ফেলে যেতে চাই নি হঠাৎ করে মিছিলটা চলে আসায় ঘাবড়ে গিয়ে ফেলে দিয়ে গেছে আর তাছাড়া রানা রায়চৌধূরী বারাসতের একজন নামকরা গুন্ডা ওই এলাকার লোক খুব ভয় পায় ওকে তাই আমাদের এমন একজন লোককে খুঁজতে হবে যে রানাকে ভয় পায়না আর সোনালিকে ভালোবাসত এইরকম একজন মানুষ।
সেই ই বলতে পারবে আসলে সেদিন কি হয়েছিল,এইরকম ব্যাক্তি শুধুমাত্র সোনালীর মা ই হতে পারে কারন একজন মায়ের থেকে বেশি কেউ ভালোবাসতে পারে না আর তাছাড়া সোনালি বাবা-মায়ের একটিই মেয়ে ছিলো , সোনালির দাদা আছে তবে মাতাল,আর সোনালির বাবা ও মাতাল তাই আমার মনে হয় না যে ওরা বেশি কিছু কাজে আসতে পারে।
মিলন - বাঃ মিস.রায় চমৎকার আপনি তো ভালো একটা পয়েন্ট বললেন কেসটা ও অনেকটা এগিয়ে যাবে আমাদের....ধন্যবাদ
তিথি লজ্জায় পেয়ে যায় মিলনের মুখ থেকে ওর প্রশংসা শুনে...
এবার গল্পে প্রবেশ করলাম এরপর আমরা জানতে পারবো সোনালিকে কেনো মারা হয়েছিল? আর আমাদের হিরো-হিরোইন মানে মিলন আর তিথি নিজেদের জীবনে একে অপরকে কীভাবে জড়ায়।

