STORYMIRROR

ঋতু 💜🤞🏻💜

Romance Tragedy Others

3  

ঋতু 💜🤞🏻💜

Romance Tragedy Others

প্রথম স্বামী

প্রথম স্বামী

6 mins
194


আজ চলুন আপনাদের একটা না পাওয়া ভালোবাসার গল্প বলি আমি ইতি আর এই যে বাড়িতে এতো হইহট্টগোল শুনতে পাচ্ছেন সেসব শুধুমাত্র আমার জন্য।আজ আমার বিয়ে বর ডাক্তার, এই সবে গায়ে হলুদ সেরে রুমে এসেছি একটু পরেই আবার সবাই ডাক দেবে বিভিন্ন নিয়ম-কাননের জন্য।আর আমি এখন সেই ফাঁকে আমার পুরোনো ডাইরিতে আমার সব থেকে বেশি কষ্টের কথা লিখতে চলেছি। জানেন আমি না মনে মনে ঠিক করেছি এই ডাইরি আর কোনোদিন খুলবো না।ওই যে বাড়ির পাশে বড়ো জাম গাছটা দেখতে পাচ্ছেন ওখানের মাটিতেই একে চাঁপা দিয়ে আসবো।মাটির পোকা গুলো যখন এই ডাইরির পাতাগুলো কেটে কেটে নিজের পেট ভরাবে আর ঠিক তখন আমি আমার শশুরবাড়িতে সংসারধর্ম পালন করতে করতে নিজের পুরোনো কষ্ট গুলোকে সবার আড়ালে চোখের জল ফেলে একে একে মুছে দেবো।


দেখছেন আবার এই কষ্টের কথা বলতে বলতে কেমন চোখের থেকে জল ফেলে ডাইরির পাতাগুলো কেমন ভিজিয়ে ফেলছি এই ভাবে যে কতগুলো পাতা নষ্ট করলাম কে জানে।আমার আশে-পাশে তো চোখের জলে ভেজা পাতাগুলো ই দেখতে পাচ্ছি।ছাড়ুন এসব কথা আজ আমি শেষ বারের মতো আপনাদের জ্বালাবো আজকের পর এই ডাইরিও বন্ধ আর আপনাদের সাথে কথা বলাও,আজকের পর আমি আর এই ভয়েস রেকর্ড করে কোনো পেজে দেবো না।আপনাদের সবাইকে খুব বিরক্ত করেছি তাই না আপনারা নতুন নতুন গল্প শুনতে চাইতেন আর আমি বিরতির পর বিরতি নিতাম।


দেখছেন কেমন বকতে বকতে আসল কথা থেকেই সরে যাচ্ছি,প্রথমে বললাম না যে আমি আমার কষ্টের কথা আপনাদের শোনাবো সেটাই তাহলে বলা শুরু করি কেমন....


আমি ইতি প্রথমেই বলেছি, আমি মা-বাবার একমাত্র সন্তান ইংরেজি তে মাষ্টার্স করেছি তারপর এই গল্প-লেখা লিখি,গল্প পাঠ এইসবের মধ্যেই সময় কাটিয়েছি।আর বাকি সময়টা আমি সেই মানুষটাকে দিয়েছি যাকে ছাড়া একদম চলতো না আমার ভালোবাসার মানুষটিকে।তার জন্যই এই লেখালেখি র ভূতটা মাথায় চেপেছে কারন তিনি যে সাহিত্যিক মানুষ।তার সাথে থাকতে থাকতে তাকে ভালোবাসতে গিয়ে কখন যে তার সাহিত্যকে ভালোবেসেছিলাম বুঝতে পারিনি।


কখন থেকে তিনি তিনি করছি তার নাম হলো দেবাদিত্য নামটার মতো এতো কঠিন না সে,সে ছিলো আমার মনের সবচেয়ে সরল ও দুর্বল জায়গা। আমি অবশ্য তাকে দেবু দা বলতাম প্রথম দিকে তারপর তাকে আর নাম ধরে ডাকতে হয়নি কারন আমার না বলা কথাগুলো ও আমার বলার আগেই বুঝে যেতো।আমাকে স্বাবলম্বি করার কি যে চিন্তা ওর মনে ঢুকেছিলো যে দেখো আজ আমি একা একাই কেমন অন্যছেলের হাত ধরে সংসার করতে যাচ্ছি।ও আমাকে বলেছিলো "ইতি তুই আমার কলমের সেই কালি যাকে যত লিখি তত বেশি লিখতে ইচ্ছে করে"।এই কথার মানে অবশ্য বুঝতে পারিনি আমি এখনও।


ওর সাথে আমার প্রথম দেখা কলেজের নবীনবরনে। মিতাকে অনেকবার বারন করা সত্ত্বেও ও আমাকে শাড়ি পরিয়েছিলো জোর করে আর কলেজে ঢুকতেই সোমদার সাথে কোন দিকে চলে গেলো কে জানে।আমি শাড়ির কুঁচি ঠিক করতে এতটাই অন্যমনষ্ক হয়ে ছিলাম যে সামনে আসা মানুষটার সাথে ধাক্কা খায়।সেদিন যে শুধু আমি ধাক্কা খেয়েছিলাম তা না মানুষটির চোখে আমি হারিয়েও গিয়েছিলাম।তবে ওই সুন্দর চোখগুলো মোটা ফ্রেমের চশমাতে ঢাকা ছিলো তবুও আমার সেখানে ডুবে যেতে একটুও অসুবিধা হয়নি।সেই মানুষটি ছিলো আমার মনের সেই দুর্বল জায়গা যেখানে যাওয়ার অধিকার আমি কাউকে দিই নি।


সেদিন আমি পুরো অনুষ্ঠান ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলাম,ওর হাসি তো আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো অজানা পথে।অনুষ্ঠানের পরেই ওর নামটাও জানতে পারি আর এটাও জানি যে সে আমাদের সিনিয়র।ওর ও না আমাকে হয়তো কোথাও না কোথাও ভালো লেগেছিলো খুব কারন যখনই ওর আর আমার সামনি হতো ও আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে থাকতো মনে হতো এই বুঝি আমার না বলা কথাটা ওই আগে বলে দেবে।হ্যাঁ ও বলেছিলো,আমি বলার আগেই ও বুঝে নিয়েছিলো আমার মনের কথা তাই তো সেদিন কলেজ থেকে বাস স্ট্যান্ড আসার পথে আমাকে ওর মনের কথা বলেছিলো।


তারপর আমাদের ভালোবাসা দিব্বি চলছিলো কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই।ও মাষ্টার্স শেষ করে উচ্চশিক্ষায় যায় আর সাথে একটা বেসরকারি কলেজে পার্ট-টাইম প্রফেসর হিসেবেও যোগ দেয় কারন ও ছিলো আমাদের কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে সোনার পদক প্রাপ্ত ছেলে।ও চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আমি বাড়িতে আমাদের সম্পর্কটা জানিয়ে দিই মা-বাবার মধ্যে দুজনেই কেউ কোনো আপত্তি করে নি আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে।কারন ওর মতো ছেলে খুঁজলেও পাবে না দুটো যেমন শিক্ষা তেমন ব্যবহার।ওর বাড়িতে ‌শুধুমাত্র ওর মা আছে জানেন ওর মা না এখনও আমাকে নিজের মেয়ে বলে মনে করে আর আমিও আমার সব দায়িত্বও পালন করে চলছি।


আমাদের সম্পর্কে কোনোদিন ঝগড়া হতো না ও আমাকে সেইসবের কারনেই দিতো না। মাঝে এক-দুদিন অবশ্য ই আমিই ওকে রাগিয়েছে,সন্দেহ করার নাটক করেছি ওর কলেজে মেয়ে ছাত্রী গুলোকে নিয়ে।আর করবো না কেনো ওর কলেজের মেয়েগুলোতো শুধু ওর চারপাশে মাছির মতো ঘুরে বেড়াতো যেমন ছেলে দেখেনি কোনো দিন তাই তো আমার খুব ভয় হতো ওকে হারানোর।


সব কিছু ঠিক ছিলো আমি মাষ্টার্স শেষ করলাম আর ও ওর নিজের লেখা দুটো বই প্রকাশিত করলো খুব নাম পেলো বই গুলো।সেদিন আমি আর ও মিলে একটু ঘুরতে বেরিয়েছিলাম হঠাৎ ই ওর মাথাটা ঘুরতে শুরু করলো আমাকে বললো "ইতি আমার না শরীরটা খুব খারাপ লাগছে চলো বাড়ি ফিরে যায়"।


আমি বললাম " কি হয়েছে"

ও বললো "কিছু না......"


ওর কথাটা শেষ করার আগেই ও পড়ে গেলো,সেদিন না আমি খুব বেশি ভয় পেয়েগিয়েছিলাম,ভয়ে হাত-পা আমার ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।ওর পড়ে যাওয়া দেখে আশে-পাশের মানুষ ছুটে আসে...ওদের চিৎকারে আমার হুশ ফেরে।তারপর ওদের সাহায্যে আমি ওকে সামনের একটা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে আসি।ডাক্তার একটা ইঞ্জেকশন দেয় আর ওর জ্ঞান ফিরে আসে।আমার ওই ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়াটাও বন্ধ হয়।ডাক্তারবাবু সেদিন কিছু টেস্ট দেন করাতে আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করি "কিছু কি ভয়ের আছে" ওনি আমাকে বলে "যে রিপোর্ট না দেখে সঠিক কিছু বলতে পারবে না"।


ওর বাড়ি বা আমার বাড়ির কাউকেই কিছু জানাই নি এই ব্যপারে কিছু। আমরা দুজনেই পরের দিন সব টেস্ট করিয়ে আবার ডাক্তারবাবুর কাছে যায় ওনি আমাদের যেটা বলেন সেটা শুনে আমাদের দুনিয়া থেমে যায়।ডাক্তারবাবু বলেন যে"ওর নাকি ব্রেন টিউমার আছে"।


ডাক্তারবাবুর কথা শেষ করার সাথে সাথেই ওর হাত আমি আঁকড়ে ধরি।কারন এই হাত যে কোন দিন ছাড়তে চাই না এই হাত ছাড়লেই যে আমি আমার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবো মানুষটিকে ছাড়া।


সেদিন ওখান থেকে ফিরে এসে খুব কাঁদি কারন ওর সামনে কেঁদে ওকে ভাঙতে চাই নি।তবুও রোগের সাথে লড়তে লড়তে ও হেরে যাচ্ছিলো কিন্তু মুখে কিচ্ছু বলেনি।


জানেন ও না আমায় খুব বেশি ভালোবাসতো।তাই তো সেদিন বলেছিলো " ইতি তোর সাথে আর আমার সংসার করা হলো না রে,তুই ভালো থাকিস আমায় ভুলে যাস,নতুন ভাবে গড়িস নিজেকে"।আমি ওর কথায় প্রতিবাদ করেছিলাম কান্না ভেজা গলায় বলেছিলাম"বললেই হলো সংসার করবে না,তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে এই হাত কোনো দিন ছাড়বে না আমার,তাহলে কেনো আজ তোমার ইতিকে সরিয়ে দিচ্ছো দূরে,তোমার ইতি তোমার হয়ে থাকতে চাই শুধু তোমার"।


আমি আমার জেদের বসেই ওকে বিয়ে করি কারন ওর সাথে সংসার যে আমায় করতেই হবে কারন আমি যে নিজেকে কথা দিয়েছিলাম ওর বউ সাজবো আমি।


আর আজ ও সাজবো তবে অন্য কারোর......


বিয়ের দু-সপ্তাহ পরেই ও চলে যায় ওর ইতিকে ছেড়ে.....


শেষ কদিনে আমায় খুব বকা-বকি করছিলো আমার এই বিয়ে নিয়ে জেদ করাটাকে নিয়ে।তবে ওর মাথায় হাত দিয়ে আমাকে কথা দেওয়া করিয়েছিলো যে"আমি আবার নিজেকে নতুন ভাবে সাজাবো"।তাই আজ ওর কথা রাখতে চলেছি.....


ওর চলে যাওয়া আর আজকের দিনের মধ্যে চলে গেছে তিনটে বছর আর তিনটে বছরে আমি ওর অসমাপ্ত গল্পগুলোকে সমাপ্ত করে প্রকাশিত করিয়েছি।ওর স্বপ্ন অনাথ বাচ্চাদের জন্য স্কুলের ও ভালো থাকার ব্যবস্থা করিয়েছি।ও আমার স্বামী ছিলো আছে আর থাকবে তবে আজ থেকে শুধু হবে প্রথম স্বামী............


     

ইতিকে কেমন লাগলো আপনাদের আর ওকে আর্শিবাদ করবেন ও জেনো ওর কষ্টগুলোকে ভুলিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সুখে থাকতে পারে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance