আশ্রয়
আশ্রয়
সেদিনই গরমের ছুটিতে হোস্টেল থেকে বাড়ীতে এসেছে বুবু। রাতে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছিলো, প্রবল ঝড় বৃষ্টি চলছে, তায় আবার কারেন্ট অফ। নিভু নিভু মোমবাতির কাঁপা আলোয় কতক্ষণ আর জেগে থাকবে? তাই শুয়েই পড়লো।
ঝোড়ো হাওয়ার শনশন আওয়াজ আর লাগাতার বৃষ্টির ঝমঝমে আওয়াজ গাছগাছালি ছাওয়া বুবুদের বাড়ীর পাশের এক পোড়ো গোডাউনের টিনের চালে। তার মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ আকাশের এমাথা থেকে ওমাথা বিদ্যুতের ঝলকানিতে ক্ষণিকের আলো বাইরের ঘুটঘুটে অন্ধকারকে যেন আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, সেদিন বোধহয় কৃষ্ণপক্ষের শেষরাত! এই বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে ঘুমটাও আসতে চাইছে না, বিজাতীয় এক ভয় বুবুকে চেপে ধরেছে।
হঠাৎই বুবুর মনে হোলো অদ্ভুত একটা শব্দ হচ্ছে ঘরেরই এককোণ থেকে, একটা শিরশিরে অনুভূতি শিরদাঁড়া বেয়ে। টর্চটা বাগিয়ে ধরে বুবু ভাবলো যা থাকে কপালে।
একটু বড় তখন, বড়মার সাথে আর শোয় না, ছুটিতে বাড়ীতে এলে তখন মা আর বড়মার ঘরের মাঝখানে সরু ফালিমতো ঘরটাই বুবুর অস্থায়ী আস্তানা হয়। পাশের ঘর থেকে মাকে আর ডাকলো না, সাহস করে ভেবে নিলো, দেখতেই হচ্ছে শব্দের উৎসটা। দুর্যোগের দিনে প্রথমেই ওর সাপের কথাই মনে এলো।
টর্চের ব্যাটারির জোর খুব কমে গেছে, তাও টর্চের আলো ঘরের সর্বত্র ফেলতে লাগলো। ডানহাতে টর্চ আর বাঁহাতে ঝুলঝাড়া লাঠি নিয়ে অনুসন্ধান চলছে, শব্দও চলছে, এখনও সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ে নি। হঠাৎ বুবুর চোখ আটকালো কাঠের আলমারিটার পাশের কোণে, উজ্জ্বল সবুজ একজোড়া আলো। ঘরে এক অচেনা আগন্তুক, কী কাণ্ড!
পা টিপে টিপে বুবু একেবারে সামনে গিয়ে দেখে কেজি খানেক সাইজের সবুজ রঙের পেল্লায় এক সোনাব্যাঙ। বুবু থাকতে দিলো বেচারিকে, ভয়ের কিছু নেই, হাজার হোক এই দুর্যোগের রাতে ভয়েই আজ বেচারা বুবুর আশ্রিত। সত্যি বলতে কি পশুপ্রেমী দাদুর নাতনি বুবু, এটুকু না করলে দাদুর দেওয়া বাহবায় যদি ঘাটতি পড়ে!
পরদিন সকালে মুখে মুখে প্রচারে বুবুদের বাড়ীতে ঝড়জলের রাতে আশ্রয় নেওয়া আগন্তুক ঐ জাম্বো সাইজের সোনাব্যাঙ দেখতে ছোটখাটো এক জনসমাগম। আর আগন্তুকের যথাযোগ্য সম্মান দেখিয়ে আশ্রয় দিয়ে, দাদুর আদরিনী বুবু তো একেবারে দাদুর হিরোইন!