আশীর্বাদ:-
আশীর্বাদ:-


সকাল সকাল ফ্রিজ খুলে দেখলাম কিছুই প্রায় নেই, শুধু দুটো টমেটো আর সামান্য বরবটি পড়ে আছে। দশা দেখে মনে হলো বরবটি গুলো এখুনি কেঁদে বলবে,"হয় আমাদের রান্না করে খেয়ে নিন দিদিমণি, আর নাহলে রৌদ্রে রেখে দিন। এই ভরা শীতে ফ্রিজের জমাটি ঠান্ডায় আমদের পটল তোলার মত দশা হয়েছে গো মা জননী..."! সত্যি এই কদিন খুব পার্টি পিকনিক নিয়ে আমি সহ বাড়ির সকলে এত দাপাদাপি করেছি যে ঘরে রান্নাবান্না প্রায় হতই না, তাই স্বাভাবিক ভাবেই সবজি বাজারে ঢু মারারও দরকার পরেনি। কিন্তু আজ তো কোথাও পার্টির নেমন্তন্ন নেই তাই বিবশ হয়ে ফ্রিজ খুলে সবজি অন্বেষনে নামলাম। সকালে আলু-বরবটি-টমেটো সহযোগে এক পরিপাটি তরকারি রেঁধে, পতি পরিমধন আর কন্যারত্নটিকে খাইয়ে অফিসের আর স্কুলের জন্য রওনা করিয়ে তৈরী হলাম সবজি বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুটা পথ যেতেই এক খালি রিক্সা দেখতে পেয়ে হাঁক দিলাম, "ও ভাই সবজি মার্কেট যাবে?" |
মনের সুখে বিড়ি টানছিল সে, আমার প্রশ্নে কেমন নিমরাজি হয়ে বললো,"যাবো তবে ৫০টাকা লাগবে..."। দাম শুনে আমার প্রায় ভিরমি খাবার জোগাড়, ৫০টাকা!!!!! আসে পাসে আর কোনো রিক্সা নেই যে একে ছেড়ে অন্য রিক্সা নেবো অগত্যা দরদাম করে শেষে ৪০ এ রাজি করালাম।
সবজি বাজারে গিয়ে পেয়াঁজের দাম শুনে পেয়াঁজ না কেটেই চোখটা জলে ভরে গেল যেনো...আদার দাম টা শুনে তো মনেহলো অনুভব করতে পারছি আদার ঝাঁঝ টা... মটরশুঁটি তো মনে হলো ছুঁতেও পারছিনা, তাপ লাগছে হাতে। সেইরূপ বাকি সবজি গুলোর তেমনি দাম। জিনিসপত্রের দাম এখন আকাশছোঁয়া, আর আমার পতি-পরমধন তো মাসের শেষে আমার হাতে টাকা তুলে দিয়েই খালাস, কোনো মাথাব্যথা তেনার কখনই থাকে না যে পুরোটা মাস কাটবে কি করে! যেটা কিনতে যাই সেটাই এত্ত দাম... সবজি গুলো নিচ্ছি আর ভাবছি যত টাকা নিয়ে বেড়িয়েছিলাম সবটাই তো প্রায় কেনা কাটিতে বেরিয়ে যাবে, মেজাজ টা বিগড়ে গেছে ততক্ষনে। যাই হৌক দর কষাকষি করে যৎসামান্য পরিমাণে সব সবজিই অল্প সল্প নিলাম। এবার ফেরার পালা।
একটা রিক্সা ঠিক করে ওঠে পরলাম, রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ির সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে দেওয়ার পর দেখলাম ব্যাগে মাত্র দুটাকার একটা কয়েন পরে আছে শুধু। মনেমনে একটু হাসলাম যে প্রায় সব টাকাই শেষ কিন্তু সবজি-ভাজি কিনলাম মাত্র এই টুকুনই। গেট খুলতে যাব নোংরা ছেড়া ময়লা শাড়ি পরা এক বুড়ি কাছে এসে হাত বাড়িয়ে ভিক্ষে চাইলো, প্রথমে নেই নেই বলে বিদেয় করতে চাইলাম কিন্তু বুড়ি অনড়। বিরক্ত হয়ে আমি দুটাকার কয়েনটাই তেনার হাতে দিলাম, তিনি আশীর্বাদ দিতে থাকলেন, "বেঁচে থাকো মা গো, স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী হও, ঠাকুর তোমায় আরো দিক, ভালো থাকো মা...."। তিনি বলেই যাচ্ছেন আর আমি ভাবছি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যেখানে নিত্য আকাশ ছুচ্ছে সেখানে এই বুড়ি মা মাত্র দু টাকায় প্রাণভরে এত আশীর্বাদ করে চলেছেন....!
লজ্জিত হলাম নিজের আচরণে, যেখানে এত পয়সা ব্যয় করে এলাম এটা-সেটা কিনে সেখানে বুড়ি মা কে দুটো টাকা দিতে পিছ-পা হচ্ছিলাম।
সত্যি, আশীর্বাদ পেতে বহুল পরিমাণ খরচার প্রয়োজন পরে না, কথাটির প্রমাণ আজ আবার পেলাম। আশীর্বাদ এখনও অনেক সহজলভ্য.....