আঙটি চোর
আঙটি চোর


না কোথাও নেই, বাড়ীর সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজেও আঙটিটা পাওয়া গেল না। সমরেশের বিয়ের আঙটি ওটা, আজ সকালেও সমরেশ হাতে পড়েছিল। স্নান করতে যাওয়ার সময় সে আঙটিটা রোজ খুলে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখেই বাথরুমে যায়। স্নান সেরে বেরিয়ে জামা, প্যান্ট আর আঙটিটা রোজ পড়ে নেয় সমরেশ। আজও তাই করেছিল, কিন্তু বাথরুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়ারে আজ আর সে পায়নি। যদি বাথরুমে খুলে পড়ে যায় এই ভেবেই সে সাবধানতা অবলম্বন করেই এটা করে। বাড়ীতে লোক বলতে সমরেশের বাবা, মা, সমরেশের বউ ছাড়া আর আছে কাজের একটা ছেলে রতন, বছর আঠারো বয়স, এই মাস পাঁচেক হল ওদের বাড়ীতে এসেছে। সমরেশ ওর বউকে জিজ্ঞেস করল যে সে স্নানে যাওয়ার পর রতন ঝাড় দিতে বা মোছামুছি করতে ওদের ঘরে ঢুকছিল কিনা। ওর বউ বলেছিল না রতনকে তো এই ঘরে ঢুকতে সে অন্তত দেখেনি, তবে সবসময় তো আর সে ঘরের সামনে ছিল না। যাইহোক সমরেশের মনে তীব্র সন্দেহ দাঁনা বাঁধল যে এটা নিশ্চয়ই ঐ ব্যাটা রতনেরই কাজ। আর তাছাড়া কেই বা আছে এই বাড়ীতে ওটা নেওয়ার মতো। সমরেশের মা আবার তার মধ্যে এসে বলল যে রতন দু-তিন দিন আগে দুহাজার টাকা ধার চেয়েছিল দেশে মার কাছে পাঠাবে বলে, ওর বাবার নাকি খুব অসুখ তাই ডাক্তার, ওষুধের জন্য ঐ টাকাটা খুব দরকার। কিন্তু হুট বললেই তো আর দেওয়া যায় না। এই কথা শোনার পর সমরেশের আর কোন সন্দেহ থাকল না যে এটা ওরই কাজ। সে রতনকে ডেকে বলল ভালয় ভালয় যদি সে আঙটিটা ফেরৎ না দেয় তবে বাধ্য হয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেবে। সমরেশের বাবা বাজার থেকে ফিরে সব শুনে বলল দেরী না করে এখনই পুলিশে জানিয়ে দিতে, পুলিশ এসে দু-চার ঘা দিলেই সুড়সুড় করে সব বেরিয়ে পড়বে। রতন তো কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে শুধু বলে যাচ্ছিল যে সে কিছুই জানেনা। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ, ভয় দেখানো কোন কিছুতেই যখন কাজ হল না, তখন সমরেশ সত্যিসত্যিই পুলিশ ডাকল। পুলিশ এসে সব শুনে রতনকে চার-পাঁচটা প্রশ্ন করল। রতন সেই একই কথা বলে গেল যে সে কিছুই জানেনা, আর কাঁদতে থাকল। তখন পুলিশ অফিসার বলল, না এখানে হবে না, থানায় নিয়ে গেলেই সব কথা বেরিয়ে যাবে। এই বলে ওরা রতনকে ধরে নিয়ে চলে গেল।
বিকালবেলা বারান্দায় সবাই মিলে চা খেতে খেতে ঐ আঙটিটার ব্যপারেই কথাবার্তা বলছিল, কিন্তু সমরেশ গুম মেরে বসেছিল। ওর বাবা বলল হ্যাঁরে তুই সব জায়গা ভাল করে দেখে নিয়েছিলি তো? সমরেশের মা আর বউ দুজনেই প্রায় সমস্বরে বলে উঠল হ্যাঁ হ্যাঁ সব জায়গা ভালো করে দেখা হয়েছে। তখন ওর বাবা বলল দেখ, একটু পরেই হয়ত থানা থেকে ফোন করে সুখবরটা দেবে। সমরেশ এতক্ষণ ধরে চুপ করে কি যেন ভাবছিল, হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে দৌড়ে ভিতরে চলে গেল, মানিব্যাগটা নিয়ে এসে খুলেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল, ওর বউ মানিব্যাগটা খুলে দেখল ভিতরে আঙটিটা জ্বলজ্বল করছে।