আমি এসেছিলাম
আমি এসেছিলাম


কমলিকা হল দেবাশিষ ও মৌমিতার অতি আদরের একমাত্র সন্তান। সল্টলেকের একটি বিলাসবহুল বাড়ীতে তাদের একটি ছোট ও সুখের সংসার। মেয়ে সন্তান বলে তাকে কোনদিন কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি। কিন্তু যেদিন সে জয়েন্টে পাশ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হল সেদিন তাকে ডেকে দেবাশিষ জানিয়ে দিল যে সব অধিকার থাকলেও নিজের জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার অধিকার কমলিকার নেই।
কিন্তু দেবাশিষ হয়ত ভুলে গিয়েছিল যে মানুষের জীবনে প্রেমের প্রবেশ হয় নিজের অজান্তে, নিঃশব্দে এবং সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, আর কমলিকার জীবনেও এর ব্যতিক্রম হল না।
কমলিকাকে তার মামাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে হঠাৎ করেই চারদিনের জন্য শিলিগুড়ি যেতে হল। এখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় সায়নের আর তার সাথে হয় ভালোবাসাও।
মেয়ের এই ভালোবাসা খুব শীঘ্রই নজরে আসে দেবাশিষ ও মৌমিতার। মেয়েকে ডেকে দেবাশিষ বলে ‘ছেলেটি তোমাকে কি দিতে পারবে? জানো মামণি জীবনে পয়সাই সব কারণ এটা দিয়েই মানুষ তার প্রয়োজনীয় সব কিছুই কিনতে পারে।’ কমলিকা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল ‘একবার ভেবে দ্যাখো বাবা, তুমি কি ঠিক বলছ?’ উত্তরে দেবাশিষ বলেছিল ‘হ্যাঁ।’
কোলকাতায় ফেরার আগে সে অতি কষ্টে তার ঠিকানা লেখা একটি কাগজ সায়ন কে দিয়ে এসেছিল আর বলেছিল ‘আমাদের আবার দেখা হবেএবং সেদিন আমাদের ভালোবাসার কাছে বাবা হেরে যাবে ও তার আজকের কথাগুলি ভুল প্রমাণিত হবে। আমি সেদিনটার জন্য অপেক্ষা করব আর তুমি আমাকে মনে রেখো।’
এরপর কয়েকটা বছর কেটে গেল। আজ কমলিকা একজন নামী ডাক্তার। এই বছর গুলিতে তার আর সায়নের মধ্যে কোন যোগাযোগ হয়নি।
আজকে হস্পাতালে তার রাতের ডিউটিটা নেই, তবে ডাক পড়লে যে কোন সময় যেতে হতে পারে জেনেও ঘুমানোর চেষ্টা করছিল সে। কেন জানেনা তার আজ সায়নের কথা বারবার মনে পড়ছিল।
হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠল, তাকিয়ে দেখল তার সিনিয়র, ডক্টর মুখার্জীর ফোন। তিনি বললেন ‘কমলিকা তাড়াতাড়ি একবার হস্পাতালে চলেএস, একটি অ্যাক্সিডেন্টের কেস এসেছে, পেসেন্টের অবস্থা খুবই খারাপ, হয়ত তুমি আসা অবধি বাঁচবেনা। তবে ছেলেটির পকেট থেকে তোমার বাড়ীর ঠিকানা লেখা একটা কাগজ পাওয়া গিয়েছে যেটা থেকে ছেলেটি তোমার পরিচিত বলে মনে হল। তাই তোমাকে একবার আসতে বলছিলাম।’ কথাটা শেষ হতে না হতেই কমলিকা কোনমতে গাড়ীর চাবি নিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। এতরাতে মেয়েেকএইভাবে যেতে দেখে দেবাশিষ ও তার পিছু নিল।
কমলিকা হস্পাতালে পৌঁছে জানতে পারল ছেলেটি একটু আগেই মারা গিয়েছে। ডক্টর মুখার্জী তাকে কাগজটা দিয়ে বললেন ‘মিনিট খানেকের জন্য জ্ঞানএসেছিল, শুধু বলল কমলিকা আমি এসেছিলাম, তারপরই সবশেষ।’
কমলিকা সাদা চাদর সরিয়ে সায়নকে সনাক্ত করল। শক্ত করে তার হাত ধরে থাকল। কিন্তু সে কাঁদল না কিছুক্ষণ পরে দেবাশিষ এলে সে বলল ‘বাবা, সায়ন এসেছিল আমার জন্য।’
দেবাশিষ প্রায় জোর করেই মেয়েকে বাড়ী নিয়ে গেলেন। পরের দিন কমলিকার ঘর থেকে তার মৃতদেহ ও একটি চিঠি পাওয়া গেল, দেবাশিষ কে লেখা। সে লিখেছে ‘বাবা অর্থ দিয়ে সব কেনা যায়না। তোমার প্রচুর পয়সা থাকলেও তুমি যেমন আমার জন্য ভালোবাসা, সায়নের জন্য জীবন কিনতে পারোনি, তেমনি আমি চলে যাওয়ার পর নিজেদের জন্য সুখ ও শান্তি কিনতে পারবেনা আমি জানি । তবুও বলব তুমি ও মা ভালো থেকো।'