STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

4  

Manab Mondal

Abstract Romance Inspirational

আমি আমার মতো

আমি আমার মতো

5 mins
390

চোখে উপর থেকে শশার টুকরোটা তুলে খেয়ে নিয়ে বললাম।" কিরে মিমি আবার হঠাৎ রূপ চর্চার মন দিয়েছিস কি ব্যপারটা কি? "

মিমি বললবো" কি আজ নাকি আবার আমাকে দেখতে আসবে তাই বাধ্য হয়ে করছি। কাল পিঁয়াজি খেতে চাইলাম বললো বললো বেসন নেই। আজ সকালে দুই ঘণ্টা বেসন মাখিয়ে বৌদি ভাই বসিয়ে রেখে দিলো।"

আমি বললাম " মরা সময় হরি নাম করলে হবে । মুটি, ঝগড়া ঝাটি করিস না। আমার আশির্বাদে তোর এই পাত্রের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে।"

মিমি বললো " আমি জন্য আগের পাত্র গুলো ভেগেছে, না তোর জন্য ভেগেছে। তুই ভাগিয়েছিস । আজ তুই কিছু চালাকি করতে পারবি না। মিষ্টি মা পাত্র নিয়ে আসছে। "

আমি বললাম " তার মানে রাজা দার কপালটা পুড়লো।‌মা কয়েক দিন ধরে ওর জন্য ছেলে দেখছে। ব্যাচারা রাজাদা। ভালো হলো আমার একটা গাড়ি সেল বাড়িয়ে দিলি তুই , চার সীটার গাড়ি আছে ওর এবার ওকে সিক্স সিটার কিনতে হবে।"

মিমি চিৎকার করে উঠল।" মা দেখো আবার তোমার ভালো ছেলে আমাকে মুটি বলছে।"

আমি তাড়াতাড়ি ওর ঘর থেকে কেটে পড়লাম।

মিমি আমি ছোট বেলা থেকেই একসাথে মানুষ। বন্ধু কখনোই আমরা না , ওর জন্য আমার কপালে কোয়াটার গার্লফ্রেন্ড জোটে নি। আমার কারসাজিতে ওর জীবনে কোন ছেলেও আসে নি। কিন্তু ওর মা আমাকে খুব ভালোবাসে। আজ যেমন কচি পাঁঠার মাংস কসা আর লুচি সাটাতে হাজির হয়েছি ওর বাড়ি। তবে আজ ওকে দেখতে আসবে তাই কাকিমা আমাকে দায়িত্ব দিলো। আমার পছন্দের মিষ্টি , সিঙ্গারা আনার জন্য।

মিমি একটু শান্ত ভাবে ডাকলো আমায়। বললো

" এতদিন তো শয়তানি করে আমার বিয়ে ভেঙে দিয়েছিস। কিন্তু আজ বন্ধু হিসেবে আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে পারবি।"

ওকে বেশ গম্ভীর লাগলো ,তাই খুব শান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম " কেন ? তুই কি অন্য কাউকে ভালোবাসি?"

ও একটু রেগে গিয়ে বললো " একটা মেয়ে বিয়ে না করতে চাওয়া মানে কি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে?লেখাপড়া শিখে, ভালো চাকরি পেয়েছি, কোথায় কয়েক বছর শান্তিতে নিজের স্বাধীনতা উপভোগ করবো,তা নয় খালি বিয়ে বিয়ে বলে মাথা খারাপ করে দিচ্ছি। মাত্র পঁচিশ বছর বয়েস।"

যাদবপুর।বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। মিমি খুব ভালো চাকরি পেয়ে জয়েন করেছে ।

আমি বললাম " তোর পঁচিশ বছর পুরো হয়েছে, আর রাজা দা খুব ভালো ছেলে । উচ্চশিক্ষিত, নতুন চাকরি পেয়েছে ঠিকই তবে যোগ্য ছেলে, খুব তাড়াতাড়িই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। ফ্যামিলিও খুব ভালো।তোর মতো মেয়েকে সবাই তো পছন্দ করবে না। এখানে সেরকম কিছু সমস্যা হবে না। তাই বিয়েটা করেই ফেল‌ এবার।"

ও বললো "আমার মতো আমি। আমাকে যে ভালোবাসবে তাকে এই আমাকেই ভালো বসতে হবে আমি বদলাবো না। আমি জানি এটা তোর কাজ মায়ের হাতের রান্না খেয়ে প্রচুর তারিফ করবি ।এমষ যেন নিজের বাড়িতে খেতে পাস না। রোজ এসেই মায়ের সাথে চুপিচুপি কি কথা বলছিলিস । তারপর থেকেই মা বলতে শুরু করেছেন , বিয়ের কথা।নষ্টের গোড়া তুই আমি জানি।মা, বাবার একনম্বর পরামর্শদাতা । ছোটবেলার বন্ধু না তুই আমার।এইরকম শত্রুতা না করলে চলতো না তোর।"

দেখলাম বেশ খোচে গেছে। তাই পালিয়ে গেলাম। কেন জানি না ওকে আমি একটু বেশিই ভয় করি। তবে ওর সাথে রাজাদার বিয়ে হলে ভালো হয়। তবুও মন থেকে ওর বিয়ে হয়ে যাক ঠিক মানে নিতে পারছিলাম না। না না ভালোটালো বাসি না আমি ওকে। ভালো বাসা টাসা কি ওসব আমি বুঝতে পারি না। তাই কোনোদিন প্রেম করেনি। আসলে ঐসব ন্যাকা ন্যাকা ব্যাপার আমার ঠিক আসে না। আমার আমি নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। ইস একটু কষ্ট হচ্ছে , মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে ফুচকা খেতে যেতাম রেস্টুরেন্ট খেতে যেতাম, ফুটপাতে পেট পুরে খেতাম , অন্য মেয়েদের মতো ও কোন ডাইটিং ফাইটিং এর ধারে কাছে দিয়ে যেতো না। তাই খুব মজা হতো একা একা ভালো লাগবে না আর খেতে।

আমার ওর প্রেমে পড়ার কোন সুযোগ নেই। ওকে কোন দিন মেয়ে মনে হয়নি আমার ।ও একটু অন্যরকম, কোনোদিনই বেশি সাজগোজ করতে পারে না। ছোট ছোট করে কাটা চুল ছেলেদের।মোটা ফ্রেমের চশমা। ফুচকার মতো গোল গাল চেহারা। প্যান্ট শার্ট বা টিশার্ট পরেই কম্ফরটেবল। সালোয়ার কামিজ খুব প্রয়োজন ছাড়া পরেনা, শাড়ি তো নয়ই।বাড়িতেও ট্র্যাক প্যান্ট আর টিশার্ট।মুখে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করে না।তবে এতো সাধারণ ভাবে থাকা সত্ত্বেও তার সুন্দর মুখ আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ সকলেরই নজর কাড়ে।

সব মিষ্টি খাবার দাবার কিনে দিয়ে এলেও, বিকালে মিমিদের বাড়ি যেতে ইচ্ছে করলো না। ওদের বাড়ি যাবার সময় মা বাবা অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ভান দেখিয়ে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু মিমি ফোন করে যখন বললো, " প্লিজ তুই একটু আয় আমার নার্ভাস লাগছে.. " তখন যেতে বাধ্য হলাম।

মা বাবা, মামা মামীরা দেখি মিমির সাথে বেশ হেসেই কথা বলছে। বেশ ঘুলে মিলেই গেছে। কিন্তু রাজা দাকে দেখলাম না। বুকে পাথর চেপে জিগ্গেস করলাম "রাজা দা কৈ? কী গো মামীমা মেয়েকে তোমাদের পচ্ছন্দ হলো‌।"

ওরা বললো" সে কি বলতে , তুই এতো দেরি করলি কেন? সিঙ্গারা মিষ্টি খা আগে"

আমি বললাম " না অম্বল হয়েছে খেতে ইচ্ছে করছে না।? রাজা দা কৈ?"

আমার মা বললো " কৈ আমাকে তো বাড়িতে বললি না। ওষুধ দিয়ে দিতাম তা মিষ্টি খেয়ে নে..."

আমি এড়িয়ে গিয়ে বললাম " না, রাজাদা কোথায়, ওর সাথে কথা বলতাম।"

কাকিমা বললেন " যাও ওপরে আছে কথা বললো"

মিমি কি পাল্টিবাজ মেয়েরে বাবা ,নির্লজ্জ মতো বললো। " মা রাজার সাথে ওকে একা কথা বলতে যাবে না। নয়তো ও আবার এ বিয়েটাও ভেঙে দেবে।"

আমি বললাম " তোর বিয়ে ভেঙে আমার কি লাভ, আমি অন্য কথা বলবো।"

কাকিমা বললো " তোরা এক সাথে যা, ঝগড়া করিস না এতো।"

উপরে এসে রাজা দাকে দেখতে পেলাম না। ও আমার দিকে এগিয়ে এলো । আমাকে দেয়ালে ঠেসে দিয়ে ধরে বলল " এবার বিয়েটা কিছুতেই তোকে ভাঙতে দেবো না । "

কেন যেনো আমার চোখে জল ভরে এলো। দেখে ও হেসে দিলো। বললো " ছেলে হয়ে কাঁদে নাকি। আমি তোকে বিয়ে করবো।একবার তো বলতে পারতিস, অন্তত একটা আভাস দিলেও তো হতো। তাহলে অনেক দিন আগেই আমরা চুটিয়ে প্রেম করতে পারতাম।কি যে করিস না... লজ্জার মাথা খেয়ে কাকিমার সাহায্য নিয়ে এই নাটক করতে হতো না।“

আমি হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম " আমার আমি আমার মতো। আমরা চুটিয়ে প্রেম করবো বিয়ের পরে,,,, মোটা হওয়ার ভয় তুই কিন্তু ফুচকা খাওয়া ছাড়বি না।"



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract