আমার পরিবার
আমার পরিবার
জুঁই এর মতো সুন্দরী আমি না। ওর মতো ন্যাকামো করতে পারিনা। তবে এ বাড়ির লোকজনকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আমি সবসময়। পাপানের সাথে গিয়ে দুধ, খববের কাগজ, বাজারও এনে দিই আমি। তবে নিজেকে জোকার বানিয়ে ওরকম আদিখ্যেতা করতে আমি পারবো না। আবার মিনির মতো অন্যবাড়ির হাঁড়ির খবর ও আমি আনতে পারবো না। আমি বুড়ো হয়েছি তাই আমার কদর কমছে জানি। তাছাড়া বাড়ির নতুন বৌ টাই আমাকে একটু দুঃচ্ছা করে।
ওদের এখন পয়সা হয়েছে তো , তাই আমাকে নাকি আর মানায় না এ বাড়িতে। বাড়িতে দামী দামী আসবাবপত্র জায়গা হবার পর যেমন , বুড়ো কর্তাবাবুর জায়গা হলো না এ বাড়িতে, তেমন ই আর কি। কর্তাবাবুকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। পাপুন বাধা দিয়েছিল কিন্তু পাপুনে কথা কে শোনে। ওর তো ভালো চাকরি নেই, বড়দা মেজ দাদার মতো।
জুঁই কে ওরা পছন্দ করে। আসলে ওদের কথায় ও ওঠে বসে। বল ছুড়ে দিলে নিয়ে আসে। হান্ডসেক করতে বললে , ও করে। এগুলো হয়তো আমিও করতে পারতাম কিন্তু করি না। শুনেছি এ গুলো শিখতে, নাকি ওকে আবার ট্রেনিং সেন্টার পাঠানো হয়েছিল। ওর জন্য আবার আলাদা খাবার আনা হয়। আমি তো সারাজীবন এঁটো কাটাকুড় খেয়েই মানুষ হয়েছি । ও বিদেশী, আমি দেশি এটাই পার্থক্য। তবে আমি সারারাত জেগে ঘর পাহাড় দিই। ও ব্যাটা তো বাগানে সেই দিন একটা কুনোব্যাঙ দেখেই পালিয়ে ছিলো। আর কি বলবো ওকে তো হাগু মুতু করাতেও লোক লাগে।
আমাদের গেয়ে রঙ বাদামি, আমাদের ঠিকানা তাই করো বৈঠকখানা নয়, রাস্তা। সবার সহানুভূতি পাই কিন্তু ভালো বাসা পাই না। তবু ভাগ্য ভালো আমি এ বাড়িতে জায়গা পেয়েছিলাম। যাইহোক এখন ওরা বড়োলোকে হয়েছে বলে হয়তো, স্টেটাস এর জন্য এ বাড়িতে আমায় আর মানায় না। যাইহোক মেজে বৌদির সবচেয়ে বেশি আমি অপচ্ছন্দের।
কিন্তু এখন মেজো বৌদির চোখেই আমার জন্য জল। কাজের মেয়ে, কাজের মেয়েই হয় সেকি পরিবারের সদস্য নাকি। পার্কে গিয়ে গল্প করতে ব্যস্ত ছিলো। কি দিনকাল এলো কে জানে? বাচ্চা গুলো এখন কোলে নিয়ে ঘরতেও যেনো কষ্ট। এ বাড়ির নয়ন মনি পুচকুটাকে ওয়াকার মধ্যে বসিয়ে গল্প ব্যাস্ত খান্তরানি। পুঁচকে টা হাঁটা হাঁটতে পার্ক থেকে বেরিয়ে রাস্তায়। ভাগ্যিস আমি ওদিকে একটু ঘুরতে এসেছিলাম তাই রক্ষে। গাড়িটা চাপা দিতো নির্ঘাত ওকে। বাঁচিয়ে নিয়েছি। লোকটাও ঠিক সময় গাড়ি থামিয়েছে তবু বোধহয় আমার কোমর টা ভেঙে গেছে। তবে আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না। মেজো বৌদি আমাকে নিজে নিয়ে এসেছে হসপিটালে। মেজো বৌদি তাহলে মেনে নিয়েছে আমাকেও এ বাড়ির সদস্য হিসেবে।
