Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
298


ষড়নবতিতম অধ্যায়

রাষ্ট্রপতি শাসনে বিধান সভা নির্বাচন সম্পন্ন হল । দু'একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া মোটামুটি নির্বিঘ্নেই শেষ হল নির্বাচন ।

সব ধরণের এক্জিট পোলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রাক্তন শাসকদলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে জিতে ফিরে এল ।

রক্ষিত ব্রাদার্স যে সর্বনেশে খেলা চালাচ্ছিল তাদের নি:শেষ করে দেওয়া হয়েছে দাবী করে কলকাতার মানুষের মন জয় করে নিয়েছিল প্রাক্তন শাসক দল ।

আর কলকাতার বাইরে টাকার খেলা দেখিয়ে বুথ দখল না করে ভোট টেনে নিল । বিরোধী দলের আসন সংখ্যাও অনেকটাই বৃদ্ধি পেল ঠিকই কিন্তু ক্ষমতা দখল করতে পারল না ।

ফলে দুর্নীতি নিয়ে যে সকল কমিশন বসানোর কথা ছিল তা' বন্ধ হয়ে গেল । এমনকি কেন্দ্রীয় বাহিনীও যে অর্থের বশীভূত হয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বিসর্জন দিয়ে ওদের জিতিয়ে দিয়েছে সেই সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল ।

বিজয়ী দলের সভাপতি পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন এবং মন্ত্রীসভায় কিছু রদবদল করলেন । কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের হারে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন দেবার ঘোষণারও পরিসমাপ্তি ঘটল ।

ঠিক সেই সন্ধিক্ষণে ত্রিলোকেশ্বরের বেঁচে থাকার ভিডিওটি ইউটিউব চ্যানেলে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ছেড়ে দেওয়া হল । সরকারের প্রধান এবং বিরোধী দলনেতার এই কুড়ি মিনিটের ভিডিও দেখে রাজ্যবাসী স্তম্ভিত হয়ে গেল ।

তড়িঘড়ি অপরাধীকে ধরতে নির্দেশ দেওয়া হল । আর সব চ্যানেলগুলোকে ব্যান করে দেবার হুমকি দেওয়া হল ।

আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল । রাজনীতিকদের এ হেন চরিত্র লক্ষ্য করে ক্ষুব্ধ আদালত ভিডিওর সত্যাসত্য অনুসন্ধানের জন্য রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেন । এও জানিয়ে দিলেন প্রয়োজনে কেস সি বি আইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে ।

নড়েচড়ে বসল পুলিশ প্রশাসন । বিরক্ত পুলিশ কমিশনার মিঃ মুখার্জীকে ডেকে বললেন - মুখুজ্যে , চল আমরা সন্ন্যাস নিই; ভটচাজকেও বলে দাও । আর তো উপায় দেখছিনে !

মিঃ মুখার্জী বললেন - এই শীতে সন্ন্যাস ? বলেন কি স্যার ?

কমিশনার চিন্তায় ব্যাকুল হলেন । হাসপাতালের মিটিং এ তো তিনিও ছিলেন। স্বচক্ষে এবং স্বকর্ণে দেখেছেন শুনেছেন । এখন ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তা'তে তাঁর উপস্থিতি দেখানো হয়নি ঠিকই; কিন্তু ফরেন্সিক ল্যাবে গেলে তো তাঁকেই বলির পাঁঠা করা হবে । কারণ তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট আর ওঁরা রাজনীতিক; যারা আদালতকে পর্য্যন্ত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেবার সিহস রাখেন । মাঝখানে তাঁর চাকরি পেনশন গ্র্যাচুইটি.....

নাহ্ ভাবতে পারছেন না । শুধু হাঁটু পর্যন্ত ছেঁড়া ধুতি, খালি গা আর এক হাতে একটা পুঁটলি - তাঁর চোখে ভেসে উঠল ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - ত্রাতা একমাত্র মিঃ উৎহব রায়চৌধুরী এবং তাঁর ভাই । স্যার, চলুন আমরা তাঁর শরণ নিই ।

কমিশনার উৎফুল্ল হলেন ।

- ঠিক বলেছ তো মুখুজ্যে । ও ভালো কথা, তোমরা তো ওঁর বাড়ীতে গিয়েছিলে ।

মিঃ মুখার্জী বললেন - হ্যাঁ, গিয়েছি।

- ভটচাজকে ডাকো । চল আমিও যাই তোমাদের সঙ্গে ।

- এখন ? তাঁর সাথে কোন কথা না বলেই ?

- কোন দরকার নেই । বলে দাও আমি যেতে চাইছি ।

অগত্যা মিঃ মুখার্জী ফোন করলেন মিঃ রায়চৌধুরীকে ।

বড়দা ফোন পেয়ে বললেন - বলুন সাহেব । কি প্রয়োজন ?

- কমিশনার সাহেব আপনার বাড়ী যেতে চাইছেন । আপনি তো মল্লিকপুর চলে গেছেন, তাই না ?

বড়দা বললেন - না তো । কলকাতাতেই আছি । কি ব্যাপার বলুন তো ? হঠাৎ তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে মল্লিকপুর পর্য্যন্ত ধাওয়া করতে চান - কোন বিপদ হয়েছে নাকি ?

- সাংঘাতিক! বিপদ বললে ছোট করে বলা হয় ।

কমিশনার মিঃ মুখার্জীর হাত থেকে ফোন নিয়ে বললেন - সাহেব ! সাংঘাতিক ভাবে ফেঁসে গেছি ।

- কি হয়েছে স্যার ? খুলে বলুন তো !

- টিভি নিউজ দেখেননি ?

- না সাহেব । আজ একটা ব্যাপারে গোলপার্কে যেতে হয়েছিল ।

- আগে নিউজ খুলে ভিডিওটা দেখুন। আজকের ওটাই প্রধান খবর । কে যে এমন কাজ করল যে আদালত পর্য্যন্ত কেসটা গড়িয়ে গেছে ।

- তাতে আপনার কি ?

- আরে মশাই, কেন বুঝতে পারছেন না; আমরা তিনজন ওতে জড়িয়ে আছি ।

- কে কে ?

- আমি, মুখুজ্যে, ভটচাজ । একটু টানাটানি করলে এস ডি পি ও বারাসতও ফাঁসবে । আপনি এখন ঠিক কোথায় আছেন ।

- চিনার পার্কে এক আত্মীয়ের ফ্ল্যাটে । বলেন তো আমি না হয় আসছি আপনার কাছে ।

ভীত হয়ে কমিশনার বললেন - খবরদার না । আপনি একদম আসবেন না । আমরা এখনই আপনার ওখানে যাচ্ছি ।

বড়দা আমার দিকে চেয়ে বললেন - কমিশনার সাহেব এই ফ্ল্যাটে আসবেন বলছেন ।

আমি বললাম - আসুন । আমরা সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি ।

বড়দা কমিশনারকে বললেন - ওকে স্যার । চলে আসুন । কিন্তু অন্তত ঘন্টাখানেক সময় দিন। ঘরদোর গোছাতে।

- কিছু করতে হবে না মিঃ রায়চৌধুরী! আমরা এখনই আসছি ।

বড়দা বুঝতে পারলেন ওঁদের বিপদ কোথায় । কিছুক্ষণের জন্য গুম হয়ে বসে রইলেন । সেই ফাঁকে আমরা সবাই মিলে যতটুকু পারলাম বাড়ীটা সাজিয়ে নিলাম । বুকুন বাজার থেকে খাবার অর্ডার করে দিল ।

বড়দা টিভি নিউজ দেখলেন। খুঁটিয়ে ভিডিওটাও দেখলেন । মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং ঝুনঝুনওয়ালার আলোচনা দেখতে দেখতে এক জায়গায় তাঁদের চারমূর্তিকেও দেখতে পেলেন ।

তিনি ডক্টর ভরদ্বাজকে ফোন করে চিনার পার্কে তাঁর কাছে আসতে বললেন। এও জানালেন যে কমিশনার সাহেব সদলবলে আসছেন আপনার সঙ্গে এখানে কথা বলতে ।

ডক্টর সাহেব শুনে বললেন - এবার দেখি কত ধানে কত চাল হয় ।

বড়দা বুঝে গেলেন কাজটি ডক্টর ভরদ্বাজের। তিনিই ইউটিউবে ভিডিওটি আপলোড করে দিয়েছেন । এতে তাঁর উদ্দেশ্য বোঝা না গেলেও প্রতিহিংসাপরায়ণতার একটা পরিচয় পেয়ে গেলেন।

যাই হোক, ওঁরা সবাই আসছেন । তাঁদের বসার আয়োজন করা হয়েছে একটা বেডরুম খালি করে দিয়ে । চেয়ার টেবিলে জামা পরানো হয়ে গেছে । অভ্যর্থনার কোন ত্রুটি নেই । শুধু কমিশনারের পদমর্য্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আয়োজন হল কি না তা' বলতে পারব না ।

কমিশনার সাহেব আসার আগেই ডক্টর ভরদ্বাজ পৌঁছে গেলেন । আমি ওঁকে বড়দার কাছে নিয়ে গেলাম ।

বড়দা বললেন - ডক্টর ভরদ্বাজ! ব্রাভো ! আপনি এক্ষণে একটা মহৎ কাজ করেছেন।

ভরদ্বাজকে আসলে খুশী করার জন্যই কথাগুলো বললেন বড়দা ।

ডক্টর ভরদ্বাজ বললেন - আমাকে এরেস্ট করা ! এবার বুঝুন কি হয় না হয় ।

বড়দা বললেন - কিছুই হবে না । মাঝখানে আপনি আপনার বিপদ ডেকে আনলেন।

- কি রকম ?

- দেখতেই পাবেন। আপনি যে কাজটি করলেন আশা করব আপনি শত প্ররোচনা সত্বেও স্বীকার করবেন না ভুলেও । এটা শুধু কমিশনারের সঙ্গে নয় ; আপনি দু'দুটো রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছছন । কেস আদালতে । সত্যাসত্য নির্ধারণে ভিডিওটি হায়দ্রাবাদে সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবে চলে গেছে। যদি জেনে যায় কাজটি আপনার; তবে আপনি বেঁচে থাকবেন কি না , তা নিয়ে সন্দেহ আছে ।

- সাহেব ! আমার প্রাণের চেয়েও আত্মসম্মান বড় ।

- তাই যদি হয়, তবে মিঃ ঝুনঝুনওয়ালার প্রস্তাবে রাজী হয়েছিলেন কেন ? তখন আপনার কিসের ভয় ছিল ? প্রাণের ? মানের ? না মনের ?

ডক্টর সাহেব চুপ করে গেলেন ।

বড়দা বললেন - ওঁরা প্রায় এসে গেছেন। আপনি এক কাজ করুন; পাশের রুমে চুপচাপ বসে থাকুন। যেন ওঁরা টের না পান আপনি এসেছেন।

আমাকে সঙ্গে দিয়ে ওঁকে পাশের রুমে পাঠিয়ে দিলেন এবং তিনি নীচে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালেন । পুলিশের কনভয় এপার্টমেন্টের গেটে ঢুকে পড়ল ।

( চলবে )


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime