Nityananda Banerjee

Crime Thriller

4  

Nityananda Banerjee

Crime Thriller

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

আকাশের রঙ ফ্যাকাশে

5 mins
290


ঊনসপ্ততিতম অধ্যায় 

বারাসতের এস ডি পি ও , গোবরডাঙা থানা এবং হাবড়া থানার ওসি, সার্কেল ইন্সপেক্টর সকাল সকাল হাজির হয়ে গেছেন মসলন্দপুর পুলিশ ফাঁড়িতে। ফাঁড়িটি একজন সাব-ইনস্পেক্টরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এত সকালে বড় বড় অফিসাররা এসে ভীড় জমিয়েছেন দেখে এস আই মহম্মদ সেলিম ভয় পেয়ে গেলেন ।

এস ডি পি ও সাহেব তাঁকে বললেন - এই ফাঁড়িতে কতজন পোস্টিং আছেন ?

- স্যার আমাকে নিয়ে মোট একুশ জন । 

- সকলকে এখনই ডেকে নিন । লালবাজারের সাহেবরা আসছেন ।

- আমি এক্ষুণি ডেকে পাঠাচ্ছি স্যার । আপনারা প্লীজ বসুন ।

বলে নিজেই চেয়ার এনে বসালেন । একজন কনস্টেবলকে সাহেবদের জন্য চা জলখাবারের ব্যবস্থা করতে বললেন ।

এস ডি পি ও সাহেব বাধা দিয়ে বললেন - আমরা এখানে আতিথ্য নিতে আসিনি। আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না । সাহেবরা এলেন বলে ।

কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা চারমূর্তি শিউলিকে নিয়ে ফাঁড়িতে ঢুকলাম । সব পুলিশেরা লাইন দিয়ে সেলাম ঠুকতে লাগল ।

আমরা একে একে গাড়ি থেকে নেমে ওদের সামনে দাঁড়ালাম ।

মিঃ মুখার্জী শিউলীকে বললেন - দেখ তো মা ! এঁদের মধ্যে কোন কোন জন তোমাদের বাড়ীতে তাণ্ঢব করে এসেছেন?

সেলিমসহ সকলেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন । পুলিশি ভাষায় একে নাকি টি আই প্যারেড বলে । জীবনে প্রথম বার পুলিশের সামনে পুলিশের টি আই প্যারেড চাক্ষুষ করলাম ।

শিউলি একে একে সকলকে দেখতে লাগল । প্রথমেই মহম্মদ সেলিমকে দেখিয়ে বলল - এনার নির্দেশে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আমাদের উপর । 

মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্য‌‌‌ নাম নোট করে নিলেন। তারপর শিউলি পাঁচ জন কনস্টেবলকে সনাক্ত করল বাড়ীর পুরুষ নারী নির্বিশেষে লাঠি ,লাথি, কিল, চড়, ঘুঁষি মারার অভিযোগে ।

তাঁদের আলাদা জায়গায় দাঁড়াতে বলা হল । 

মিঃ মুখার্জী প্রশ্ন করলেন - মিঃ সেলিম, আপনি কি কারণে এঁদের উপর লাঠিচার্জ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন? কোন অফিসারই বা আপনাকে এ ভাবে অত্যাচার করতে বলেছিলেন?

সেলিম বললেন - স্যার দু'জন দুষ্কৃতীকে ওঁরা আশ্রয় দিয়েছিলেন।

- কোন দু'জন দুষ্কৃতী ? দেখুন তো তাঁরা এই দু'জন কি না ?

বলে বীরেশ্বর এবং ত্রিলোকেশ্বরের দুটো ছবি দেখালেন।

সেলিম বললেন - একদম ঠিক স্যার । এই দু'জনই ছিল ।

মিঃ মুখার্জী ধমক দিয়ে বললেন - ওঁরা আদপেই ওদের বাড়ী যাননি । কার কথায় এমন অনর্থক কারবাই করেছেন?

- স্যার , সমরেশ নামে পুলিশের একজন ইনফর্মার, যে ওদের বাড়ীর বারান্দায় চায়ের দোকান করে তার কথা শুনে আমরা খোঁজ নিতে গেছলাম।

- তাই খোঁজ নিতে গিয়ে ভুরিভোজ করিয়ে এসেছেন ? জানেন এই মেয়েটির বাবা ভেন্টিলেশনে আছেন? ঈশ্বর না করুন , তাঁর যদি কিছু একটা হয়ে যায় তার দায় আপনি নেবেন তো ?

সেলিম মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন । মিঃ ভট্টাচার্য্য বাকিদের জানিয়ে দিলেন কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে সকলকে । 

এস ডি পি ও বললেন - আপাতত আপনাদের পাঁচ জনকেই সাসপেণ্ড করে দেওয়া হল । ফাঁড়ির দায়িত্ব কাকে দেবেন সংশ্লিষ্ট ওসি তা ঠিক করুন ।

বড়দা শিউলিকে বললেন - এবার তোমাদের ইচ্ছানুসারে কেস করতে পার । এঁদের স্বীকারোক্তি তো সবার সামনেই নেওয়া হয়ে গেল । 

মিঃ মুখার্জী সেলিমকে নির্দেশ দিলেন- আগামীকাল আপনাদের পাঁচ জনের জবানবন্দী রেকর্ড করা হবে। আপনারা দুপুর দু'টোর পর পাঁচ জন লালবাজারে যাবেন অন্যথায় এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হবে । 

এমন সময় শিউলিকে কেউ ফোন করে জানাল যে তার বাবার অবস্থার অবনতি হয়েছে ; সে যেন ইমিডিয়েট হসপিটালে চলে আসে ।

শিউলি তো কান্নাকাটি জুড়ে দিল । বড়দাকে বললাম - আমি তা'হলে ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাই ।

বড়দা বললেন - হ্যাঁ ভাই । তুই ওর সঙ্গে যা । আমাকে এঁদের সঙ্গে লালবাজারে যেতেই হবে ।

ওঁরা চলে গেলেন। আমি আর শিউলি ক্যাব বুক করলাম। হঠাৎ এস ডি পিও সাহেব বলে উঠলেন - মিঃ সেলিম! আপনারা পাঁচ ঝন আসুন আমার সঙ্গে । 

বলে গোবরডাঙার ওসিকে বললেন - এরেস্ট দেম ।

আমরা দেখলাম ওদের পাঁচ জনকে ওসি সাহেব প্রিজন ভ্যানে ওঠালেন এবং একজন সিনিয়র কনস্টেবলকে সাময়িক ভাবে ফাঁড়ির দায়িত্বে রেখে গেলেন।

যা বোঝার বুঝে গেলাম । মিঃ মুখার্জী আগেই খবর পেয়ে গেছেন কমলবাবু মানে কমলকান্তি রায় মহাশয় অলরেডি গত হয়ে গেছেন । বড়দা হাসপাতালে খবর নিয়েছিলেন; তখনই জেনে গেছেন কিন্তু শিউলি বা আমাকে বলেননি ।

হাসপাতালে গিয়ে শিউলি সব জেনে গেল । আমি তরুণকান্তিকে ফোনে জানিয়ে দিলাম । ওঁরা হয়তো এখনই এসে পড়বেন। আমি এদিকের সিচুয়েশন কন্ট্রোল করছি আর ওদিকে বড়দাকে নিয়ে মিঃ মুখার্জী এবং মিঃ পরমেশ্বর ভট্টাচার্য্যও চললেন খিদিরপুরের দিকে । 

খবর আছে ববি আফসার নামের জনৈক সুপারি কিলার এখন খিদিরপুর ডকের কাছাকাছি কোন স্থানে আড্ডা দিচ্ছে । এই ববি আফসার বীরেশ্বর রক্ষিতের পোষা গুণ্ডা । তাকে ধরতেই নাকি লালবাজারের এই অভিযান । 

পরে শুনেছি বড়দার জন্যই নাকি ববিকে ধরা সহজ হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি ।

ফিরে এল সেই অভিশপ্ত রজনীর স্মরণিকা । লঙ্কেশ্বর যখন আদেশ করলেন - কে আছিস ? ববি ? আসলাম? কেউ এখনই ভায়াগ্রা নিয়ে আয় । 

এগিয়ে এসেছিল এই ববি আফসার । বলেছিল - ভায়াগ্রা তো নেই সাব । টিকটিকির তেল আছে - আনব ? 

দাঁত খিঁচিয়ে লঙ্কেশ্বর বলেছিলেন - ছ্যা: , ওটা কি খাওয়ানো যাবে ।

- না স্যার , ওই তেল মালিশ করে দিলেই কেল্লা ফতে। পাকিস্তানীরা এখন ভায়াগ্রার বদলে টিকটিকির তেল দিয়ে পুরুষাঙ্গ মালিশ করে ।

লঙ্কেশ্বর বললেন - ও সব তোর কাছেই রাখ । আসলামকে বল এখুনি দোকান থেকে যে কোন উপায়ে যেন নিয়ে আসে । ব্যাটাচ্ছেলের জেদ আমি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব ।

এই সেই ববি আফসার । যার কাজই হল টিকটিকির তেল সাপ্লাই দেওয়া । সুপারি কিলারদের নাকি এটা ভীষণ প্রিয় ।

যাই হোক তিনটে প্রিজন ভ্যান নিয়ে ওঁরা গেলেন ডক ইয়ার্ডে । মিঃ মুখার্জী বললেন - শালাকে তো আমরা চিনি না ; খাতায় নাম আছে কিন্তু ছবি তো নেই !

মিঃ ভট্টাচার্য্যও দুশ্চিন্তায় পড়লেন । বড়দা বললেন - নামটা আমার শোনা শোনা মনে হচ্ছে । ভাই বলেছিল লোকটার কথা । চেহারার বর্ণনাও দিয়েছিল । ঝাঁকড়া কোঁকড়ানো চুল, গোঁফ ছুঁচলো, দাড়ি মোল্লাদের মতই , কিন্তু মাথায় ফেজের বদলে ফেট্টি বাঁধা । লম্বা চওড়া ফিগার । অন্তত ছয় ফুট তো হবেই । দু'চোখে সবসময় কেমন যেন হিংস্রতার ছাপ । একটা হাত কব্জি থেকে কাটা পড়েছে । হয়তো বোমা ছুঁড়তে গিয়ে হাতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় । গায়ের রং - বড়দা মনে করার চেষ্টা করলেন কিন্তু স্মরণ করতে পারলেন না। 

সবার অলক্ষ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল বড়দার বর্ণনা শুনে ছবি এঁকে ফেলল । এগিয়ে এসে বড়দাকে দেখিয়ে বলল - দেখুন তো স্যার এমনই দেখতে কি না ?

বড়দা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে বললেন - সাবাশ ! এ তো দেখছি কলকাতা পুলিশ স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের চেয়েও বেশী দক্ষ । 

তিনি ছবিটা মুখার্জী সাহেব এবং ভট্টাচার্য্য সাহেবকে দেখিয়ে বললেন - ফটোকপি বিলিয়ে দেবার বন্দোবস্ত করুন সব পুলিশ কর্মচারীদের মধ্যে । সাদৃশ্য পেলেই যেন খবর দেয় যথাস্থানে ।

পঞ্চাশ কপি জেরক্স নিমেষে বিলিয়ে দেওয়া হল । আর সাদা পোষাকে পুলিশের দল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল ।

বড়দা এবং ওঁরা দু'জন একত্রে জোট বেঁধে ডকের দিকে চললেন। খুবই স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বড়দারা জনস্রোতে মিশে গেলেন ।

( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime