STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Classics Crime

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Classics Crime

আজানা পথে( পর্ব - ৩৬ )

আজানা পথে( পর্ব - ৩৬ )

3 mins
380

ঘরের কপাট লাগিয়ে বিছানায় ময়নাকে বিনয় শুতে বলল, তার পর ময়নার শাড়ি শায়া কোমরের উপর অবধি তুলে অভি চমকে গেল। যোনির উপরের অংশে বড় ক্ষত,তার সারা যৌনাঙ্গ ফুলে আছে বীভৎস ভাবে।


বিনয় বিচলিত হয়ে দরদী স্বরে জিজ্ঞেস করল , "এত কষ্ট যন্ত্রণা চুপচাপ সহ্য করে আছো! ধন্য তোমার সহ্য শক্তি।খুব যন্ত্রণা হচ্ছে?"


"না দাদা এখন আর যন্ত্রণা নেই খুব আড়ষ্টভাব আছে।ম্যাডাম কাপড় উপর থেকে তলপেটের নিচে টিপতেই চমকে কষ্টে কেঁদে ফেললাম।তারপর উনি এত আমার কষ্ট যন্ত্রণা কেন জিজ্ঞেস করে কাপড় তুলে ক্ষতস্থানটা দেখলেন"


বিনয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল"তুমি ভীষণ অন্যায় করেছ। প্রথম দিনই আমাকে বললে অনেক ভাল করতে।"


"সেদিন আমার খুব কষ্ট যন্ত্রণা ছিল আমার খুব ভয় করছিল দাদা,আপনি যদি এই ক্ষত কোন খারাপ রোগ ভেবে আশ্রয় দিতে রাজী না হতেন।আমি বোরোলিন আর নারকেল তেল লাগাছিল্লাম।একটু একটু ভাল হচ্ছিল।"


"পাগল মেয়ে, এসব ডাক্তার না দেখিয়ে সাড়ে!তোমার গালে একটা ঠেসে চড় মারতে ইচ্ছা হচ্ছে! কতটা যে বিপদে আমাকে ফেললে বুঝবে না।যদি আবার খারাপ কিছু হয়!"


"দাদা ক্যান্সার!"


"চুপ করো ঐ নাম শুনলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়।"


"আমি বুঝেছি দাদা আপনার কষ্ট আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে,আমার কোন আচরণে রাগ হলে আমাকে বকুন মারুন আড়ালে,গোপালের সামনে ও ভাবে বকবেন না দাদা ।ও তখন খুব ভয় পেয়েছিল।"


"হ্যাঁ আমার এভাবে হঠাৎ রাগা ঠিক হয়নি।আসলে এটাই আমার বদ স্বভাব আচমকাই খুব উত্তেজিত হয়ে যাই।ভাবছিলাম ম্যাডাম আমাকে কী ভাববে!রাগটা হঠাৎ হয়ে গেল তুমি যে অসুস্থ ভুলে গেলাম। আমি খুব সরি ময়না।"


"আমার এক হিন্দু দিদি বলছিল, শিব এমন শান্ত আর সতীর দেহ ত্যাগের পরে এমন রেগে দক্ষযজ্ঞ চুরমার করে সতীর দেহ কাঁধে নিয়ে পৃথিবী উপর তান্ডব নৃত্য শুরু করেন। বিশ্ব বুঝি ধ্বংস হয়। তার পর বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ কেটে কেটে শিবের অজান্তেই সারা সতীর দেহ মর্তে বাহান্ন স্থানে ফেলেন ,সেসব আজ সতীর বাহান্ন পীঠ। কত শান্ত শিষ্ঠ শিব কত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। ভাল মানুষ রাগলে এমন ভীষণ রেগে যায়। আপনি যেন শিবের মত!" ময়না প্রসন্ন মনে হাসল।


বিনয় একটু কৌতূহল নিয়ে বলল,


"তোমার ঐ দিদি বুঝি খুব ধর্মটর্মর বই পড়তেন!"


"উনি ভীষণ পড়াশোনা করতেন, কত জ্ঞান দিতেন বলতেন,কী করবি,মানুষ শকুনীকে ঘৃনা করে,কিন্তু তারা যদি ভাগাড়ের মাংস পচা না খেয়ে পরিস্কার করত কত রোগ জীবাণু ছড়াত।আমরা না থাকলে কিছু নারী লোলুপ কামুক মানুষ ভদ্রঘরের বৌ মেয়ের দিকে নজর দিত তাতে সমাজের ক্ষতি হত।আমরা শত অপমান ইজ্জত ছেড়ে ঐ সব কামুক মানুষের বিকৃত কত স্বাদ মিটাচ্ছি তাই সমাজের মঙ্গল। নিজের পেশা নিয়ে মন খারাপ করবি না।"


"তোমার ঐ দিদির বয়স কত !"


"উনি বলেন পঁয়ত্রিশ তবে দেখে পঁচিশ মনে হত এত সুন্দর গড়ন, আর মুখে সৌন্দর্য, বলতেন চার পাঁচ বছর আমি সর্বমঙ্গলা মায়ের পুজো করছি তারপর থেকে মনে অনেক শান্তি পাই, জীবনের একটা মানে খুঁজে পাই।ওর কাছে তিন জন বাঁধা খদ্দের আসে তারাও একটু বয়স্ক।ওর কাছে দেহ ভোগের চেয়েও গল্প করতে আদর যত্ন পেতে ভাল বাসে। ঐ দিদি তাদের একজনকে ভালবাসে।তার আর্থিক সচ্ছলতা আছে বৌ মাঝ বয়সে অন্যের সাথে পালিয়ে গেছে।একটা ছেলে আছে রামকৃষ্ণ মিশনে পড়াশোনা করে। ঐ দিদিকে অনেক বার তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন।দিদি রাজী নয় ,বলেন ,একটু বয়স হলে কাশী বা বৃন্দাবন চলে যাব, সংসারে ঢুকছি না।এই পাপ কাজ করে আবার সংসার!ওর মনে কবে আমার পূর্ব কাজকর্ম স্মরণ করে ঘৃণা তাচ্ছিল্য আসবে সেদিন ঝাঁটা মেরে যে আমাকে ঘর থেকেই তাড়াবে না বিশ্বাস কী!সংসার বড় নির্দয় নিষ্ঠুর। এই একক জীবন ঈশ্বর নিয়ে আছি, অনেক ভাল। "


"ঐ দিদি ইতিহাস জানো!এত জ্ঞান নিশ্চয় কোন বড় ঘরে মেয়ে ছিল।"


"সব কথা ঠিক বলেন না।উনি ভালো ঘরের মেয়ে ছিলেন ,মা বাবার অমতে এ ছেলেকে ভালবেসে বাবা মাকে লুকিয়ে পালিয়ে আসেন। ছেলেটা তার গহনা যতদিন ছিল ওর সাথে ঘর করে ।পরে ওকে একদিন নেশাগ্রস্ত করে কোন এক তার পরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে বেশ্যাপল্লিতে বেচে দেয়।ও এমন বিশ্বাসঘাতকতা বেইমানি দিদি ভাবতে পারেনি।এই সব একদিন খুব দুঃখ করে বলছিল।আর বাড়ি যেতে পারেনি। যাবার মুখ নেই।"


"তোমার মত এত কষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে নিশ্চয়ই!


"প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হয়েছিল আমার মতই কত কষ্ট নির্যাতন সহ্য করে।এখন ও স্বাধীন নিজের ভাড়া ঘরে থাকে। ওর এক খদ্দের খুব ধনী সমাজে প্রভাবশালী। মস্তান গুলোই তাকে ভয় পায়।"


          ক্রমশ 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics