STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

4  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Classics

আজানা পথে পর্ব - ৩

আজানা পথে পর্ব - ৩

3 mins
373


বিনয় একটু যেন ভাবুক হয়ে পড়েছিল। 

ময়না বলল,বাবু ওকে আর আয়া রাখেন নি তো।

কী সাংঘাতিক লোভী মহিলা,মা মরা শিশুর খাবার চুরি করে খেতে! ভাবতে ঘৃনা হয়।


 তিনমাস পর ঐ আয়াকে তাড়ালাম।শালীকে বিয়ে না করলেও আমার বাড়িতে থাকতে বললাম।ওর বাবা মা রাজী ছিল ,শালী রাজি নয় বলল এতে ওর সমস্যা হবে। আপনি যত ভালোই হোন, অন্য মানুষজন আমাকে খারাপ চোখে দেখবে।ভেবে দেখলাম কথাটা সত্য, আমার ছেলের জন্য তার জীবনে সমস্যার কারণ হোক চাই না।"


"এখন ছেলেকে কে দেখে!"


"এক বয়স্কা আয়া রেখেছি ঠিক ঠাক যত্ন হয না।মাঝে মাঝেই ছেলেকে ওর মামার বাড়ি দিয়ে আসি।এবার আমার এক কলিগ শক্তিগড়ের কাছে এই আবাসিক শিশুদের ইস্কুলের সন্ধান দিল।"


ময়না যতই বলুক রাত করে ঘুম আসে না! সেটা মনে হয় তার পেশা গত কাজের ব্যস্ত থাকলে,ঘুম তো না আসাই স্বাভাবিক। বিনয়ের এইসব একান্ত তার ব্যক্তিগত জীবনের গল্প শুনতে শুনতে তার এক ঘেয়েমীতে ঘুম আসা স্বাভাবিক। 


ঘুম ঘুম সুরে বলল ,"আপনার শালী আমার মতই বয়স আপনার হিসাব শুনে মনে হল।আপনার যাই বয়স হোক, বেশ কম মনে হয় ,আর কী সুন্দর দেখতে আপনি।"


"তোমার মনে হয় ঘুম আসছে,হাঁই উঠছে চোখ ঘুমে বুঝে ছোট হয়ে গেছে, তুমি ঘুমাও।"


"না না আপনি একা জেগে থাকবেন কেন! আমি চোখে জল দি ঘুম পালাবে।"


"এতে তোমার শরীরের কষ্ট হবে।আমিও এবার ঘুমাব,তুমি শুয়ে পড়ো।"

ময়না ঘুমোচ্ছিল খুব নিশ্চিন্তে, অজানা অচেনা নানান প্রবৃত্তির না বয়সের পুরুষ তাদের এক রাত এক বিছানায় কী না করে! চরম বিকৃতি! এই এক কথায় অনেক মানে অনেক কষ্ট যন্ত্রণা যেন ময়না বলতে চেয়েছিল,মুখে কষ্ট যন্ত্রণার ফুটে উঠেছিল। আবার ভালো মানুষ আছে! তারা কেন আসে! বিপত্নিক না অবিবাহিত বা স্ত্রীতে পরিতৃপ্ত নয় বা স্ত্রীর উপেক্ষা বা স্ত্রী পর পুরুষগামী স্বামীকে সঙ্গ দেয় না। কিন্তু সংযত নয় সংযমী নয়, ব্যক্তিত্ব হীন, নারী সঙ্গ ছাড়া তাদের জীবন যেন অসম্পূর্ণ। বিনয়ের পেশাগত অভিজ্ঞতায় এমন কত কেশ রেকর্ড করেছে।"


মেয়েটা ভীষণ সমীহ করে এমন বিছানার একপাশে শুয়ে আছে, যেন খাট থেকে পড়েই যাবে। বিনয় আর লজ্জা সমীহ করেনি। গাড় ঘুমে আচ্ছন্ন ময়নাকে দুহাতে তুলে বিছানার মাঝে যত্ন করে শুইয়েছিল।হালকা নরম নারীর শরীর যেন তার স্ত্রীর স্মৃতি মনে করাচ্ছিল।ফুলশস্যার রাতে নমিতা প্রথম খুব লজ্জা আড়ষ্ঠতা আর লাজুক নিরীহ ভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখে।


বিনয়ের দুষ্টমীতে নিজেকে সে এক সময়ে চরম উত্তেজনা আবেগে হারিয়ে ফেলে। ভোরের সময় নমিতা এভাবেই খাটের একপাশে গাড় ঘুমে আচ্ছন্ন বিনয় তাকে তুলে খাটের মাঝে শুইয়েছিল ।আজ যেন তার পুনরাবৃত্তি তবে সেদিন আপন স্ত্রীকে প্রথম রাতে আদরে সোহাগে সম্ভোগে খুব আপন করে ছিল। আজ তার সাথে ময়নার গল্প করছিল তার বিলাপ স্ত্রী হারানোর যন্ত্রণা মাতৃহারা সন্তানের জন্য চিন্তা আবেগ তার সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধান এই সব পরিকল্পনা ময়না শুনেছিল। 


ময়না বুঝতে পারল ঘুম থেকে উঠে। তাকে বাবু ঘুমের মধ্যেই বিছানার মাঝে শুইয়েছিল। একটু পরিতৃপ্ত মুখে ভাবল বাবুর পবিত্র মনে ছোঁয়ায় তার পাপী শরীর হয়ত মুক্ত হল। অহল্যার কাহিনী সে তো জানত।

একটু ভোরের আলো ফুটতে বিনয়ের পায়ের তলায় যেন কেউ মালিশের মত আরাম করে দিচ্ছ। তাড়াতাড়ি বিনয় বিছানায় উঠে বসে। ময়না বলে,


 "আপনি খুব ঘুমিয়ে গেছিলেন বাবু ,আমি এবার যাব।"

কেমন থাকিয়ে থাকতে দেখে বিনয় বলে,"তোমার টাকা!"

ময়না বলল,

"টাকা নিতে ভীষণ লজ্জা করছে বাবু।"


 তোমার দোষ কী! একরাত তোমার তোমার সময় তো কিনেছি, কী করব সেটা তোমার হাতে নেই।" তারপর বিনয় তার মানি ব্যাগ থেকে পাঁচ টাকা আর সঙ্গে আরও দুশো টাকা দিল।


"এই দুশো কেন বাবু!"


"তুমি যে বললে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত তুমি নিজের ভাড়া নিজের টিকিট করবে।আগাম দিলাম।"


"আপনার বাবু ফোন নম্বরটা দিন।"

ময়না একটা মোবাইল কোমরে কাপড়ের ভাঁজ থেকে বের করল।

"তোমারা মোবাইল রাখো!" বিনয় জিজ্ঞেস করল। 


"খুব দরকার হয় বাবু।একবার এক খদ্দের মাল খেয়ে এমন শুরু করেছিল, মেয়েটা ভয়ে বাথরুমে খিল লাগিয়ে মালিককে ডেকে রক্ষা পায়।কত যে বিচিত্র মানুষ আছে আপনি কল্পনা করতেও পারবেন না।"

ময়না একটু মুখ নামিয়ে বিনয়কে আচমকাই প্রনাম করল,বিনয় বিব্রত। মাথায় স্নেহের হাত রাখল। 

"আজ বাবু আসি বলে ময়না ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে নিচু মুখে দাঁড়াল।

বিনয়ের মনে হল মেয়েটির চোখে জল।"


ময়না বলল "আপনাকে প্রনাম করে আমি খুব খুশী হলাম।আমি তা হলে সাড়ে নটার মধ্যেই প্লাটফর্মে চলে যাবো,নটা পঞ্চাশের পর মেন লোকাল ছাড়ে ঐ ট্রেনে মহিলা কামড়ায় যাব।আপনাকে গিয়ে সংকেতে বুঝিয়ে দেবো।ওদের যে হাত খুব লম্বা।"


বিনয় বলে ,"আমি সব জানি।"

"আপনি কী কাজ করেন! সরকারী!"

"সব পরে বলব আগে এখন থেকে আমার এলাকায় চলো।ওরা তারপর আর কিছুই করতে পারবে না।"

ময়না আর দাঁড়াল না, বাইরের বারেন্দা বরাবর চলে গেল। 


               ক্রমশ 


  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy