Manasi Ganguli

Tragedy Others

4.1  

Manasi Ganguli

Tragedy Others

আইরিন

আইরিন

2 mins
408


 

আইরিন


   পড়াশোনার জন্য চা-বাগান ছেড়ে শহরে আসতে হয়েছে সুমনকে। বাবা নতুন বাড়ি কিনেছেন সেখানে,প্রথম সুমনই গিয়ে থাকতে শুরু করে বাড়িতে। এক প্রৌঢ়ামহিলা তার সব কাজের দায়িত্ব নেন। একা একা সুমনের এখানে ভালো লাগে না। চা-বাগানের পরিবেশে বড় হয়েছে,জঙ্গল,নদী তার বড় আপন। ছোট থেকেই বন্ধুদের সাথে দলবেঁধে নদী পেরিয়ে জঙ্গলে গিয়ে গাছ থেকে কুল পেড়ে আনত। ভরপুর প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা ছেলেপুলের দল,ভয়-ভীত ছিল না মোটেই,জঙ্গল থেকে হাতি যখনতখন বেরিয়ে আসত নদীতে জল খেতে,এছাড়া জঙ্গলে হিংস্র জন্তুও ছিল। 


    শহরে এসে ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি বাড়ি,গাছপালা তেমন নেই,দেখে ভাল লাগে না সুমনের। এখানে কয়েকজন বন্ধু হয়েছে যদিও ওর কিন্তু ফেলে আসা বন্ধুদের মত প্রাণের ছোঁয়া পায় না যেন। বন্ধুরা বলে,"কেমন লাগছে তোর আমাদের শহরে?"" মন বসে না রে,কেবলই মনে হয় চা-বাগানের বাড়ির কথা,বন্ধুদের কথা,ওখানকার জঙ্গল নদীর কথা।"বন্ধুরা রসিকতা করে, "ও আমাদের তাহলে পছন্দ হয়নি তোর"। " না রে,সে কথা নয়,ছোটবেলার বন্ধুদের ছেড়ে আসতে কষ্ট তো হয় বল। আর ওখানে আমাদের চা-বাগানের বাড়িগুলো অনেকটা জায়গা জুড়ে,সামনে ফুলের বাগান,তারপর ঘর,বড় উঠোন পেরিয়ে বিশাল রান্নাঘর ও খাবারঘর,কোণে বড় বাথরুম। ইংরেজ আমলে তৈরি। পিছনে বিশাল বড় সবজি-বাগান। বাড়ির গা-ঘেঁসে চলে গেছে ড্রাইভওয়ে,সোজা গ্যারেজে। গাছে সবজি ফলমূল পর্যাপ্ত,মালি এসে সব পরিচর্যা করে। বাড়িতে আমার দুটো কুকুর আছে,বাঘা ও আইরিন,বড্ড প্রিয় আমার,ওদের জন্য খুব মন কেমন করে। ওদের দুজনের ঘাড়ের ওপর পা তুলে ছোট থেকে পড়ার অভ্যাস আমার আর কুকুর দুটোও খুব উপভোগ করে এটা,চোখ বুজে আমার পায়ের তলায় শুয়ে থাকে দুজনে। জানি ওরাও কষ্ট পাচ্ছে আমায় ছাড়া।"বন্ধুরা সায় দেয়,"তা ঠিক "।


     এসব ছেড়ে এসে সুমনের মন টেঁকে না,ওদিকে মায়ের শরীরও ভালো থাকে না আজকাল,দিদির বিয়ে হয়ে গেছে,দাদা কর্মসূত্রে অন্যত্র,কুকুর দুটোও মনখারাপ করে ঘুরে বেড়ায়,ওকে খোঁজে সর্বদা। মায়ের পক্ষে সামলানো দায়,তাদের ঠিকানা হল তাই অন্যত্র। এর প্রায় সাতবছর পর সুমন একবার চা-বাগানে গিয়ে পাশের চা-বাগানে বন্ধু উজ্জ্বলের বাড়ি দেখা করতে যায়।ওদের বাড়ি গিয়ে কুকুর দেখে আদর করে সুমন,বাঘা আর আইরিনের জন্য মনটা কেমন করে ওঠে,আর কুকুরটাও ছটফট করতে শুরু করে,ওর প্যান্ট কামড়ে টানাটানি করতে থাকে,সুমন বাধ্য হয়ে চেয়ার ছেড়ে ওঠে। কুকুরটা ওর প্যান্ট কামড়ে টেনে নিয়ে যায় যেদিকে সুমন সেদিকেই যায়,তারপর থামল গিয়ে যেখানে চারটি ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। ও বসে আদর করতেই মা কুকুরের কি আহ্লাদ,ওর অঙ্গভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে। সেইসময়ে উজ্জ্বলের বৌদি সেখানে এসে পড়ায় সুমন বলে,"দেখো বৌদি, আমাকে ওর বাচ্চা দেখাতে নিয়ে এল "। বৌদি বললেন,"তুমি চিনতে পারলে না সুমন,ও তো তোমার আইরিন,তাই তোমাকে ওর বাচ্চা দেখাতে নিয়ে এসেছে"। সুমনের বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল এতদিন পর আইরিনকে দেখে,আর আরো কষ্ট হলো এই ভেবে যে ও চিনতে পারেনি কিন্তু আইরিন ওকে ঠিক চিনেছে। সুমনের গলা বুজে গেছে,কথা বলতে পারছে না,দুচোখ ছাপিয়ে জল গাল বেয়ে নেমে এল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy