Pronab Das

Classics

2  

Pronab Das

Classics

আগন্তুক ।

আগন্তুক ।

3 mins
922


কিষান গঞ্জে সদ্য পোস্টিং হয়ে এসেছে রামলাল পান্ডে। রেলের চাকরীতে এই একটা সমস্যা। বর্ষার সময় লটবহর নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার, ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগে। কানাইলাল, সুধামনি আর বার বছরের চিন্টুকে নিয়ে তার পরিবার। স্টেশনের পাশে আরও অনেকগুলি একই রকম একতলা কোয়ার্টার আছে। তার কিছু বন্ধ, কিছুতে লোক থাকে। চিন্টুর কিন্তু এলাকাটি পছন্দ হয়নি। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা, প্রানহীন। সন্ধ্যের পর এখানে লোকজন কম চলাচল করে। দোকান বাজারও একটু দূরে।  


এমনিতে সব ঠিকঠাক মনে হলেও কানাঘুষায় রামলাল জানতে পারল বর্ষার সময় বিশেষ করে শ্রাবণ মাসে সন্ধ্যের পর কেউ বাইরে বের হয় না অথবা সন্ধ্যের পর কেউ এলে তাকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এইতো সেদিন সিনিয়র গ্রুপ ডি স্টাফ চৌবেজী ঘটনাটি খুলেই বললেন…….


আজ থেকে বেশ কয়েকবছর আগের কথা। ছিনতাই বাজদের আখড়া ছিল এই কিষানগঞ্জ স্টেশন এলাকাটা। খুন জখমের ঘটনাও দুএকটা ঘটত মাঝে মধ্যে। একবার এক বিশ্ৰী শ্রাবনী সন্ধ্যায় এলাকার এক কুখ্যাত দলের মাথাকে অন্য দলের লোকেরা তারা করে এদিকে নিয়ে আসে। তারা খেয়ে প্রাণ ভিক্ষার জন্য এঘর সেঘরের দরজায় ধাক্কা মারে একটু আশ্রয়ের জন্য। কিন্তু তাকে আশ্রয় তো দূর দরজার ছিটকিনি খুলে পর্যন্ত দেখেনি। নৃশংসভাবে কুপিয়ে তাকে সেদিন হত্যা করে ওই দুষ্কৃতীরা। তার পর থেকে প্রতিবছরই ওই দুরাত্মা ওই শ্রাবণ মাসে সন্ধ্যার পর এই এলাকায় দোরে দোরে হানা দেয় বিভিন্ন রূপে। কেউ একবার দরজা খুললেই হলো, ভোরের আলো ফোটার আগেই তার ঘাড় ভেঙে ফেলে রেখে যায়। তাই এই এক মাস সন্ধ্যের পর কেউই সদর দরজা খোলে না।


রামলালের কেমন যেন বোকা বোকা মনে হল চৌবেজীর থেকে শোনা কথাগুলি । এটাও সম্ভব এখনকার দিনে!,....কি জানি। চিন্টুর জন্যই বেশি ভয় হয়। তবে সুধামনিকে কোনমতেই এসব বলা যাবে না একেই নার্ভের রুগী। এসব শুনলে আর দেখতে হবে না। ওকে শুধু বলতে হবে চোর চেছড়ের এলাকা, বর্ষাকালে সন্ধ্যার পর দরজা না খোলাই ভাল। এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে রামলাল দুপুরের কাজ সেরে বাড়ির পথে এগোতে লাগল। আচমকাই বুক পকেটে রাখা সাদাকালো টেপা ফোনটা বেজে উঠল। ফোন ধরে জানতে পারল তার ছোটবেলাকার বন্ধু দীনেশ ব্যবসার কাজে ক দিনের জন্য তার কাছে আসছে। মনে মনে বলল… শালা এমাসেই তোর আমার কাছে আস্তে হলো!......আর সময় পেল না? কিন্তু বিপদের আশঙ্কার কথা ভেবে ওকে বলল দিনের বেলায় আসতে, যদি একান্তই সন্ধ্যা হয়ে যায় তবে কাছে পিঠে কোনো থাকার ব্যবস্থা করে নিতে। এদিকে সন্ধ্যার পর যেন কোন মতেই না আসে। ফোনে দীনেশকে সব বুঝিয়ে রামলাল নিশ্চিন্ত হল। 


আজ অফিস থেকে বেরোতে একটু দেরি হয়ে গেছে । তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা দিয়ে সবে বসেছে, অমনি দীনেশের ফোন। দুপুরেই সে এখানে এসে পৌঁছেছে, একটা কাজ সেরেই নাকি আসবে। শুনেই আমি রাতে এখানে আসতে বারণ করলাম। দুবার বুঝিয়ে বলতেই সে ' ঠিক আছে ভাই' ---বলে রেখে দিল।


রাত তখন এগারোটা হবে, আবার দীনেশের ফোন। কাতর সুরে বলল…..


--- ভাই কোন ঘর পাচ্ছিনা । একটা গাড়ী নিয়ে তোর ওখানে যাচ্ছি। বলেই ফোনটা কেটে দিল।


শুনে মাথায় বাজ পড়ল। ঠিক কি করবো বুঝতে পারল না। আধা ঘন্টার মধ্যে গেটের মুখে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ানোর শব্দ কানে এল। সেটা সশব্দে চলে যেতেই দরজায় টোকা মারার শব্দ। একদম চুপ করে থাকল রামলাল। স্ত্রী সুধামনি নার্ভের ওষুধ খেয়ে ছেলেকে নিয়ে পাশের ঘরে ছিটকিনি তুলে অঘোরে ঘুমিয়ে। কয়েক সেকেন্ড পর এবারও টোকা পড়লো দরজায়। রামলাল তখনও পাথরের মত থায় দাঁড়িয়ে। তৃতীয় বার টোকা পড়তেই মনে সাহস সঞ্চার করে বলেই ফেলল …..


--- কে, কে টোকা মারে দরজায়?


---আমি দীনেশ, দরজা খোল ভাই। ভিজে স্যাত স্যাত করছে রে।


সংশয় কাটিয়ে দরজা খুলে দিল। একটা দমকা হওয়ার সাথে সাথে বৃষ্টির ছাটও খানিকটা ঢুকে পড়ল ঘরের ভেতর। বাইরে তখনও মুষল ধারায় বৃষ্টি পরে চলেছে। রামলাল ওকে দ্রুত গামছা আর শুকনো কাপড় দিল। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ থেকে একটা বিলিতি মদের বোতল বের করল। বউ ছেলে পাশের ঘরে থাকায় অসুবিধে হল না। অনেক রাত পর্যন্ত তারা গল্প গুজব করতে করতে কখন যে রামলাল গুমিয়ে পড়েছিল খেয়ালই নেই।


 ভোরের দিকে রামলালের ফোনটা বেজেই চলেছে। সুধামনি সদ্য দরজা খুলে টিভি টেবিলের সামনের থেকে ফোনটা ধরল। অপর প্রান্তে দীনেশর ফোন।


---আমি তোর ঘরের দিকে যাচ্ছি। তুই কোথায় আছিস?


ফোনটা নিয়ে সুধামনি রামলালের কাছে গিয়ে ঠেলা দিয়ে ডাকতেই সোফায় বসা রামলালের ঠান্ডা দেহটা কাত হয়ে হেলে গেল। 


সামনের টেবিলে তখনো পরে আছে দু দুটো আধ খাওয়া মদের গ্লাস আর বেশ কয়েকটা সিগারেটের অবশিষ্ট।।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics