আধুনিক দেবদাস
আধুনিক দেবদাস
আধুনিক দেবদাস
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সুমনের সাথে পরিচয় হয় রাধিকার। একদিন নিজের মুঠোফোনের পাতায় সুমন দেখে রাধিকা শর্মার ছবি। প্রোফাইল ছবি দেখে মনে হয় রাধিকা অতীব সুন্দরী। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় সুমন। সাথে সাথেই পর্দায় ভেসে ওঠে রিকোয়েস্ট ক্যান্সেল। ব্যাপারটা ঘটেছিল ক্ষণিক আবেগের বসে। তাই রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল দেখার পর সুমন ব্যাপারটা ভুলে যায়।
প্রায় দিন ১৫ পর রাধিকা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করো। সোশ্যাল মিডিয়ায় সুমন ও রাধিকার কথাবার্তা
চলতে থাকে। একে অপরের কথার উত্তরে দিতে থাকে লাভ রিয়েক্ট। লাভ রিয়েক্ট থেকেই কথার ছলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার কথা স্বীকার করে। দূরে থেকেও একটা নিবিড় সম্পর্ক তৈরির প্রচেষ্টা চলতে থাকে।
কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয় উত্তেজক কথাবার্তার বিনিময়। রাতের পর রাত আসক্তি ভরা চোখে দুই প্রান্তে জেগে কাটায় দু্জনে। কাছাকাছি না থেকেও স্বপ্নে তারা বাঁধে সংসার। মনে প্রানে লিপ্ত হয় সঙ্গমে। কথার ছলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আসে। নাম রাখা নিয়ে চলে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটি। ছেলের জন্মদিনে অবশ্যই দিতে হয় উপহার।
এবার শুরু হয় চাওয়া পাওয়ার পালা। এত সুখ দিয়েছে রাধিকা। তাই উপহার পাওয়া তার অধিকার। সুমন ছোটখাটো উপহার পাঠিয়ে দেয়। রাধিকাকে দেখার জন্য সুমন প্রেমিক পাগল হয়ে ওঠে। বারবার বলতে থাকে কোথায় গেলে পাবে রাধিকার দেখা। কথার ছলে কুহক মায়াজালে সুমনের প্রস্তাব এড়িয়ে যায় রাধিকা।
এদিকে দিনে দিনে রাধিকার উপহার চাওয়ার পাল্লা ভারী হতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই সুমনের জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সুমন রাধিকাকে দেখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া ঠিকানায় ছুটে যায়। এত বড় শহরে কোন পাড়ায় থাকে তার রাধিকা। এত সমুদ্রের জলে হারিয়ে যাওয়া অলংকার খোঁজা। হেমন্তের ঝরাপাতার মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে সুমন।
মাসের পর মাস সুমনের কেটে যায় ওই শহরে রাধিকার খোঁজে। অবশেষে যখন ওই ছবি দেখিয়ে এক মহিলার খোঁজ পায় সুমন তখন সে আধুনিক যুগের দেবদাস। আর ওর রাধিকা বহু আগে থেকেই অন্য একজনের ঘরের বধু। কিন্তু সে তো এসবের বিন্দুবিসর্গ জানে না। চিনতে পারে না সুমনকে দেখে। বলে অন্য কেউ তার ছবি নিয়ে সুমনের সাথে প্রতারনা করেছে।
মৃত্যু তখন সুমনকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করতে বদ্ধ পরিকর। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রাস্তায় পড়ে থাকা সুমনকে তুলে নিয়ে যায়। শুরু হয় সুমনের চিকিৎসা। অন্যদিকে তারা আসল ঘটনা অনুসন্ধানে নেমে পড়ে। তারা অনুসন্ধান করে জানতে পারে ওই মহিলায় আসল রাধিকা। সে ও তার স্বামী পরিকল্পনা করে বহু পুরুষের সাথে প্রেমের অভিনয় করে,উপহার নেওয়ার নাম করে তাদের সর্বস্বান্ত করে ছাড়ে। এটাই তাদের মূল জীবিকা বলতে গেলে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই দুজনকে গ্রেফতার করে। আর সেদিন রাতেই সুমনের জীবনাবসান ঘটে।