SHUBHAMOY MONDAL

Comedy Drama Horror

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Comedy Drama Horror

১/২ মেসবাড়ি

১/২ মেসবাড়ি

3 mins
223



সকাল বেলায় ভীষণ গণ্ডগোল আমাদের প্রায় অর্ধ শতাব্দী প্রাচীন মেসবাড়িতে! এক তো নতুন ছেলেগুলো বাথরুমে ঢুকলে আর বেড়োতেই চায়না, দরজায় লাইন পড়ে যায়, ধাক্কা ধাক্কি করে তবে বাবুদের বেড় করতে হয় বাথরুম থেকে - সকালবেলা অপিস যাবার তাড়া আছে তো সবার, কিন্তু এইরকম করে বাথরুম দখল করে বসে থাকলে বলুন তো কেমন লাগে?


তার ওপর যদিওবা দৌড় ঝাঁপ করে স্নান সেড়ে খেতে এলাম, ঠাকুর মশাই বললেন - ভাত নেই! জিজ্ঞাসা করলাম - কেন? রান্না হয়নি এখনও? সবাই বেড়োবে তো? ঠাকুর মশাই বললেন - রান্না তো হয়েছিলো কিন্তু ঐ দাদা তো একাই সব ভাত খেয়ে নিয়েছেন। - বলে টেবিলের এক কোণে বসে তখনও খেতে থাকা ছেলেটাকে দেখালেন। লম্বা ঠ্যাঙা মত রোগাটে চেহারার ছেলেটা সদ্য আজকেই সকালে নতুন এসেছে! ঠাকুর মশাই নিজে রান্না সময়মত করতে না পেরে ছেলেটার ওপর দোষ চাপাচ্ছে দেখে ভয়ানক রাগ হয়ে গেলো।


সবাই মিলে বললাম - ঐ ছেলেটা একাই সব খেয়ে ফেলেছে? আপনিও না গুল দেওয়াটা এবার বন্ধ করুন। ঐ একরত্তি ছোঁড়া কি মেসের সবার ভাত খেয়ে ফেলতে পারে? উত্তর এলো - পাঁরি তোঁ! উত্তরটা এলো টেবিলের কোণ থেকে, ছেলেটা বলে কি? বললাম - তুমি একাই সবার ভাত খেয়ে নিয়েছো? সে আবার ঘাড় নেড়ে বললো - হ্যাঁ তোঁ। আমরা বললাম - তাই? ঠাকুর মশাই, আবার ভাত বসিয়েছেন? ঠাকুর মশাই বললেন - হ্যাঁ, সে ভাতও প্রায় হয়েই এসেছে। বললাম - নিয়ে আসুন তো, সব ভাত এখনই। দেখি, ও কেমন সবার ভাত খেয়ে নেয়!

ভাত এল, তাকে থালা ভর্তি করে দেওয়াও হলো, কিন্তু একি, একবারে তার এক হাতের মুঠোতেই সমস্ত ভাত চলে গেলো সরাসরি তার মুখে! আবার ভাত দেওয়া হল, আবার শেষ! আবার দিতেই নিমেষেই তাও শেষ! ঠাকুর মশাই তো মাথা ঘুড়ে পড়ে গেলেন টেবিলের ওপরেই! আমরা তাকে ধরাধরি করে তুলতে না তুলতেই দেখি কোণের ই ছেলেটা ভোজবাজির মত উবে গেলো! আর তারপর এক এক করে ভ্যানিশ হতে থাকলো তার থালা, বাটি আর গ্লাসটাও!


এসব দেখে তো ওখানেই টপা টপ জ্ঞান হারানোর প্রতিযোগিতা শুরু করলো আমাদের আরো কয়েকজন! জোড়ে একটা ধমক দিলাম - কি হচ্ছে টা কি এসব? তাতে বোধ হয় চৈতন্য হওয়ায়, পালা দিয়ে জ্ঞান হারানোটা থামলো। কিন্তু পাশ থেকে মেয়েলি গলায় কান্না শুরু করলো মেসে দুদিন আগে নতুন আসা আর একজন। সে আবার ভয়ঙ্কর শুচীবায়গ্রস্ত, বাথরুম দখল করে ইনিই সবার দেরী করান। এখন আবার তার মেয়েলি কান্না শুনে ধমক দিলাম - তোমার আবার কি হলো, কাঁদছো কেন?


সে আমার কথার উত্তর না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো - ও বাবা ঠাকুর গো, তুমি এতদিনের তোমার ঐ বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছো? তার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে বললাম - বাবা ঠাকুর? সে আবার কে? ছেলেটা এবার আমাদের কথার উত্তর দিয়ে বললো - ঐ যে, ঐ ব্রহ্মদত্যি মশাই গো! সেই লর্ড ক্লাইভের আমল থেকে এই বাড়ির কোণে, ঐ বুড়ো বটগাছটায় থাকতেন যে! আমরা ভয়ানক আশ্চর্য হলাম তার কথা শুনে, বিরক্তও হলাম, বললাম - তাই? তা তুমি কি করে জানলে? সে তখন বত্রিশ খানা দাঁত বেড় করে হেসে বললো - আমি জানবো না? আমি যে তাঁর সেবক গো! শুনে তো আরো অবাক হয়ে বললাম - মানে? সে খিলখিল করে হেসে বললো - আমি তো মামদো! বলেই টেবিলের পাশ থেকে সেও ভ্যানিশ হয়ে গেলো! আর সেই সঙ্গে মড়মড়িয়ে ভেঙে পড়লো সেই বুড়ো বটের একটা মস্ত ডাল!

এবার সবাই একযোগে জ্ঞান হারালাম।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy