তিতলি
তিতলি
পাশের পাড়ার নীল বাড়িটা, ঠিক গলিটার বাঁকে ;
তিতলি জানে, সেই বাড়িতেই, মনের মানুষ থাকে !
সকালে ছাদে, শরীর সাধে, দুধ সাদা রঙ তার !
লুকিয়ে তাকে, তিতলি দেখে, চোখ সরেনা আর।
ঠিক দশটায়, কলেজ সে যায়, সাড়ে পাঁচটায় আসে
তিতলি জানে, ফুটবল সে ভীষণ ভালোবাসে !
রোববারটায়, ময়দানে যায়, সেখান থেকে ক্লাব
তিতলি রোজই সুযোগ খোঁজে, একটু করতে ভাব।
শখের সাজে, তিতলি সেজে, রোজ যায় তার পিছে;
ইচ্ছে করে দাঁড়ায় পাশে, বাসস্ট্যান্ডটার নীচে ।
বলতে সে চায়, "ভীষণ তোমায় ভালোবাসি আমি জানো !"
একটি বারও আমার পানে দেখোনা তুমি কেন?
দিন কেটে যায়, আশায় আশায়, আজ বুঝি সে বুঝবে !
অচেনা ছায়াসঙ্গীটাকে একটু সেও খুঁজবে !
আসেনা সেদিন, নিদ্রাবিহীন, রাতগুলো হয় পার ;
তিতলি ভাবে, করবে না সে, অপেক্ষাটা আর।
সফেদ পাতায় লাল কালিতে সাজিয়ে মনের ভাষা,
সাহস করে তিতলি সেদিন জানালো ভালোবাসা।
চিনলো না সে, তবুও হেসে "বললো তুমি কে?"
আয়নাটাতে দেখো নিজেকে, আগে একবার চেয়ে !
কোথায় আমি, কোথায় তুমি ! কালো কুৎসিত রূপ !
আমায় পাওয়ার স্বপ্ন ছাড়ো, দেখেছো নিজের মুখ ?
দুচোখে ভরে ব্যথার শ্রাবণ, অশ্রুতে গাল ভাসে
কী করে বোঝায় তিতলি তাকে ভীষণ ভালোবাসে !
বন্ধ ঘরে, মনের ঝড়ে, জিজ্ঞাসারা ক্লান্ত ;
কোন জবাবে করবে সে তার ভগ্ন হৃদয় শান্ত ?
চোখ চলে যায়, ওই আয়না, হাসছে যেন সেও
বলছে কালো কুৎসিতকে ভালোবাসেনা কেহ !
রঙ, পাউডার, লিপস্টিক, ক্রিম, কোনটা বাড়ায় রূপ?
কোন প্রলেপে হবে সুন্দর, কালো তিতলির মুখ ?
তবে কী হৃদয়, প্রয়োজন নয়, প্রেম কী দৃষ্টিসুখ ?
নাকি ভালোবাসা শুধুমাত্রই শরীর দেখার ভুখ ?
প্রশ্ন হাজার, তবু বারেবার, অবুঝ মনটা বলে
ভালোবাসাতে শক্তি অনেক, পাথরটাও গলে।
মিথ্যে সে নয়, হয়তো সময়, অগোচরে দিলো সায় ;
সত্যিকারের ভালোবাসা নয় এতটা নিঃস্বহায় !
সেদিনও সাড়ে পাঁচটা হবে, ফিরছিলো সে ঘরে
দাঁড়িয়ে ছিলো তিতলিও ঠিক, লুকিয়ে একটু দূরে !
হঠাৎ বিকট শব্দে যেন ওলটপালট সব !
ছুটলো সবাই ওই গলিটায়, মুখে গেলো গেলো রব !
কম্পিত পায়, তিতলিও যায়, বুকের মাঝে ঝড়
পথের মাঝে একটা শরীর, বিকৃত, নিথর !
আরও একটু এগিয়ে কাছে, বুঝলো এ যে সে
নিষ্পলকে দেখছে তাকে একদৃষ্টে চেয়ে !
হাজারটা লোক দাঁড়িয়ে ঘিরে, জল্পনার মত্ত
দেখতে তারা মানুষসম, ব্যতিরেকে মনুষ্যত্ব !
বুক ফেটে তার কান্না এলো, তিতলি তবু শান্ত
এভাবে তাকে হারাবেনা সে,হয়তো তিতলি জানতো।
ছুট্টে তাকে, টানলো বুকে, শক্ত বাহুবন্ধে
স্তব্ধ হৃদয় কাঁপলো মৃদু, তার হৃদয়ের স্পন্দে !
চোখের পাতা উঠলো নড়ে, শ্বাসের ধ্বনি স্পষ্ট
কালো রঙ তার, সেই ছেলেটার, শুষলো সকল কষ্ট !
আঁকড়ে তাকে, শান্ত বুকে, তিতলি ছিলো চুপ ;
হাজার ক্ষতে রক্তস্নাত, সেই ছেলেটির মুখ।
তবুও সেদিন চিনেছিলো সে ঝাপসা চোখে চেয়ে ,
আগলে বুকে, রেখেছে তাকে, কুৎসিত সেই মেয়ে।