এক বেকারের আত্মকথা
এক বেকারের আত্মকথা


আর কতক্ষণ থাকবে শুয়ে, এত ঘুম কেন আসে?
তোমায় দেখে পাড়ার সবাই মুখ টিপে রোজ হাসে!
কিসের এতো ঘুম আসে তোর, কাম কাজ তো নাই,
জানিস শুধু খাওয়া আর ঘুম, বলতে লজ্জা পাই।
কতদিন আর বাবার টাকায় তুলবি মুখে অন্ন?
সবাই দেখি চাকরী করে, নেই কেনো তোর জন্য?
লেখাপড়া তো কম করোনি, আলমারী ভরা ডিগ্রী!
আশার বাণী শোনাও তো রোজ, কাজ পাবে খুব শিগ্রি।
যখন তখন বাবুটি সেজে, ফাইল হাতে যাচ্ছ,
এত কান্ড করেও কোথায় চাকরী একটা পাচ্ছ?
প্রশ্ন করলে একটা জবাব, একটু সময় লাগবে,
সারাটা জীবন মা বাবা কী ভাত যোগাতে থাকবে?
ইচ্ছা ছিল বউ আনবো, দেখবো নাতির মুখ!
ভাগ্য আমার এমন পোড়া, জুটবে কী সেই সুখ?
কী যে ভাবে, কী যে করে, ভেবে ভেবে হই হন্নে!
ভগবান তুমি কিছুতো করো এই ছেলেটার জন্যে।
তবুও ছেলেটি চুপ করে রয়, শত অনুযোগ মুখ বুজে সয়,
অসফলতার তীব্র জ্বালা, ভগ্ন বুকের পাঁজরে লুকোয়।
রাতজাগা দুই ঘুমহীন চোখে,
নির্লজ্জতা দেখে শুধু লোকে,
কম্পিত হাতে মুখে তোলা ভাত, আত্মগ্লানীর সাথে সংঘাত,
ডিগ্রীর বোঝা কাঁধে তুলে রোজ,
একটা কোনো চাকরীর খোঁজ,
রোজনামচা তবু খালি হাত,
ব্যর্থতারা ভোলে প্রতিবাদ,
আপোশ করার পথ খুঁজে মরে,
পরাজয় রোজ শ্বাসরোধ করে,
ঘরে বাইরে হাজারো সওয়াল,
বিফলতার শক্ত দেওয়াল,
রোজ দৃঢ় হয় ক্লান্তির ইঁটে,
মেরুদন্ড নুয়ে পরে পিঠে,
জীবন হারায় বাঁচার স্পৃহা,
নিত্য দিনের তিক্ত ক্রিয়া,
বোধগুলো সব নিচ্ছে কেড়ে,
ব্যঙ্গ মাখা মুখের ভিড়ে,
অস্তিত্ব পরিচয়হীন,
উচ্ছিষ্টে বাঁচা প্রতিদিন !
তবুও লড়াই সময়ের সাথে,
ভাগ্য লিখন চায় পাল্টাতে,
শত অপমান, শত অভিযোগ,
শরীরে মনে পচনের রোগ,
একনিমিশে বদলে যাবে যেদিন ঘুরবে চাকা,
এই ছেলেটাই শ্রেষ্ঠ হবে, কামাবে যখন টাকা।
বেকারত্ব অভিশাপ নয়, ভবিষ্যতের আয়না,
চাকরী, টাকায় সব কেনা যায়, সুখটা কেনা যায়না।