স্মরণে তুমি
স্মরণে তুমি
এ আমার প্রথম পরিচয় নয়!
এসেছি আমি আগেও ভিন্ন পরিচয়ে,
বাংলার এই বুকে ফিরে বারে-বারে;
নরম এই মৃত্তিকার টানে!
প্রথম জন্মে,
মাছরাঙা হয়ে এসেছিলাম জামালগঞ্জে;
ধানসিঁড়ির বুক চিরে জলপান করেছি কতদিন!
বসন্তের আড়ালে দেখেছি নবান্নের জোয়ার;
শুনেছি ডাক শঙ্খচিলের, কখনো বা ফিঙের!
কখনো কি তা ভুলতে পারি?
পেঁচা হয়ে এসেছি তারপর,
খেজুরিয়া গাঁয়ে;
অন্ধকারে দেখেছি তারার মেলা –
ধ্রুবতারা ছিল জোনাকিদের ভিড়ে!
আকাশে দীপাবলির রাত,
নক্ষত্র-চোখে জ্বলন্ত একরাশ ফানুস!
পালাবদল করে তারপর,
কখনো চিত্রবিচিত্র ময়ূর,
কখনো বা মনভোলানি দোয়েল –
শুনিয়েছি সুমধুর গান;
মাতিয়েছি ঝলমলে নৃত্যে;
এঁকেছি আকাশে ঘ্রাণ!
গত জন্মে,
খুঁজে পাই নিজেকে, মৌবনে;
গোলাপের ভেজা পাপড়িতে!
সে কি তুমি ছিলে? ছিলে নিশ্চয়ই!
পরাগরেণু ঠোঁটে,
হলুদ-কালো ডানায়,
মৌমাছি পরিচয়ে চাক বেঁধেছি ঢের,
গমগমে নিঃশব্দে!
পরজন্মে প্রজাপতি পরিচয়ে –
বেড়িয়েছি উড়ে বাংলার এই মাঠে,
স্বাদ বদলে, কোনোদিন সুবর্ণরেখা ঘাটে!
শান্ত হয়ে বসিনি তবু ক্ষণিকের তরে,
ফুলে-ফুলে কাটিয়েছি সেই উড়ন্ত জীবন!
ফিরে-ফিরে এসেছি এইভাবে,
অসংখ্য পরিচয়ে!
স্পর্শ করেছি এই মাঠ, ধানসিঁড়ি-সুবর্ণরেখার ঘাট!
মাটির এই গন্ধ ভুলতে যে পারিনি, এতটুকু আজ!
জানি, দেরি হবে ভুলে যেতে এইসব –
কয়েকহাজার পরিচিতি লেগে যাবে বুঝি;
আরও কিছু জন্ম! তারপরেও,
ভুলতে কি পারবো এই নরম পাখিদের ডাক,
ধানের ক্ষেত, রঙিন নদীর নাচ?
তবু আনন্দ জাগে মনে,
শান্তির ঢেউ হৃদয়ে আসে,
জোয়ার আসে উল্লাসের –
যখন মনে হয়,
এই জন্ম আমার প্রথম পরিচয় নয়;
এই জন্ম আমার শেষ পরিচয় নয়!
এই জন্ম আমার কতিপয় পরিচয়ের মধ্যে এক!
তাই ফিরে আসবো আবার, বাংলার এই বুকে;
যেভাবে জীবনানন্দ আসে আজও,
তার রূপসী বাংলার টানে;
ধানসিঁড়ির বুকের জল স্পর্শ করতে;
কিংবা, হারিয়ে যেতে আবার,
তার অন্ধকার, বনলতার পানে!
