হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা


হারিয়ে গেছে কলম , ফুরিয়ে গেছে কালি,
উল্টে গেছে বইয়ের পাতা, গল্পগুলোও খালি-
যেন কোন সুদূরে অচিন দেশে দিয়েছে তারা পাড়ি,
দুরে কোথাও হারিয়ে গেছে হারানো লাইব্রেরী।
আলোক পথের প্রবেশ পথ আর পৃথিবী শেখার দ্বার,
জীবন পথের সেই পাঁচালি পুড়ে হয়েছে ছারখার।
জোনাকিরা সেই সবুজ মাঠে আর করে না দরবার,
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা, বুনেছি বারবার।
ডুবে গেছে সোনার তরী, হারিয়েছে শুকনো পাতার সেই নুপুর,
বিদ্রোহী সেই অগ্নিবীণায় আজ পাল্টে গেছে সুর।
পথের দাবী মানা হয়নি, তাই এ অশান্ত একলা দুপুর,
পেয়েছি নতুন ছাড়পত্র, যেতে হবে বহুদূর।
দুই বিঘা জমি হারিয়েছি আমি, নেই আর কিছুই হারাবার,
অন্তর্জালের কাছে কবি মেনেছে যে হার।
আনন্দমঠের সন্ন্যাসীরা সব হারিয়েছে অধিকার,
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা তাই খুঁজেছি বারবার।।
জীবনানন্দের বনলতা সেন হয়েছে অপহরণ,
অশনি সংকেতে লেখার ভাষা ভাঙল অনশন।
একুশে আইন ভেঙেছি আমি, গেয়েছি শিকল পরার গান,
তবু হেরেছি আমি, হেরেছে অর্জুনের তীক্ষ্ম বান।
তিতাস নদীটি শুকিয়ে গেছে, বসে না আর মেলা-
তা দিয়েই আজ চলছে এখন আলো আঁধারির খেলা।
ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি পথ হারিয়েছে, তারিনীখুড়োও নেই যে আর-
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা তাই পেতেছি বারবার।।
ঠাকুমার ঝুলি হারিয়েছে বুলি, ভুলেছে সেই ছেলেবেলাগুলি,
ছবিগুলোও সব রঙ হারিয়েছে, বাক্সে বন্দী সব শুকনো তুলি।
বীরপুরুষ কেউ চায় না হতে, চায় না হতে তালগাছ,
সময় নিয়ে রাতটি জেগে দেখেনা কেউ পঞ্চভূতের নাচ।
রক্তলেখা লেখে না কেউ, কেউ করে না নিমন্ত্রণ,
এখানে ওখানে চলছে শুধু রাবনের সীতাহরণ।
সবুজের অভিযান শেষ হয়েছে, আশাগুলোও মানল হার,
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা তাই চেয়েছি বারবার।।
সোনার কাঠি - রূপোর কাঠি, হারিয়ে গেছে কবে....
বলে না কেউ, ‘‘ আমি যদি না উঠি মা কেমনে সকাল হবে।’’
বাজে না আর বাঁশি, বাজায় না রাখাল ছেলে,
দামোদর শেঠ ও হয় না খুশি শুধু খেতে পেলে।
রানারের যুগ নাকি শেষ হয়েছে, আসে না কোনো চিঠি,
সবুজ বন্ধু ধ্বংস হয়েছে, ভেঙেছে সবুজ কূঠী।
খেয়ার মাঝি হারিয়ে গেছে, করে না নদী পারাপার,
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা তাই মেলেছি বারবার।।
কালবৈশাখী ওঠে না আর, স্বপ্ন দেখাও শেষ,
কেউ খোঁজে না আজকে এখন আজব রঙিন দেশ।
রঙিন বসন্ত হারিয়ে গেছে, কেউ গোনে না দিন,
সাতরঙা সেই রামধনু আজ আকাশপথে হয় বিলীন।
কাজলা দিদি আসে না ফিরে, হারিয়ে গেছে অনেক দূরে,
ব্যাথাগুলো সব ছটফটিয়ে ওঠে না ফুটে অন্তরে অন্তরে।
ভোরের সূর্য অস্ত গেছে, ঘনিয়ে আসছে অন্ধকার,
হাতে বোনা সেই নকশিকাঁথা তাই বুনেছি বারবার।।