সাধারণ মেয়ে!!
সাধারণ মেয়ে!!
আমি একজন অতি সাধারণ মেয়ে,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'সাধারণ
মেয়ের' থেকেও.... সাধারণ!
আমাকে দেখে সবাই বলে আমি
নাকি আমার বাবার মত দেখতে,
কিন্তু বাবার মত দেখতে হলে কি হবে!
কপালে আমার ভাইএর মত
আদর জোটেনা!
বাড়িতে ভালো ভালো খাবারের
প্রথম ভাগ, ভাই আর বাবার...
তারপর কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমি পাই!কিন্তু মা... তাও পায়না!
আমি যখন কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করি! আচ্ছা মা এমন কেন হয়?
মা সাথে সাথে হাত দিয়ে আমার
মুখটা চেপে ধরে বলে....
ওরম কথা বলতে নেই!,
মেয়ে মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছিস!
তখন এগুলো সব সহ্য করতে হবেরে মা!
ভাই ছেলে! তাই ঠাম্মার নয়নের মনি, বাবার ভরসা, আর আমি... বোঝা!
আচ্ছা এখানে আমার অপরাধ কোথায়....?
ভাই যখন স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যায়
তখন আমারও খুব ইচ্ছে
করে স্কুল যেতে!
কিন্তু তার উপায় নেই!
কারন আমি তখন মায়ের সাথে
রান্নার কাজে ব্যস্ত।
আমার বয়স যখন ষোলো!
তখন গ্রামের মোড়ল কাকুর ছেলের
সাথে বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিল,
আমার থেকে আমার স্বামী
পনেরো বছরের বড়!
শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় মা বলল...
স্বামী যা বলবে সব শুনে চলবি,
স্বামী হল দেবতা!
কিন্তু কোথায় দেবতা! এ যে....
একটা হিংস্র জন্তু, পশুর থেকেও অধম!
আমার নরম শরীরটাকে
ছিঁড়ে খুঁড়ে খেলো,
খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার,
চিৎকার করে কাঁদছিলাম!
কিন্তু সেই কান্না দেবতার কানে পৌছালোনা!
চোখের মধ্যে কোন মায়া ভালোবাসা নেই তার!
আছে লোভ তা...আমার এই সদ্য ফুটে
ওঠা যৌবনে ভরা দেহের প্রতি।
সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম আর
রাতে স্বামীর মনোরঞ্জন!
আমি যেন হাফিয়ে উঠেছিলাম!
মন চাইতো ছুটে চলে যাই মায়ের কাছে,
কিন্তু না... এটাতো অন্যায়! অপরাধ!
শত কষ্ট সহ্য করেও আমাকে এইখানে
টিকে থাকতে হবে!
না হলে আমার শিক্ষার ওপর
কাঁদা ছেটানো হবে।
মুখ বুজে সব সহ্য করে পার করে
দিলাম পাঁচ পাঁচটা বছর,
কিন্তু আজ আমাকে এক কাপড়ে
বার করে দেওয়া হল সেই বাড়ি থেকে,
কারন আমার অপরাধ আমি
মা হতে পারিনি!
আচ্ছা এখানে আমার দোষ কোথায়?
আমি তখনও বাড়ির দরজার
সামনে দাঁড়িয়ে,
আমার দেবতা স্বামী নতুন বউ নিয়ে
বাড়ি ঢুকছে সবাই তখন বরন করতে ব্যস্ত! চারিদিকে তখন শঙ্খধ্বনি আর
উলুর অাওয়াজ।
আমি এক বুক কান্না নিয়ে ছুটে
গেলাম বাবার বাড়ি,
আমাকে দেখার সাথে সাথে ঠাম্মা
বলে উঠল কিরে... হতভাগি আবার এলি!
অন্ন ধংস করতে, মা....যখন হতে
পারলিনা তখন এই জীবন
রেখে কি লাভ! গলায় কলসি বেঁধে
ডুবে মরতে পারলিনা হতভাগি!
বাবা বলে উঠল ভুলেও এই বাড়ির
উঠোনে পা রেখোনা এটা
তোমার বাড়ি নয়!
মা চুপচাপ এক কোনে দাঁড়িয়ে
চোখের জল ফেলে চলল,
আসলে আমি যে মায়ের নাড়ির অংশ,
মেয়ে বলে বাবা দূরে ঠেলে দিতে পারে,
কিন্তু মা যে.. মা হয়!
সেই এক কাপড়ে দিকভ্রান্ত হয়ে
হেঁটে চলেছিলাম আমি পথের পর পথ,
সত্যি বাড়ি আমার নেই!
পরিচয়? সেটাও আমার নেই!
আমার কোন অস্তিত্বও নেই!
মরতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি!
মৃত্যুকে আমার ভীষণ ভয়!
যদি মরে আবার মেয়ে হয়ে জন্মাই!
না... আর মেয়ে হবোনা!
এবার জন্মালে ছেলে হবো!
সবাই ভেবেছিল আমি এই বিশাল
বড় দুনিয়ায় হারিয়ে গেছি!
আজও আমি হেটে চলেছি!
হারিয়ে আমি যাইনি!
আজও আমি খুঁজে চলেছি আমার
নিজের ঠিকানা, নিজের পরিচয়!
আমি এক জন অতি সাধারণ মেয়ে,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'সাধারণ
মেয়ের' থেকেও সাধারণ।