মাস্টারমশাই
মাস্টারমশাই
কেটে গেছে কত বছর ; কত যে অশান্ত বেলা ,
আজ মনে হয় সেই ভালো ছিল ' নোবেল নোবেল' খেলা ।
স্যার বলতেন ' ওরে ! ভালো হ' ; দুঃখ দিবি কত !
বলতাম আমি ' হব স্যার সুবোধ ঠিক গোপালের মত ' ।
আজ মনে নেই নীলডাউন হয়ে কান ধরে আধ বসা,
উঠতে বসতে চাবুকের ভয়ে অপরের কান কসা ।
গবেট ছিল বন্ধু আমার ; আমি বুদ্ধির ঢেকি ,
হোম ওয়ার্কের খাতা বের করে স্যার বলতেন ' একি !
কোথা গেল সেই অঙ্কগুলো ; কোথা' ইংলিশ গ্রামার ?'
চুপ বসে থেকে টসটসে চোখে দেখতাম শুধু সামার ।
ভেকেশনগুলো কেটে যেত তাঁর ভাতঘুম ভাঙা চোখে,
চাল ডাল কলা আলু মুলো লাউ পাঠিয়ে দিত লোকে ।
বুঝে গেছি তখন গবেট ঢেকি স্বর্গেও ধান ভানে,
অঙ্কের স্যার বাংলা পড়ান ঐতিহাসিক জ্ঞানে ।
' অ' এ অজগর, ' আ' এ আনারস, 'ই' তে ইঁদুর ,
'ঈ' তে ঈশান কোণে মেঘের মাথায় সিঁদুর ।
আমার প্রিয় মাস্টার মশাই হাসিখুশি সারাদিন,
ক্লাসে এলেই হাতের চাবুক বাজাত পৃষ্ঠে বীণ ।
মাসের মাইনে বিলিয়ে দিয়ে মানুষ গড়ার চেষ্টা,
এখন ভাবি ঠাণ্ডাঘরে ; ' এ কেমন হল কেসটা '!
খোঁজ রাখি নাই; পাইনি খবর , নোবেল পাইনি কেউ,
বিবেকের মাঝে উথাল পাথাল কেবলি একটি ঢেউ ।
বড় হয়ে গেছি, সুবোধও হয়েছি ঠিক গোপালের মত,
অনাহারে থেকে বিবেকের ডাকে আজ তিনি স্বর্গত ।
ছেলেপুলে নিয়ে ভরা সংসার ; ভুলে গেছি অনায়াসে,
আমার প্রিয় মাস্টার মশাই এখনও কি ভালোবাসে ?
এঁরা শিক্ষক ; মানবতা এঁদের - সর্বকালের শ্রেষ্ঠ,
রয়েছেন বলে এখনও সমাজ হয় নাই ফাটাকেষ্ট ।