ক্ষুধার আফিম
ক্ষুধার আফিম


'ক্ষুধা', আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়-
জমিদারের কামিন বস্তি এলাকায়।
কখনও শেষ প্লাটফর্মে হাতে ধরাই ক্ষুধার বাটি,
একবেলা উপবাস সাঙ্গ হলে দাঁতে রুটি কাটি।
কতদিন আর উপবাসী ছেলেটা করবে প্রতীক্ষা?
আজও বাড়ি ফিরে বলতে হবে কিছুই পায়নি ভিক্ষা।
গত পরশু ক্ষুদ জুটেছিল, ফ্যান পাওয়া গিয়েছিল গতকালও,
আজ আমার হাতখানি দেখে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো।
ঘুমিয়ে পড়বে কখন কান্না শেষে,
সত্যিই আজ আফিম নিয়ে যাব অবশেষে।
'ক্ষুধা', আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়-
সিক্ত চোখে রিক্ত হাতের ইশারায়।
কোলে টেনে তারে গল্প শোনায় শীর্ণ পাঁজরে,
যদি না তোর বাপ দেশছাড়া হত সে বাড়ির মন্বন্তরে-
ভিটেমাটি বেচে তোকে নিয়ে চলে এলাম বিদেশ-বিভুঁই,
কামিন কাটবো বড়লোক বাড়িতে, মানুষ হবি তুই।
পরাস্ত মা আমি সংগ্রাম শেষে,
সত্যিই আজ আফিম নিয়ে যাব অবশেষে।
ক্ষুধার লাগি অজ্ঞান মনন
বারবার হয়েছে কঠোর,
অনভিক্ষ দেহে মূল্য তাড়নায়
ছিন্ন হয়েছে জঠোর।
'ক্ষুধা', আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়-
কাঁটাতার ভেঙে শত্
রু দেশের আঙিনায়।
চাল বাড়ন্ত ঘরে খোকার প্রশ্ন, "মাগো কোন উনুন চড়ে না কেন?"
গনগনে আঁচে ভাত ফোটার গন্ধ, আহা স্বর্গসুখ যেন।
মাথায় যেন পরলো শব্দ, বজ্র আঘাতের,
এই দুর্দিনে তুই স্বপ্ন দেখিস গরম ভাতের?
আবার যদি কর ফাঁকি দিই, যদি বলি আজ না,
আখের ছিবড়ার মতো রস বের করবে জমিদারের খাজনা।
শুকনো বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দিলাম কয়েক ঘা,
তাই মনটা আজ বড় চঞ্চল, আমি তো মা।
'ক্ষুধা', আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়-
উৎসব শেষে ডাস্টবিন আঙিনায়।
ফিরে দেখি খোকা শুয়ে আছে স্বপ্নের জাল বুনি,
হঠাৎ যেন রুগ্ন হাতের তর্জনী বলছে আমায়-"খুনি"।
পাথর হওয়া শরীরে মা হয়ে আমি মৃত্যুশোকে,
তবু এক ফোঁটা জল নেই আজ আমার চোখে।
মুঠোর আফিমটা মুখে দিয়েছি, পেটে তখন ক্ষুধা,
বুঝিনি এ তরল, গরল না সুধা।
নিথর শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে মৃত্যুর আপোষে,
সত্যিই আজ আফিম নিয়ে এলাম অবশেষে?
'ক্ষুধা', আমাকে চালিয়ে নিয়ে গেল-
কলঙ্কিনী নিরুত্তরের অন্তে,
অদৃষ্টের তর্জনীটি উপেক্ষা করি কেমনে,
জীবন সত্তার আঠারোর বসন্তে।