অন্তিম উপহার
অন্তিম উপহার


মনে পড়ে, এমনই রজনী ছিল সেদিন,
অমানিশায় ভরা তারকা আঁধার গহীন।
ঘোর বর্ষণে ঝটিকার ক্রীড়া প্রলয়তান্ডব,
অতি বারিধারা, সাথে বজ্র কলরব।
পঙ্কিল আঁচলে ঢেকেছে, বক্ষ আঙিনা,
শ্যাওলা ছেয়েছে উঠানে, তুলসী মঞ্চ দ্বীপহীনা।
ত্রস্ত একখানা গৃহ, তবু রয়েছে দন্ডায়,
একাকী বাতায়নে, একজোড়া আঁখি প্রতীক্ষায়।
সাথীহীন ঘরে বাতি না জ্বলে,
চমকে দিয়ে সহসা ধ্বনিল আগলে।
বাহিরেতে দুয়ার খুলে প্রাণ হলো ম্রিয়,
আঁধার হতে আঁধারতর কে তুমি প্রিয়?
সদ্য নিভন্ত দীপশিখাসম মৃদু উত্তাপ মনে,
মদিরার ঘ্রানে বিহ্বল কোকিলার ধ্বনি তোমার মাঝে নির্জনে।
আরো এক বিনিদ্র রজনী হিংস্র কামটের মতো,
জ্বর কামড় দিয়েছে তোমার সর্বাঙ্গে, রাত বেড়েছে যত।
>থার্মোমিটারে পারদের দাগে বেড়ে চলে নিশিথ,
অন্য কোন শব্দ নেই, মিলনাত্মক ধ্বনি ব্যতীত।
রক্তিমব্রীড়ায় সঙ্গম চেপে ধরে কার লাগি?
অনুল সম্মুখে বারুদের যৌবন নিশিথ জাগি।
দূরকে নিকট করে মিলল মিলনক্ষণ,
ভিজল চিকুর, ভিজল নয়ন, ভিজল হৃদিআসন।
মিলন অসুখে মোহস্মৃতি, সেই পূর্ব বছরে,
চৌকাঠের পরের কদম মেহগনিরঞ্জিত মৃত্যুর ক্রোড়ে।
উষ্ণ শ্বাস পেল মোর সিক্ত ওধর,
বিদায় নিলে, সঙ্গীহীন হল মোর জোড়া কর।
নীরব সমাধি রয়েছে নিয়ে অনন্ত তন্দ্রা,
মালিকা গাছি শুকনো হয়েছে বাসর রজনীগন্ধা।
স্মৃতির ভেলা ভাসিয়ে দিলাম উত্তাল মন মাঝে,
দিগন্তে মিলিয়ে গেলে, শোক মোর না সাজে।
কেন এ পূর্বস্মৃতি রোমন্থন আজকে বর্ষ পরে?
শুধু অন্তিম উপহার, এ নবজাতকের তরে।