আত্মকথন
আত্মকথন


আজ আমার প্রেমিকের দ্বিতীয় বিয়ে, আমার সাথে।
আমার যদিও প্রথম, তবুও খুব সাদামাটা।
ওর প্রথমটা হয়েছিল সীমাহীন আড়ম্বরে, তাই আগ্রহ নেই।
আর আমার পরিবার তো বিদায় বেলার অপেক্ষায়।
পরিবার বলতে সৎ মা, সৎ সাহসহীন বাবা,
আর সারাজীবন আমার চাওয়া, পাওয়া, ইচ্ছা, অনিচ্ছায় বিষাক্ত ছোবল বসিয়ে আসা বিমাতার কণ্যা,
শিঞ্জিনী, আমার সৎ বোন।
সে সশরীরে এখন উপস্থিত না থাকলেও, অলক্ষ্যে তার জ্বালাময় উপস্থিতি প্রতি নিয়ত শরীর, মন, মস্তিষ্ক দগ্ধ করতে যথেষ্ট।
যাইহোক, প্রেমিকের সাথে আমার পরিচয়টা অনেক দিনের,
আমি তখন উনিশ, ওর বাইশ।
লুকোচুরি, লজ্জা-ভয়, দেখা সাক্ষাতের পর্ব পেরিয়ে হল মন দেওয়া নেওয়া।
এরপর কলেজ কেটে ঘোরাঘুরি, ফুচকা, ঝালমুড়ি, বিশেষ বিশেষ দিনে মুঠো মুঠো গোলাপের লাল পাপড়ি।
গঙ্গার ধারে কাঁধে মাথা রেখে, দুচোখে রঙিন স্বপ্নের জাল বোনা।
আবীর মাখা গোধূলি বেলায় প্রিয় মানুষটির চোখে চোখ রেখে আজীবন পাশে থাকার অঙ্গীকার।
আগত সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে একে অপরকে চিনে নেবার তৃষ্ণা নিবারণের, আনাড়ি খেলা।
সত্যিই কি চিনতে পেরেছিলাম তোমায়? থাক সেসব কথা।
তারপর তুমি চাকরি পেলে, পেলে মনের ইচ্ছে গুলি সর্বসমক্ষে প্রতিষ্ঠা করার স্বীকৃতি।
আমি, আমি খুব খুশি হলাম, আগামীর আগমনে আর বিলম্ব নেই ভেবে।
পাগল হাওয়ায় মাতাল ঘুড়ির মতোই, অবাধ্য মনটা বারবার ছুটে যাচ্ছিল ঐ দূরের আকাশে, ডানা মেলবে বলে।
দু তরফেই হল কথা চালাচালি, আপত্তি নেই কোন দিকেই।
তুমি দামি চাকরিজীবী, আমি শিক্ষিতা, অসামান্যা সুন্দরী তাই।
শুরু হল এ বাড়িতে তোমার আনাগোনা, নির্দিষ্ট ব্যবধানে।
বাবা মার সাথে সাথেই তোমার পরিচিত হল শিঞ্জিনী, আমার সৎ বোন,
সততার মেকি ঘেরাটোপে, নিজের প্রকৃত সত্তাকে সন্তর্পণে লুকিয়ে রেখে।
মৌমাছি মন মধু খেয়ে যায়, এ ফুল ও ফুল ঘুরে,
বেহায়া ঐ, ফুলগুলো হায়, নিজেকে উজার করে?
বাড়লো তোমার আনাগোনা, অনির্দিষ্ট ব্যবধানে, আমার অনুপস্থিতিতে।
যে হৃদয়ের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ছিল একান্ত আমার অবিচ্ছেদ্য অধিকার,
সেখানে ধীরে ধীরে দখল নিতে থাকে শিঞ্জিনী, আমার সৎ বোন।
সুবিশাল আকাশও, কোন এক দূরবর্তী প্রান্তে, ধরা দেয় দিগন্ত রেখার কঠোর আলিঙ্গনে, নিজের সংযম ভুলে।
তুমিও পারোনি, তোমার সকল অঙ্গীকার বালির বাঁধের মত ভেঙে পড়েছে, উন্মত্ত শারীরিক লালসার চোর
াস্রোতে।
চাকরি পাওয়ার পর থেকেই, যে সুখ চেয়ে প্রত্যাক্ষিত হয়েছো বারবার আমার কাছে,
তা সকলই দিয়েছে শিঞ্জিনী, আমার সৎ বোন।
দূরে ঠেলে দিয়েছিলে আমায়, অনেক দূরে প্রবল ধাক্কায়, শিঞ্জিনী হয়েছিল আপনজন।
কষ্ট পেয়েছি তবে দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাইনি।
তপ্ত দুপুরে চাতক যেভাবে এক ফোঁটা জল চায়,
সেভাবে তো চাইনি কখনো তোমায়।
তুমি ছিলে প্রিয়জন, ছিলে না প্রয়োজন।
তোমার সুখেই আমার সুখ, বলেছে আমার মন।
মুখোমুখি হতে পারোনি বা চাও নি, যদি তোমায় হারানোর ভয়ে ভেঙে পড়ি, তোমারই বুকে।
আর যাই হোক, তার কিছুই হারানোর ভয় থাকে না,
যে জন্ম লগ্নে হারাতে পারে, নিজের জন্মদাত্রী মাকে।
তুমি বুঝেও বোঝোনি যে।
সৎ মা, বোনের কুটিল বিজয়ী হাসি উপেক্ষা করে,
চলে গেলাম দূরে, চাকরি নিয়ে।
নিজেকে নতুন করে গড়বো বলে।
তারপর তোমাদের বিয়ে হল, হল সংসার, তবে টিকলো না।
ভালোর পরে ভালোর প্রলেপ দিয়ে, হয় শ্রেষ্ঠ, তুমি ভালো ছিলে, শিঞ্জিনী চেয়েছিল শ্রেষ্ঠ।
তাইতো বিয়ের বছরখানেক পরে, পালিয়ে ছিল, শ্রেষ্ঠ কারো হাত ধরে, তোমায় একলা ফেলে।
তুমি খোঁজোনি ওকে, বরং নতুন করে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধবে বলে খুঁজেছো আমাকে।
আমিও অবুঝ নারী, থাকতে না পারি, দিয়েছি ধরা তোমার ঐ পাগল করা ডাকে।
আজ আমাদের বিয়ে, হয়তো আজই ফুলশয্যা।
অন্তত তোমার চোখ তো তাই বলছে, সেখানে নেই ভালোবাসা, আছে অফুরন্ত লোভ ও লালসা।
আর মেকি বিয়ের আবার অতো নিয়ম কিসের?
একটু সিঁদুর খেলা, মালা বদল ব্যস্।
কিন্তু মালা তো নয়, এ যে শক্ত মোটা দড়ি, আমাকে বাঁধার জন্য, বেঁধে শাস্তি দেওয়ার জন্য,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, যেভাবে ছোট্টবেলা থেকে সৎ বোনের সকল দোষের শাস্তি ভোগ করে এসেছি, সেরকমই আবারও।
তুমি দেবে শাস্তি, আমি ভোগ করবো,
হ্যাঁ, পিষে ফেলবে আমার অস্থি, মাংস, মজ্জা।
আর ভালোবেসে এ আঘাতের নাম রাখবে, ফুলশয্যা।
জানি, দুমড়ে মুচড়ে ভাঙ্গবে আমায়, আমি অভ্যস্ত।
ঢেউ ভাঙ্গা বালুচরের মতো বহুবার ধ্বসেছি আমি,
পুনরায় নিজেকে গড়েছি তিল তিল করে,
আবার ধ্বসে যাবো বলে।
রাজি, এই ভাঙ্গা গড়ার উন্মত্ত খেলায় আমি রাজি,
সৎ বোনের অসততায় এবার, রাখবো জীবন বাজী।