উমা
উমা
সেবারও পূজোর প্রাক্কালে, শুভ্র মেঘের ভেলায় চড়ে এসেছিল শরৎ।
সুনির্মল গগনে ছিল, উজ্জ্বল রবি কিরণের লুকোচুরি খেলা।
সেবারও নিজেকে ধূলোয় লুটিয়ে, আপন সুঘ্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিল অসহায় শিউলি।
হয়তো বা সবুজ ঘাসের আগায়, জমতে শুরু করেছিল সকালের অশ্রু।
সেবারও ভাগিরথীর তীরে, গুচ্ছ গুচ্ছ কাশবন, মাথা নুইয়ে আহ্বান জানিয়েছিল আসন্ন শারদীয়ার।
শুধু মাথা নত করেনি উমা।
হ্যাঁ, এর আগে বহুবার ভেবেও যা পারেনি,
সেবার তা পেরেছিল।
শ্বশুরবাড়ির গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে একা রুখে দাঁড়িয়েছিল,
ভয়কে করেনি পরোয়া।
পূজোর তত্ত্ব পাওয়ার পরেও, দিনমজুর বাবার থেকে নগদ টাকা আনার দাবি, সে আর মেনে নেয়নি, করেছিল প্রতিবাদ।
কপালে জুটেছিল গঞ্জনা, অপবাদ, অত্যাচার ও সবশেষে স্বামীর হাতের মার।
তবুও তীব্র ঝঞ্ঝার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকা একাকী বটবৃক্ষের ন্যায়, আপন সিদ্ধান্তে সে ছিল অনড়।
স্বামীর আঘাত নতুন কিছু নয়,
কখনও ভালোবাসার আঘাত, কখনও বা ভালোবাসা হীন।
নিজেকে তাই স্ত্রী নয়, মনে হতো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার মেশিন।
অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা লঙ্ঘন করল, বাবার দেওয়া লাল শাড়ি টা ফাঁস হয়ে বসল উমার গলায়, নিথর দেহটা ঝুলতে থাকল অকথ্য অপমানের সাক্ষি হয়ে।
সেদিন বিজয়া দশমী।
অদূরে ঢাকের তালের কাতরতায়, দেবী বরণের পালা, সাথে রক্তিম সিঁদুর খেলা।
বিসর্জনের বিষাদ সুরে মুখর, ঐ চিন্ময়ী ও মৃন্ময়ী, উমার বিদায় বেলা।
