ইতি, তোমার ভ্যালেন্টাইন..
ইতি, তোমার ভ্যালেন্টাইন..
ছেলেটা দাঁড়িয়েছিল ঠিক চারটে বেজে তেইশ মিনিটে,
হাতে অনেকগুলো লাল গোলাপ আর আর্চিস কার্ড নিয়ে,
তখনও নাম লেখা হয়নি কার্ডে,
মেয়েটা আসবে পাঁচটা বাজতে পাঁচে,
আজ ওদের প্রেমবার্ষিকী,
তাই ঠিক করেছিল সন্ধ্যেটা একসঙ্গে কাটাবে..
ছেলেটার পরনে নীল জিন্স, সাদা টিশার্ট,
পকেট থেকে পেনটা বের করল,
ঠিক তখনই ফোন এল প্রিয়তমার,
কোথায় আছ তুমি ??
আমি রাস্তার এপারে আছি, রংমহল সিনেমার সামনে,
তুমি কোথায় আছো ?
আমি তোমার সোজাসুজি দাঁড়িয়ে, তাকাও !!!
ছেলেটি সামনে তাকাতে দেখল তার প্রিয়তমা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওপারে, ঠিক তার সোজাসুজি,
পরনে আকাশী রঙের চুড়িদার, ওড়না হাওয়ায় দুলছে,
চুলগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে যেন খেলা করছে,
কানের ঝুমকোতে ভারি সুন্দর লাগছে তাকে,
তার মনে হল সে যেন এইমাত্র আকাশ থেকে নেমে এসেছে..
আকাশ কন্যা, আমার আকাশ কন্যা, শুধু আমার আকাশ কন্যা,,
মন থেকে খানিক বিড়বিড় করে উঠল,
হাতের ধরা পেনটা হঠাৎ পড়ে গেল রাস্তায়,
তারপর রাস্তা থেকে তুলে যত্ন করে লিখল "প্রিয়তমা....... ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন"...
তারপর আবার চোখ তুলে তাকালো,
এবার আরো ভালো করে দেখল তাকে,
ভ্রু'র নিখুঁত সেটিং-এ মুখটা খুব মিষ্টি লাগছে,
চোখে কাজল আর ছোট্ট কালো টিপ পরে মনে হচ্ছে যেন বার্বিডল,
আস্তে আস্তে এক পা এক পা করে অতীতে হারাচ্ছিল..
রাস্তাটা পার হবে বলে এগিয়ে গেল,
আনমনা মনে প্রিয়তমার মিষ্টিহাসিতে ডুবেছিল সে,
ওপাশ দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে আসছিল মালবাহী ট্রাক,
মাঝরাস্তায় পা রাখা মাত্রই ছিটকে পড়ল প্রিয়তমার কাছে,
মাথার রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর,
হাতে তখনও ধরা রয়েছে রক্তে ভিজে যাওয়া কার্ডটা,
ছেলেটির নিথর দেহ একবার কেঁপে উঠে স্তব্ধ হয়ে গেল চিরদিনের মত,
সংজ্ঞাহীন মেয়েটি জ্ঞান ফিরতে চোখ মেলে দেখল হাসপাতালের সাদা চারদেওয়ালে সে আবদ্ধ,
পাশে রাখা স্তুপীকৃত রক্তাক্ত গোলাপ রাশি আর আর্চিস কার্ড,
মেয়েটি কার্ড হাতে নিয়ে দেখল
সযত্নে লেখা আছে শেষবারের মত কিছু লাইন
" প্রিয়তমা.......... ইতি তোমার ভ্যালেন্টাইন".....