গুরুদেব
গুরুদেব
গুরুদেব
মানিক চন্দ্র গোস্বামী
পঞ্জিকা দেখি শুভদিন যবে,
কিছুদূর পথ পাড়ি দিয়া তবে,
গুরুদেব যান শিষ্য বাড়ি;
দুলাইয়া টিকি, তিলকেতে সাজি,
চলিলেন গুরু একাকীই আজি,
পুঁটুলিটি হাতে ধরি।
সূর্যোদয়ের প্রত্যুষ কালে,
বিহগ যখন ডানা মেলে,
পদব্রজে যাত্রা করেন তিনি;
রোদটি চড়া হবার আগে,
গুরু পৌঁছোন শিষ্য লগে,
শিষ্যপত্নীও আনন্দিত শুনি।
নত হয়ে শিষ্যের প্রনামে,
'মঙ্গল ভব', গুরুর আশীর্বাদে,
সাষ্টাঙ্গে শিষ্যপত্নী করেন প্রণতি।
ধৌত করিয়া চরণ যুগল,
ব্যস্ত শিষ্য কেটে আনে ফল,
বসার আসন দিলো পাতি।
চারিদিকে ঘোরে চোখ,
শিষ্য তার বড়লোক,
ভাবেন গুরু আপন অন্তরে';
সাঙ্গ হলে ফলাহার,
গুরু করেন ছোট আবদার,
তামাকটা সেজে দিয়ে যারে।
ত্বরা করি ছুটে এসে,
হুক্কাটা দিয়ে পাশে,
অনুমতি নিয়ে শিষ্য লাগে অন্য কাজে।
বালিশেতে দিয়ে ঠেস,
দুইটানে কল্কে শেষ,
বলেন গুরু,'একদম বাজে'।
শিষ্য শুনে ছুটে আসে,
জোড় হাতে বলে ত্রাসে,
'অপরাধ করুন মার্জনা',
গুরু বলেন,'ভয় নাই',
চাল, ডাল যাহা চাই,
দিয়ে গেলে শুরু করি রান্না।
শিষ্য ছুটে যায় সত্বর,
জোগাড় দেয় আনাজ পত্তর,
দুধ, ঘি, দই, মিষ্টি, ছানা;
জোড় হাতে শিষ্য কয়,
'বাকি যদি কিছু রয়,
এনে দিতে আমি ভুলিবনা।
পাট চুকলে খাওয়া দাওয়ার,
ব্যবস্থা করিতে শোওয়ার,
গুরু ডাকি বলেন শিষ্যেরে;
ছুটে এসে শিষ্য কহে,
শুইবার ব্যবস্থা রহে,
আমাদের এই বড় ঘরে।
তিন মাসাধিক ব্যয় করি,
গুরু যাবেন অন্য শিষ্য বাড়ি,
রাত্রিশেষে যখন হবে প্রভাত;
শিষ্য রাতে কেঁদে কয়,
ত্রুটি যেন মার্জনা হয়,
ভুল যত করেছি দিবারাত।
গুরু দেন আশ্বাসবাণী,
'হয় নাই দোষ জানি,
দুঃখ কেন পাচ্ছিস অন্তরে,
আশীর্বাদ তোকে দিই,
থাকিবি সুখেতে তুই,
ভক্তি যদি রাখিস গুরুর 'পরে।
শোয়ার আগে গুরুর পাশে,
জোড় হস্তে শিষ্য বসে,
প্রণমিয়া গুরুদেবে কহে;
'বস্ত্র সহ টাকা, আনা,
এনেছি সামান্য দক্ষিণা,
আশা রাখি লইবেন অনুগ্রহে'।
গুরু ডেকে বলেন তারে,
'বুদ্ধি তব লুপ্ত কি রে ?
তিনটে কাপড়, পাঁচটি হাজার টাকা,
এতদিন ধরে তোরে,
বেঁচে থাকার মন্ত্র যে রে,
শুনিয়ে যাবার ফলটি হলো ফাঁকা ?
অবশেষে গুরু পান,
আরো টাকা, আরো দান,
পুঁটুলিটি লন তিনি ভরি;
রজনীর শেষে, ভোরে,
চলেন গুরু ত্বরা করে,
তৃপ্ত মনে অপর শিষ্য বাড়ি।