STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Classics

4  

Manab Mondal

Abstract Classics

কাশফুল

কাশফুল

4 mins
384

সুপ্রভাত এবারও শারদীয়া লেখাটা দিতে পারবো না বোধহয়। আমার বাড়িওয়ালা বিপিন বাবু সকাল থেকে চিৎকার করছে। নির্মলা দেবী বাড়ি থাকলে হয়তো সামলে নিতেন। কিন্তু উনি তো বোধহয় চাকরিতে বেড়িয়ে গেছেন। তাই অগত্যা আমি উপরে তালায় গেলাম। বিপিন বাবু মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গেলেও এ বাড়ির বোনদী আনার কথা ভোলে নি। জানালা দিয়ে কিভাবে রাস্তা ধারে কাশফুল দেখতে পেয়েছেন তাই চিৎকার করা শুরু করেছেন। দূর্গা দালানে কেন এখনো মায়ের কাঠামোতে মাটি পরে নি?

মালতি মাসি

ভুল করে বলে ফেলেছে। "নুনু আনতে পান্তা ফুরায় সে বাড়িতে সে বাড়িতে আবার দূর্গা পূজা "


এতেই বিপদ , পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমি ওনাকে বললাম " জ্যাঠা মশাই আপনি মালতির কথায় কান দিচ্ছেন কেন? দূর্গা পূজা হবে কিন্তু সময় হোক। ওটা কাশ ফুল না কুশ ফুল। আর আপনি জানেন না কাশফুল তো নদীর ধারে হয় , শহরে পিচ রাস্তার ধারে কখনো হয়।"


কাশ ফুল মানেই আসলে দূর্গা পূজা আসছে ধরে নেওয়া হয়।প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কাশফুল ছিল। কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরা দেখতে প্রায় কাশফুলের মতোই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে।


কাশফুলের সাথে নদীর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। এটা হতে পারে পবিত্র বন্ধুত্ব সম্পর্ক। ঠিক বলতে পারেন নির্মলা দেবীর সাথে আমার সম্পর্কটা। থাক সে কথা।


আকাশে শরৎএর মেঘ দেখছো। তাহলে বুঝবে সেখানে কাশফুলের ছোঁয়া আছে। কাশফুল ফুটলে কোথা থেকে বাতাসে শরৎএর ঘ্রাণ চলে আসে । তুমি কাশফুলকে দেখো। একই অঙ্গে কতরূপ দেখতে পাবে। আকাশে সাদা মেঘের রঙ দেখো। যেনো ভালবাসার পবিত্রতার মুকুট ধারণ করে আছে পৃথিবী। সবুজ পাতা দেখো, সেখানে প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া দেখো। পূজা আসার খবর পেয়ে ওরা যেন খুশিতে দুলছে।শরৎকালের মানে বোধহয় চারিদিকে ঘন সাদা দীঘল কাশফুল বাতাসে ঢেউ খেলে যাওয়া।


নীর্মলা দেবী আমার থেকে বয়সে বছর পাঁচেকের ছোট। একা সংসারটা সামলাচ্ছে দূর্গা মতো। বিপিন বাবুর জুতো জুট মিল বন্ধ হবার আগেই সবাই ওনার ভাই এরা বিদেশে চাকরি করতে পারি দিয়েছিলো। ওনার মেজো দাদা যখন বুঝতে পারলেন শরিক ঝামেলার জন্য কোনদিন এ বাড়ির প্রোমটারের হাতে দিতে পারবে না। তখন তার অংশ টুকু আমি বিক্রি করে।


প্রথমে শত্রু রূপেই দেখতেন আমাকে। তবে এখন প্রতিবেশী হিসেবে মনে নিয়েছেন। কারণ ওনার বিপদের দিনে ওনার ভাই বোনরা যখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তখন মানবিকতার খাতিরে আমি উনার পাশে ছিলাম। এবং গত বছর উনার মা মারা যাওয়ার পর, বর্তমান আমার পরিচালিকা মালতি মাসি ওনার বাবার দেখাশোনা করে। তাই উনি নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন। কিছু এখন উনি আমার দ্বারা প্রভাবিত। তাই উনাকে আজ অনুরোধ করবো ভাবলাম। বিপিন বাবুকে আমাদের গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে যাবো। কারণ এ বছর আমাদের বাড়িতে আমরা দূর্গা পূজা উদযাপন করবো ঠিক করেছি। এ বিষয়ে বাবার সাথে কথা বলতে তিনি অন্য একটি প্রস্তাব দিলেন। আর আমি সেই মতোই


কাজ করলাম।


দিন পোনের কিভাবে কেটে গেলো জানি না। ভাই ও আমার বাবার উদ্যোগে এ পাড়ার সান্টু মন্টুদের সহযোগীতায় বিপিন বাবুর মুখে কাশ ফুলের মতো সুন্দর একটা পবিত্র হাসি ফুটে উঠলো। এ বাড়িতে এবছর থেকে আমরা দূর্গা পূজা শুরু করে ফেললাম।


ষষ্ঠীর পূজা ভালোই কাটলো। বেশ রাত অবধি আডা চললো। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন নীর্মলা দেবী। উৎসবের আমেজেও আকাশের ভাঙা চাঁদটা কেমন যেনো মনমরা। ঠিক নীর্মলা দেবীর মতোই অসম্পূর্ণ ,একা। কোনো আরাষ্ঠা না দেখিয়ে বললাম " আজ আপনি কিন্তু পূজাটা ঠিক উপভোগ করলেন না।"


উনি বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে বললেন " পরাজিতরা কখনো উৎসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাকি?"


আমি বললাম " আপনি পরাজিত কোথায় , বেশ ভালোইতো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নিশ্চিত ভালো সময় আসবে, উৎসবের দিনে মন খারাপ করবেন না প্লিজ! আপনি আপনার সব সময় পাশে আছি।"


উনি একটু উপহাস হাসি হেসে বলল" পাশে আছেন না ঘিরে ধরেছেন, আমার অংশটুকু ছাড়া পুরো বাড়িটাই তো কিনে নিয়েছেন আপনি দাদাদের কাছে থেকে। তবে আমার অংশটুকু কোন দিন আমি বিক্রি করবো না। জেনে রাখুন "

আমি বললাম"আচ্ছা আপনার বাড়ি আমার বাড়ি এই লড়াইটা আপনি কবে ছাড়বেন। এ বাড়িটা আমি না কিনলে অন্য কেউ কিনে নিতো। এ দেশ প্রমোটারের অভাব নেই। বরং একটা কথা বলবো যদি অভয় দেন। এ বাড়িটা কি আমাদের বাড়ি হতে পারে না। আমি কি আপনার যোগ্য না।"

উনি একবার আমার দিকে তাকালো , ওনার চোখ গুলো অন্ধকারে জ্বল জ্বল করছিলো। উনি মাথা নিচু করে চলে যেতে যাচ্ছিলেন। আমি সাহস করে উনার হাতে ধরে আটকে দিলাম। উনি আমার দিকে  তাকাতে বললাম " একটু খানি দাঁড়িয়ে যান না, এই ঘন অন্ধকারেও দূরে কাশফুল গুলো কি সুন্দর দেখাচ্ছে।"

উনি ছাঁদে কোন গিয়ে দাঁড়িয়ে কাশফুল গুলো এক মনে দেখতে থাকলেন। আমার মন খুশি ভাবার খবর পেয়ে কাশফুল গুলো ও খুশিতে দুলতে লাগলো।


Rate this content
Log in

Similar bengali poem from Abstract