ধর্ষিতা মেয়ে!
ধর্ষিতা মেয়ে!
আমি! আমি একটা ধর্ষিতা মেয়ে !!
যে আর কিছুক্ষণ পরেই চিরঘুমে চলে যাবে পৃথিবীর পিছুটান ছেড়ে!
কিছু লোকের তৃপ্তি নাকি আমার একার মধ্যে?
নাকি আমার পরেও তৃপ্তি মেটাবে আরেক মেয়ের মধ্যে?
নাকি শিকার হবে কোনো শিশুকন্যা, না বুঝে সে কাঁদবে অঝোর ধারায়
লোকগুলো তো ভাসবে তখন যৌনতার আত্মহারায় !
ধর্মে আমি মা, শাস্ত্রে আমি প্রকৃতি, সংসারে আমি লক্ষ্মী আর পরিবারে আমি মা
বাস্তবে তো এটাই দেখলাম, নয় বেশ্যা নয় ধর্ষিতা!
সমাজ হচ্ছে উচ্চ শিক্ষিত, পড়ছে মানুষ, উড়ছে ফানুস!
তারই সাথে পাল্লা দিয়ে ধর্ষক নির্দোষ দিয়ে ঘুষ!
পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে আমাকেই করে সন্দেহ, জিজ্ঞাসা
কতটা প্রবেশ, কীরকম পোষাক, কতজনের সাথে মেলামেশা!
আমি যদি বলি, আমার অন্যায় ছিল না এখানে কোনো
শুনতে হবে তখন, চুপটি করে আমার কথা শোনো।
আমরা আরো খতিয়ে দেখব ধর্ষণের ব্যাপার তোমার
মেডিকেল টেস্ট করে তুমি নিয়ে এসো তার পেপার।
তারপর যা হবার হবে, বিচার করে দেখা যাবে
আগে তো দেখি তুমি সত্যি বলছ নাকি মিথ্যেয় আছো ডুবে!
মেডিকেল টেস্ট এর নামে আমায় করল দ্বিতীয়বার ধর্ষণ
খবরে আমার অস্পষ্ট মুখ দেখতে ব্যস্ত লোকজন।
আজও হয়নি শুরু ধর্ষক কে খোঁজা, খবরে লেখা " খোঁজ চলছে"
আমি কিন্তু ঠিক ছিন্নভিন্ন এত প্রশ্ন, এত পরীক্ষার ভাঁজে!
একদিকে বলছে, নারীকে করো সম্মান, নারীই মা দুর্গা!
আরেকদিকে হচ্ছে চিৎকার, ছুঁয়ো না আমার গা!
মানুষ নাকি শিক্ষিত সমাজ করবে প্রতিষ্ঠা!
কি করে হবে তৈরি, যে সমাজে পায় না বিচার ধর্ষিতা !
ধর্ষক হলো পুরুষ, পুরুষের এটা ছেলেমানুষী
তারা তো করতেই পারে যৌনতা, যে মেয়ের সাথে যত খুশি!
এসবের পরেও তো তারা বংশের প্রদীপ, মায়ের সিংহ, বাবার উত্তরাধিকারী
তার সাথেও সে নীরবে থাকবে আমার কাছে ব্যভিচারী।
প্রেমের নামে ধর্ষণ, বিয়ের নামে ধর্ষণ
বিশ্বাসের নামে ধর্ষণ, সাহায্যের নামে ধর্ষণ
সম্পর্কের নামে ধর্ষণ, সহানুভূতির নামে ধর্ষণ
ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ, হুমকি দিয়ে ধর্ষণ
ইচ্ছাকৃত ধর্ষণ, প্রতিশোধের নেশায় ধর্ষণ!
করছে পুরুষ, ভুগছে নারী
উল্লাস পুরুষের , মুখ লুকাচ্ছে নারী!
লজ্জা ধর্ষকের নয়, ধর্ষিতার মুখ ঢেকে রাখা
সমাজ তো তাকেই বলেছে, মুখ রাখতে ঢাকা!
পতিতালয় তৈরিই হতো না যদি পুরুষ মানুষ হতো
বেশ্যা শব্দটা পুরুষের চরিত্রেই হয়েছে আজ ধ্বনিত!
আমি আজ হচ্ছি শেষ তবুও সমাজ নীরব
শ্রীকৃষ্ণ নেই যে আজ, করতে সমাজকে সরব
না সরব সমাজ তবে ধর্ষকের পক্ষে
সুবিচার নেই যে আজ, আদালতের কক্ষে!
আমি মরলে খবরে লিখবে একপাক্ষিক বিচার
সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তুলবে হয়ে ধর্ষকের সোচ্চার!
কিন্তু কাজের বেলায় কেউ এগোবে না নিজের প্রাণের ভয়ে!
ধর্ষিতা মেয়ের সম্মান আবার সম্মান!
ধর্ষিতা মেয়ের প্রাণ আবার প্রাণ নাকি হয়?
