বিসর্জন
বিসর্জন


উৎসবশেষে ঘরমুখো ক্লান্ত শরীর ভরে ওঠে বিষাদের সুরে,
নিজেকে আবার সাজিয়ে নেয় অভ্যস্ত প্রাত্যহিক রোজনামচায়,
সাংসারিক ইতিবৃত্তে একরাশ অনুরাগ বাজে উদাসী মল্লারে,
উমার ঘরে ফেরা নাকি শুধুই চিরাচরিত নিয়মরক্ষার তাগিদ?
বিজয়ার বিদায়ী সুরেও চোখের জলটুকু ধরে রাখা গেছে,
মন যদিও পুজো আসার অনেক আগেই ছুঁয়েছিল গলনাঙ্ক,
নিষ্ঠুর পৃথিবী, প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম,
ঘরে-বাইরে অবদমন, মনুষ্যত্ব ও বিবেকের ক্রমাগত অবক্ষয় -
মন্ডপের ভেতরের আয়োজন অপ্রাসঙ্গিক মন্ডপের বাইরে,
আলোর রোশনাই ঘোচাতে পারে না সাধ ও সাধ্যের ব্যবধান;
চারদিন মৃন্ময়ীর আরাধনা, বছরভর চিন্ময়ীরা অবহেলিত,
কোমলতাকে দুর্বলতার ছাঁচে ফেলে উন্মত্ত পাশবিক খেলা,
নারী, আজও তোমার নীরব আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে,
ঢাকের বাদ্যিতে ফাটা ঠোঁটের কান্না কারোর কর্ণগোচর হয় না;
আজও তুমি বন্দী, কণ্ঠরোধ ও নিষ্পেশনের শিকার প্রতিক্ষণে,
কারারুদ্ধ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বারেবারে দিতে হয় অগ্নিপরীক্ষা,
অথচ দেবীপক্ষের শুরুতে চলে সাড়ম্বরে মাতৃশক্তির আরাধনা!
নির্বিকার সমাজের সংকীর্ণতায় মনুষ্যত্ব বিসর্জিত প্রতিটা মুহূর্তে,
তবে সতীদাহ রদের সাথেই ঘটা করে চিন্ময়ীদের বিসর্জন বিলুপ্ত,
তাই ওদের নিরঞ্জনের কার্নিভালটা আজ আর দৃষ্টিগোচর হয় না।